

সোমবার ● ৭ জুলাই ২০২৫
প্রথম পাতা » নবীগঞ্জ » নবীগঞ্জে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে কয়েক হাজার মানুষ! আহত কয়েক শতাধিক! দোকানপাঠ ও হাসপাতাল ভাংচুর- লুটপাট! কোটি টাকার ক্ষতি! সেনা মোতায়েন
নবীগঞ্জে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে কয়েক হাজার মানুষ! আহত কয়েক শতাধিক! দোকানপাঠ ও হাসপাতাল ভাংচুর- লুটপাট! কোটি টাকার ক্ষতি! সেনা মোতায়েন
বুলবুল আহমেদ, নবীগঞ্জ(হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি:-
নবীগঞ্জ শহরে সম্প্রতি দফায় দফায় একাধিক সংঘর্ষের জের ধরে বিভিন্ন ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, বেসরকারী হাসপাতাল লুটপাট, ট্রাক, বাস , সিএনজি, ভাংচুর ও মোটরসাইকেলে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ব্যাপক ক্ষোভ ও উত্তেজনা ছিল গত ৪দিন ধরে। এ সকল ভাংচুর ও লুটপাটে অন্তত কয়েক কোটি টাকার ক্ষয় ক্ষতির হয়েছে। সোমবার (৭ জুলাই) সকালে আনমনু ও তিমিরপুর গ্রামের লোকজন পুর্ব ঘোষনা দিয়ে নিজ নিজ এলাকায় পূর্ব প্রস্তুতিমুলক মিটিং করেন। এর পরে বিকাল ৩ ঘটিকার পূর্ব ঘোষনা দিয়ে উভয় গ্রামের শত শত মানুষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে শহরের মারামারিটি সাম্প্রদায়িক ধাঙ্গায় রুপ নেয়। নবীগঞ্জ শহরের আশপাশের ৩/৪টি মৎস্যজীবি গ্রামের লোকজন এক পক্ষে, পূর্ব তিমির পুর, পশ্চিম তিমিরপুর ও চরগাও গ্রামের নারী পুরুষ দুটি পক্ষ হয়ে কয়েক হাজার মানুষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এতে সংঘর্ষ চলাকালে প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে উভয় পক্ষের কয়েক শতাধিক নারী- পুরুষ আহত ও তিমিরপুর গ্রামের ফারুক মিয়া নামের একজন নিহত হয়েছেন।
শহরের মধ্যে প্রায় দুই শতাধিক দোকান পাট ভাংচুর ও লুটপাট হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুনও দেয়া হয়। বিশেষ করে কয়েকটি মৎস্যজীবি সম্প্রদায়ের মালিকাধীন ইউনাইডেট হসপিটাল ভাংচুর, মাছ বাজার ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়েছে।
এছাড়া শহরের পশ্চিম বাজারে প্রতিটি মার্কেট ও দোকানপাট ভাংচুর লুটপাট হয়। এ যেন এক অরাজকতা শহর হয়ে ওঠে মাত্র ৪/৫ ঘন্টায় মধ্যে! খবর পেয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সংঘর্ষ থামানোর জন্য পুলিশ নিয়ে শহরে অভিযান চালিয়ে সবাইকে চত্রবঙ্গ করে দেন।
এদিকে, শহর জুড়ে এক ধরনের নৈরাজ্যকর অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিমত। গুজব ছড়িয়ে আনমনু ও তিমিরপুর গ্রামের মধ্যে বিদ্যমান উত্তেজনাকে উস্কানি দিয়ে সাম্প্রদায়িক ধাঙ্গা সৃষ্টি করে একটি বিশেষ মহল। কারন আনমনু গ্রাম হচ্ছে মৎস্যজীবি আর তিমিরপুর গ্রাম হচ্ছে সাধারন বাঙ্গালী।
গত শনিবার রাতের সংঘাতের পর পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে শহরের পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত করলেও পরদিন শনিবার সকাল থেকে আবারও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আনমুনু গ্রামের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নবীগঞ্জ শহর ও আনমনু পয়েন্টে জড়ো হতে থাকলে ব্যবসায়ীরা আতঙ্কে দোকানপাট বন্ধ করে দেন। এতে শহরে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। রবিবার সকালে ও রাতে সংঘর্ষ ও চোরাগুপ্তা হামলা হয়। এর জের ধরে সোমবার সকালে উভয় গ্রামের লোকজন পূর্ব প্রস্তুতি সভা করে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।
শনিবার (৫ জুলাই) সকালে নবীগঞ্জ শহরে উপজেলার ৬নং কুর্শি ইউনিয়নের বাংলাবাজার এলাকার এক নিরীহ গাড়ি চালকের ওপর আনমনু গ্রামের লোকজন নৃশংস হামলা চালায়। চালককে আটকে বেধড়ক মারধরের পাশাপাশি তার গাড়িও ভাংচুর করা হয়। এমনকি তার গলা বরাবর ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করার চেষ্টা করা হয়। ভাগ্যক্রমে চালক সরে যাওয়ায় তিনি প্রাণে বেঁচে যান। এসময় গাড়ির চাবি, গাড়ির কাগজ, গাড়িতে থাকা দুটি মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা লুট করে নিয়ে গেছে বলে জানান শ্রমিকরা। এ ঘটনায় শ্রমিকদের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে।
শহরের সংঘর্ষের সময় সুযোগ নিয়ে হামলা ও লুটপাট চালায় আরেকটি সংঘবদ্ধ চক্র। শামীম আহমদ নামের এক ব্যবসায়ী জানান, বাজারে যখন আতঙ্কে নিরবতা নেমে আসে তখন কেউ ছিলনা বাজারে। তখনই ঐ চক্রটি বিভিন্ন ব্যবসা- প্রতিষ্ঠানে ডুকে হামলা ও লুটপাট চালায়।
৫ দিনে বাজারের অন্তত শতাধিক দোকান ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। ব্যাটারি চালিত মিশুক ভাংচুর করে ব্যাটারি চুরি করা হয়েছে। এছাড়া আরো কয়েকটি মিশুক ভাংচুর ও মোটরসাইকেলে আগুন দেয়া হয়। নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে আগুন দেয়া হয়।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের দাবি, তারা অনেকেই সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসেছেন। বিগত ২০২৪ সালেও অনুরূপ ঘটনায় আনমুনু গ্রামের লোকজন বিভিন্ন দোকান থেকে মালামাল লুটপাট করেছিল। যা পরবর্তীতে শালিশের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছিল।
এ সংঘাত নিরসনে হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ- বাহুবল) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব শেখ সুজাত মিয়া, জামায়াত মনোনীত এমপি প্রার্থী মোঃ শাহজাহান আলী, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক সরফরাজ আহমদ চৌধুরী, গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা আবুল হোসেন জীবন সহ আরো অনেকেই শালিশের উদ্যোগ নেন।
স্থানীয়রা বলছেন, শহরে দফায় দফায় সংঘর্ষ, ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে দোকানপাট ও যানবাহনে ভাংচুর ও লুটপাট চলে। আতংকে শহরের লোকজন বাসা বাড়িতে বন্ধি হয়ে পড়েন। থানা পুলিশ সংর্ঘষ চলাকালিন সময়ে ঘটনাস্থলে থাকলেও পরিস্থিতি কোন ভাবে তাদের পক্ষে নেয়া সম্ভব হয়নি। আহত অনেকই রাস্তা- ঘাটে পড়ে থাকতে দেখা যায়। আবার কেউ কেউ তাদেরকে উদ্ধার করে নবীগঞ্জ সহ মহা সড়কের আউশকান্দিতে নিয়ে আসেন। কেউ কেউ চিকিৎসা সেবা নিলেও গুরুতর আহতদের সিলেট সহ বিভিন্ন বিভিন্ন হাসপাতালে প্রেরন করা হয়েছে।
অবশেষে খবর পেয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে থানা পুলিশকে নিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করতে এ্যাকশন শুরু করলে দু’পক্ষের লোকজন চত্রবঙ্গ হয়ে যায়। এতে, শহরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ মো: কামরুজ্জামান জানান, আমরা বিষয়টি সমাধানের আহ্বান জানিয়েছি। সংঘর্ষ ও লুটপাটের বিষয়ে আমরা খোঁজ খবর নিচ্ছি। তবে, পুরো বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতে রয়েছে। শহরে শান্তি শৃংখলা রক্ষায় অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে।
বিষয়: #আহত #কোটি #ক্ষতি #কয়েক #টাকা #দোকানপাঠ #নবীগঞ্জ #ভাংচুর #ভয়াবহ #মানুষ #মোতায়েন #লুটপাট #শতাধিক #সংঘর্ষ #সাম্প্রদায়িক #সেনা #হাজার #হাসপাতাল