শুক্রবার ● ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রথম পাতা » প্রবাসে » বিজয় উৎসব ও পিঠামেলায় মুখরিত হলো সোয়ানসী
বিজয় উৎসব ও পিঠামেলায় মুখরিত হলো সোয়ানসী
দেওয়ান ফয়সাল, লন্ডন, যুক্তরাজ্য:::
![]()
প্র্রতি বছরের ন্যায় এবারও বাঙ্গালী জাতির সুখ-দু:খের অনুভূতি নিয়ে হাজির হলো বিজয়ের মাস ১৬ই ডিসেম্বর। এ বিজয় অর্জন করতে গিয়ে হারাতে হয়েছে আমাদের অনেক প্রিয়জনকে, মুক্তিযুদ্ধ করতে হয়েছে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী সহ স্বাধীনতা-বিরোধীদের সাথে। শেষ পর্য্যন্ত আমরা জয়ী হয়েছি। তাই প্রতি বছর ডিসেম্বর মাস আসলেই আমাদের মনে জেগে ওঠে সেই স্মৃতি বিজড়িত দিনগুলোর কথা, মুক্তিযুদ্ধে লাখো শহীদের কথা, মা-বোনদের অস্ত্র হাতে নিয়ে স্বাধীনতা বিরোধীদের সাথে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ার কথা। তাদেরই স্মরণে, সারা ডিসেম্বর মাসব্যাপী বিভিন্ন সরকারী, আধা - সরকারী প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর উদ্যোগে বিভিন্ন ধরণের অনুষ্ঠানের কর্মসূচী পালিত হয়। অনেক সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো থেকে তাদের অনুষ্ঠানে যোগদান করার জন্য আমন্ত্রণ পেলেও ইচ্ছা থাকা সত্বেও যোগদান করার ইচ্ছা পূরণ হয় না কাজ থেকে ছুটি না পাওয়ার কারণে। প্রবাসে এত কর্মব্যস্ততার মধ্যে থেকেও আমাদের প্রবাসী বাংলাদেশী সম্প্রদায় তাদের নিজের দেশের গুরুত্বপূর্ণ দিবসগুলোর অনুষ্ঠান পালনে কোন সময়েই পিছপা হতে দেখিনি, যা দেখে মন আনন্দে মেতে ওঠে।
এ বছরের ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবসেও ওয়েলসের কয়েকটি স্থান থেকে যোগদানের জন্য কয়েকটি আমন্ত্রণ পেয়েছি। এর মধ্যে গত ১৬ই ডিসেম্বর ২০২৫ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সোয়ানসী শহরের প্রাণকেন্দ্র সেন্ট হেলেন্স রোডে অবস্থিত বার্নসউইক ক্্িরশ্চিয়ান সেন্টারে ”সোয়ানসী বে বাংলাদেশ সোসাইটি (এস ব্ িব্ িএস}এর উদ্যোগে বাংলাদেশের ৫৪তম বিজয় দিবস উপলক্ষে একটি মনোজ্ঞ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য অনুষ্ঠানের প্রধান সমন্বয়ক, ভাইস প্রেসিডেন্ট জনাব আব্দুল কাদির যিনি আমার অত্যন্ত প্রিয় মানুষ, তিনি আমাকে ব্যক্তিগত ভাবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ জানালে আমি তা সানন্দে গ্রহণ করি। ঐ দিন আমার সহকর্মী ভাগ্না আবু নাঈম বিজয়’কে নিয়ে অনুষ্ঠানে হাজির হই। সে একজন ছাত্র হিসেবে এদেশে একটা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে ভর্তি হয়ে এসেছে। এই অনুষ্ঠানের কথা শুনে সে আমার সাথে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলে এই বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে সাথে নিয়ে চলে গেলাম সহকর্মী এই ’বিজয়’কে ।
পোর্ট টালবট্, ব্রিজেন্ড, সোয়ানসী সহ আশেপাশের বিভিন্ন শহর থেকে আগত অতিথিরা তাদের ছেলেমেয়ে সহ পুরো পরিবারের অংশ গ্রহনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি যেন পরিণত ্হয় এক মিলন মেলায়। অতিথিদের স্বাগত জানান সর্বজনাব আব্দুল কাদের, আহমদ আলী, আনসার মিয়া প্রমুখ। অনুষ্ঠানে এতো লোকের সমাগম দেখে আমি যেন বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না যে বিজয় দিবসের একটি অনুষ্ঠান।
যৌথভাবে সভা পরিচালনা করেন সর্বজনাব তালহা ইদ্রিস (ওবিই, জেপি) ও মোহাম্মদ আলমগরি হোসেন ( সেক্রটারী)। সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন সর্বজনাব আব্দুল কাদির, আলগীর হোসেন, আহমদ আলী, আনছার মিয়া প্রমুখ। পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে সভার কাজ শুরু হয়। এরপর সবাই দাঁড়িয়ে সম্মিলিত কন্ঠে পরিবেশিত হয় জাতীয় সঙ্গীত। সুন্দর এবং সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য অনুষ্ঠানকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়।
বিকাল ৫টায় অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার পরপরই শুরু হয় ছোটদের অনুষ্ঠান। পরিচালনা করেন মৌতুশি তানহা, তুলি ওয়াহিদ, তানজিলা তাশরিক, জাহানারা ইসলাম। সহযোগিতায় ছিলেন খন্দকার আব্দুল ওয়াহিদ খন্দকার আব্দুল ওয়াহিদ। অনুষ্ঠানে ছিলো (৫-৮) বছরের বাচ্চাদের জন্য কালারিং ন্যাশনাল ফ্ল্যাগ,( ৯-১২ বছর) বাংলাদেশের ম্যাপ আঁকা, (১৩ বছর থেকে ১৬ বছর) -শহীদ মিনারের ছবি আঁকার প্রতিযোগিতা। এরপর ছিলো যেমন খুশি তেমন সাজো, দেশাত্মবোধক কবিতা ও গানের আসর। এভাবেই শেষ হয় ছোটদের অনুষ্ঠান্।
অনুষ্ঠানে আগত বিশিষ্ট অতিথি ও স্থানীয় নেতৃবর্গের মধ্যে বক্তব্য রাখেন লর্ড ল্যফটেন্যান্ট অব গ্ল্যামনগান মিসেস লুইস ফ্লিট সিএসটিজে, জেপি,কাউন্সিলার হেইলি জি উনয়িাম, ডেপুটি লেফট্যানান্ট মিসেস সার্জ এবেডিন, আব্দুল লতিফ কয়ছর (চীফ এডভাইজার এবং সম্মানিত কমিটি মেম্বার), আবুল কালাম (এডভাইজার এবং সম্মানিত কমিট্ িমেম্বার), আব্দুন নূর (ফান্ড রেইজিং সেক্রেটারী), আনছার মিয়া (এসিস্ট্যান্ট ট্রেজারার) এবং জাহানারা ইসলাম (ইকুয়েলিটি এঙ্গেইজমেন্ট সেক্রেটারী।
বক্তারা বিজয় দিবসের তাৎপর্য্য তুলে ধরে মুক্তিযুদ্ধে আমাদের অবদান কথা স্মরণ করেন। জাতি হিসেবে আজ একটি স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে বিশ্বের কাছে আমাদের একটি পরিচিতি লাভ করেছি, আমরা বাঙালী, বাংলাদেশী। মুক্তিযুদ্ধের সময় দখলদার বাহিনীর হাতে নিহত শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করা হয়।
এরপর শুরু হয় সম্মানিত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য পুরস্কার ও স্বীকৃতি প্রদান অনুষ্ঠান। উক্ত অনুষ্ঠানে পুরস্কার বিতরণ করেন লর্ড লেফট্যানান্ট অব ওয়েষ্ট গ্ল্যামরগান মিসেস লুইস ফ্লিট সিএসটি, জেপি। প্রথমেই জনাব খন্দকার আব্দুল ওয়াহিদ সরওয়ার মুক্তিযোদ্ধা সম্মামনা প্রদান করার জন্য প্রস্তাব করেন মুক্তিয্দ্ধোা মরহুম মোস্তাফিজুর রহমান মানিকের নাম। সর্বসম্মতিক্রমে তা গৃহীত হয় এবং সম্মামনা প্রদান করা হয়।
এরপর সোয়ানসীতে বসবাসরত বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা জনাব আনিসুর রহমান খান (বাবুল) এর নাম প্রস্তাব করেন জনাব মো: মনজুর আহমদ। মুক্তিযোদ্ধা জনাব বাবুল তাঁর পুরস্কার গ্রহণ করার পর সবার অনুরোধে তিনি মুক্তিযুদ্ধের ময়দানে শত্রু পক্ষকে আক্রমনের বিভিন্ন কৌশল, কোন কোন ধরণের অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছিলেন ইত্যাদির বিবরণ সহ ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তানী দখলদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের পর তাঁর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে স্মৃতিচারণ করেন।
এরপর ছেলে মেয়েদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, যেমন খুশী তেমন সাজো, কবিতা ও গানে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
অনুষ্ঠানে ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের কবিতা আবৃত্তি, গান শুনে আমি মুগ্ধ হয়েছি, আনন্দ উপভোগ করেছি। ড. মাউতুশি তানহা ও তানজিলা তাশরিফ এর যৌথ কন্ঠে গাওয়া ’এক সাগর রক্তের বিনিময়ে’ , ইয়াদিরা চৌধুরীর কন্ঠে ’প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ’ গানগুলো শুনে শুনে মনের মধ্যে ভেসে উঠছিলো ১৯৭১ সালের সেই মুক্তিযুদ্ধের সময়ের গানগুলোর কথা। বিজয়ের ৫৪ বছর পর আজকে বিজয় দিবসে বর্তমান প্রজন্মের এসব ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা যখন এ গানগুলো গায় তখন মনে হয় , গাইতে
’না না না আমরা তোমাদের ভুলবো না, কোনদিন ভুলবো না
হে বীর মুক্তিযোদ্ধা
তোমরা যারা দিয়েছো প্রাণ
করেছো স্বাধীন দেশ
আমরা তোমাদের ভুলবো না, কোনদিন ভুলবো না
আমাদের অন্তরে তোমরা করে নিয়েছো স্থান
তোমরা হয়ে রবে চির অম্লান।
স্বাধীনতার উপর যে করিবে আঘাত
আমরা করিব তাদের উপর আঘাত
হে বীর মুক্তিযোদ্ধা
আমরা তোমাদের ভুলবো না, কোনদিন ভুলবো না।
লেখাটি শেষ করার আগে বাচ্চাদের পিতা মাতা অভিভাবকদের অনুরোধ করবো, আপনারা আপনাদের সন্তানদের বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠান সহ যাবতীয় সামাজিক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলোতে নিয়ে যাবেন, যার ফলে তারা আমাদের সমাজের সাথে মিশতে পারবে, কথাবার্তা বলতে পারবে, আমাদের চলাফেরা আচার ব্যবহার সবকিছুতেই তারা শিক্ষা নিয়ে গড়ে ওঠবে। তারা বাংলায় কথা বলতে পারব্,ে দেশে গেলেও পরিবারের সবার সাথে বাংলায় কথাবার্তা বলতে কোন অসুবিধা হবে না। সবচেয়ে বড় কথা হলো, আমাদের সমাজ এবং সংস্কৃতি সম্বন্ধে তাদের ধারণা হয়ে যাবে। মনে রাখতে হবে, সন্তানদের বড় পাঠাগার হচ্ছে, নিজের ঘর এবং শিক্ষক হচ্ছেন পিতামাতা।
ধন্যবাদ জানাই এসএসবিএস-এর ইসি মেম্বারদের, যারা অনুষ্ঠানের শেষাংশে এসে যৌথ কন্ঠে ’আমরা করবো জয়’ গানটি গেয়ে উপস্থিত সম্মানিত সুধিবৃৃন্দদের আনন্দ দেয়ার জন্য । এরপর অনুষ্ঠিত রাফেল ড্র’তে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয় । পরিচালনায় ছিলেন মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম (মামুন) ও জনাব আহমদ আলী।
অনুষ্ঠানে বিশেষ আকর্ষণ ছিলো পিঠা মেলা। মহিলারা তাদের ঘরে তৈরী করা বিভিন্ন ধরণের পিঠা নিয়ে আসেন এবং উপস্থিত সুধিমন্ডলী তা উপভোগ করেন। এয়াড়াও এেেসাসিয়েশনের পক্ষ থেকে আগত মেহমানদের বিরিয়ানী এবং ড্রিঙকস দিয়ে আপ্যায়িত করা হয়্
এবার আমার পাঠকদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি এস বি বি এস এর কার্য্যকরী কমিটির সদস্যবৃন্দের সাথে । তারা হচ্ছেন সর্বজনাব চেয়ারপার্সন-তালহা ইদ্রিস, ভাইস চেয়ার (গভার্ণস এন্ড অপারেশন) আব্দুল কাদির, ভাইস চেযার (কমিউনিটি এনড পার্টনারশীপ) আহমদ আলী, জেনারেল সেক্রেটারী মো: আলমগীর হোসেন, জয়েন্ট সেক্রেটারী-মো: জহিরুল ইসলাম, জয়েন্ট সেক্রেটারী মনজুর আহমদ, ট্রেজারার-মো: রহমান শহীদ, এসিস্ট্যান্ট ট্রেজারার আনসার মিয়া, কমিউনিকেশন সেক্রেটারী-থন্দকার আব্দুল ওয়াহিদ, এডুকেশন এন্ড ইয়ুথ এফেয়ার সেক্রেটারী-আব্দুল মমিন, ফান্ড র্ইাজিং এন্ড স্পন্সরশীপ সেক্রেটারী -আব্দুন নুর, ওম্যান এন্ড ফ্যামিলিজ এফেয়ার সেক্রেটারী-তুলি ওয়াহিদ কো-(অপটেড), ইকুয়েলিটি এন্ড এনক্লুশন সেক্রেটারী-জাহানারা ইসলাম কো-অপটেড), তানজিলা তাসরিফ কো-অপটেড), অনারেবল কমিটি মেম্বার এন্ড চীফ এডভাইজাররা হচ্ছেন সর্বজনাব - মো: আব্দুল লতিফ কয়ছর, মো: আবুল কালাম, মোহাম্মদ তৌহিদ চৌধুরী ও রফিক উদ্দিন।
বিষয়: #উৎসব #পিঠামেলা #বিজয় #মুখরিত #সোয়ানসী #হলো




“গ্লোবাল জালালাবাদ এসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্দোগে মহান বিজয় দিবস ২০২৫ উদযাপন !!
বর্ণবাদবিরোধী বলিষ্ঠ কণ্ঠ আনসার আহমেদ উল্লার পিএইচডি অর্জনে নাগরিক সংবর্ধনা
চ্যানেল এস টেলিভিশনের ২১তম জন্মদিনে গ্রেটার সিলেট কমিউনিটি ইউকে’র অংশগ্রহণ
লন্ডনে বিজয় দিবস উদযাপন: দুই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা দিল বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট ইউকে
ব্রঙ্কসে বাউলিয়ানা গানের আসর,মুগ্ধ হলেন প্রবাসীরা।
বৃটেনের লুটনে ইউনিটি অব মৌলভীবাজার এর নতুন কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠিত
