

মঙ্গলবার ● ৮ জুলাই ২০২৫
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » জামায়াত একক বিএনপি অর্ধ ডজন প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশী
জামায়াত একক বিএনপি অর্ধ ডজন প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশী
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন খুলনা-৬
::মহানন্দ অধিকারী মিন্টু:: আসন্ন জাতীয় ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে খুলনা-৬ (পাইকগাছা-কয়রা) নির্বাচনী এলাকায় সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীরা এলাকায় জানান দিচ্ছেন। একক প্রার্থী নিয়ে জামায়াতে ইসলামী ফুরফুরে মেজাজে থাকলেও বিএনপি প্রায় অর্ধ ডজন সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নিয়ে বাড়তি চাপে রয়েছে। যদিও দীর্ঘদিন পর ভোট দিতে পারবেন-এমন প্রত্যাশায় ভোটারদের সাথে নিয়ে এসব প্রার্থীরা উত্তাপ ছড়াচ্ছে ভোটের আগে মাঠের লড়াইয়ে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও পরে দলটি নিষিদ্ধ হওয়ার পর মূলত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির প্রার্থীরা রীতিমত কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন আসনটিতে। চায়ের টেবিল থেকে ভ্যানস্ট্যান্ড পর্যন্ত সবখানে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে। তবে এক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামী আগেভাগেই তাদের একক প্রার্থী ঘোষণা করায় নেতা-কর্মী ও সমর্থকসহ মাঠ কাঁপাচ্ছেন তাদের প্রার্থী কেন্দ্রীয় সূরা সদস্য ও খুলনা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ। সেক্ষেত্রে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ভীঁড়ে এরপর থেকে নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে জাতীয় ও দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচীতে অংশগ্রহণের পাশাপাশি নিয়মিত বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানে মতবিনিময় সভায় মিলিত হয়ে নিজের অবস্থান জানান দিচ্ছেন। অন্যদিকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি আসনটিতে এখন পর্যন্ত কাউকে চুড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা না করায় সেখানকার অন্তত ৭ জন সম্ভাব্য প্রার্থী দলীয় ও জাতীয় বিভিন্ন কর্মসূচীতে অংশ নিচ্ছেন। দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশায় অনেকেই আবার ব্যাক্তি প্রাচার-প্রচারনায় অংশ নিয়ে নিজের অবস্থানসহ প্রার্থীতার বিষয়টি জানান দিচ্ছেন। অধিকাংশ প্রার্থীরা দলীয় নেতা-কর্মীদের বিশেষ কাউকে ছাড়াই প্রচার-প্রচারনায় অংশ নিচ্ছেন। আবার অঞ্চল ভিত্তিক তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের বগলদাবা করে প্রচার-প্রচারনা ও দলীয় প্রোগ্রামে অংশ নিতে দেখা যাচ্ছে কারো কারো। তবে এক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছেন দলীয় পদ-পদবীধারীরা। কেননা, পদ থাকায় উপজেলার পাশাপাশি পৌরসভা ও ইউনিয়ন থেকে ওয়ার্ড পর্যন্ত নেতা-কর্মীদের একটা বড় অংশ তাদের সাথে দেখা যাচ্ছে। তবে সবার একটাই কথা, দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষেই কাজ করবেন সবাই। এখন পর্যন্ত বিএনপি থেকে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন, খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু, জিয়া ফাউন্ডেশনের ডাইরেক্টর (প্রোগ্রাম) আমিরুল ইসলাম কাগজী, পাইকগাছা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ডা. আব্দুল মজিদ, জেলা বিএনপির যুগ্মআহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মোমরেজুল ইসলাম, এম জুবায়ের আহমেদ ও এস রহমান। খুলনা জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব মনিরুল হাসান বাপ্পির অনুসারীদের মধ্যেও তার প্রার্থীতা নিয়ে জোর গুঞ্জণ রয়েছে। এছাড়া হেভিওয়েটদের মধ্যেও আসনটি থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন কেউ কেউ এমন গুঞ্জণও রয়েছে। যদিও তেমন কেউ প্রার্থী হিসেবে আতœপ্রকাশ না করলেও দলীয় ও তার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের মধ্যে এমন গুঞ্জণ জোরালো রয়েছে। এমনকি উপজেলা, পৌরসভা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যন্ত রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয়ে যোগাযোগ রয়েছে তাদের। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে আসনটি বরাবরই তাদের অনুকূলে ছিল বলে দাবি করা হচ্ছে, এলাকার সর্বস্তরের মানুষ তাদের মনোনীত প্রার্থী আবুল কালাম আজাদকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে গ্রহণ করছে। অন্যদিকে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি দীর্ঘ দিন জোটবদ্ধ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় শরীকদল আসনটি জামায়াতকে ছাড় দেওয়ায় প্রার্থী দিতে পারেনি। ১৯৯৬ সালে প্রার্থী দিলেও মূলত আওয়ামীলীগের প্রার্থীকে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করায় সাধারণ ভোটাররা জামায়াতের দিকেই ঝুঁঁকে পড়ে। বিশেষ করে আওয়ামী এন্ট্রি ভোটাররা জামায়াতের প্রার্থী অধ্যক্ষ শাহ মুহাম্মদ রুহুল কুদ্দুসকেই ম্যান্ডেট দেয়। ঐ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী জি এ সবুর ১৬,৮৩৫ ভোট পান। আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ্যাড. শেখ মো: নূরুল হক ৬৬,০৩৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হলেও জামায়াতের প্রার্থী শাহ্ মুহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস ৪৯,০২৩ ভোট পেয়ে নিকটতমপ্রতিদ্বন্দি ছিলেন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী মঈন উদ্দিন সরকার ৬,৬০২ ভোট পেয়ে চতুর্থ অবস্থানে ছিলেন। ঐ নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থী রুহুল কুদ্দুস ৫৮,৩৬৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী ও নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ নূরুল হক ৫৭,৬৬৯ ভোট পান। এরপর আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিহীন নির্বাচনে বিএনপির সাথে জামায়াতের জোট অটুট না থাকার সম্ভাবনায় বিএনপির পক্ষে অনেকেই প্রার্থী হতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। বিএনপির দাবি, সময়ের পরিক্রমায় আসনটিতে বিএনপির অবস্থান অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে শক্ত ও সংগঠিত। তাছাড়া আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বাইরে থাকলেও সনাতনীদের প্রায় ১ লক্ষ ২৮ হাজার ভোটার রয়েছে আসনটিতে। তৃণমূলের এসব ভোটাররা বুথমূখী হলে তাদের সমর্থন যে কারো বিজয়ের পথে টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে। সবকিছু মিলিয়ে বিএনপিই এগিয়ে রয়েছে বলে মনে করছেন তারা। তবে এক্ষত্রে প্রার্থীকে অবশ্যই নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দা ও সাদা ইমেজের জনবান্ধব হতে হবে। নির্বাচন অফিসের তথ্যানুযায়ী, এ আসনটিতে ১৯৭৩ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ৮টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যথাক্রমে ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের স ম বাবর আলী, ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারী নির্বাচনে বিএনপির এ্যাড. শেখ রাজ্জাক আলী নির্বাচিত হন। এরপর সীমানা পরিবর্তনের পর ১৯৮৬ সালের ৭ মে নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মোমিন উদ্দিন, ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জহুরুল হক, ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারী নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী অধ্যক্ষ শাহ মুহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী নির্বাচনে আসনটি শূণ্য থাকে। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শেখ মো: নূরুল হক, ২০০১ সালের ১ অক্টোবর জামায়াতের শাহ মুহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস এবং ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ্যাড. সোহরাব আলী সানা নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর ও ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি বিতর্কিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা যথাক্রমে প্রয়াত এ্যাড. শেখ মো: নূরল হক, আক্তারুজ্জামান বাবু ও সর্বশেষ মো: রশীদুজ্জামান নির্বাচিত হন। জামায়াত নেতা মাওলানা আবুল কালাম আজাদ বলেন, অবাধ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর বিজয় নিশ্চিত। খুলনা-৬ (কয়রা-পাইকগাছা) আসনটি পাইকগাছা উপজেলার ১০টি, কয়রা উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও ১টি পাইকগাছা পৌরসভা নিয়ে গঠিত। প্রায় ৪ লাখ ভোটার অধ্যুষিত এ আসনে আওয়ামী লীগ বিহীন আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থীতা ঘোষণা করে প্রস্তুতি নিচ্ছেন জামায়াতসহ বিএনপির অন্তত ৮ জন প্রার্থী। স্বাধীনতা পরবর্তী মোট ১২টি নির্বাচনের সর্বশেষ ২০০৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত চারটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হাতে থাকা এ আসনটি পূণরুদ্ধারে প্রাণপন চেষ্টা করছে জামায়াত ইসলামী। অন্যদিকে তীব্র প্রতিদ্বন্দিতার মুখে নিজেদের অবস্থান ও সমর্থনের বিষয়টি জানান দিতে বিএনপিও মরিয়া। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় নির্বাচন থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ১২টি নির্বাচনে আওয়ামীলীগ ৬ বার, জামায়াত ইসলামী ২ বার, জাতীয়পার্টি ১ বার, বিএনপি ১ বার, স্বতন্ত্র ১ বার নির্বাচিত হয়। তবে ২০২৪ এর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সুন্দরবন উপকূলীয় জনপদের গুরুত্বপূর্ণ আসনটিতে নতুন উদ্যমে বেড়ে ওঠা বিএনপি দীর্ঘ সময়ের রাজনৈতিক মিত্র জামায়াতের উপর ঠিক কি ধরনের প্রভাব ফেলবে তার বহুলাংশে নির্ভর করছে প্রার্থীতার পাশাপাশি সনাতনী, নতুন ও ভাসমান ভোটারের উপর। তবে তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আগামী নির্বাচন পর্যন্ত। আপাতত সর্বাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রাথী নিয়ে বিএনপি ও একক প্রার্থী নিয়ে জামায়াত ইসলামী ভোটের আগে মাঠের লড়াইয়ে পূর্ণমাত্রায় নির্বাচনি উত্তাপ ছড়াচ্ছেন।
বিষয়: #খুলনা-৬ #সংসদনির্বাচন