

শনিবার ● ১৪ জুন ২০২৫
প্রথম পাতা » সুনামগঞ্জ » সুনামগঞ্জে গবাদিপশু হত্যার পর ক্ষতিগ্রস্থ ৩ কৃষককে জখমের ঘটনায় মামলা দায়ের
সুনামগঞ্জে গবাদিপশু হত্যার পর ক্ষতিগ্রস্থ ৩ কৃষককে জখমের ঘটনায় মামলা দায়ের
আল হেলাল,সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:
গরুকে বিষপানে হত্যা করার পূর্ববিরোধের জের ধরে সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় ছোট ভাই ও তার স্ত্রী সন্তানসহ শ্বশুড়বাড়ীর আত্মীয় স্বজনের হাতে ২ বড় ভাই ও তাদের সন্তানকে গুরুতর আহত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে ৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো ১২ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বিশ্বম্ভরপুর থানায়।
অভিযোগে প্রকাশ,২০২৪ইং সনের ২৬ ফেব্রুয়ারি ভোরে পবিত্র শবেবরাতের শুরুতে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার দক্ষিণ বাদাঘাট ইউনিয়নের সত্রিশ গ্রামের সাইদুর রহমান (৩৫) ও তার স্ত্রী ছনিয়া বেগম (৩০) এবং শ্বাশুড়ি পারুল বেগম (৫০) পানির সাথে বিষ মিশিয়ে,তার বড় ভাই মহিবুর রহমান (৫০) ও মেজো ভাই জাহিদুর রহমান (৪২) এর মালিকানাধীন ৩টি গবাদিপশুকে হত্যা করে। সংবাদ পেয়ে একইদিন সন্ধ্যায় বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা পশু সম্পদ অফিসার ডাঃ হাবিব আহমদ,উপজেলা পশু সম্পদ অফিসারের কার্যালয়ের ট্যাকনেশিয়ান মোরশেদ আলম ও অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর বশির আহমদ সন্ধ্যায় ঘটনাস্থল সত্রিশ গ্রামে গিয়ে উপযুক্ত চিকিৎসা দিয়ে একটি গাভী গরুকে সুস্থ করে তোলেন আর ৩টি গরুকে মৃত বলে ঘোষণা দেন। এই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ সত্রিশ গ্রামের মৃত ছিদ্দিক আলীর জেষ্ট ২ পুত্র মহিবুর রহমান ও জাহিদুর রহমান কর্তৃপক্ষ বরাবরে অভিযোগ দায়ের করতে গেলে তাদের ছোট ভাই সাইদুর রহমানের পক্ষ নিয়ে তার শ্বশুড় দক্ষিণ বাদাঘাট ইউনিয়নের মনবেগ গ্রামের আব্দুল আওয়াল উপযুক্ত ক্ষতিপূরন প্রদান করবেন মর্মে প্রতিশ্রুতি দিলে এ ঘটনাটি ধামাচাপা পড়ে যায়। অন্যদিকে গবাদিপশু হত্যার ফলে ক্ষতিগ্রস্থ ২ সহোদর কৃষক এখন পর্যন্ত কোন ক্ষতিপূরন পাননি। বরং ক্ষতিপূরন চাইতে গেলে সন্ত্রাসী সাইদুর রহমান,তার স্ত্রী ছনিয়া বেগম ও শ্বাশুড়ি পারুল বেগমকে নিয়ে মেজো ভাই জাহিদুর রহমানের বসতঘরে অনধিকার প্রবেশ করে তাদের দেড় লক্ষ টাকা মূল্যের একটি বক্স পালংসহ মূল্যবান জিনিসপত্র জোরপূর্বক লুটতরাজ করে নেয়। এসব ঘটনার প্রতিবাদ করায় রবিবার (৮ জুন) সকাল সাড়ে ৭ টায় সাইদুর রহমান ও তার শ্বশুড়বাড়ীর লোকজন প্রাণে হত্যার লক্ষ্যে রামদায়ের কোপে মেজো ভাই জাহিদুর রহমান,বড় ভাই মহিবুর রহমান ও মহিবুর রহমানের পুত্র পায়েল মিয়া (১৯) কে গুরুতর আহত করে। আহত করার পাশাপাশি নগদ ৫ লক্ষ টাকা,৪ ভরি স্বর্ণালংকার ও একটি স্মার্টফোন লুটতরাজ করে নেয় তারা। আশংকাজনক অবস্থায় গুরুতর আহত ৩ জখমীকে জেলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। এ ঘটনায় ছোট ভাই সাইদুর রহমান (৩৫),তার স্ত্রী ছনিয়া বেগম (৩০) ও শ্বাশুড়ি পারুল বেগম (৫০),শ্যালক বায়জীদ (৩০),ভাগ্নে সোহাগ (২৫), বশির (২২) ও সত্রিশ গ্রামের মৃত আব্দুল আলীর ছেলে গোলাম রহমান (৪৫) এ ৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো ১২ জনকে আসামী করে বিশ্বম্ভরপুর থানায় মামলা দায়ের করেছেন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মেজো ভাই জাহিদুর রহমান। অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চেয়ে সাইদুর রহমানের মুঠোফোনে কল করলে তিনি বলেন,আমার বাপের ভিটা বড় ভাইরা দখল করে রেখেছে বলে আমি নিজেই দলবল নিয়ে তাদের উপর হামলা করেছি। পাশাপাশি আমি বাদী হয়ে তাদের ৪ জনের বিরুদ্ধে থানায় একটি কাউন্টার অভিযোগ দাখিল করেছি। আমি যেকোন মূল্যে বাপের ভিটা উদ্ধার করে ছাড়বো।
সত্রিশ গ্রামবাসী বলেন,সাইদুরের শ্বশুড় আব্দুল আওয়াল মনবেগ গ্রামের রাস্তার পাশে একটি সার বীজের দোকান দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করে যাচ্ছেন। ৩ ভাইয়ের মধ্যে বড় দুই ভাই এক বাড়ীতে এবং ছোট ভাই সাইদুর একা আলাদা বাড়ীতে থাকেন। সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে ছোট ভাই সাইদুর তার শ্বশুড়ের দোকান থেকে কীটনাশক বিষ এনে পানির সাথে মিশিয়ে পানি খাওয়ানোর গামলা গরুর ঘরে রেখে যায়। এরমধ্যে ৪টি গরু পানি খেয়ে বিষে আক্রান্ত হয় এবং আরেকটি গরু পানি না খাওয়ায় প্রাণে বেঁচে যায়। পরে ডাক্তাররা ২টি গরু জীবিত পায় এবং ৩টি গরু মারা যায়। প্রতিপক্ষরা দুই সহোদরের ৫টি গরুকে প্রাণে হত্যার জন্য একাজ করেছিল বলে জানান এলাকাবাসী। এই ঘটনার জের ধরে শাশুড়ীর নির্দেশে লোভী সাইদুর ও তার শ্যালক ভাগ্না ও শ্বশুড়বাড়ীর আত্মীয় স্বজনরা বেআইনী জনতায় মিলিত হয়ে খুন করার লক্ষ্যে দুই বড় ভাই ও তাদের সন্তানের উপর বর্বরোচিত হামলা করে। আহতরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পরও সন্ত্রাসী সাইদুর শ্বশুড়বাড়ীর আত্মীয় স্বজনদের দাপটে জখমীদের বিরুদ্ধে থানায় উদ্দেশ্যমূলক বানোয়াট ভিত্তিহীন কাউন্টার অভিযোগ দায়ের করে।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা পশু সম্পদ অফিসার ডাঃ হাবিব আহমদ বলেন,আমরা ঘটনার দিন সন্ধার সময় সত্রিশ গ্রামের জাহিদুর রহমান ও মহিবুর রহমানের বাড়ীতে অফিসের স্টাফ পাটিয়ে তাদের গোয়ালঘরে পৌছে ৫টি গবাদিপশুর মধ্যে ২টি জীবিত পাই এবং ৩টি গরুকে মৃত বলে সনাক্ত করি। গরুগুলোকে কীটনাশক জাতীয় ঔষধ পানে হত্যা করা হয়েছিল বলে ক্ষতিগ্রস্থরা আমাদেরকে জানিয়েছিলেন। তবে তাৎক্ষনিকভাবে তারা ঐ ঘটনায় মনে হয় কোন আইনের আশ্রয় নেননি।
বিশ্বম্ভরপুর থানার এসআই মুজিবুর রহমান বলেন,জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে ছোট ভাই ও তার শ্বশুড়বাড়ীর লোকজন প্রতিপক্ষ বড় দুই ভাই ও তাদের এক সন্তানসহ ৩ জনকে মারপিটক্রমে গুরুতর আহত করার ঘটনায় দায়েরকৃত অভিযোগটি আমি তদন্তক্রমে সত্যতা পেয়েছি। আহতরা এখনও জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তাদের দায়েরকৃত অভিযোগটি বিশ্বম্ভরপুর থানায় নিয়মিত মামলা হিসেবে এফআইআর হয়েছে।
বিষয়: #কৃষক #ক্ষতিগ্রস্থ #গবাদিপশু #ঘটনা #জখম #দায় #মামলা #সুনামগঞ্জ #হত্যা