

শনিবার ● ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
প্রথম পাতা » সুনামগঞ্জ » মধ্যনগর সদর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড কমিটি নিয়ে তেলেসমাতির অভিযোগ
মধ্যনগর সদর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড কমিটি নিয়ে তেলেসমাতির অভিযোগ
আল হেলাল,সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি :
সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের পৃথক দুটি কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে ইউনিয়ন কমিটির বিতর্কিত আহবায়ক কামাল হোসেন ও যুগ্ম আহবায়ক মোঃ মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) অভিযোগটি দায়ের করেছেন ৬নং ওয়ার্ডের বৈধ প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত সভাপতি মোঃ মস্তব আলী কাচা মিয়া। অভিযোগে প্রকাশ,মধ্যনগর সদর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের কমিটি গঠন করতে গিয়ে গত ২৪ আগস্ট ৫ গ্রামের সকল দলীয় নেতাকর্মী সমর্থকদের উপস্থিতিতে স্থানীয় কৌরাজান সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে একটি আলোচনা সভা শেষে মোঃ মস্তব আলী কাচা মিয়াকে সভাপতি ও মোঃ ইদ্রিছ আলীকে সাধারণ সম্পাদক করে ৫১ সদস্যবিশিষ্ট একটি কার্যকরী কমিটি গঠন করা হয়। ৬নং ওয়ার্ডের উক্ত নবগঠিত কার্যকরী কমিটির অনুমোদন দান করত: সদর ইউনিয়ন কমিটির আহবায়ক কামাল হোসেন ও যুগ্ম আহবায়ক মোঃ মোশাররফ হোসেন যথারীতি ঐ কমিটি কলমাকান্দা বাজারের একটি কম্পিউটারের দোকানে বসে প্রস্তুতকরত সীল স্বাক্ষর প্রদান করেন। এসময় দলীয় নেতাকর্মীরা নবগঠিত কমিটির কপি স্বস্ব মোবাইলে ধারন করেন। একইদিন রাত আড়াইটার সময় উক্ত নবগঠিত কমিটির বিরুদ্ধে মধ্যনগর উপজেলা কমিটির আহবায়ক মোঃ আবে হায়াত,১নং যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল কাইয়্যূম মজনু,দ্বিতীয় যুগ্ম আহবায়ক মোঃ আবুল বাশার,সদস্য ফজলু মিয়া ও বিপ্লব সরকার এই ৫ জনের নেতৃত্বে একটি বিশেষ গ্রুপ ইউনিয়ন কমিটির অনুমোদনদাতা আহবায়ক ও যুগ্ম আহবায়ককে চাপপ্রয়োগ করে জোরপূর্বকভাবে প্রতিভূ এমদাদুল হক তালুকদার কে সভাপতি করে একটি কাউন্টার কমিটি হাতিয়ে নেয়।
বিষয়টি জানাজানি হলে গত ২ সেপ্টেম্বর তারিখে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করত: একইদিন চুড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ,৩ সেপ্টেম্বর মনোনয়ন ফরম বিতরন,জমাগ্রহন,প্রার্থীতা ঘোষনা,প্রতিক বরাদ্দ,৫ সেপ্টেম্বর ভোট গ্রহন ও ফলাফল ঘোষণার তারিখ নির্ধারন করে। সেইমতে ৩ সেপ্টেম্বর সভাপতি পদে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে মধ্যনগর সদর ইউনিয়ন কমিটির যুগ্ম আহবায়ক মোঃ মোশাররফ হোসেনের কাছে যান,সভাপতি পদপ্রার্থী মোঃ মস্তব আলী কাচা মিয়া। এসময় কমিটির আহবায়কের দোহাই দিয়ে কালক্ষেপন করত: ৩ সেপ্টেম্বর রাত ১১টায় একে অপরের যোগসাজসে রাতের আধারে মোশাররফ হোসেনের ফেইসবুক আইডিতে এমদাদুল হক তালুকদারকে সভাপতি ঘোষণা করে ৫০ সদস্যবিশিষ্ট পকেট কমিটির অনুমোদন দেন। ৫ সেপ্টেম্বর নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে ৩ সেপ্টেম্বর রাতের বেলা কমিটি অনুমোদনের এই প্রহসনমূলক ঘটনায় এলাকায় বিএনপির ত্যাগী নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
অবৈধ অগণতান্ত্রিকভাবে গঠণতন্ত্রের বিধান লঙ্গনক্রমে বেআইনী পকেট কমিটি গঠনের ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযুক্ত মধ্যনগর সদর ইউনিয়ন কমিটির আহবায়ক মোঃ কামাল হোসেন বলেন,আমি আনুষ্ঠানিকভাবে কোন কমিটি ঘোষণা করিনি। আমার যুগ্ম আহবায়ক মোশাররফ হোসেনের ফেইসবুক আইডি থেকে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে আমি এমদাদুল হক তালুকদারকে সভাপতি করে যে কমিটি দিয়েছি সেটাই ঠিক।
অথচ এর আগে ৩ সেপ্টেম্বর পরষ্পরবিরোধী দুটি কমিটি ঘোষণার ব্যাপারে উপজেলা কমিটির ৩নং যুগ্ম আহবায়ক মোশাহিদ তালুকদার,কথিত অনুমোদনদাতা ইউনিয়ন কমিটির আহবায়ক মোঃ কামাল হোসেনের কাছে জানতে চাইলে উক্ত কামাল হোসেন বলেন,আমি কলমাকান্দায় স্বাক্ষর দিয়া প্রথম দফায় মোঃ মস্তব আলী কাচা মিয়া ভাইকে যে কমিটি দিয়েছি সেটাই বৈধ কমিটি ছিল। কারণ ৬ নং ওয়ার্ড কমিটিতে কাচা ভাইর কোন বিকল্প নেই। পরে রাতের বেলা আমার কাছে এসে মধ্যনগর উপজেলা কমিটির আহবায়ক মোঃ আবে হায়াত,১নং যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল কাইয়্যূম মজনু,দ্বিতীয় যুগ্ম আহবায়ক মোঃ আবুল বাশার,সদস্য ফজলু মিয়া ও বিপ্লব সরকার এই ৫ জন আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে জোরপূর্বকভাবে এমদাদুল হক তালুকদারকে সভাপতি বানিয়ে নিজেদের তৈরী করা আরেকটি কাউন্টার কমিটির কপিতে স্বাক্ষর নেয়।
৫ সেপ্টেম্বর নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা দিয়ে আনুষ্ঠানিক কাউন্সিল ও নির্বাচন ছাড়াই ৩ সেপ্টেম্বরে রাতের আধারে এমদাদুল হক তালুকদারকে সভাপতি করে পকেট কমিটি গঠন করে ফেইসবুকে ঘোষণা দেয়ার অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য (স্বাক্ষর ক্ষমতাসম্পন্ন) এডভোকেট আব্দুল হক বলেন,কমিটির পদ ভাগিয়ে নিয়ে যারা অগঠনতান্ত্রিক পন্থায় বিধিবহির্ভূতভাবে বাণিজ্যের আশ্রয়ে পকেট কমিটি অনুমোদন দেয় তাদের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর পদক্ষেপ গ্রহন করবো।
মধ্যনগর ইউনিয়ন বিএনপির নেতাকর্মীরা বলেন,ইউনিয়ন কমিটির আহবায়ক কামাল হোসেন ও যুগ্ম আহবায়ক মোশাররফ হোসেনের মত এমন আহাম্মক ও বুর্বক নেতাকর্মী আর কোথায়ও আছে বলে আমাদের জানা নেই। আসলে কমিটি কিভাবে গঠন করতে হয় তারা সাংগঠনিক নিয়ম কানুন বলতে কিছুই জানেনা। যে কারণে সিনিয়র মোঃ মস্তব আলী কাচা মিয়াকে সাধারণ সম্পাদক ও তার ছেলের বয়সী জুনিয়র এমদাদুল হক তালুকদারকে সভাপতি ঘোষনাক্রমে বেআইনীভাবে কাউন্টার কমিটি অনুমোদন প্রদান করেছে। আমরা তাদের বানিজ্যিক পকেট কমিটি বর্জন ঘোষণা করেছি। পকেট কমিটি দ্বারা মধ্যনগর সদর ইউনিয়ন কমিটির ৫ সেপ্টেম্বর তারিখের প্রহসনমূলক নির্বাচন বাতিলের জন্য জেলা বিএনপির আহবায়কের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।
এদিকে ৫ গ্রামের সকল নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে প্রবীণ বিএনপি নেতা মোঃ মস্তব আলী কাচা মিয়াকে সভাপতি ও মোঃ ইদ্রিছ আলীকে সাধারণ সম্পাদক করে মধ্যনগর সদর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের ৫১ সদস্যবিশিষ্ট প্রথম অনুমোদিত কার্যকরী কমিটিই সকলের কাছে গ্রহনযোগ্য বৈধ কমিটি বলে মতামত ব্যক্ত করেছেন উপজেলা,ইউনিয়ন ও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড বিএনপির নেতাকর্মীরা।
বিষয়: #ইউনিয়ন #মধ্যনগর #সদর