রবিবার ● ৭ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রথম পাতা » মতামত » শিক্ষকদের কর্মবিরতি: পেশাগত নৈতিকতা ও দায়িত্ববোধ
শিক্ষকদের কর্মবিরতি: পেশাগত নৈতিকতা ও দায়িত্ববোধ
ড. মাহরুফ চৌধুরী
![]()
সাম্প্রতিক বার্ষিক পরীক্ষার সময় দাবি আদায়ের উদ্দেশ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষকদের কর্মবিরতি আমাদের শিক্ষা-ব্যবস্থায় এক গভীর নৈতিক সংকট সৃষ্টি করেছে। সমাজের যে পেশাজীবি শ্রেণিটি জ্ঞান, আদর্শ ও নৈতিকতার প্রতীক হিসেবে মর্যাদা পায়, তাদের কাছ থেকে দায়িত্বহীন আচরণ কেবল হতাশাজনকই নয়, বিপজ্জনকও বটে। কারণ শিক্ষকতা আর দশটা চাকরির মতো নয়; এটি এক ধরনের নৈতিক প্রতিশ্রুতি, এক সামাজিক চুক্তি। এ পেশায় শিক্ষক নিজের আচরণের মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মকে দায়িত্ববোধের শিক্ষা দেন। শিক্ষার্থীদের শুধু পাঠ্যবই না শিখিয়ে কীভাবে সদাচরণ করতে হয়, কীভাবে কর্তব্যনিষ্ঠ হতে হয়, তা শেখানোই হচ্ছে শিক্ষকতা পেশার প্রকৃত কাজ। অতএব, প্রাথমিকের শিক্ষকদের একাংশের পরীক্ষার মতো সংকটময় সময়ে শিক্ষার্থীদের বেকায়দায় ফেলে নিজেদের দাবি আদায়ের কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া নিঃসন্দেহে পেশাগত নীতিভ্রষ্টতা। দর্শনে বলা হয়েছে যে, নৈতিক কর্তব্যের ক্ষেত্রে ব্যক্তিস্বার্থ বা গোষ্ঠিস্বার্থের কোনো স্থান নেই; সেখানে সামগ্রিক কল্যাণই মূখ্য। দায়িত্বের সময় দায়িত্ব পালনই নৈতিকতার প্রথম শর্ত। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশে বিভিন্ন পেশাজীবীর ক্ষেত্রে যেমন দাবি আদায়ের অজুহাতে হঠাৎ রাস্তায় নামা বিশেষ নিয়মে পরিণত হয়েছে, শিক্ষকদের এ কর্মবিরতিও সেই সামগ্রিক অবক্ষয়েরই আরেকটি দৃষ্টান্ত। ফলে কেবল শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎই অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে না, গোটা সমাজেও নৈতিক নেতৃত্বের এক গভীর সংকট তৈরি হয়।
শিক্ষার্থীদের কাছে শিক্ষক যে আদর্শ বা আচরণিক দৃষ্টান্ত তুলে ধরেন, তা কেবল কোনো নৈতিক পরামর্শ নয়, বরং একটি গভীর সামাজিক সত্য যার ধারাবাহিকতা মানবসভ্যতার ইতিহাসেই দৃশ্যমান। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে শিক্ষককে সমাজে নৈতিক দিশারী, আলোকপ্রদর্শক এবং মূল্যবোধের বাহক হিসেবে দেখা হয়েছে। এই কারণেই শিক্ষকতা পেশায় ব্যক্তিগত আচরণের প্রশ্ন কেবল ব্যক্তিগত পরিসরে সীমাবদ্ধ থাকে না; তা শিক্ষার্থীর চিন্তা, চরিত্র ও ভবিষ্যৎ নাগরিক পরিচয়কে নির্ধারণ করে। এ অবস্থায় কোনো শিক্ষক যদি বছর শেষে কোর্স সমাপনী পরীক্ষার মতো সংবেদনশীল মুহূর্তে নিজ দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সচেতনভাবে কর্মবিরতিতে গিয়ে রাষ্ট্রকে চাপ দেওয়ার কৌশল অবলম্বন করেন, তবে তা শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন শেখানো দায়িত্ববোধ, সময়ানুবর্তিতা এবং নৈতিকতার মৌল নীতিরই সরাসরি পরিপন্থী। কারণ শিক্ষক নিজেই যদি নৈতিক আচরণের মানদণ্ড অমান্য করেন, তবে শিক্ষার্থীর কাছে নীতি ও দায়িত্বশীলতা কেবল মুখের কথা হয়ে দাঁড়ায়। দর্শনের ভাষায় বলা যায়, শিক্ষকের ব্যক্তিগত আচরণই শিক্ষার্থীর জন্য প্রথম ও জীবন্ত পাঠশালা; আর এখানেই পেশাজীবি হিসেবে তার সামাজিক দায়িত্ববোধ সর্বাধিক। গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটল মতে, চরিত্র গঠনের প্রধান উপায় হলো ‘অনুশীলন’ ও ‘অনুকরণ’। সুতরাং শিক্ষক যদি অনুকরণের যোগ্য নৈতিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে ব্যর্থ হন, তবে তা কেবল ব্যক্তিগত বিচ্যুতিই নয়, সমাজের মানুষগুলোর নৈতিক কাঠামোর ভিতকেও দুর্বল করে দেয়।
অপরদিকে, পরীক্ষার সময় কর্মবিরতি মূলত শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে দাবি আদায়ের এক অনৈতিক কৌশল, যার নৈতিক দায়ভার শিক্ষার্থীর ওপর বর্তায় অথচ তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণের কোনো পর্যায়ে নেই। এই কৌশলে নীতিনির্ধারকদের ওপর চাপ সৃষ্টির বাহ্যিক সাফল্য থাকলেও, প্রকৃত চাপ ও ক্ষতি বহন করে নিরীহ শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারগুলো যা শিক্ষার মৌল উদ্দেশ্য ও মানবিকতার সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক। রাষ্ট্রীয় সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তি হিসেবে শিক্ষকরা প্রকৃত অর্থেই প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী; ফলে প্রজাতন্ত্রের স্বার্থবিরোধী বা জনস্বার্থবিরোধী কোনো চাপ সৃষ্টি করা কেবল অনৈতিকই নয়, সাংবিধানিক দায়িত্ববোধ ও পেশাগত অঙ্গীকারেরও লঙ্ঘন। বিচার বিভাগ, প্রশাসন বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যেমন নিজেদের দাবি আদায়ে জনসাধারণকে জিম্মি করতে পারেন না, শিক্ষকদের ক্ষেত্রেও সমান মানদণ্ড প্রয়োগ হওয়া ন্যায়বিচার ও রাষ্ট্রনৈতিক নৈতিকতার দাবি। আধুনিক রাষ্ট্রতত্ত্বে ‘গণ-আস্থা’ (পাবলিক ট্রাস্ট) ধারণা অনুসারে, রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনকারীরা একটি নৈতিক আস্থাশীল অবস্থানে থাকেন এবং জনগণের আস্থার ওপরই তাদের পেশাগত বৈধতা প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই আস্থার অপব্যবহার কেবল কর্তব্যভ্রষ্টতা নয়; এটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার মৌলিক নৈতিক চুক্তি ভঙ্গ করার শামিল, যার দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি সমাজের নৈতিক ভিত্তিকে অস্থিতিশীল করে তোলে।
পরীক্ষার তারিখ পেছানো বা পরীক্ষাগ্রহণের অনিশ্চয়তা শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের ওপর তীব্র মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। এই অপ্রত্যাশিত মানসিক চাপ তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও আত্মবিশ্বাসকে সরাসরি বিঘ্নিত করে। মাসের পর মাস অধ্যবসায়ের পর হঠাৎ পরীক্ষার স্থগিতাদেশ শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে হতাশা ও বিভ্রান্তি তৈরি করে, তা শুধু তাৎক্ষণিক সমস্যা নয়; বরং দীর্ঘমেয়াদে তাদের শিক্ষার ধারাবাহিকতা এবং মনোবলকে দুর্বল করে। উচ্চশিক্ষায় ভর্তির সময়সূচি, বৃত্তির আবেদন কিংবা পরবর্তী ক্যারিয়ার-পরিকল্পনার প্রতিটি ধাপই নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সম্পন্ন হওয়ার প্রয়োজন হয়। এই সময়সীমা ভেঙে গেলে একটি সম্পূর্ণ ব্যাচের জীবন-পরিকল্পনা ব্যাহত হয় এবং সেই ক্ষতি অনেক সময় পূরণ করা সম্ভব হয় না। মনোবিজ্ঞানের ভাষায় ‘শিক্ষাগত অনিশ্চয়তা’ (একাডেমিক আনসার্টেনিটি) উদ্বেগ, উৎকন্ঠা, আত্মবিশ্বাসহীনতা এবং হতাশা বাড়ায় যা বিভিন্ন গবেষণায় সুপ্রতিষ্ঠিত। যে শিক্ষকরা এই মানসিক ও ভবিষ্যৎগত ক্ষতির পরোয়া না করে কেবল নিজেদের আর্থিক স্বার্থ রক্ষায় পরীক্ষার সময় কর্মবিরতিতে যান, তারা প্রকৃত অর্থে জাতি-গঠনের দায়িত্ববোধসম্পন্ন শিক্ষকতার নৈতিক মানদণ্ডে উত্তীর্ণ নন। বরং তারা শিক্ষার স্বাভাবিক ধারাবাহিকতা ব্যাহত করে ভবিষ্যৎ নাগরিক গঠনের পথকেই বিপন্ন করে তোলেন, যার ফলে সমাজের মানবসম্পদ উন্নয়ন ও রাষ্ট্রীয় অগ্রগতির ভিত্তি দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
যারা পেশাগত দায়িত্ব পালনের চেয়ে ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠিগত স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেন, তাদের হাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গড়ে তোলার মতো মহৎ দায়িত্ব অর্পণ করা রাষ্ট্র ও জাতির জন্য নিঃসন্দেহে আত্মঘাতী। কারণ রাষ্ট্রের জন্য সুনাগরিক তৈরির প্রধান প্রতিষ্ঠান হলো বিদ্যালয়, আর বিদ্যালয়ের প্রাণশক্তিই শিক্ষক। ইতিহাসের দৃষ্টান্ত অনুসারে, যে সমাজে শিক্ষকরা নৈতিক নেতৃত্ব দিয়েছেন, সেখানে জ্ঞান-বুদ্ধি, নিয়ম-শৃঙ্খলা ও মানবিক মূল্যবোধ বিকশিত হয়েছে; আর যেখানে শিক্ষকেরা দায়িত্বহীনতা ও অবহেলার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, সেখানেই সমাজে শৃঙ্খলা ভেঙেছে, নৈতিক ভিত্তি ক্ষয় হয়েছে এবং মূল্যবোধের অধ:পতন ঘটেছে। প্লেটো তার ‘রিপাবলিক’-এ যে আদর্শ রাষ্ট্রের ভাবনা তুলে ধরেছেন, তার কেন্দ্রস্থল ছিল নৈতিক শিক্ষা, আর সেই নৈতিক শিক্ষার মেরুদণ্ড ছিলেন শিক্ষক-নেতৃত্ব। ফলে একজন শিক্ষক যখন ইচ্ছাকৃত দায়িত্ববর্জনের উদাহরণ তৈরি করেন, তখন তিনি কেবল একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য শিক্ষার পরিবেশকে দূষিত করেন না, বরং জাতির সামগ্রিক নৈতিক কাঠামোকে দীর্ঘমেয়াদে দুর্বল করে দেন। সমাজতত্ত্বের একটি মৌল শিক্ষা হলো, বর্তমান প্রজন্মে যে মূল্যবোধ রোপিত হয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মে তার প্রতিফলন দেখা দেয়। তাই শিক্ষকের দায়িত্বহীন আচরণ ভবিষ্যৎ নাগরিক সৃষ্টির ভিতকে দুর্বল করে, যার পরিণতি রাষ্ট্রীয় অগ্রগতি ও মানবিক উন্নয়ন উভয় ক্ষেত্রেই গভীর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
পরিস্থিতির সামগ্রিক পর্যালোচনায় শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষা এবং রাষ্ট্রের টেকসই উন্নয়ন ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে সরকারের কঠোর অবস্থান গ্রহণ এখন সময়ের দাবি। বার্ষিক পরীক্ষা, যা এক বছরের নিবিড় পরিশ্রম ও প্রস্তুতির ফলাফল, সেই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তকে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদেরকে অস্থির করে যারা কর্মবিরতিতে যান অথবা আন্দোলনের নামে, তারা মূলত শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে নিজেদের দাবি আদায়ে রাষ্ট্রকে চাপে ফেলতে চান। তাদের চিহ্নিত করে শিক্ষকতার মতো গুরুদায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া রাষ্ট্রীয় দায়িত্বেরই অংশ হওয়া উচিত। প্রশাসনশাস্ত্রে ‘জবাবদিহির পাশাপাশি উপযুক্ত পরিণতি নিশ্চিত করা’ (একাউন্টেবিলিটি উইথ কনসিকুয়েন্স) নীতি প্রত্যেক জনসেবামূলক পেশার মৌলিক শর্ত। শিক্ষা ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হওয়ার কোনো যুক্তি কিংবা সুযোগ নেই। এ ধরনের নীতিগত ব্যবস্থা গ্রহণ শুধু পেশাগত নৈতিকতা ও শৃঙ্খলাই দৃঢ় করবে না, বরং ভবিষ্যতে কোনো পেশাজীবি ব্যক্তিগত স্বার্থে, জনস্বার্থবিরোধী কিংবা নৈতিকতার পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে নামার আগে বহুবার ভাবতে বাধ্য হবে। নীতিভ্রষ্টতা বা সীমালঙ্ঘনকে রাষ্ট্র যখন বিন্দুমাত্র বরদাশত করে না, তখনই সমাজে দায়িত্ববোধ, পেশাগত মর্যাদা এবং জনআস্থা প্রকৃত অর্থে প্রতিষ্ঠিত হয় যা একটি ন্যায়ভিত্তিক, দায়িত্বশীল ও শিক্ষিত জাতি গঠনের পূর্বশর্ত।
আমাদের শিক্ষক সমাজকে সর্বাগ্রে মনে রাখতে হবে যে, ‘আপনি আচরি ধর্ম, পরেরে শিখাও’-এটি কেবল একটি প্রবাদ নয়, বরং প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রয়োগিক শিক্ষাধারায় নৈতিক শিক্ষারও মৌলনীতি এবং শিক্ষকতার সামগ্রিক দর্শনের কেন্দ্রবিন্দু। সমাজ যাদেরকে নৈতিকতার জীবন্ত প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করে থাকে, তাদের কাছ থেকে প্রত্যাশাও থাকে অধিক সংযম, অধিক দায়িত্ববোধ এবং অধিক মানবিকতার প্রকাশ। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, দেশের সাধারণ মানুষকে অসহায় অবস্থায় ফেলে কোনো দাবি আদায় কখনো ন্যায়সঙ্গত হতে পারে না; এটি ন্যায়, নীতি, আইন-কানুন ও মানবিকতার মৌলিক নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। শিক্ষক যদি নিজেই ন্যায় ও মানবিকতার অবস্থান ত্যাগ করতে শুরু করেন, তাহলে জাতির নৈতিক ভবিষ্যৎ অন্ধকারে নিমজ্জিত হওয়া অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে। ইতিহাসে এমন দৃষ্টান্ত রয়েছে, যে সমাজে শিক্ষকের নৈতিক অবস্থান দুর্বল হয়েছে, সেখানে শৃঙ্খলা, মূল্যবোধ এবং মানবিকতার ভিত্তিও ক্রমশ দুর্বল হতে হতে এক সময় ভেঙে পড়েছে। তাই শিক্ষকতার পেশায় মহৎ দায়িত্ব পালনে সততা, সংবেদনশীলতা ও পেশাগত নীতিনৈতিকতা রক্ষা করা শুধু একটি পেশাগত বাধ্যবাধকতা নয়, বরং এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে নৈতিকতা ও মানবিকতার আলো পৌঁছে দেওয়ার জাতীয় প্রতিশ্রুতি।
সার্বিক বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, শিক্ষকতা কেবল জ্ঞান ও দক্ষতা বিতরণের পেশা নয়, বরং এটি নৈতিক নেতৃত্বের এক বিরল দায়িত্ব, যার ওপর নির্ভর করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চরিত্র, মূল্যবোধ ও মানবিকতার নির্মাণ। তাই ব্যক্তিগত স্বার্থে, বিশেষত বার্ষিক পরীক্ষার মতো সংবেদনশীল সময়ে, শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে সরকারের কাছ থেকে দাবি আদায় কেবল পেশাগত নীতিভ্রষ্টতাই নয়; এটি জাতির নৈতিক ভিত্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে সামাজিক আস্থার সংকট তৈরি করে। যে জাতি ভবিষ্যৎ নাগরিক গঠনের প্রধান দায়িত্বে থাকা শিক্ষকগোষ্ঠীর মাঝেই নৈতিক নেতৃত্ব খুঁজে পায় না, সেই জাতির অগ্রগতি কখনো টেকসই হতে পারে না। অতএব শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি সমাজের আস্থা টিকিয়ে রাখতে পেশাগত দায়িত্ববোধ, নৈতিক সংযম ও জনস্বার্থকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া শিক্ষকদের মৌল প্রতিজ্ঞা হওয়া উচিত। একইসঙ্গে রাষ্ট্রকেও এটা নিশ্চিত করতে হবে যে, দায়িত্ববর্জন, নীতিভ্রষ্টতা বা জনস্বার্থবিরোধী আচার-আচরণ কোনোভাবেই প্রশ্রয় না পায়। কারণ শিক্ষা ক্ষেত্রের নৈতিক পতন শুধু একটি প্রজন্মের জন্যই ক্ষতিকর নয়, বরং এটি জাতির ভবিষ্যৎ প্রজন্মগুলোকেও অন্ধকারে ঠেলে দেওয়ার নামান্তর। আজ আমরা যে সংকটের মুখোমুখি, তা সমাধানের প্রথম শর্ত হলো শিক্ষকতা পেশার উচ্চ নৈতিক মর্যাদাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা আর শিক্ষকদের ন্যায্য দাবিগুলোকে বিবেচনায় নিয়ে ন্যায়সঙ্গত উপায়ে একটি সমযোতায় আসা। পাশাপাশি অন্যান্য পেশায়ও পেক্ষাগত নৈতিকতা ও দায়িত্ববোধকে শাণিত করে তোলা। প্রকৃত অর্থে, যে শিক্ষক শিক্ষা, ন্যায় ও মানবতার পক্ষে অটল থাকতে পারেন, তিনিই হলেন জাতির নির্মাতা। আর সেই নির্মাতার নৈতিক অবস্থান অটুট থাকলেই কেবল আমরা একটি জ্ঞাননির্ভর, ন্যায়ভিত্তিক ও মানবিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হব।
* লিখেছেন: ড. মাহরুফ চৌধুরী, ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি, ইউনিভার্সিটি অব রোহ্যাম্পটন, যুক্তরাজ্য।
বিষয়: #চৌধুরী #মাহরুফ




জাকসু নির্বাচন ও হট্টগোল: আমাদের জন্য শিক্ষণীয় কী?
ঢাকসু নির্বাচন ও সংস্কারপ্রয়াস: রাজনৈতিক চিন্তার নতুন দিগন্ত
বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতনের প্রতিবাদে লন্ডনে হাইকমিশনের সামনে স্যাকুলার বাংলাদেশ মুভমেন্টের অনশন
মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির অচেনা যাত্রাপথঃ সর্ষের মধ্যে ভূত
মানবিক ও নৈতিক শিক্ষা: জাপান এক অনুসরণীয় আদর্শ
ছাত্র রাজনীতি: নেতৃত্বের হাতেখড়ি নাকি দাসত্বের লেজুড়বৃত্তি?
