

বৃহস্পতিবার ● ১ মে ২০২৫
প্রথম পাতা » প্রবাসে » প্রবাসে ছুটিহীন মে দিবস
প্রবাসে ছুটিহীন মে দিবস
প্রবাস ডেস্ক::
কমবেশি অনেকেই জানি মে দিবস কেন চালু হয়েছে, তাই এটা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। তবে যেটা বলার আছে মে দিবস সম্পর্কে জানলেও এটা কয়জনের পালন করার সুযোগ রয়েছে? দিবসটি কি আদৌ শ্রমিকদের কল্যাণে এসেছে?
২০১৫ সালে স্টুডেন্ট ভিসায় সাইপ্রাস যাওয়ার পর পড়াশোনার পাশাপাশি ওয়ার্কশপের কাজে যোগ পাই। প্রথম বছর মনে করেছিলাম পহেলা মে সরকারি বন্ধ, মে দিবসের আগের দিন বসকে বলেছিলাম আগামীকাল আমাদের ছুটি না? সে হেসে বললো ‘মে দিবস’ এটা আবার কী? এ সম্পর্কে ত আমি কিছু জানি না। আসলেই ওই দেশের প্রায় লোক মে দিবস সম্পর্কে অবগত নয়।
অবগত হওয়ার কথাও নয়, কারণ মে দিবসটি মূলত বিশেষ যে কারণে চালু করা হয়েছিল ১২ ঘণ্টা সাধারণ ডিউটির পরিবর্তে ৮ ঘণ্টা করা। পশ্চিমা বিশ্বে ১২ ঘণ্টা ডিউটি নেই বললেই চলে।
৮ ঘণ্টার বাইরে যা করবে তা ওভারটাইম হিসেবে মজুরি পরিশোধ করা হয়, সেজন্য তারা মে দিবসটিকে এতটা গুরুত্বপূর্ণ মনে করে না। যার ফলে সরকারিভাবে সেদিন কোনো ছুটি নেই। কিন্তু বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এমনকি মধ্যপ্রাচ্যেও এখনও ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা সাধারণ ডিউটি চালু রয়েছে। শুধু বিশেষ কিছু সেক্টরে ৮ ঘণ্টা সাধারণ ডিউটি। তাই হয়ত আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে মে দিবস নিয়ে এতটা মাতামাতি হয়।
বলছিলাম সাইপ্রাসের কথা— তখন বন্ধুদের মন খারাপ করে বলছিলাম ভাই কি চাকরি করি মে দিবসেও বন্ধ নেই। তখন তাদের মধ্যে কয়েকজন বললো ভাই তোমার কাজ আছে বলে বন্ধের জন্য চিন্তা কর আর আমাদের যে কাজই নাই মে দিবস এসব দিয়ে আমরা কী করব? আসলেই প্রবাসে একদিন কাজ না থাকা মানে অনেক পিছিয়ে পড়া, সাইপ্রাসে অন্যান্য সরকারি ছুটিগুলোতে বন্ধ দিলেও বেতন দেওয়া হয় না।
এখানে দৈনিক ডিউটির ওপর বেতন নির্ভর করে। তাই এখানে সরকারি ছুটি পাওয়া মানে লসটা নিজের। সুতরাং এই ‘মে দিবস’ কী আদৌ গুরুত্বপূর্ণ না কি এটি নামেমাত্র? এরপর যখন ২০২০ সালে আরব আমিরাতে আসলাম এখানেও দেখি একই অবস্থা। মে দিবসে শ্রমিকদের কোনো ছুটি নেই। মধ্যেপ্রাচ্যের মধ্যে অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে সমৃদ্ধশালী দেশ হলো সংযুক্ত আরব আমিরাত। এখানে এসে দেখলাম মানুষের প্রতিটা সেকেন্ডের মূল্য আছে।
যে যত বেশি কাজ করতে পারে তার তত বেশি আয়। আরব আমিরাতে যেহেতু এখন কাজের সুযোগ অনেক বেশি তাই একজন মানুষ চাইলে মাসে ৩০ দিন কাজ করতে পারে। এখানে যারা কনস্ট্রাকশন সেক্টর বা বিভিন্ন সুপার মার্কেট ও গ্রোসারিতে কাজ করে তারা আদৌ জানে না মে দিবস নামে যে একটা দিবস আছে। কারণ এ দিবসে কোনো বন্ধ নেই এখানেও।
এখানে কনস্ট্রাকশন সেক্টরগুলোতে সাধারণ ডিউটি হলো ৮ ঘণ্টা ও সপ্তাহে একদিন ছুটি। ৮ ঘণ্টার বাইরে ও বন্ধের দিন কাজ করলে তা হলো ওভারটাইম। মে দিবসের নামে যদি বন্ধ দিয়ে মালিকপক্ষ ওই একদিনের বেতন কাটে তাহলে এই মে দিবস কি শ্রমিকদের কল্যাণের জন্য না কি অকল্যাণের জন্য সে প্রশ্ন থেকে যায়!
আবার যারা ব্যবসা করে আরব আমিরাতে, এখানে ব্যবসা করা মানে একদিনে অনেক খরচ একদিন যদি ব্যবসা বন্ধ থাকে তাহলে অনেক টাকা লোকসান। এখানে যে অপ্রয়োজনে একদিন ব্যবসা বন্ধ রাখবেন সে সুযোগ নেই। সুতরাং বলা যায় এই মে দিবস কারো পক্ষে গেলেও আবার কারো বিপক্ষে চলে যায়। তাই হয়ত পুঁজিবাদী দেশগুলোতে মে দিবস নামেমাত্র থাকলেও এটি পালন করা হয় না।
বাংলাদেশে যারা মে দিবস নিয়ে বেশি মাতামাতি করছে তারাও বলতে পারবে না এটি তাদের কোন কাজে আসে, একজন রিকশা বা সিএনজিচালক বা সাধারণ দিন মজুর যদি একদিন কাজ করতে না পারে তার পরিবার না খেয়ে থাকবে। এই মে দিবস দিয়ে তার পেট চলবে না। তাই বলা যায় শুধু প্রবাস কেন; দেশেও ছুটিহীন এই মে দিবস।
বিষয়: #ছুটিহীন #দিবস #প্রবাসে #মে
