

রবিবার ● ১৮ মে ২০২৫
প্রথম পাতা » অপরাধ » অবৈধ ‘জনতারবাজার’ বন্ধে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ
অবৈধ ‘জনতারবাজার’ বন্ধে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ
জিতু তালুকদার :: (জনতারবাজার ঘুরে এসে) ঃ হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার ১১নং গজনাইপুর ইউনিয়নস্থিত অবৈধ ‘জনতারবাজার’ পশুর হাট চালু রেখে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করছে একটি অসাধু চক্র। ‘পরিচালনা কমিটি’ নামের ওই অসাধু চক্র জেলা প্রশাসনের অপসারণ নির্দেশনা অমান্য করে দীর্ঘদিন ধরে বাজারটি চালিয়েই যাচ্ছে। নবীগঞ্জের ইউএনও হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বললেও, কোন ব্যবস্থাই নেয়া হচ্ছেনা।
জানা গেছে- গত ৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. মো. ফরিদুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ৩১ জানুয়ারির মধ্যে অবৈধ বাজারটি অপসারণ এবং সেখানে পুণরায় বাজার বসালে মহাসড়ক আইন, ২০২১ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে মর্মে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তির বিলবোর্ড-সাইনবোর্ড সাঁটানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে নির্দেশনা দেন। এর প্রেক্ষিতে উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক জেলা প্রশাসনের নিদের্শনা উল্লেখ করে সাঁটানো সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- কোনো ব্যক্তি সরকারের অনুমতি ছাড়া কোনো হাট পরিচালনা করলে বা অবৈধভাবে হাট পরিচালনায় সহযোগীতা করলে অথবা মহাসড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে হাট-বাজার আইন ২০২৩ ও মহাসড়ক আইন ২০২১ অনুসারে দন্ডনীয় অপরাধ হবে। আইন অমান্যকারীকে সংশ্লিষ্ট আইন মোতাবেক কারাদন্ড এবং অর্থদন্ড প্রদান করা হবে। কিন্তু, গত ২৮ জানুয়ারী উক্ত সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তির সাইনবোর্ডটি ছিড়ে ফেলা হয়। ধারণা করা হচ্ছে- এটা অবৈধ জনতারবাজার পরিচালনা কমিটি নামের ওই অসাধু চক্রেরই কাজ।
একাধিক গোপন সূত্র জানিয়েছে- অবৈধ জনতারবাজারটি বসে প্রত্যেক সপ্তাহের শনিবার ও সোমবার। তবে, শনিবার হচ্ছে সপ্তাহের প্রধান বাজারবার। অবৈধ জনতারবাজারের মূল নিয়ন্ত্রণকারী হচ্ছেন মামদপুর গ্রামের মৃতঃ উমরা মিয়ার পুত্র আওয়ামীলীগ নেতা ও গজনাইপুর ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান আবুল খায়ের গোলাপ (গোলাপ চেয়ারম্যান)। মানবতা বিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘদিন কারাহাজতে থাকাবস্থায় ২৪ এর ৫ অগষ্টে রাষ্ট্রীয় পট পরিবর্তনের সুযোগে কারামুক্ত হয়ে তিনি আবারও স্বমূর্তিতে আবির্ভূত হয়েছেন। শুরু করেছেন আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবজির মহোৎসব। এর প্রমান জনতারবাজার নিয়ন্ত্রণ ও চাঁদাবাজি।
জনতারবাজারে নিজ আধিপত্য রক্ষা ও চাঁদা আদায়ের জন্য তার আজ্ঞাবহ বিশ্বস্থ গজনাইপুর গ্রামের মুজিব মিয়াকে প্রধান করে শেখরপাড়া গ্রামের কদ্দুছ মিয়া, মামদপুর গ্রামের কাপ্তান মিয়া, কাইস্ত গ্রামের তফিক মিয়া, শংকরসেনা গ্রামের ছনর মিয়া, কদ্দুছ মিয়া ও আব্দুল নুর প্রমুখকে নিয়ে গঠিত ‘জনতারবাজার পরিচালনা কমিটি’ নামে গঠিন করা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তিনি অবৈধ জনতারবাজার পরিচালনা ও চাঁদা আদায় করে আসছেন। এ সিন্ডিকেটের প্রধান মুজিব মিয়া স্থানীয়ভাবে ‘হাবিলদার’ নামে পরিচিত। জনতারবাজারে আগত ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বিনা রশিদে আদায়কৃত চাঁদার অর্থ মুজিব মিয়া নামের উক্ত হাবিলদারের নিকট জমা দেয়া হয় এবং সিন্ডিকেটের নেতা ও আওয়ামীলীগের নেতা গোলাপ চেয়ারম্যান নিজেসহ সিন্ডিকেটের সদস্যদের মধ্যে ভাগ-বন্টন করেন। পরিচয় গোপন রেখে গবাদি পশুর ক্রেতা সেজে প্রধান বাজারবার গত ১০ মে শনিবার জনতারবাজার পরিদর্শনকালে কয়েকজনের বাজারটি নিয়ন্ত্রণ এবং বিনা রশিদে চাঁদা আদায়ের সত্যতা নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশের পর গতকাল ১৭ মে পরিচয় গোপন রেখে জনতারবাজার ঘুরে আগের লোকজন ছাড়াও শেখরপাড়া গ্রামের আবু মিয়া, কাইস্তগ্রামের কাজল মিয়া ও জাহির আলীসহ নতুন কয়েকজনকে (সবার নাম জানা সম্ভব হয়নি) বাজার নিয়ন্ত্রণ এবং বিনা রশিদে চাঁদা আদায়ে সহযোগীতা করতে দেখা গেছে। দীর্ঘদিন ধরে পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও, প্রকাশ্যে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক সংলগ্ন স্থানে বাজার বসানো ও বিনা রশিদে চাঁদা আদায় চলমান থাকা সত্তেও প্রশাসনিক কঠোর পদক্ষেপ না নেয়ায় বিতর্কিত হচ্ছে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসন। এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসনের দৃষ্টি দেয়া জরুরী।
বিষয়: #জনতারবাজার/হবিগঞ্জ/দৃষ্টি আকর্ষণ/জেলা প্রশাসন