

শনিবার ● ২৬ জুলাই ২০২৫
প্রথম পাতা » অপরাধ » কাগাবলা বাজারে ইজারার ৩ গুণ ভূমি জবরদখল : ইজারা বাতিলের দাবী স্থানীয়দের
কাগাবলা বাজারে ইজারার ৩ গুণ ভূমি জবরদখল : ইজারা বাতিলের দাবী স্থানীয়দের
জিতু তালুকদার, মৌলভীবাজার ::: একসনা ইজারাপ্রাপ্ত ভূমির রকম পরিবর্তন এবং পাকা ও আধাপাকা স্থাপনা নির্মান বেআইনী হলেও, জেলা পরিষদ থেকে একসনা ইজারাপ্রাপ্ত মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আপার কাগাবলা বাজারের যাত্রীছাউনীসহ ইজারার ৩ গুণ ভূমি জবরদখলে নিয়ে আধাপাকা দোকানঘর তৈরী করে ভাড়া দিয়েছেন বর্তমান কাগাবলা ইউনিয়ন জামায়াত সভাপতি ফয়েজ উদ্দিনের পিতা আনোয়ার মিয়া ও বড়ভাই কবির উদ্দিন।
ফলে, সংলগ্ন মার্কেটের ব্যবসায়ীক সমস্যা, পার্কিং সমস্যা, জনচলাচলে বিঘ্ন, যানজট বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে, উক্ত ইজারা বাতিলের দাবীতে স্থানীয়রা জেলা পরিষদ প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। এর প্রেক্ষিতে নির্দেশিত হয়ে আমতৈল ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর প্রতিবেদন প্রেরণ এবং জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী অফিসার ২১ জুলাই সোমবার সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
জেলা পরিষদে দায়েরী অভিযোগ ও স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে- আনুমানিক দুইযুগ পূর্বে আনোয়ার মিয়া ও তার পুত্র কবির উদ্দিন সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি অফিস, সদর এসি (ল্যান্ড) অফিস ও জেলা পরিষদ অফিসের সংশ্লিষ্ট লোকজনকে ম্যানেজ করে জেলা পরিষদের মালিকানাধীন আপার কাগাবলা বাজারস্থ কাগাবলা মৌজাধীন ১২৮নং জেএলভূক্ত ১নং খতিয়ানের ২৫৫১নং এসএ এবং ৩১৬২নং আর এস দাগের ৯৬০ বর্গফুট (প্রায় ০২.২১ শতাংশ) ভূমি ইজারা বাগিয়ে নিয়ে অদ্যবধি ভোগ-দখল করে আসছেন। এ দীর্ঘ সময়ের মধ্যে আরও একাধিক ব্যক্তি আরও অধিক ইজারামূল্যে উক্ত ভূমি ইজারা চেয়ে আবেদন করলেও, জেলা পরিষদ রহস্যজনকভাবে অন্য কাউকে ইজারা না দিয়ে আনোয়ার মিয়া ও কবির উদ্দিনের নামেই ইজারা বহাল রেখে চলেছে। এর নেপথ্যে রয়েছে কবির উদ্দিনের ম্যানেজকৃত জেলা পরিষদ অফিসের সংশ্লিষ্ট লোকজনের কলকাঠি নাড়াচাড়া।
ইজারা বাগিয়ে নেয়ার পর তারা উক্ত ভূমিতে কাঁচা দোকানঘর তৈরী করে ভাড়া ব্যবসার পাশাপাশি ক্রমশঃ সীমানা বর্ধিত করে করে যাত্রীছাউনীসহ আনুমানিক ০.০৭ শতাংশ ভূমি দখলে নিয়েছেন। গত ৫ আগষ্ট ২০২৪ সালে রাষ্ট্রীয় পট পরিবর্তন এবং ঈদুল আজহা ২০২৫ এর টানা ১০ দিনের ছুটির সুযোগে, কাঁচা দোকানঘরগুলোকে রাতারাতি আধাপাকা করে নিয়েছেন। এসময় স্থানীয়রা আপত্তি জানালেও তারা গ্রাহ্য করেননি। এর প্রেক্ষিতেই স্থানীয়রা জনস্বার্থে জেলা পরিষদ প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন।
অভিযোগকারীদের মধ্যে রুহেন মিয়া, সজ্জাদুর রহমান ও জাকারিয়া আহমদ বলেন- আমাদের দায়েরী লিখিত অভিযোগই আমাদের বক্তব্য। গত কিছুদিন আগে তারা দোকানঘর পাকা করছেন। আমরা উক্ত ভূমির ইজারা বাতিল করার দাবী জানাচ্ছি।
অভিযোগের সত্যতা যাচাই ও স্থানীয়দের বক্তব্য জানতে ৫ সদস্যের সাংবাদিক দল ২২ জুলাই মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিন পরিদর্শন করে যাত্রীছাউনীসহ আনুমানিক ০.০৭ শতাংশ ভূমিতে পিতা-পুত্রের দখল ও সদ্য আধাপাকা করা দোকানঘর দেখেছেন।
জানতে চাইলে ইজারাদার আনোয়ার মিয়ার পুত্র ও কবির উদ্দিনের ছোটভাই আপার কাগাবালা ইউনিয়ন জামায়াত সভাপতি ফয়েজ উদ্দিন বলেন- আমরা উক্ত ভূমি জেলা পরিষদ থেকে ইজারা নিয়ে প্রায় ২৫ বছর যাবৎ ভোগ-দখলে আছি। আমরা অবৈধভাবে কোনকিছু করিনি। বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও সেক্রেটারীর অনুমতি নিয়ে করেছি।
কাগাবগা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান (জিতু) অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন- ইজারাকৃত জায়গা বাদে বাকি জায়গা অবমুক্ত করে দেয়া হোক, এটাই এলাকাবাসীর দাবী।
কাগাবলা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সেক্রেটারী জুবেল আহমেদ বলেন- তারা ইজারা নিয়ে বহুদিন যাবৎ ভোগ-দখলে আছে। কতটুকু ভূমি ইজারা পেয়েছে জানিনা। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- ভূমির মালিক জেলা পরিষদ, ইজারা দিয়েছে জেলা পরিষদ, কোন অনুমতি দেয়ার মালিকও জেলা পরিষদ। এখানে আমরা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও সেক্রেটারী কোনকিছুর অনুমতি দেয়ার এখতিয়ার নেই। এসময় সেখানে উপস্থিত আপার কাগাবালা ইউপির সাবেক মেম্বার নজির উদ্দিন বলেন- বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সেক্রেটারী জুবেল আহমেদের বক্তব্যের হুবহু একই বক্তব্য আমারও। জাবেদ মিয়া বলেন- এ জায়গা প্রায় ২৫ বছর যাবৎ তাদের দখলে আছে।
এছাড়া, নাম-পরিচয় গোপন রেখে কয়েকজন জানান- আপার কাগাবালা ইউনিয়ন জামায়াত সভাপতি ফয়েজ উদ্দিন কাঁচা দোকানঘরগুলো রাতারাতি আধাপাকা করিয়েছেন।
বিষয়: #ইজারা #কাগাবলা #জবরদখল #দাবী #বাজার #বাতিল