

সোমবার ● ২৬ মে ২০২৫
প্রথম পাতা » Default Category » শ্রীমঙ্গলের চা বাগানের স্মৃতি।
শ্রীমঙ্গলের চা বাগানের স্মৃতি।
শেখ শফিকুর রহমান,নিউইয়র্ক॥
মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলা যার সারাদেশে এক পরিচিতি চায়ের রাজধানী।আর আমি নিজেকে ধন্য মনে করি শ্রীমঙ্গলে জন্মে।শ্রীমঙ্গলের সাতগাঁও এলাকায় আমার বাড়ী।আমার বাড়ী থেকে চা বাগানের দূরত্ব প্রায় দুই কিলোমিটারের মতো।আমি চা বাগান প্রথম কবে দেখি তা বলতে পারবনা।তবে আমার জ্ঞান হবার পর থেকেই চা বাগান দেখে আসতেছি।শ্রীমঙ্গল থেকে মৌলভীবাজার যাওয়ার পথে চা বাগান দেখতে পাওয়া যায়।আমি যখন পঞ্চম শ্রেনীর বার্ষিক পরীক্ষা সেই ১৯৮৪ সালে দেই পরীক্ষা সেন্টার ছিল সাতগাঁও চা বাগানের সাথে ঘেষা সাতগাঁও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়।সকাল বেলা সাতগাঁও চৌমুহনী থেকে বাসে করে লছনা নামক স্থানে নামতে হতো চা বাগানের কাছে।তখন চা বাগান সম্পর্কে খুব একটা আগ্রহ ছিলনা।মূলত চলার পথেই আমরা যারা শ্রীমঙ্গলের অধিবাসী তারা সবাই না চাইলেও চা বাগান দেখতে হতো।এক সময় শ্রীমঙ্গলের পর্যটন আকর্ষন স্পট বলতে ছিল বিটিআরআই সেখানেই সবাই বিশেষ দিনে ক্যামেরা নিয়ে ছবি তুলতে যেত।আমি একবার ক্যামেরা নিয়ে বিটিআরআইতে ছবি তুলতে গিয়েছিলাম।সাথে ছিল দুই বন্ধু এখন প্রয়াত বন্ধু শাহ জামাল আর এখন আমার গ্রামের ওয়ার্ড মেম্বার নিয়াজ ইকবাল মাসুদ চাচা।যথারীতি তিনজন মিলে ক্যামেরা দিয়ে চা বাগান সহ বিভিন্ন দৃশ্যের ছবি তুললাম।বাসায় এসে ছবির নেগেটিভ শ্রীমঙ্গল শ্যামা ফটো স্টুডিওতে দিলাম।কিন্তু কি আর বলবো অনেক শখের ছবি তুলা জানাগেল নেগেটিভ জ্বলে গেছে।আহারে মনে কি দূঃখ আমরা তিনজনের ছবি আর দেখা হলোনা।এখনতো মোবাইলে ছবি তুলে সাথে সাথে দেখা যায় ছবি কেমন হয়েছে।তখনতো আর তেমন ছিলনা ক্যামেরায় ছবি তুলে নেগেটিভ নিয়ে স্টুডিওতে প্রিন্ট করা লাগতো।ছাত্রজীবনে হাইস্কুলে পড়ার সময়ে ভারতীয় হিরো বাইসাইকেল ক্রয় করেছিলাম স্কুল আসা যাওয়ার জন্য যেহেতু বাড়ী লইয়ারকুল গ্রাম থেকে ভুজপুরে অবস্থিত আছিদ উল্লা উচ্চ বিদ্যালয় কিছুটা দুরে ছিল।সেই সময়ে ভারতীয় হিরো বাইসাকেলের অনেক নাম ডাক ছিল।স্কুল থেকে এসে প্রায় দিনেই বাইসাইকেল নিয়ে বাড়ী থেকে লছনা চা বাগানে বেড়ানোর টানে ছুটে যেতাম।সাতগাঁও চা বাগানের ভিতরে ঘুরে বেড়াতাম তা পাতার মনোমগ্ধকর গন্ধ্যে মন জুড়িয়ে যেত।তখনতো আর ফেইসবুক ছিলনা তাই ছবি তুলার কোন টান ছিলনা।চোখের দেখা আর পাতার গন্ধ্যে মন ভরানোই মূখ্য ছিল।আর এখনতো যেখানেই যাই প্রথমে গিয়েই মোবাইলে ছবি তুলা আর ফেইসবুকে পোস্ট করা ছাড়া কোন কথা নাই।আগে কোথাও বেড়াতে গেলে ফিরে এসে বন্ধুদের সাথে কথোপকথনে শেয়ার করতাম আর এখন সব কিছুই ফেইসবুকে আমরা শেয়ার করি কেউ পোস্টে লাইক করে কমেন্ট করে আবার কেউবা তা শেয়ার করে দেয়।এক সময় প্রয়োজনের জন্য দেশ ছেড়ে সৌদিআরবের জেদ্দায় দীর্ঘদিন থেকে আবার চলে আসলাম বিশ্ব রাজধানীখ্যাত নিউইয়র্কে।এখানে বেড়াতে যাই টাইম স্কোয়ার ব্রুকলিন ব্রীজ কিম্বা সেন্ট্রালপার্কে।এ সব দেখার ফাঁকে হৃদয়ের চোখ খোজে বেড়ায় আমার হৃদয়ের গভীরে গেথে থাকা শ্রীমঙ্গলের চা বাগানের সবুজ বনাঞ্চলকে।নিউইয়র্কের উন্নতমানের পর্যটন স্পট দেখে চোখ জুড়ালেও হৃদয়ের মন জুড়ায় না কেবলি খুজে বেড়ায় আমার স্মৃতির পটে আকাঁ শ্রীমঙ্গলের চা বাগানের মনোমগ্ধকর নয়োনভিরাম দৃশ্যকে।আমার কাছে নিউইয়র্ক আর শ্রীমঙ্গল একাকার হয়ে আছে চোখের সামনে নিউইয়র্ক আর হৃদয়ের মাঝে প্রিয় শ্রীমঙ্গল।
লেখক :: শেখ শফিকুর রহমান, সাংবাদিক ও কলামিষ্ট, নিউইয়র্ক।
বিষয়: #চা #বাগান #শ্রীমঙ্গল #স্মৃতি