

সোমবার ● ২৮ জুলাই ২০২৫
প্রথম পাতা » বিশেষ » তাজউদ্দীন আহমদ জন্ম শতবার্ষিকী সম্মাননা পেলেন সুনামগঞ্জের জুলাইযোদ্ধা জহুর আলী
তাজউদ্দীন আহমদ জন্ম শতবার্ষিকী সম্মাননা পেলেন সুনামগঞ্জের জুলাইযোদ্ধা জহুর আলী
আল হেলাল :
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের জন্ম শতবার্ষিকী সম্মাননা পেয়েছেন সুনামগঞ্জের জুলাইযোদ্ধা মোঃ জহুর আলী। এ উপলক্ষ্যে রাজধানী ঢাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা,জুলাই গণঅভ্যুত্থান, লেখক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গুণীজনসহ ছয়টি ক্যাটাগরিতে মোট ১০০টি সম্মাননা প্রদান করা হয়। সারাদেশের বাচাইকৃত প্রতিনিধিদের মধ্যে সুনামগঞ্জের জুলাইযোদ্ধা জহুর আলী সম্মাননায় ভূষিত হয়ে প্রদত্ত বক্তৃতায় সমবেত বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ উপস্থিত সকলের কাছে অর্জন করেছেন সুনাম সুখ্যাতি। মহতি এই অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন,তাজউদ্দীন আহমদ শুধু তাঁর পরিবারের নয়, তিনি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সম্পদ। অক্লান্ত পরিশ্রমে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করেছিলেন। তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামের শুধু একজন নেতা ছিলেন না, একজন সংবেদনশীল মানুষ হিসেবে সর্বপ্রাণের প্রতি তাঁর দরদ ছিল। শনিবার (২৬ জুলাই) বাংলা একাডেমিতে তাজউদ্দীন আহমদের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন। সেন্টার ফর তাজউদ্দীন আহমদ রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাকটিভিজম (সিতারা) বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। আলোচনায় অংশ নিয়ে ভারতীয় দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি ভি কে গোকুল বলেন, স্বাধীনতাযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত রেখে যুদ্ধ পরিচালনা করেছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ। স্বাধীন বাংলাদেশে অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী হিসেবে গ্রামীণ অর্থনীতিকে প্রাধান্য দিয়ে স্বনির্ভর নীতি গ্রহণ করেছিলেন। তাজউদ্দীন আহমদের মমত্ববোধের প্রসঙ্গে ভি কে গোকুল বলেন, সর্বপ্রাণের প্রতি তাঁর মমত্বের প্রমাণ পাওয়া যায় একটা লেখায়, যেখানে একটি চড়ুই পাখির মৃত্যু তাঁকে ছুঁয়ে গিয়েছিল। তিনি স্বাধীনতাসংগ্রামের একজন নেতাই শুধু নন, তিনি সর্বপ্রাণকে তাঁর পরিবারের অংশ হিসেবেই দেখতেন। আলোচনায় অংশ নিয়ে তাজউদ্দীন আহমদের সন্তান তানজিম আহমদ সোহেল তাজ বলেন, গণ আকাঙ্কার প্রতীক ছিলেন বঙ্গবন্ধু। কিন্তু তাঁর গ্রেপ্তারের পর যে বিশাল শূন্যতা তৈরি হয় নেতৃত্বের, সেটা পূরণ করেন তাজউদ্দীন আহমদ। দক্ষতার সঙ্গে তিনি নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছিলেন। ইতিহাসের এ মূল্যবান অংশটি তরুণদের সামনে তুলে ধরার জন্য গবেষকদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তাজউদ্দীন আহমদ শুধু আমাদের পিতা নন, তিনি এ রাষ্ট্রের সম্পদ। আজকে আমাদের সবার এক হতে হবে মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাইয়ের চেতনায়। এমন একটা বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে, যেখানে কোনো বৈষম্য থাকবে না, সবার জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে।’ জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয় বেলা সাড়ে তিনটার দিকে। এরপর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর প্রদর্শন করা হয় সিতারা কর্তৃক তাজউদ্দীন আহমদের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র। প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন শেষে তাজউদ্দীন আহমদের ওপর দুটি বইয়েরও মোড়ক উন্মোচন করা হয়। তাজউদ্দীন আহমদকে নিয়ে বিভিন্ন লেখকের লেখা প্রবন্ধ নিয়ে সংকলন ‘তাজউদ্দীন আহমদ: শতবর্ষে সংশপ্তক’ বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন ড. কামাল হোসেন। এ ছাড়া তাজউদ্দীন আহমদের বিভিন্ন সময়ে দেওয়া ভাষণের সংকলন ‘মুক্তির কণ্ঠস্বর তাজউদ্দীন আহমদ’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন লেখক মঈদুল হাসান। এরপর তাজউদ্দীন আহমদের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে রিপাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ‘শিক্ষার্থীদের উন্নতিতে পাঠ্যপুস্তকই যথেষ্ট’ শীর্ষক একটি বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। বিতর্কের শেষে অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধা,জুলাই গণঅভ্যুত্থান, লেখক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গুণীজনসহ ছয়টি ক্যাটাগরিতে মোট ১০০টি সম্মাননা প্রদান করা হয়। এ সময় কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ও জুলাইযোদ্ধা তাঁদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন। তাজউদ্দীন আহমদের জ্যেষ্ঠ কন্যা শারমিন আহমদ বলেন, ‘আমরা সম্মাননা দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো দলমত বিচার করিনি। আমাদের প্রয়োজন দেশপ্রেমের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হওয়া।’ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন শারমিন আহমদের স্বামী আমার আবদুল্লাহ। তিনি তাজউদ্দীন আহমদের দূরদর্শিতাকে মিসরের সাবেক প্রেসিডেন্ট জামাল আবদেল নাসেরের সঙ্গে তুলনা করে বলেন, জামাল আবদেল নাসেরের দূরদর্শিতায় মিসর খড়ার হাত থেকে ৬০ দশকে বেঁচে গিয়েছিল। তাজউদ্দীন আহমদের দূরদর্শিতাও ছিল একই রকম। শারমিন আহমদের সন্তান তাজ ইমান আহমদ ইবনে মুনির বলেন, তাজউদ্দীন আহমদের জীবনদর্শন তাঁর জীবনে আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করে। যে সোনার বাংলা আমাদের অধরা রয়ে গেছে, সেটা অর্জন করতে সাহসিকতা নিয়ে আমাদের দাঁড়াতে হবে। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষাবিদ ও চিন্তক আবুল কাসেম ফজলুল হক, মানবাধিকারকর্মী হামিদা হোসেন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফৌজিয়া মোসলেম, কামাল সিদ্দিকী, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান,সুনামগঞ্জের জুলাই যোদ্ধা জহুর আলী ও লেখক সোহান রিজওয়ান। সভায় সুনামগঞ্জের জুলাই যোদ্ধা জহুর আলী বলেন,আমাদের জাতীয় জীবনের সবচেয়ে বড় গৌরবোজ্জল অর্জন হচ্ছে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ। আজ আমরা যারা জুলাই যুদ্ধ করেছি ঠিক এমন এক সময়ে ও বয়সে বৈষম্যের বিরুদ্ধে বাংলার দামাল ছেলেরা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে এদেশকে স্বাধীন করেছিলেন। তিনি বলেন,আমার অকাল প্রয়াত পিতাও একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়ে রনাঙ্গনে বীরত্বের সাথে লড়াই করেছিলেন। কিন্তু দারিদ্র্যতার কারণে তার নামটি দায়িত্বশীলরা তালিকাভূক্ত করেননি। মুক্তিযুদ্ধের ৫৪ বছর পরও সুনামগঞ্জের অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা তাদের নাম তালিকাভূক্ত করতে পারেননি। অন্যদিকে অনেক ভূয়া লোকরা মুক্তিযোদ্ধা সেজে সরকারী সুবিধা ভোগ করে যাচ্ছে। এর ফলে দীর্ঘদিনের বঞ্চনা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে অনেক মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি নাতনিরাও জুলাই যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিলেন। আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে ঐক্যবদ্ধভাবে ধারন করে আগামী দিনের নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাই।
বিষয়: #আহমদ #জন্ম #তাজউদ্দীন #শতবার্ষিকী #সম্মাননা