

সোমবার ● ২৮ জুলাই ২০২৫
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » দিনে ‘অচল’ ড্রেজার রাতে সচল
দিনে ‘অচল’ ড্রেজার রাতে সচল
“দিনে ‘অচল’ ড্রেজার রাতে সচল ছাতকে রাজেন্দ্রপুর মৌজায় শত শত একর ভুমির জায়গার মাটি কেটে বালু উত্তোলন”
,ছাতক সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার নৌপথ। সুরমা নদীর এই নৌপথে এখন পাহারা দেয় নৌপুলিশ। কয়েক বছর আগেই ছাতক নৌবন্দর ঘোষণার পর নৌপুলিশও মোতায়েন করা হয়। নৌপুলিশের পাশাপাশি সেখানে থানা পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের নজরদারি রয়েছে। তবুও বন্ধ হচ্ছে না বালু লুটপাট। প্রতিরাতে চালানো হচ্ছে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে লাখ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলন করে কোম্পানীগঞ্জ নিয়ে যাচ্ছে।
নৌপথকে ঘিরে ছাতক উপজেলার ইসলামপুর ইউপির রাজেন্দ্রপুর মৌজায় ৫টি দাগের ১০৮,৯০একর আমন রকম ভুমি ছাতক পৌর শহরের গনক্ষাই গ্রামে আকিক মিয়া চৌধুরীর রেকর্ড জায়গার মালিক ও দখলে রয়েছে।
তার মালিকাধিন জায়গায় পিয়াইন নদীর বালু মহালটি সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ থানার অধিনন্থ এই বালু মহালটির পাশে সুনামগঞ্জ জেলাধীন ছাতক উপজেলায় অবস্থিত পিয়াইন নদী বালু মহালের ইজারাদার আবু সাইদ অভির নেতৃত্বে ক্ষমতার দাপটে একটি সিন্ডিকেট চত্রেুর মাধ্যমে তার স্বত্ব দখলীয় তপসীল ভুমি থেকে অবৈধ ভাবে রাতে অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে অনুপ্রবেশ করে নিষিদ্ধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে প্রতিরাতে লাখ লাখ টাকা বালু উত্তোলন করে আসছে।
কৃষকদের হাজার হাজার একর ফসলি ভুমি কেটে বালু ও ভিট বালু উত্তোলনের ঘটনায় ছাতক উপজেলার মিজানুর রহমান চৌধুরী মিজান বাদী হয়ে ইজারাদার সিলেট সিটি কপোরেশন দক্ষিন সুরমা সোবহানি ঘাট ৩১ মৌবন আবাসিক এলাকার আবু সাইদ অভিকে আসামী করে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে।
গত ২৩ জুলাই সিলেট বিভাগীয় কমিশনার,সিলেট জেলা প্রশাসক,সিলেট জোনের ডিআইজি, নৌপুলিশ সুপার সিলেট অঞ্চল,সিলেট পুলিশ সুপার,কোম্পানীগঞ্জ নিবাহী কর্মকতা,সহকারি ভুমি কমিশনার কোম্পানীগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক,পুলিশ সুপার,ছাতক উপজেলা নিবাহী কর্মকতা,সহকারি ভুমি কমিশনার,ছাতক থানা ও নৌপুলিশ ছাতকসহ বরাবরে লিখিত আবেদন করেন।
প্রতিরাতে রাজেন্দ্রপুর মৌজায় হাজার হাজার একর ফসলি ভুমিতে গভীর রাতে অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে প্রশাসন ম্যানেজ করে বালু-পাথর উত্তোলন করে দীর্ঘদিন ধরে চলছে। এসব ফসলি জমি থেকে বালু মহালে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনে বাধা দেওয়ায় হামলা মামলার ভয় দেখান ইজারাদার বাহিনীর লোকজন বলে অভিযোগ করেন।
প্রশাসনের উদ্দ্যোগে অভিযান জরিমানা ও গ্রেপ্তারের পর এসব বালু লুটপাট প্রশাসন বন্ধ করতে পারছেন না। তারপরও বন্ধ হয়নি নদীপথে অবৈধ সব কার্যক্রম। বরং থেমে থেমে ও কৌশলে চলছে বালু উত্তোলন। এমনকি ড্রেজার মেশিনও ব্যবহার করছে বালুখেকোরা। প্রশাসনের পদক্ষেপের কারণে সুরমা,চেলা, সোনাই নদীতে সম্প্রতি বিভিন্ন স্থানে বালু উত্তোলন বন্ধ থাকলেও সোনাই ও নোয়াকুট এলাকার নদীর ড্রেজার মেশিনটি বন্ধ হয়নি।
ছাতক উপজেলার নৌপথের মধ্যবর্তী ওই এলাকায় বসানো ড্রেজার মেশিনটি কৌশলেই পরিচালনা করছেন প্রভাবশালীরা। দিনে বন্ধ রেখে রাতে চালু করা হয় সেটি। রাত হলেই ড্রেজার মেশিনটি খাবলে খায় ওই এলাকার ফসলি ও নদীর বুক। বিভিন্ন নামে ড্রেজার’ মেশিনটি অচল বলে থাকে বালুখেকোরা। প্রশাসনও তা বিশ্বাস করে হাত গুটিয়ে বসে আছে!
উপজেলা প্রশাসনের উদ্দ্যোগে একাধিক অভিযান চালিয়ে বালু বোঝাই নৌকাসহ দুই শ্রমিককে আটক প্রায় ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। অথচ ‘অচল বা নষ্ট’ ড্রেজারটি প্রতিরাতে সচল হয়ে ওঠার প্রমাণ মিলেছে এলাকা।
গত ২৭ জুলাই সরেজমিন দেখা যায়, দিনে ড্রেজারটি রাখা হয়েছে কোম্পানীগঞ্জ চাটিবহর ও আমবাড়ি গ্রামের পশ্চিম এলাকার পিয়াইন নদীতে।এসব থেকে নদী এলাকায় গেলে সেটি চোখে পড়ে। ড্রেজারের সঙ্গে রাখা হয়েছে ছোট আরেকটি নৌকাও। যা দিয়ে শ্রমিকরা নদীর পাড়ে উঠে আসে।উপজেলা পিয়াইন ও সুরমা চেলা নদীর ঘাটের পাশে সেটি নোঙর করে রাখা হয়েছে। রাত হলেই তা স্থানান্তর করে রাজেন্দ্রপুর মৌজায় পাশে নিয়ে আসা হয়। সেখানে নদীতে নোঙর ফেলে চলে সারারাত বালু উত্তোলন করে। এভাবে নানা কৌশলে দীর্ঘদিন ধরে ড্রেজার মেশিনটি চালিয়ে আসছেন স্থানীয় কিছু অসাধু প্রভাবশালীরা।
বর্তমানে প্রতিরাতে ৩০-৪০টি নৌকা ও বাল্ক্কহেড বোঝাই করে বালু বিক্রি করা হচ্ছে। ড্রেজার চলাকালে নদীর তীরে লোকজনকে পাহারা দিতেও দেখা যায়। বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে এলাকার দুটি পক্ষও রয়েছে মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে।
কিন্তু পাউবোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে তাদের নাকের ডগায় প্রভাবশালীরা বালু উত্তোলন করছে। দেখলে মনে হবে, পাউবোর লোকজন ড্রেজিং করছে।
এব্যাপারে অভিযোগকারি মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেন, আমরা বারবার প্রতিবাদ করছি তা বন্ধ করার জন্য। বিভাগীয় কমিশনার,দু জেলা প্রশাসক,নৌপুলিশ সুপার,কোম্পানীগঞ্জ,ছাতক
উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি। কিন্তু কাজ হচ্ছে না। প্রতিরাতেই লক্ষাধিক ঘনফুট বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে নৌপুলিশের ইনচাজ আনোয়ার হোসেন নদীপথে তাদের নজরদারি রয়েছে বলে উল্লেখ করে বলেন ছাতক যারা নদীপথে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
এব্যাপারে ইজারাদার আবু সাইদ অভি তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন আমার ইজারাদার বাইরে কোন ড্রেজার লাগানো
হয় না।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাস অভিযোগ প্রাপ্তির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন অভিযোগটি তদন্ত করে আইনানুগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উপজেলা প্রশাসনের উদ্দ্যোগে ইতোমধ্যে একাধিক অভিযান করে জরিমানা ও ড্রেজারও জব্দ করা হয়। ফসলি জমি কেটে এসব এলাকার ড্রেজার মেশিন কারা চালাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন উপজেলা প্রশাসন।
বিষয়: #অচল #ড্রেজার #দিন #রাতে #সচল