

সোমবার ● ৭ জুলাই ২০২৫
প্রথম পাতা » বিশেষ » স্মারকগ্রন্থ “কালের অভিজ্ঞান” ইতিহাসের এক বিস্মৃত অধ্যায়ের পুনরুদ্ধার
স্মারকগ্রন্থ “কালের অভিজ্ঞান” ইতিহাসের এক বিস্মৃত অধ্যায়ের পুনরুদ্ধার
মোঃ সাদিকুর রহমান রুমেন ::
সার্কেল পঞ্চায়েত ব্যবস্থা বা সরপঞ্চ পদ্ধতি হল ভারতীয় উপমহাদেশের স্থানীয় সরকারের প্রাচীনতম শাসন ব্যবস্থা। প্রাচীন ভারতের গ্রামীণ শাসন ব্যবস্থার মূল ভিত্তি ছিল পাঁচজন নির্বাচিত বা মনোনীত ব্যক্তিকে নিয়ে গঠিত গ্রামীণ স্বায়ত্বশাসন প্রতিষ্ঠান পঞ্চায়েত। এই প্রতিষ্ঠানের হাতে ন্যস্ত ছিল গ্রামগুলির প্রশাসন, আইন প্রণয়ন ক্ষমতা ও সালিশের মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি, উন্নয়ন ও আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্ব। মোগল আমল পর্যন্ত ভারতের গ্রামগুলো এই পঞ্চায়েত ব্যবস্থা দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হত। কিন্তু মোঘল সাম্রাজ্যের পতনের পর পঞ্চায়েত প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাটি বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতের এই সুমহান ঐতিহ্যশালী শাসন ব্যবস্থার সম্পূর্ণ অবসান ঘটে। তার বদলে ভারতে ব্রিটিশরা নিজ কায়েমি স্বার্থ টিকিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে ভারতের গ্রাম ও নগরাঞ্চলে ব্রিটিশ ধাঁচের এক স্বায়ত্বশাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করে।
১৮৫৭ সালের পরে ব্রিটিশরা পঞ্চায়েতকে ছোটখাটো অপরাধ দমন এবং গ্রামীণ জনপদের বিরোধ নিষ্পত্তি করার ক্ষমতা দিয়ে প্রথাটি পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করেছিল। তবে এই পদক্ষেপগুলো গ্রামীণ সম্প্রদায়ের হারানো ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের জন্য মোটেও পর্যাপ্ত ছিল না। প্রতিটি প্রশাসনিক থানা অনেকগুলো সার্কেল পঞ্চায়েতে বিভক্ত ছিল। সার্কেলের প্রধান নির্বাহীকে বলা হতো ‘সরপঞ্চ’। সরপঞ্চের পরিষদে তিনজন সরপঞ্চায়েত বা সহকারী সরপঞ্চ থাকতেন। সার্কেলের পঞ্চায়েতের সরপঞ্চ ও সহকারী সরপক্ষরা বেশ কিছু প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করতেন। চৌকিদার নিয়োগ, টেক্স কালেকশন, গ্রামীন উন্নয়ন, শিক্ষা, বিচার-সালিশ তথা আইন শৃঙ্খলা রক্ষা প্রভৃতি। থানা সার্কেল অফিসার বা প্রশাসনিক উচ্চ পদস্থ অফিসারের তত্ত্বাবধানে সরাসরি হাত তুলার মাধ্যমে সরপঞ্চ ও সহকারী সরপঞ্চ বা সরপঞ্চায়েত নির্বাচিত হতেন। সরপঞ্চ দুইজন চৌকীদার নিয়োগ করতে পারতেন। ক্ষেত্র বিশেষে বিচার কার্যক্রম পরিচালনার স্বার্থে সরপঞ্চ নিজস্ব ক্ষমতাবলে ৪/৫ জন ব্যক্তিকে সালিশ কার্যে নিয়োগ করতে পারতেন। সরপঞ্চের মেয়াদ ছিল তিন বছর। বিভিন্ন সময় সরপঞ্চ জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অর্পিত আদেশ পালন করতেন। সরপঞ্চ পদটি বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের পদমর্যাদা। সার্কেল পঞ্চায়েত পদ্ধতি বা সরপঞ্চ প্রথা নিয়ে খুব একটা গ্রন্থ বা জার্নাল নেই। সরকারিভাবেও তেমনটা সংরক্ষণ করা হয়নি এসব তথ্য। যা ছিল এর অনেকটাই ১৯৭১ সালে ধ্বংস হয়ে গেছে।
১৯৫৮ সালে পাকিস্তানের প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান সার্কেল পঞ্চায়েত প্রথা বিলুপ্ত করে মৌলিক গণতন্ত্র চালুর মাধ্যমে ইউনিয়ন কাউন্সিল গঠন করেন। ব্রিটিশ শাসনামলে নবীগঞ্জ থানা ৪১টি সার্কেল পঞ্চায়েতে বিভক্ত ছিল। বিভিন্ন দলিল দস্তাবেজ ও নথিপত্র ঘেটে এবং নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি বিশেষের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে নবীগঞ্জ উপজেলা সহ বৃহত্তর সিলেট জেলার (বর্তমানে সিলেট বিভাগ) ১২০ জন সরপঞ্চ এবং সহকারী সরপঞ্চের নাম ও সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরা হলো।
(উপরোক্ত পটভূমি মতিয়ার চৌধুরীর লেখা সম্পাদকীয় থেকে সরাসরি উৎকলিত)
সংকলনে বর্ণিত প্রেক্ষাপটে শ্রীমান সনাতন দাস ও শ্রীমান দীননাথ দাস (দুই সহোদর সরপঞ্চ) স্মারকগ্রন্থ ‘কালের অভিজ্ঞান’ প্রকাশনা ও সম্পাদনা এক যুগান্তকারী উদ্যোগ। গ্রন্থটি সম্পাদনা করেছেন প্রবাসী বরেণ্য সাংবাদিক লেখক ও গবেষক মতিয়ার চৌধুরী, সম্পাদনা পর্ষদে তাঁর অপরাপর সম্পাদনা সহযোগী: বিশিষ্ট লেখক সাংবাদিক ও শিক্ষাবিদ শাহ্ আতিকুল হক কামালী (ইংল্যান্ড প্রবাসী) সাংবাদিক ও কবি মোঃ গোলাম কিবরিয়া, সুলেখক গবেষক সামসুল আমিন, জার্নেল চৌধুরী জনি, সাংবাদিক গীতিকার মুজিবুর রহমান মুজিব ও তরুণ লেখক গবেষক: রত্নদীপ দাস রাজু।
ঐতিহ্যগত ও পারিবারিকভাবে মতিয়ার চৌধুরী, শাহ্ আতিকুল হক কামালী ও রত্নদীপ দাস রাজু , ঐতিহাসিক সরপঞ্চ শাসনামলে কতিপয় দায়িত্ব পালনকারীদের উত্তরসূরী। আলোচ্য স্মারকগ্রন্থের সম্পাদক মতিয়ার চৌধুরীর পারিবারে অনেকেই সরপঞ্চ ছিলেন, যেমন তাঁর পিতার চাচাত ভাই আব্দুল বছির চৌধুরী শায়েস্তা মিয়া (তৎপিতা শ্রীমান আব্দুল হেকিম চৌধুরী) নবীগঞ্জ ৩ নং সার্কেল কার্যকাল (১৯১৯-১৯২৪) এবং মতিয়ার চৌধুরীর আপন চাচা আব্দুল কদ্দুস চৌধুরী (মজু মিয়া) কার্যকাল (১৯২৫-১৯৩৪) পরবর্তীতে মতিয়ার চৌধুরীর পিতা, রফিকুল হক চৌধুরী কার্যকাল ১৯৩৫-১৯৪৩) এবং তাঁর অপর চাচা সফিকুল হক চৌধুরী কার্যকাল (১৯৪৪-১৯৫৮)।
একই পরিবারের তিন সরপঞ্চ, উপরোক্ত এই তিন ভাইয়ের পিতা শ্রীমান আব্দুর রহিম চৌধুরী, সর্ব সাং নুরগাঁও, নবীগঞ্জ হবিগঞ্জ। ঐতিহ্যবাহী নুরগাঁও চৌধুরী পরিবারের উল্লেখিত প্রত্যেকেই তৎকালে বিভিন্ন সময় সরপঞ্চ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
অন্যদিকে শাহ্ আতিকুল হক কামালীর পিতা: শাহ্ আব্দুল জব্বার কামালী ছিলেন সহকারী সরপঞ্চ, ১৭ নং সার্কেল কার্যকাল (১৯৪০-১৯৪৯) গ্রাম: শাহারপাড়া (খাদিম বাড়ি) উপজেলা জগন্নাথপুর জেলা সুনামগঞ্জ। প্রকাশ থাকা আবশ্যক সহকারী সরপঞ্চ শাহ্ আব্দুল জব্বার কামালী ৩৬০ আউলিয়ার অন্যতম হযরত শাহ্ কামাল রহঃ এর বংশধর এবং বংশানুক্রমে তিনি ছিলেন মাজারের খাদেম, তাঁর পরিবার অদ্যাবধি এই দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এছাড়া যাঁদের নামে এই স্মারকগ্রন্থ, শ্রীমান সনাতন দাস (১৮৫৫-১৯৩৮-) ও শ্রীমান দীননাথ দাস (১৮৬০-১৯৪৩) দুই সহোদর সরপঞ্চ, তাঁদের পিতা শ্রীমান গঙ্গারাম দাস (নবীগঞ্জ মুন্সেফ কোর্টের পেশকার) গ্রাম মুক্তাহার পরগনা জন্তরী , উপজেলা নবীগঞ্জ জেলা হবিগঞ্জ।
আলোচ্য গ্রন্থের ভূমিকা লিখেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সিলেট এর বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান ড. শরদিন্দু ভট্টাচার্য, এতে সন্দেহাতীতভাবে বইটির মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে। ভূমিকায় তিনি উল্লেখ করেছেন ‘বক্ষ্যমান গ্রন্থে উদ্বৃত বিভিন্ন নিবন্ধে সার্কেল ও সরপঞ্চ শব্দাবলি সম্পর্কিত বিভিন্ন অজানা তথ্য জানার সুযোগ পেয়েছেন তিনি। এবং এই ধরনের শেকড় সন্ধানী লেখা গ্রন্থবন্দী করার গুরুত্ব স্বীকার করেছেন। এছাড়া বর্ষীয়ান লেখক সাংবাদিক ও ইতিহাস গবেষক, মতিয়ার চৌধুরী সম্পর্কে তিনি লিখেন ‘ মতিয়ার চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে লন্ডনে অবস্থান করলেও বাংলাদেশের মাটি ও বাতাস তাঁকে প্রবলভাবে আকর্ষণ করে। ফলে তাঁর স্মৃতি ও সংগ্রহে থাকা অনেক বিলুপ্তপ্রায় বিষয় আশয় তিনি পুনরায় মানুষের সামনে তুলে ধরতে সদা আগ্রহী। সাংবাদিকতার পাশাপাশি একাধারে তিনি গবেষণাও করেন হৃতগৌরব বা প্রাচীন তথ্য পুনরুদ্ধার পূর্বক নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার প্রয়াস চালান।
এ সম্পর্কে সম্পাদক মতিয়ার চৌধুরীর ভাষ্য: ‘কাল শব্দের অর্থ ‘সময়’, অভিজ্ঞান শব্দের অর্থ ‘নিদর্শন’ বা ‘স্মারক’। আভিধানিকভাবে এর অর্থ দাঁড়ায় ‘সময়ের নিদর্শন’। অর্থাৎ স্মারকগ্রন্থে উল্লেখিত ব্যক্তিদ্বয় সহ যাঁদের জীবনী তুলে ধরা হয়েছে, তাঁদের কর্মজীবনকে মূল্যায়নে আনা হয়েছে। তাঁদের রেখে যাওয়া স্মৃতি চিহ্ন বা নিদর্শনকেই গ্রন্থিত করার চেষ্টা করেছি।’
গবেষণালব্ধ, তথ্যবহুল নিবন্ধ লিখে গ্রন্থকে সমৃদ্ধ করেছেন-সিলেটের বরেণ্য লেখক ও গবেষক মনোজবিকাশ দেবরায়, সিলেটের প্রখ্যাত সাংবাদিক ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক আল আজাদ। স্মারকগ্রন্থে শ্রীমান দীননাথ দাসের পৌত্র প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা রবীন্দ্র চন্দ্র দাসের জীবদ্দশায় লেখা একটা নিবন্ধ যুক্ত হয়েছে, যা অনেক উপাত্ত সমৃদ্ধ। শ্রীমান সনাতন দাস ও শ্রীমান দীননাথ দাসকে স্বয়ং দেখেছেন এবং তাঁদের সাথে মিশেছেন মুক্তাহার গ্রামের শতবর্ষী ব্যক্তি বাবু মুকুন্দ চন্দ্র দাসের (বটু দাস) সাক্ষাতকার থেকে অনুলিখনের মাধ্যমে চমৎকার তথ্য উঠে এসেছে। যা গ্রন্থকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। স্মারকগ্রন্থে কবি পৃথ্বীশ চক্রবর্তীর লেখা কবিতা ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে।
শ্রীমান সনাতন দাস ও শ্রীমান দীননাথ দাস এর জন্ম, কর্মজীবন ও জীবনাবসান অবিভক্ত ব্রিটিশ ভারতে। কাজেই সমকালীন সময়ের মানুষ বেঁচে না থাকার কারণে অনেক তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করা সম্ভব হয় নি। তাছাড়া পারিবারিক ও ব্যক্তিগত যে সকল দলিল-দস্তাবেজ ছিল, তা ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বর্বরদের লুটের ফলে সবকিছু নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। তারপরও গবেষণালব্ধ তথ্য-উপাত্ত যতটুকু উদঘাটন করা সম্ভব হয়েছে, তা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। গ্রন্থের পরিশিষ্ট-১ এ আমার গবেষণালব্ধ বৃহত্তর সিলেটের ১২০ জন সরপঞ্চ ও সহকারী সরপঞ্চের সংক্ষিপ্ত তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। যা ইতিপূর্বে বাংলাদেশ, ভারত, ইংল্যান্ড ও আমেরিকার বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। এসব ঐতিহাসিক তথ্য ইতিহাস প্রেমী পাঠক হৃদয়কে আনন্দিত করবে বলে আমার বিশ্বাস। ভবিষ্যতে কীর্তিমান এই সহোদর এবং স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার প্রাচীনতম সার্কেল পঞ্চায়েত পদ্ধতি ও সরপঞ্চদের নিয়ে আরো বিস্তর গবেষণা হবে, ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে এই প্রত্যাশা রইলো।
প্রাচীন আমলের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার এককালীন প্রসাশনিক কর্তা ও কর্তব্য পালনকারীদের সম্পর্কে নতুন প্রজন্মের জানার জন্য সন্দেহাতীতভাবে “কালের অভিজ্ঞান” বইটি এক মাইলফলক এবং আগামীর গবেষকদের কাছে এটি একটি আঁকড়গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত হবে নিশ্চয়ই। এই ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনের জন্য আমরা বর্ষীয়ান ইতিহাস গবেষক মতিয়ার চৌধুরীর প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাই, আর প্রাসঙ্গিকভাবে গ্রন্থের অপরাপর সম্পাদনা সদস্যদের প্রতিও আমাদের গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা রইলো। তাছাড়া যারা মুল্যবান তথ্যবহুল নিবন্ধ লিখেছেন বইয়ের বিষয়বস্তুর সমর্থনে, তাঁদের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি। অপরদিকে প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা রবীন্দ্র চন্দ্র (দীননাথ দাসের পৌত্র) এর লিখিত পূর্বজদের স্মৃতি তর্পন নিবন্ধটি আলোচ্যগ্রন্থ প্রস্তাবনা ও প্রসঙ্গকথার এক মুল্যবান দলিল।
পরিশেষে আমরা মনে করি এই গ্রন্থটি একটি সূচনা প্রয়াস, তথাপি এই প্রয়াসে নির্ভুল তথ্য সরবরাহ এবং সরপঞ্চ হিসেবে দায়িত্বভার অর্পণের যে সরকারী আদেশ, তা ম্যাজিস্ট্রেট এর সীলমোহর সহ একটি নমুনা, সম্পাদক মহোদয় আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন বইয়ের পাতায় ছাপিয়ে দিয়ে। এতে বোঝা’ই যায় কত গভীর নিবিড় যত্নে তাঁরা রত্ন তুলে এনেছেন আলোচ্যগ্রন্থে।
তথাপি কিছু বানান বিচ্যুতি বইটির সৌন্দর্যহানি করেছে অনেকাংশে।
তবুও ঐতিহাসিক মতিয়ার চৌধুরী তাঁর যোগ্য সহকারী সম্পাদক মন্ডলীর যোগসাজসে যে কর্ম সূচনা করেছেন বলা বাহুল্য তা একটি জাতীয় পর্যায়ের দায়িত্ববোধ থেকেই উৎসারিত। এটি এগিয়ে নিতে সারা বাংলাদেশ থেকে আগামীর গবেষকদের এগিয়ে আসতে হবে।
বিশেষ করে বৃহত্তর সিলেট বিভাগের মুষ্টিমেয় কিছু সরপঞ্চ ও সহকারী সরপঞ্চ এই বইয়ে উল্যেখ পেয়েছেন, যা সংখ্যায় ১২০ জন। সম্পাদক মতিয়ার চৌধুরী বলেছেন এই সব তথ্য উদঘাটন খুব দুরূহ, কারণ দীর্ঘদিন যাবত অনেক অঞ্চলে তিনি অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখেছেন, কেউ যদি বলে অমুক পরিবারের অমুক সরপঞ্চ বা সহকারী সরপঞ্চ ছিলেন, তবে এই পর্যন্তই বলে শেষ। তাঁর বংশধর বা পরিবারের লোকজন ও বলতে পারেনা, তিনি কত সালে কখন দায়িত্ব পালন করেছেন? এসব নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় গবেষণাকাজে। তথাপি জাত গবেষকরা গবেষণায় ক্ষান্ত দেন না (মতিয়ার চৌধুরীও দেননি) তিনি এই আলোচক (আমাকে) বলেছেন ভবিষ্যতে নবীন গবেষকদের যে-ই অগ্রসর হবেন, তিনি তাঁকে সহযোগিতা করবেন সাধ্যমত তথ্য দিয়ে। যেমন কেউ যদি বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের কোন এলাকার সরপঞ্চ ব্যক্তির নাম (যাঁরা এই গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হননি) এবং কার্যকাল উদঘাটন করতে পারেন, তবে তিনি কোন সার্কেলে দায়িত্ব পেয়েছিলেন সে তথ্য তিনি বলে দিতে পারবেন।
পরিশেষে আমরা বলবো, বিশিষ্ট গবেষক মতিয়ার চৌধুরী তাঁর গবেষণায় বৃহত্তর সিলেট বিভাগের মোটামুটি ১২০ জন সরপঞ্চ ও সহকারী সরপঞ্চায়েত এর নাম তুলে এনেছেন। এই অধ্যায়কে এগিয়ে নিয়ে যেতে সারা দেশে সরকারি উদ্যোগে গবেষণাকাজ আয়োজন ও পরিচালনা করা এখন সময়ের দাবি। এই বিলুপ্ত স্থানীয় সরকার কাঠামোর আওতায় (এটি চলমান থাকাকালীন) যাঁরা বিভিন্ন সময়ে সরপঞ্চ ও সহকারী সরপঞ্চায়েত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, তৎকালীন সমাজ উন্নয়নে ভূমিকা রেখে গেছেন, তাঁদের নাম পদবী তালিকাভুক্ত করা এবং সেই সময়ের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করা, আমাদের জাতিসত্তার চৈতন্যবোধের প্রয়োজনেই অত্যন্ত জরুরি। এবং এটি এখনই, এই কাজে বিলম্বনাস্তি, কারণ আর দেরি করলে বর্ণনাকারী লোকজন এর (পূর্ব প্রজন্মের) সন্ধান পাওয়া দুষ্কর হবে, কারণ মানুষ মরনশীল, বর্ষীয়ান লোকজন বয়সের ভারে নুয়ে পড়ছেন, ক্রমাগত মারা যাচ্ছেন, আর কমে যাচ্ছে আমাদের জীবন্ত তথ্য সূত্রের ভান্ডার। কার্যত বর্ষীয়ান প্রবীণ লোকজন ছাড়া এসব বিষয়ে কেউ প্রত্যক্ষ তথ্য দিতে পারবেন না। সুতরাং এখনই সময় দ্রুত উদ্যোগ নেওয়ার।
( আলোচক: মোঃ সাদিকুর রহমান রুমেন একজন (কবি লেখক ও গ্রন্থ সমালোচক) কবিতা কুটির, মরিয়ম ও রাশিদ মঞ্জিল জামালপুর জগন্নাথপুর সুনামগঞ্জ । রোববার: ০৬-০৭-২০২৫ ঈসায়ী। )
বিষয়: #অধ্যায়ের #অভিজ্ঞান #ইতিহাস #এক #কালের #পুনরুদ্ধার #বিস্মৃত #স্মারকগ্রন্থ