

মঙ্গলবার ● ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
প্রথম পাতা » সাহিত্য ডাইরি » বিশ্বনাথে সাহিত্যচর্চা ও সমাজসেবায় অনন্য মিজানুর রহমান মিজান!
বিশ্বনাথে সাহিত্যচর্চা ও সমাজসেবায় অনন্য মিজানুর রহমান মিজান!
আনোয়ার হোসেন রনি ::
সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার রাজাগঞ্জ বাজার যেন এক আলোকবর্তিকা। এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একটি অনন্য পাঠাগার—চাঁন মিয়া স্মৃতি পাঠাগার। এই পাঠাগারের প্রতিটি ইটের গাঁথুনিতে জড়িয়ে আছে এক মানুষের স্বপ্ন, সংগ্রাম ও অদম্য প্রচেষ্টা। তিনি হলেন সাহিত্যিক, কবি, লেখক ও সমাজকর্মী মিজানুর রহমান মিজান।
১৯৬২ সাল ১৫ অক্টোরর জয়নগর গ্রামে
সাহিত্যিক, কবি, লেখক ও সমাজকর্মী মিজানুর রহমান মিজান জন্ম হয়। তার বাবা ছিলেন গীতিকবি চান মিয়া। তার বাবা জন্ম ১৯২৪ সাল ২৪ সেপ্টেম্বর ও মৃত্যু ২০০৪ সাল ১৭ ডিসেম্বর। গোবিন্দগঞ্জ হাই স্কুলের ছাত্র ছিলাম ১৯৭২ থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত।লেখা পড়ার পাশাপাশি কবিতা ছড়া প্রবন্ধ রচনায় করেছেন।
সাহিত্যিক পরিচিতি,বিশ্বনাথে মিজানুর রহমান নামে একাধিক পরিচিত ব্যক্তি থাকলেও, মিজানুর রহমান মিজান সাহিত্যপ্রেমী ও সংস্কৃতিমনা মানুষদের কাছে বিশেষভাবে পরিচিত। তিনি শুধু একজন কবি নন, বরং একজন চিন্তাশীল লেখকও বটে। তার কলমে উঠে এসেছে মানবজীবনের আনন্দ-বেদনা, প্রেম-ভালোবাসার টানাপোড়েন, সামাজিক অসঙ্গতি আর স্বপ্নীল আবেগ।
তার লেখা অনেক কবিতা ও প্রবন্ধ ইতোমধ্যেই পাঠকমহলে সাড়া ফেলেছে। স্থানীয় জনপ্রিয় অনলাইন পোর্টাল বিশ্বনাথ বিডি ২৪-এ তার বেশ কিছু লেখা প্রকাশিত হয়েছে। তার আলোচিত প্রবন্ধ ‘স্মৃতি আয়নায় দেখা’ পাঠকদের হৃদয়ে দাগ কেটেছে।
কবিতার আবেগ,মিজানুর রহমান মিজানের কবিতায় রয়েছে এক ধরনের স্বচ্ছ কাব্যরস। প্রেম ও প্রতারণার দ্বন্দ্ব, স্মৃতির আক্ষেপ এবং ভালোবাসার অনন্ত আকুলতা তার কাব্যের মূল উপজীব্য। উদাহরণ হিসেবে তার একটি জনপ্রিয় কবিতার কয়েকটি লাইন উল্লেখযোগ্য—
“ভালবেসে ভুলে যাবে দেবে শুধু ছলনা,
কথা ছিলো, আস্থা ছিলো আজীবন বাসবে ভালো
স্বপ্নিল জগত বাসনা…এই কবিতায় ফুটে উঠেছে প্রেমের প্রতারণা আর হৃদয়ের নিদারুণ যাতনার ছবি। তার কাব্যশৈলীতে সহজ-সরল ভাষা ব্যবহার করা হলেও, আবেগ ও চিন্তার গভীরতায় তা পাঠকের অন্তরে স্পর্শ করে যায়।
পাঠাগার প্রতিষ্ঠার গল্প,সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি সমাজকে আলোকিত করার স্বপ্নে মিজানুর রহমান মিজান প্রতিষ্ঠা করেন চাঁন মিয়া স্মৃতি পাঠাগার। রাজাগঞ্জ বাজারে অবস্থিত এই পাঠাগার এখন স্থানীয়দের জন্য এক প্রেরণার কেন্দ্রবিন্দু।
পাঠাগার প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য ছিল— গ্রামীণ জনপদে বই পড়ার আগ্রহ তৈরি করা এবং নতুন প্রজন্মকে পাঠাভ্যাসে উদ্বুদ্ধ করা। আজকের এই ডিজিটাল যুগে যখন তরুণ সমাজ বই থেকে ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে, তখন পাঠাগারটি হয়ে উঠেছে এক ভিন্নধর্মী আন্দোলন।
মিজানুর রহমান মিজানের প্রচেষ্টায় বর্তমানে এই পাঠাগারে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের বই— উপন্যাস, গল্প, প্রবন্ধ, ইতিহাস, বিজ্ঞান, ধর্মীয় গ্রন্থ এবং শিশুতোষ সাহিত্য। শুধু তাই নয়, এখানে নিয়মিত সাহিত্যসভা, পাঠচক্র এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও আয়োজন করা হয়। সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ড একজন কবি বা লেখক হিসেবে সীমাবদ্ধ না থেকে মিজানুর রহমান মিজান সমাজকর্মেও সক্রিয়। তিনি বিশ্বাস করেন— সাহিত্য কেবল কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না, বরং তা মানুষের জীবনে কাজে লাগতে হবে।
সামাজিক নানা উদ্যোগের মাধ্যমে তিনি বিশ্বনাথে যুবসমাজকে একত্রিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের পাঠাগারে যুক্ত করা, অসহায়দের সহযোগিতা করা এবং সাংস্কৃতিক বিকাশে ভূমিকা রাখা তার কাজের অংশ।
অনুপ্রেরণার উৎস মিজানুর রহমান মিজানের অনুপ্রেরণা ছিলেন তার পরিবার, বিশেষ করে প্রয়াত চাঁন মিয়া, যার স্মৃতিকে ধারণ করেই তিনি পাঠাগারের নামকরণ করেছেন। তিনি মনে করেন— প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে জ্ঞানচর্চার ধারা অব্যাহত রাখা একটি দায়িত্ব। তাই নিজের ব্যক্তিগত স্বপ্নের বাইরে গিয়ে তিনি সমাজের জন্য কাজ করছেন।
সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রসারে অবদান বিশ্বনাথে সাহিত্যচর্চার একটি উল্লেখযোগ্য প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলতে তার ভূমিকা অগ্রণী। তরুণ লেখক ও কবিদের উদ্বুদ্ধ করতে তিনি সর্বদা কাজ করে যাচ্ছেন। নিয়মিত আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক আয়োজনের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে সাহিত্যচর্চায় অনুপ্রাণিত করছেন। স্থানীয়দের মতে, তার প্রচেষ্টায় রাজাগঞ্জ বাজার এলাকায় একটি নতুন সাংস্কৃতিক পরিবেশ তৈরি হয়েছে। অনেক তরুণ-তরুণী এখন নিয়মিত বই পড়ছে, সাহিত্যচর্চায় আগ্রহী হচ্ছে এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হচ্ছে।
পাঠক-প্রতিক্রিয়া তার লেখা কবিতা ও প্রবন্ধ পাঠকদের মনে সাড়া জাগিয়েছে। বিশেষত প্রেম, প্রতারণা ও জীবনের বেদনাকে কেন্দ্র করে রচিত তার কবিতাগুলো তরুণদের কাছে দারুণ জনপ্রিয়। পাঠকরা মনে করেন, তার কবিতার ভাষা সহজ হলেও আবেগ প্রকাশে অসাধারণ।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা মিজানুর রহমান মিজান চান— পাঠাগারটি একদিন হবে একটি পূর্ণাঙ্গ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। তিনি পরিকল্পনা করছেন পাঠাগারের বইয়ের সংখ্যা আরও বাড়ানোর, গবেষণামূলক কার্যক্রম চালুর এবং তরুণদের জন্য প্রশিক্ষণমূলক কর্মশালার আয়োজনের।
তার মতে—“যে জাতি বই পড়ে না, সে জাতি কখনও উন্নত হতে পারে না। পাঠাগারই হলো জাতির মেরুদণ্ড।”সাহিত্যচর্চা, সমাজসেবা এবং পাঠাগার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মিজানুর রহমান মিজান বিশ্বনাথের মানুষের হৃদয়ে এক বিশেষ স্থান দখল করেছেন। তার নিরলস পরিশ্রম শুধু স্থানীয় পর্যায়ে নয়, ভবিষ্যতে জাতীয় পর্যায়েও ছড়িয়ে পড়তে পারে। সত্যিই, তিনি প্রমাণ করেছেন— একজন সাহিত্যিক শুধু কবিতার মাধ্যমে নয়, সমাজ পরিবর্তনের মাধ্যমেও অনন্য হয়ে উঠতে পারেন।
বিষয়: #অনন্য #বিশ্বনাথ #মিজান #মিজানুর #রহমান #সমাজসেবায় #সাহিত্যচর্চা