শিরোনাম:
●   যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর যৌথ মহড়া শুরু ●   অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেওয়াই আমার লক্ষ্য: সিইসি ●   পুলিশের বিশেষ অভিযানে গ্রেফতার আরও ১৬২০ ●   মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত বেড়ে ৩৩, হাসপাতালে ৫০ জন ●   দেশের স্বার্থে বন্দর নিয়ে প্রোপাগান্ডা যেন না করে: উপদেষ্টা সাখাওয়াত ●   আড়াই ঘণ্টা অচল স্টারলিংক, ক্ষমা চাইলেন মাস্ক ●   ফিটনেসবিহীন রাষ্ট্র মেরামতের জন্যই জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে : নাহিদ ইসলাম ●   সুন্দরবনের নদী থেকে আহত কচ্ছপ উদ্ধার করেছে কোস্টগার্ড ●   রাণীনগরে বিএনপির পার্টি অফিসের জানালা ভেঙ্গে চুরি সংঘটিত ●   রাণীনগরে অপহৃতা কিশোরী উদ্ধার যুবক গ্রেফতার
ঢাকা, শুক্রবার, ২৫ জুলাই ২০২৫, ১০ শ্রাবণ ১৪৩২
বজ্রকণ্ঠ "সময়ের সাহসী অনলাইন পত্রিকা", সিলেট, বাংলাদেশ। ই-মেইল ঠিকানা:: news@bojrokontho.com অনুগ্রহ করে সংবাদ প্রতিবেদন, ছবি এবং ছোট ভিডিও পাঠান। লগইন করুন: www.bojrokontho.com

Bojrokontho
বুধবার ● ৪ জুন ২০২৫
প্রথম পাতা » বিশ্ব » শ্রমিক থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট
প্রথম পাতা » বিশ্ব » শ্রমিক থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট
৭০ বার পঠিত
বুধবার ● ৪ জুন ২০২৫
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

শ্রমিক থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট

শ্রমিক থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টশ্রমিক থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট

আন্তর্জাতিক ডেস্ক::

কিশোর বয়সে তিনি ছিলেন একজন শ্রমিক। সেখান থেকে এখন পৌঁছেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার সর্বোচ্চ ক্ষমতার আসনে। বলছিলাম দক্ষিণ কোরিয়ার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট লি জ্যা মিয়ংয়ের কথা। গরিব পরিবার থেকে উঠে আসা কিন্তু কট্টর রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে তিনি দক্ষিণ কোরিয়ায় এক বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব হিসেবেও পরিচিতি পেয়েছিলেন।

ইনচনের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. লি জুন-হান বিবিসিকে বলেন, লি জ্যা মিয়ংয়ের জীবনে ছিল উত্থান পতনের নানা গল্প। তার অনেক পদক্ষেপই নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

তিনি জানান, লি প্রায়ই প্রগতিশীল সংস্কারমূলক উদ্যোগ নিতেন। এর মধ্যে ২০২২ সালের নির্বাচনে সার্বজনীন মৌলিক আয়ের প্রতিশ্রুতি সেই সময়ের দ. কোরিয়ার ক্ষমতা কাঠামোকে চ্যালেঞ্জ করেছিল। এ কারণে কেউ কেউ তাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে, আবার অনেকে তাকে অবিশ্বাস বা অপছন্দও করে।

তিনি একজন অত্যন্ত বিতর্কিত এবং লোকজন তাকে খুব একটা চিনতোও না। একজন বহিরাগত হয়েও নিজের নামটা এমনভাবে তৈরি করেছেন যা ঐতিহ্যবাহী ডেমোক্র্যাটিক পার্টির রীতিনীতির সাথে খাপ খায় না।

তবে এবারের নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি কিছুটা মধ্যম পন্থা অবলম্বন করেছেন। নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি বড় ব্যবসা ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের গুরুত্ব তুলে ধরেছিলেন। বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আসন্ন বাণিজ্য আলোচনাকেও সামনে এনেছিলেন।

সাম্প্রতিক এক স্মৃতিকথায়, লি তার করুণ শৈশবের কথাও তুলে ধরেন। ১৯৬৩ সালে গিয়ংবুক প্রদেশের আন্দংয়ের একটি পাহাড়ি গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পাঁচ ভাই ও দুই বোনের মধ্যে পঞ্চম ছিলেন লি। পরিবারের কঠিন পরিস্থিতির কারণে অবৈধ হলেও কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের জন্য মাধ্যমিক বিদ্যালয় ছেড়েছিলেন।

তখন কিশোর বয়সে একটি কারখানায় কাজ করার সময় একটি মেশিনে হাত চেপে গুরুতর আঘাত পান এবং তার হাতের কব্জি ভেঙে যায়। পরে লি আবেদন করেন এবং স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় বসার অনুমতি পান।

১৯৭৮ ও ১৯৮০ সালে যথাক্রমে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। পরবর্তীতে আইন বিষয়ে পড়ে ১৯৮৬ সালে বার পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হন। ১৯৯২ সালে তিনি কিম হে-কিয়ংকে বিয়ে করেন, তাদের দুটি সন্তানও রয়েছে।

প্রায় দুই দশক মানবাধিকার আইনজীবী হিসেবে কাজ করার পর ২০০৫ সালে তিনি রাজনীতিতে আসেন এবং মানবাধিকার আইনজীবী হিসেবেও কাজ করেন। পরে তিনি সামাজিক-উদারপন্থি উরি পার্টিতে যোগ দেন। যা ছিল ডেমোক্রেটিক পার্টির পূর্বসূরি এবং সে সময়কার ক্ষমতাসীন দল।

তার দারিদ্র্যপীড়িত অতীত জীবনের কারণে তাকে অনেক কটাক্ষ শুনতে হলেও তিনি পিছপা হননি। বরং সাধারণ ও বঞ্চিত মানুষদের কাছে তিনি ছিলেন বেশ জনপ্রিয়।

২০১০ সালে তিনি সিওংনামের মেয়র নির্বাচিত হন এবং বিনামূল্যে কল্যাণমূলক বিভিন্ন কাজ করেন। ২০১৮ সালে বৃহত্তর গিয়ংগি প্রদেশের গভর্নর হন। কোভিড-১৯ মহামারির সময় তিনি সর্বজনীন সহায়তা প্রদানের দাবিতে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে বেশ আলোচিত হন।

ওই সময়েই তিনি ২০২২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন। যদিও ০.৭৬ শতাংশ ভোটের ব্যবধানে হেরে যান। এক বছরেরও কম সময় পরে ২০২২ সালের আগস্টে তিনি দলের নেতা নির্বাচিত হন।

অধ্যাপক ড. লি জুন-হান বলেন, তখন থেকেই আগের চেয়ে আরও সতর্ক অবস্থান নেন লি। আগের মতো কট্টর নয়, বরং কিছুটা নিরাপদ কৌশলও অবলম্বন করেন। তাকে নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া অনেক বিতর্কও ছিল। ২০০৪ সালের মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো, আত্মীয়দের সঙ্গে বিরোধ, ২০১৮ সালে পরকীয়ার অভিযোগ ছিল। দক্ষিণ কোরিয়ার মতো তুলনামূলক রক্ষণশীল দেশে এ ধরনের বিতর্ক যে কারও জন্য বেশ নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

কেলেঙ্কারির মাত্রা

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে লি জ্যা মিয়ং-এর রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা পরিস্থিতি আরও জটিল করে তোলে। বিশেষ করে তার বিরুদ্ধে চলমান একাধিক আইনি মামলা ও নানা কারণে ক্যারিয়ার নষ্ট হওয়ার উপক্রম তৈরি হয়।

এই মামলাগুলোর মধ্যে একটি ছিল ২০২৩ সালের একটি জমি উন্নয়ন প্রকল্পের দুর্নীতি, ঘুষ এবং অবিশ্বাস ভঙ্গের অভিযোগ। আরেক গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ ছিল যে, গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বিতর্ক চলাকালীন সময়ে লি মিথ্যা তথ্য দিয়ে বক্তব্য দিয়েছিলেন।

দক্ষিণ কোরিয়ার টেলিভিশনে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে প্রচারিত সেই বিতর্কে লি জোর দিয়ে বলেন যে, তিনি কিম মুন-কি নামের এক ব্যক্তিকে ব্যক্তিগতভাবে চিনতেন না। যিনি ছিলেন দুর্নীতিবাজ জর্জরিত ওই জমি প্রকল্পের অন্যতম প্রধান ব্যক্তি এবং যিনি বিতর্কের কয়েক দিন আগেই আত্মহত্যা করেছিলেন।

অভিযোগ ছিল, লি ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। যা দেশটির নির্বাচনী আইনের লঙ্ঘন। ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে আদালত তাকে এই অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে এক বছরের স্থগিত কারাদণ্ড দেয়।

পরে মার্চে আপিল আদালত লিকে ওই অভিযোগ থেকে খালাস দেয়। কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়ার সর্বোচ্চ আদালত সেই রায় বাতিল করে। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মামলার চূড়ান্ত রায় এখনও ঘোষণা করা হয়নি।

সংকট থেকেই সুযোগ

গত বছরের ৩ ডিসেম্বর অনেকটা হঠাৎ করেই সামরিক আইন ঘোষণা করেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ইউন। দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি ও উত্তর কোরিয়া সমর্থকদের দমনের অজুহাতে এই সামরিক আইন জারি করা হয়। এরপরই দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে বদলে যায়।

সেই ঘোষণার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই অনলাইনে লাইভে এসে লি মানুষকে জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে জড়ো হতে বলেন। এতে হাজারো মানুষ সাড়া দেয়। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। সামরিক বাহিনী সাধারণ মানুষকে প্রবেশ আটকে দেয়। সংসদ সদস্যরা বেড়া টপকে ভবনে প্রবেশ করেন-লি নিজেও ছিলেন তাদের মধ্যে।

পরদিন ডেমোক্র্যাটিক পার্টি সংসদে ইউনের অভিশংসন প্রস্তাব আনে, যা ২০২৫ সালের ৪ এপ্রিল সর্বসম্মতভাবে সাংবিধানিক আদালতে গৃহীতও হয়।

৯ এপ্রিল লি দলের নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়ে প্রেসিডেন্ট পদে লড়ার ঘোষণা দেন। ২৭ এপ্রিল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রাইমারিতে বিপুল সমর্থনে তিনি দলের প্রার্থী হন।

সামরিক শাসনের ব্যর্থ উদ্যোগ দক্ষিণ কোরিয়ায় এক সাংবিধানিক সংকট তৈরি করে ও ইউনের রাজনৈতিক পতন ঘটায়, আর রাজনৈতিক দল পিপিপি দল কার্যত ভেঙে পড়ে।

এই সংকটে খুব অল্প কয়েকজনই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সুবিধা নিতে পেরেছেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে সফল লি জে-মিয়ং। তিনি এখন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট। তবে তার ভবিষ্যৎ এখনো আদালতের রায়ের ওপর ঝুলে আছে।

নির্বাচনের আগ পর্যন্ত আদালত মামলার কার্যক্রম স্থগিত রেখেছে। তবে এখন তিনি ক্ষমতায় থেকেও দোষী সাব্যস্ত হতে পারেন। আর সেক্ষেত্রে দক্ষিণ কোরিয়া আবারও এক রাজনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হতে পারে।



বিষয়: #  #  #  #  #


আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)