

মঙ্গলবার ● ১৫ জুলাই ২০২৫
প্রথম পাতা » খুলনা » টানা ভারী বৃষ্টিতে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি
টানা ভারী বৃষ্টিতে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি
পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায়
::মহানন্দ অধিকারী মিন্টু:: আষাঢ় মাসে শেষ দু’সপ্তাহে টানা ভারী বৃষ্টিতে খুলনার পাইকগাছায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এ মাসে প্রায় প্রতিদিন বৃষ্টি হওয়ায় খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষে চরম দুর্ভোগে পড়েছে। সুষ্ঠু নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় মাছের ঘের, পুকুর, জলাশয়, রাস্তা-ঘাট, ফসলের ক্ষেত ও বীজতলা তলিয়ে কোটি কোটি টাকার ক্ষতিসাধন হয়েছে। সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের তথ্যানুযায়ী ভারী বর্ষণে উপজেলার প্রায় ৩ হাজার ছোট-বড় চিংড়ি ঘের এবং ১ হাজার পুকুর তলিয়ে সাড়ে ৪ কোটি টাকার মাছ ভেসে গিয়ে ক্ষতিসাধন হয়েছে। এছাড়া প্রায় ২’শ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। পৌরসভাসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের চলাচলের রাস্তা তলিয়ে যাওযায় সাধারনের চলাচলের ভোগান্তি বেড়েছে কয়েকগুণ। সবচেয়ে ভোগান্তি বেড়েছে কর্মজীবী মানুষের। কাজ না থাকায় বিরুপ প্রভাব পড়েছে তাদের জীবন-জীবিকার উপর। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন সময় পরিচালিত উন্নয়ন কর্মকান্ডে সুষ্ঠু পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা চাপা পড়ায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন বদ্ধ খাস খালের ইজারা নিয়ে ইজারাদাররা খন্ড খন্ড বাঁধ দিয়ে পানি চলাচলের পথ বন্ধ করাও এর জন্য অনেকাংশে দায়ী। স্থানীয়রা বলছেন, গত কয়েক বছরে বর্ষা মৌসুমে একটানা এত বৃষ্টি হয়নি, তাই পূর্ব প্রস্তুতিও ছিলনা। দিন-রাতের বিরামহীন বৃষ্টিতে কার্যত সব ধরনের কর্মকান্ড ব্যাহত হচ্ছে। মানুষের দৈনন্দিন স্বাভাবিক কাজ ও জীবনযাপনের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। থমকে গেছে সরকারের নানামুখী উন্নয়ন প্রকল্পসহ দিনমজুরের প্রায় সব ধরনের কাজ। এতে চরম বিপাকে রয়েছেন কর্মজীবী মানুষ। গোখাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
ওয়াজেদ আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী তিন্নি মন্ডল বলেন, এখন পরিক্ষা চলছে। বাড়ি থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার হাঁটু সমান কাদা জলে ভিজে স্কুলে আসতে হচ্ছে। উপজেলার লতা ইউনিয়নের বাসিন্দা শিক্ষানবিশ আইনজীবী গোপাল সরকার বলেন, ১, ২, ৩ ও ৪ নং ওয়ার্ডের শত শত বিঘার ঘের, বাড়ি প্লাবিত হয়েছে। প্লাবিত হওয়ার প্রধান কারণ পানি নিষ্কাশনের প্রতিবন্ধকতা পোদা ও গয়েশ্বর নদীর ইজারা গ্রহীতা। এ কারনে কোটি কোটি টাকার ক্ষতির শিকার এ ইউনিয়নের ৭ গ্রামের মানুষ। চাঁদখালী ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডে ইউপি সদস্য মোঃ কাইয়ুম হোসেন জানান, সম্পূর্ণ ইউনিয়ন জলাবদ্ধ। ইউনিয়নের পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা একটা গেট। মানুষ চরম দুর্ভোগে আছে। পাইকগাছা নাগরিক অধিকার বাস্তবায়ন কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এ্যাড. প্রশান্ত মন্ডল বলেন, উপজেলায় জলাবদ্ধতার প্রধান কারণ বদ্ধ নদী, খাল ও বীল ইজারাগ্রহীতারা পানি নিষ্কাশনের স্লুইসগেট বন্ধ রাখছে। ইজারা বন্ধ করে জলাশয় উন্মুক্ত করার দাবি জানান তিনি। এ দিকে নাছিরপুর খাল উন্মুক্ত হওয়ায় হরিঢালী ইউনিয়নে জলাবদ্ধতা হয়নি। হরিঢালী ও কপিলমুনি ইউনিয়ন পানি নিষ্কাশনের পথ এ খাল। খাল উন্মুক্ত হওয়ায় উল্লসিত সাধারণ মানুষ প্রশাসনের নিকট এ ধারা অব্যাহত রাখার দাবি জানিয়েছেন। শ্রমজীবি অনেকেই বলেন, গত কয়েক দিন কাজ না হওয়ায় ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। এখন দোকানিরা আর বাকিও দিতে চাইছেননা। ভ্যান চালক মজিদ সরদার, জাহান আলী, জাহিদুল, রবীন্দ্র দাশরা জানান, অতিবৃষ্টিতে প্রধান সড়ক তলিয়ে থাকায় তারা ভ্যান চালাতে পারছেনা। এমনকি বিধ্বস্ত সড়কে পায়ে হেঁটে যাতায়াতও দূরুহ হয়ে পড়েছে। টানাবৃষ্টি ও বাক সরলীকরণের অজুহাতে খুলনা-পাইকগাছা-কয়রার প্রধান সড়কে বড়ো বড়ো গর্ত হওয়ায় সড়ক যোগাযোগ প্রায় সময়ে বন্ধ থাকছে। পাইকগাছা উপজেলা নার্সারি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ব্যবসায়ী কামাল হোসেন জানান, ভারী বৃষ্টিতে নার্সারির বেড জলাবদ্ধ হয়ে লক্ষ লক্ষ মাতৃ চারা মরে গেছে। ফলে কোটি কোটি টাকার লোকসান হবে নার্সারি ব্যবসায়ীদের। উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সৈকত মল্লিক জানান, বর্তমানে উপজেলায় ২ হাজার ৮৫০টি চিংড়ি ঘের এবং ৯’শ টি পুকুর তলিয়ে গেছে। এতে বিভিন্ন ধরনের মৎস্য ভেসে গিয়ে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি নিরুপন করতে আরো কিছু দিন সময় লাগবে। তবে ভারি বর্ষণে ৮২ হেক্টর জমির আমন বীজতলা, ১১৫ হেক্টর সবজি, ১৮ হেক্টর মরিচ ও ২ হেক্টর অফসিজন তরমুজ ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এছাড়া বর্ষা পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে পারে বলে জানান কৃষি বিভাগের এ কর্মকর্তা। দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম প্রধান মোকাম কপিলমুনির ইউপি চেয়ারম্যান (দায়িত্বপ্রাপ্ত) মো: ইউনুস আলী মোড়ল জানান, অতিবৃষ্টিতে কপিলমুনি হাট-বাজারের করুণ দশা হয়েছে। পাইকারাসহ খুচরা ক্রেতা-বিক্রেতারা অবর্ণনীয় দূর্ভোগের মধ্যে কাঁচামাল ক্রয়-বিক্রয় করছেন। দূর্ভোগ প্রশমনে তিনি কয়েকটি প্রকল্প দিয়ে হাট-বাজার কেন্দ্রীক উন্নয়ন কাজ এগিয়ে নেওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহেরা নাজনীন জানিয়েছেন, ভারি বর্ষণে এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনসহ সার্বিক জনদুর্ভোগ যাতে না বাড়ে এজন্য উপজেলা প্রশাসন কাজ করছে।
বিষয়: #কোটি #ক্ষতি #টাকার