মঙ্গলবার ● ৪ নভেম্বর ২০২৫
প্রথম পাতা » আলোকিত ব্যক্তিত্ব » স্মরণে সাংবাদিকতার প্রথিক জেড এম শামসুল: সাদাসিধে জীবনে আলোর দিশারী
স্মরণে সাংবাদিকতার প্রথিক জেড এম শামসুল: সাদাসিধে জীবনে আলোর দিশারী
আনোয়ার হোসেন রনি:
![]()
সাংবাদিকতার এক নিবেদিতপ্রাণ, সৎ ও নিরহংকার মানুষ ছিলেন জেড এম শামসুল। দীর্ঘ পেশাগত জীবনে তিনি ছিলেন এক অনন্য দৃষ্টান্ত—যিনি সাংবাদিকতাকে দেখেছেন শুধু পেশা নয়, এক মহান দায়িত্ব হিসেবে। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি সংবাদপত্র, পাঠক ও সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করে গেছেন। তার মৃত্যুর পর সিলেটের সাংবাদিক সমাজ, পাঠক শুভানুধ্যায়ীদের মনে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, তা পূরণ হবার নয়।
জেড এম শামসুলের জন্ম সিলেটের প্রান্তিক উপজেলা জকিগঞ্জে। অল্প বয়সেই শিক্ষার টানে তিনি সিলেট শহরে আসেন। এখানেই শুরু হয় তার সংগ্রামী জীবনের পথচলা। ছাত্রজীবনেই সংবাদপত্রের সঙ্গে তার সখ্য গড়ে ওঠে। লেখালেখির প্রতি গভীর ভালোবাসা ও সত্য বলার সাহস তাকে সাংবাদিকতার জগতে নিয়ে আসে। তখন হয়তো ভাবেননি, এই পথই হবে তার জীবনের একমাত্র অবলম্বন।
সাংবাদিকতা পেশায় প্রবেশের পর থেকেই জেড এম শামসুল ছিলেন সাদাসিধে জীবনের প্রতীক। বিলাসবহুল জীবন, মোটা বেতন কিংবা সামাজিক দাপট—এসব কিছুই তাকে আকৃষ্ট করতে পারেনি। তিনি বিশ্বাস করতেন, একজন সাংবাদিকের আসল শক্তি হলো সততা ও নিষ্ঠা। তাই জীবনের প্রতিটি ধাপে তিনি এই নীতিকেই আঁকড়ে ধরে রেখেছেন।
তার ব্যক্তিজীবন ছিল অত্যন্ত সাধারণ। সিলেট শহরে বহু বছর সাংবাদিকতা করেও নিজের নামে একটি বাড়ি পর্যন্ত গড়তে পারেননি। শহরের এক কোণে ভাড়া বাসায় থেকে বাইসাইকেল চালিয়ে অফিস, প্রেসক্লাব ও টিউশনি করতেন। বহু সহকর্মী মনে করেন, সেই সাইকেলই যেন তার পরিচয়ের প্রতীক—একজন নিঃস্বার্থ সংবাদকর্মীর জীবনের প্রতিচ্ছবি।
প্রেসক্লাবে যারা নিয়মিত আসতেন, তারা সবাই জানেন, জেড এম শামসুল ছিলেন সবার প্রিয় মুখ। বয়সে প্রবীণ হলেও তরুণ সাংবাদিকদের প্রতি তার ভালোবাসা ছিল পিতার মতো। নতুনদের তিনি শেখাতেন কীভাবে খবর সংগ্রহ করতে হয়, কিভাবে সত্য প্রকাশ করতে হয়, কিভাবে নির্ভয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হয়। অনেক তরুণ সাংবাদিকই আজও তার কাছ থেকে পাওয়া পরামর্শকে জীবনের সম্পদ হিসেবে মনে করেন।
তার সহকর্মীরা বলেন, “শামসুল ভাই কখনো কাউকে কষ্ট দিতেন না। সোজা-সাপটা কথা বলতেন, তবে কারও প্রতি বিদ্বেষ ছিল না। প্রেসক্লাবে তার উপস্থিতি মানে ছিল এক ধরণের প্রশান্তি।”
অন্য এক সাংবাদিক বলেন, “আমরা এখন বুঝতে পারছি, তার মতো মানুষ এক প্রজন্মে একবারই আসে। তিনি চলে গেছেন, কিন্তু রেখে গেছেন সাংবাদিকতার এক নির্ভেজাল আদর্শ।”জেড এম শামসুলের জীবনে যতই কষ্ট আসুক, তিনি কখনো অভিযোগ করেননি। দারিদ্র্য তাকে নত করেনি, বরং করেছে দৃঢ়চেতা। জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত তিনি লেখালেখি ও টিউশনি চালিয়ে গেছেন নিজের মর্যাদা বজায় রাখতে। সমাজে অনেকেই হয়তো তাকে ছোট করে দেখেছেন, কিন্তু তার মানসিক শক্তি, নৈতিক অবস্থান এবং আত্মসম্মান ছিল পাহাড়সম দৃঢ়।
তিনি ছিলেন মানবিক চেতনায় ভরপুর একজন সাংবাদিক। মানুষের দুঃখ-কষ্ট, সমাজের অন্যায়-অবিচার, শোষিতের কান্না—এসব বিষয় তাকে গভীরভাবে নাড়া দিত। তার লেখা প্রতিবেদনে ফুটে উঠত সাধারণ মানুষের মুখের ভাষা, তাদের অনুচ্চারিত বেদনা।
সত্য প্রকাশে তিনি ছিলেন নির্ভীক, তবে কখনোই উত্তেজিত বা পক্ষপাতদুষ্ট ছিলেন না। তার লেখা ছিল পরিমিত, ভারসাম্যপূর্ণ এবং বিবেকনিষ্ঠ।
সিলেটের সংবাদ অঙ্গনে দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে তিনি ছিলেন এক জীবন্ত ইতিহাস। অনেকে বলেন, তিনি ছিলেন সাংবাদিকতার মাটি ও শেকড়—যেখানে পেশা মানে কেবল উপার্জন নয়, সেবা ও দায়িত্বও বটে।
তার মৃত্যুর পর সিলেট প্রেসক্লাবে নেমে আসে গভীর শোক। সহকর্মীরা জানান, “আজ প্রেসক্লাবে গেলেই মনে হয়, কিছু একটা নেই—যে মানুষটি সবসময় হাসিমুখে পাশে থাকতেন, সেই শামসুল ভাই আর নেই।”তার ব্যবহারে যে বিনয় ও সরলতা ছিল, তা আজও অনেকের কাছে অনুসরণীয়।
জেড এম শামসুলের ব্যক্তিজীবন ছিল নিরহংকার ও সৌখিন। তিনি বই ভালোবাসতেন, কবিতা পড়তেন, আর অবসরে নীরবে চিন্তা করতেন সমাজ নিয়ে। তার কাছে জীবন মানে ছিল সত্য ও আদর্শে বেঁচে থাকা। কোনো সময়েই তিনি লোভ-লালসা বা রাজনীতির ঘূর্ণিতে নিজেকে হারিয়ে ফেলেননি।
তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ছিলেন পেশার প্রতি অটল। অসুস্থ অবস্থাতেও কলম থামাননি। কাজের প্রতি এমন ভালোবাসা আজকের প্রজন্মের কাছে এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
তার অকাল প্রয়াণে সিলেটের সাংবাদিক সমাজ গভীর শোকাহত। সহকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীরা বলেছেন, “তিনি ছিলেন আমাদের অনুপ্রেরণা, সততার প্রতীক। তার মৃত্যুতে আমরা শুধু একজন সাংবাদিক নয়, একজন মানবিক মানুষকে হারিয়েছি।”
মরহুম জেড এম শামসুলের জন্য সবাই দোয়া করেছেন। লেখক ও সাংবাদিক মহল প্রার্থনা করছেন, মহান আল্লাহ তায়ালা যেন এই প্রথিতযশা সাংবাদিককে জান্নাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করেন এবং তার স্ত্রী ও সন্তানদের আদর্শ জীবন দান করেন।
তার জীবন হোক ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সাংবাদিকদের জন্য এক আলোকবর্তিকা—যেখান থেকে তারা শিখবে, সাংবাদিকতা মানে শুধু খবর লেখা নয়, মানুষের জন্য বাঁচা। সিলেট প্রেসক্লাবের প্রাঙ্গণে আজও যেন ভেসে বেড়ায় তার হাসিমুখ, তার সাইকেলের ঘন্টার শব্দ, তার কোমল কণ্ঠের ডাক—“চলুন ভাই, চা খাই!”কিন্তু আজ সেই ডাক আর শোনা যায় না। তবু সিলেটের আকাশে, সাংবাদিকতার প্রতিটি পাতায়, তিনি বেঁচে আছে—চিরদিনের জন্য।আল্লাহ মরহুম জেড এম শামসুল ভাইকে বেহেশতের মর্যাদা দান করুন—আমীন।
বিষয়: #আলো #এম শামসুল #জীবন #জেড #দিশারী #প্রথিক #সাংবাদিকতা #সাদাসিধ #স্মরণ




ফকির দুর্ব্বিন শাহ: ভাটি বাংলার মরমি বাউল সাধক
ড. আজিজুল আম্বিয়া পেলেন “গ্লোবাল প্রপার্টিজ এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড 2025″
মাহরিন চৌধুরী: সোনার হরফে লেখা অনন্য শিক্ষকের নাম
“বিশিষ্ট সমাজসেবক, আলহাজ্ব জয়নাল হোসেন এর মৃত্যুতে একাটুনা ইউনিয়ন ফাউন্ডেশন অব মৌলভীবাজার এর শোক প্রকাশ;
অনুষ্ঠিত হয়েছে সদ্য প্রয়াত সিলেটের বিশিষ্ট কবি মুকুল চৌধুরী ও প্রাবন্ধিক সিরাজুল হক স্মরণে স্মরণ সভা।
লোকসংস্কৃতি গবেষক আবু সালেহ আহমদ এর ধারাবাহিক গ্রন্থ আলোচনা-০৩ ভালোবাসার বহিরাবরণ: গ্রন্থটি সমাজ, প্রেম ও মানবজীবনের প্রতিচ্ছবি..। আলোচক- কবি এম আর ঠাকুর।
মৌলভীবাজারের কবি, লেখক, সাংবাদিক সৌমিত্র দেবের স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত
আলোকময় মানুষ। আলো জ্বালানোর কারিগর আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ
কে এই মনীষী এশিয়া উপমহাদেশে মুহাদ্দিস ছাহেব বলে খ্যাত। ।
