শিরোনাম:
ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ৪ পৌষ ১৪৩২
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বজ্রকণ্ঠ "সময়ের সাহসী অনলাইন পত্রিকা", সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ঢাকা,রাজশাহী,নিউ ইয়র্ক,লন্ডন থেকে প্রকাশিত। লিখতে পারেন আপনিও। বজ্রকণ্ঠ:” সময়ের সাহসী অনলাইন পত্রিকা ” আপনাকে স্বাগতম। বজ্রকণ্ঠ:: জ্ঞানের ঘর:: সংবাদপত্র কে বলা হয় জ্ঞানের ঘর। প্রিয় পাঠক, আপনিও ” বজ্রকণ্ঠ ” অনলাইনের অংশ হয়ে উঠুন। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ” বজ্রকণ্ঠ:” সময়ের সাহসী অনলাইন পত্রিকা ” কে জানাতে ই-মেইল করুন-ই-মেইল:: [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।

Bojrokontho
বৃহস্পতিবার ● ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রথম পাতা » বিশেষ » কেবল চেতনা নয়, চাই ঐক্য ও কাজ: কোন পথে বাংলাদেশ?
প্রথম পাতা » বিশেষ » কেবল চেতনা নয়, চাই ঐক্য ও কাজ: কোন পথে বাংলাদেশ?
৪২ বার পঠিত
বৃহস্পতিবার ● ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

কেবল চেতনা নয়, চাই ঐক্য ও কাজ: কোন পথে বাংলাদেশ?

ড. মাহরুফ চৌধুরী
কেবল চেতনা নয়, চাই ঐক্য ও কাজ: কোন পথে বাংলাদেশ?
বাংলাদেশ আজ এক গভীর দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই দ্বন্দ্ব উন্নয়ন বনাম অনুন্নয়নের নয়, ধর্ম বনাম ধর্মনিরপেক্ষতারও নয়। বরং এটি চেতনা ও আকিদার নামে রাষ্ট্র ও সমাজকে বিভক্ত করে ফেলার রাজনীতি বনাম মানুষের বাস্তব জীবনঘনিষ্ঠ প্রয়োজনের রাজনীতির দ্বন্দ্ব। এই দ্বন্দ্বের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবন-জীবিকা, নিরাপত্তা, ন্যায়বিচার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মর্যাদাপূর্ণ ভবিষ্যতের প্রশ্ন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এসব মৌলিক প্রশ্নকে এড়িয়ে গিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সমাজকে টেনে নেওয়া হয়েছে পরিচয়ভিত্তিক ও বিশ্বাসকেন্দ্রিক সংঘাতের দিকে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, যখন রাজনীতি মানুষের বাস্তব প্রয়োজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে চেতনা বা আকিদাকে ক্ষমতা দখলের হাতিয়ার বানায়, তখন রাষ্ট্র দুর্বল হয় এবং সমাজ ভেতর থেকে ভেঙে পড়ে। গ্রীক দার্শনিক প্লেটো (৪২৭-৩৪৮ খ্রিষ্টপূর্ব) থেকে শুরু করে আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তকরা বারবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, রাষ্ট্র টিকে থাকে নাগরিকের কল্যাণ নিশ্চিত করার মধ্য দিয়েই, সুনাগরিক গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে, কোনো একক মতাদর্শ চাপিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে নয়।
বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই বাস্তবতা আরও প্রকট। কর্মসংস্থানহীন তরুণ, দ্রব্যমূল্যের চাপে নাকাল পরিবার, ভেঙে পড়া শিক্ষা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থা এসব বাস্তব সংকটের সমাধান কেবল চেতনার স্লোগানে কিংবা আকিদার হুঙ্কারে হয় না। হয় দায়িত্বশীল নীতিমালা প্রণয়ন, ন্যায়ভিত্তিক শাসন প্রতিষ্ঠা ও সম্মিলিত কর্মপ্রচেষ্টার মাধ্যমে। ফরাসী সাহিত্যিক আলবেয়ার কামু (১৯১৩-১৯৬০) যেমন বলেছেন, মানুষের বিদ্রোহ শেষ পর্যন্ত ন্যায় ও মর্যাদার দাবিতেই কেন্দ্রীভূত হয়; বিভাজনের রাজনীতি সেই দাবিকে বিলম্বিত করে মাত্র। এই কারণে আজকের রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব আসলে আদর্শের সংঘাত নয়, বরং নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় অগ্রাধিকার নির্ধারণের প্রশ্নে হওয়া উচিত। আমাদের দেশে আমরা কি বিভক্তির রাজনীতিকে টিকিয়ে রাখব, নাকি মানুষের জীবনঘনিষ্ঠ প্রয়োজনকে রাজনীতির কেন্দ্রে এনে রাষ্ট্র ও সমাজকে নতুন করে ঢেলে সাজাব- এই সিদ্ধান্তই নির্ধারণ করবে আগামীর বাংলাদেশ কোন পথে এগোবে।
আমাদের চারপাশে তাকালেই দেখা যায়, নানা চেতনা ও আকিদা নিয়ে চিৎকার আর গুন্জরণের অভাব নেই। সভা-সমাবেশ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কিংবা গণমাধ্যম, বিশেষ করে টে- লিভিশনের টকশো সবখানেই নানা শ্রেণি ও পেশার মানুষের উচ্চকণ্ঠ অবস্থান। নানা কায়দায় ভুলভাল বা মিথ্যা তথ্য আর তত্ত্বে একে অন্যের মতকে অস্বীকার অথবা ভ্রান্ত প্রমাণ করার প্রতিযোগিতায় মত্ত। কিন্তু জাতি ও রাষ্ট্রের সমস্যা সমাধানে কাজের জায়গায় রয়েছে ভয়াবহ রকমের শূন্যতা। শিক্ষা ব্যবস্থার গুণগত ও প্রশাসনিক অবক্ষয়, স্বাস্থ্যখাতে বৈষম্য ও অনিয়ম, কর্মসংস্থানের সংকট ও অব্যবস্থাপনা, ন্যায়বিচারের দীর্ঘসূত্রতা ও আইনি জটিলতা, প্রশাসনে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও জবাবদিহির অভাব এবং সর্বস্তরে দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিক রূপ- এসব মৌলিক প্রশ্নে রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তিগুলো যতটা নীরব, মতাদর্শের প্রশ্নে তারা ততটাই সোচ্চার ও সরব। এই বৈপরীত্য কেবল অদক্ষতার নয়, এটি এক ধরনের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও পরিকল্পিত বিচ্যুতি। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বলে, যখন ক্ষমতার রাজনীতি বাস্তব সমস্যার মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়, তখন তা প্রতীক, আবেগ ও পরিচয়কে সামনে এনে জনগণকে বিভ্রান্ত করে ও ব্যস্ত রাখে। ফলে কল্যাণমুখি সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের কাজের রাজনীতি সরে যায় আড়ালে, আর চেতনার রাজনীতি হয়ে ওঠে কেন্দ্রীয় মঞ্চের আলোচনা ও উদ্দীপনার বিষয়।
আমাদের মনে রাখতে হবে যে, ইতিহাসে এধরণের কুটকৌশলের ফল কখনোই শুভ হয়নি। রোম সাম্রাজ্যের শেষভাগ থেকে শুরু করে আধুনিক বহু রাষ্ট্রের অভিজ্ঞতা দেখায়, বাস্তব সমস্যাকে উপেক্ষা করে আদর্শিক উত্তেজনা বাড়ালে রাষ্ট্রের ভিত ক্ষয়ে যায়। এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় রাষ্ট্রের সাধারণ মানুষ। তারা বিভ্রান্ত হয়, কোনটি আসল লড়াই আর কোনটি কৃত্রিম উত্তেজনা, তাদের পক্ষে তা আলাদা করে বোঝা কঠিন হয়ে পড়ে। একদিকে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ে, অন্যদিকে ন্যায্য অধিকার আদায়ের পথ সংকুচিত হয়। পোলিস বংশোদ্ভুত ব্রিটিশ সমাজবিজ্ঞানী জিগমুন্ড বাউমান (১৯২৫-২০১৭), যিনি একজন যায়নবাদ বিরোধী ইয়াহুদী ছিলেন, যেমন বলেছেন, অনিশ্চয়তার সময়ে মানুষ সহজ ব্যাখ্যার দিকে ঝুঁকে পড়ে। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে চেতনা বা আকিদার চিৎকার সেই সহজ ব্যাখ্যাই দেয়, কিন্তু বাস্তব সমাধান দেয় না। কার্যত আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্র ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়েছে। কারণ শক্তিশালী রাষ্ট্র গড়ে ওঠে কার্যকর প্রতিষ্ঠান, দায়িত্বশীল রাজনীতি ও নাগরিক আস্থার ওপর; সস্তা স্লোগান, বক্তৃতার চিৎকার বা মতাদর্শিক উচ্চারণের ওপর নয়। কাজের জায়গায় এই শূন্যতা যতদিন থাকবে, ততদিন চেতনার অতিরিক্ত আওয়াজ ও আকিদার ঝঙ্কার আমাদের সমস্যাগুলোকে ঢেকে রাখবে, সমাধানের পথ দেখাবে না।
চেতনা বা আকিদা মূলত ব্যক্তির বিশ্বাসের জায়গা; তার সামষ্টিক বোধ, বুদ্ধি ও উপলব্ধির উৎস। সে কারণে এটি অনেকের জন্য আত্মিক শক্তি হতে পারে, নৈতিক অনুপ্রেরণা জোগাতে পারে, এমনকি ব্যক্তিগত জীবনে সৎ ও দায়িত্বশীল হওয়ার প্রেরণাও দিতে পারে। কিন্তু এই বিশ্বাস রাষ্ট্র পরিচালনার একমাত্র হাতিয়ার হতে পারে না, হওয়াও উচিত নয়। রাষ্ট্র কোনো একক বিশ্বাসের সম্প্রসারণ নয়; রাষ্ট্র হলো বৈচিত্র্যপূর্ণ মানুষের ন্যায্য সহাবস্থানের কাঠামো, যেখানে ভিন্নমত ও ভিন্ন বিশ্বাসের মানুষ সমান মর্যাদায় বাঁচার অধিকার রাখে। তাই ইতিহাস স্পষ্টভাবে সাক্ষ্য দেয়, যে সমাজে বিশ্বাসকে জবরদস্তির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করতে চাওয়া হয়, সেখানে মানবিকতাই প্রথমে মারা যায়। তারপর ধাপে ধাপে সংকুচিত হয় মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ভেঙে পড়ে ন্যায়বিচারের কাঠামো এবং শেষ পর্যন্ত স্বৈরতন্ত্রের হাতে গণতন্ত্র সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত হয়। ইউরোপের ধর্মযুদ্ধ থেকে শুরু করে আধুনিক রাষ্ট্রে আদর্শিক একনায়কতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা- সব ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, রাষ্ট্র যখন নিজেকে কোনো ‘চূড়ান্ত সত্যের’ বাহক বলে দাবি করে, তখন নাগরিক আর নাগরিক থাকে না; তারা হয়ে ওঠে একান্ত অনুগত প্রজা কিংবা বিদ্রোহী হননযোগ্য শত্রু।
জার্মান বংশোদ্ভুত মার্কিন দার্শনিক হান্না আরেন্ট (১৯০৬-১৯৭৫) স্বৈরতন্ত্রের বিশ্লেষণে দেখিয়েছেন, মতাদর্শ যখন বাস্তবতা ও মানবিক অভিজ্ঞতার ঊর্ধ্বে উঠে যায়, তখন মানুষকে আর ব্যক্তি হিসেবে দেখা হয় না, দেখা হয় একটি ধারণার বাহক হিসেবে। এই দৃষ্টিভঙ্গিই রাষ্ট্রকে নির্মম ও প্রতিশোধপরায়ন করে তোলে। বাংলাদেশের অভিজ্ঞতাও এর ব্যতিক্রম নয়। বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন নামে ও বিভিন্ন প্রতীকে আমরা দেখেছি যে, বিশ্বাস ও চেতনাকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ভাষা বানানোর চেষ্টা সমাজকে বিভক্ত করেছে, দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্বল করেছে এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতি নাগরিক আস্থাকে ভেঙে দিয়েছে। অতএব প্রশ্নটি বিশ্বাস বনাম অবিশ্বাসের নয়; প্রশ্নটি হলো সীমারেখার। চেতনা ও আকিদা ব্যক্তিকে নৈতিকভাবে শক্তিশালী করতে পারে, কিন্তু রাষ্ট্রকে ন্যায়ভিত্তিক ও কার্যকর রাখতে হলে প্রয়োজন আইন, প্রতিষ্ঠান, জবাবদিহিতা এবং সবার জন্য সমান অধিকার নিশ্চিত করার বাস্তব ব্যবস্থা। এই সীমারেখা না মানলে আমরা আবারও এমন এক পথে হাঁটব, যেখানে বিশ্বাস থাকবে প্রচুর, কিন্তু মানবিকতা ও গণতন্ত্র দুটোই আমাদের জীবন থেকে তথা সমাজ ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা থেকে ক্রমশ হারিয়ে যাবে।
আজ আমাদের রাজনীতিতে এক শ্রেণির মানুষ আছে, যারা চেতনা বা আকিদার নামে জাতির মাঝে বিভাজন তৈরি করে; আবার আরেক শ্রেণি আছে, যারা ধর্মের মৌল নীতিমালার তোয়াক্কা না করে আকিদার নামে সমাজকে উত্তপ্ত করেন। ভাষা ও প্রতীকে তারা ভিন্ন হলেও উভয়ের প্রবণতায় মিল আছে এক জায়গায়। আর সেটা হলো, সমাজ ও রাষ্ট্রের বিদ্যমান সমস্যার সমাধানে কাজের প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়া। জনগণের জীবনমান উন্নয়ন, নাগরিক নিরাপত্তা, ন্যায়বিচার ও মর্যাদা নিশ্চিত করার প্রশ্নে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে তারা স্বস্তিবোধ করেন না; বরং সেখানে এক ধরনের অস্বস্তি ও অনীহা লক্ষ করা যায়। এর কারণ অতি সহজ, অথচ খুবই গভীর। জনকল্যাণমুখি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য কাজের রাজনীতিতে হিসাব দিতে হয়; কতটি স্কুল কার্যকর হলো, কতজন তরুণ কর্মসংস্থান পেল, বিচার পেতে কত সময় লাগল, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হলো। কিন্তু তর্কবিতর্ক, গালগল্প কিংবা স্লোগানের রাজনীতিতে এমন কোনো পরিমাপের সুযোগ নেই। সেখানে সাধারণ মানুষের আবেগই পুঁজি, উত্তেজনাই রাজনৈতিক সাফল্য নির্ধারণ করে। জার্মান সমাজতাত্ত্বিক ও ইতিহাসবিদ ম্যাক্স ওয়েবার (১৮৬৪-১৯২০) যেমন বলেছেন, দায়িত্ববোধহীন আদর্শবাদ রাজনীতিকে নৈতিক উচ্চতা দেয় না; বরং তা বাস্তবতাকে অস্বীকার করার সুযোগ তৈরি করে।
রাষ্ট্রকে জনকল্যাণমুখি ব্যবস্থায় পরিণত করার পরিবর্তে দায়িত্ববোধহীন আদর্শবাদী রাজনীতির কারণে আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার মৌলিক ভিত্তি ‘সামষ্টিক কল্যাণ’ থেকে সরে যায় মূলধারা রাজনীতি। জাতীয় জীবনে রাজনৈতিক কর্মকান্ড থেকে বাদ পড়ে যায় রাষ্ট্র ও জনগণ। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, সেই রাষ্ট্র ও জনগণের কল্যাণের নামে রাজনৈতিক আলোড়নের কেন্দ্রে বসে পড়ে পরিচয় ও বিশ্বাসের সংঘাত; আর সেটা রূপ নেয় পেশিশক্তি প্রদর্শণের উত্তেজনায়। এই পরিস্থিতিতে দেশের সাধারণ নাগরিকরা কেবল দর্শক হয়ে ওঠে; তাদের কষ্ট, নিরাপত্তাহীনতা ও অনিশ্চয়তা রাজনৈতিক বা সামাজিক আন্দোলনগুলোতে তেমন গুরুত্ব পায় না। এর ফলে রাষ্ট্রও ক্ষতিগ্রস্ত হয়, কারণ কার্যকর রাষ্ট্র গড়ে ওঠে দায়িত্বশীল নেতৃত্ব, পরিমাপযোগ্য কর্মসূচি ও সম্মিলিত উদ্যোগের মাধ্যমে, বিভাজনের উত্তেজনামূলক ভাষণ বা বিবৃতির মাধ্যমে নয়। আজকের বাংলাদেশে আমাদেরকে এই প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসা জরুরি। কারণ ইতিহাস বলে, যে সমাজে রাজনীতি সামষ্টিক কল্যাণের কাজ থেকে, বিদ্ধমান সমস্যা সমাধানের পথ থেকে পালিয়ে যায়, সেখানে শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রকেই সেই ব্যর্থতার মূল্য দিতে হয়। আর সেই মূল্য চুকাতে হয় রাষ্ট্রকে ও তার সাধারণ মানুষদেরকেই- নীরবে, দীর্ঘ সময় ধরে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে।
বাংলাদেশের মানুষ আজ আর রাজনৈতিক বক্তব্য বা স্লোগানে সহজে বিশ্বাস করতে চায় না। মিথ্যের রাজনৈতিক ব্যবসাবেসাতির দীর্ঘ অভিজ্ঞতা তাদের শিখিয়েছে যে, কথার প্রলোভনে ভুললে রাজনৈতিক নেতাদের উচ্চকণ্ঠ ঘোষণা আর বাস্তব জীবনে তার ফলাফল থেকে তাদেরকেই ভুগতে হবে। তাই নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তে তাদের পরিমাপ করে দেখতে হবে, নেতাদের ও তাদের দলের অতীতে ও বর্তমানে কথা ও কাজে মিল বা অমিল কতটুকু হতে পারে। তাই আজ সাধারণ মানুষ সরাসরি প্রশ্ন করছে: কেন দেশের শিক্ষিত যুবসমাজ বেকার ঘুরে বেড়ায়? কেন দ্রব্যমূল্য তাদের নাগালের বাইরে চলে গেছে? কেন বিচার পেতে দেশের সাধারণ নাগরিকদের বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়? কেন রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রশাসন নাগরিকের সেবক না হয়ে ক্রমে প্রভু হয়ে ওঠে? এই প্রশ্নগুলো কেবল অর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক নয়; এগুলো আসলে রাষ্ট্রের নৈতিক ভিত্তির প্রশ্ন। কারণ যে রাষ্ট্র তার তরুণদের কাজ দিতে পারে না, নাগরিককে ন্যায্য মূল্যে খাদ্য-রসদ সরবরাহ করতে ও ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা দিতে পারে না, সে রাষ্ট্র কাগজে-কলমে শক্তিশালী হলেও বাস্তবে নিতান্তই দুর্বল। মার্কিন দার্শনিক জন রলসের (১৯২১-২০০২) ভাষায়, ন্যায়বিচার কোনো অতিরিক্ত গুণ নয়; এটাই সামাজিক ব্যবস্থার প্রথম শর্ত। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের বাস্তবতায় সেই শর্ত বারবার উপেক্ষিত হয়েছে।
আমাদের এটা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ যে, জনগণের মনের এসব প্রশ্নের উত্তর কোনো চেতনার গ্রন্থে নেই, কোনো আকিদার বয়ানেও নেই। এগুলোর সমাধান পাওয়া যায় কেবল সুশাসনে, প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহিতাতে এবং নৈতিক নেতৃত্বে। বাঙালি অর্থনীতিবিদ আমর্ত্য সেন (১৯৩৩-) দেখিয়েছেন, উন্নয়ন কেবল আয় বৃদ্ধির বিষয় নয়; এটি মানুষের সক্ষমতা, নিরাপত্তা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতা বাড়ানোর প্রক্রিয়া। সেই সক্ষমতা নিশ্চিত না হলে স্লোগান যতই জোরালো হোক, মানুষের জীবন বদলায় না। আজকের বাংলাদেশে জনগণ সেই বাস্তব পরিবর্তনটাই দেখতে চায়। তারা এমন রাষ্ট্র চায়, যেখানে প্রশাসন ক্ষমতার প্রদর্শক নয়, বরং নাগরিক সেবার মাধ্যম; যেখানে বিচার বিলম্বিত নয়, দ্রুত, ন্যায়সঙ্গত ও কার্যকর; এবং যেখানে নেতৃত্বের মাপকাঠি বক্তৃতার তেজ বা গলাবাজি নয়, বরং মানুষের জীবনে দৃশ্যমান ইতিবাচক পরিবর্তন। আসন্ন নির্বাচনে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার আগে আমাদের রাজনৈতিক নেতাদেরকে মাথায় রাখতে হবে যে, এই দাবিকে উপেক্ষা করার আর কোনো সুযোগ নেই।
আমাদের মনে রাখতে হবে যে, ফলেই গাছের আসল পরিচয়। কেউ কী বিশ্বাস করে, তা তার মুখের বুলি বা নানা ব্যক্তিগত, পারিবারিক বা দলীয় পরিচয়ের ঘোষণায় নয়; তার কাজেই প্রকাশ পায় সে আসলে কিসের ধারক ও বাহক। নৈতিকতা, দেশপ্রেম বা মানবিকতার প্রকৃত মাপকাঠি বক্তৃতার মঞ্চের চিৎকার বা হুশিয়ারিতে নয়, ব্যক্তিমানুষের দৈনন্দিন আচরণে ও তার দৃশ্যমান অব্যাহত কর্মে। একজন মানুষ ধর্মপ্রাণ হয়েও দুর্নীতিবাজ হতে পারে, আবার ধর্মনিরপেক্ষতার উচ্চকিত স্লোগান দিয়েও স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে পারে। এই বাস্তবতা আমাদের সমাজে নতুন কিছু নয়, বরং তার অহরহ উদাহরণ আছে আমাদের দৈনন্দিন চর্যায়ই। দর্শনের ভাষায় একে বলা যায় গুণের বাস্তব পরীক্ষা। গ্রীক দার্শনিক অ্যারিস্টটল (৩৮৪-৩২২ খ্রিস্টপূর্ব) বহু আগেই বলেছেন, নৈতিকতা কোনো ঘোষণার বিষয় নয়, এটি অভ্যাস ও কর্মের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠে। রাষ্ট্র ও সমাজের ক্ষেত্রেও নীতিনৈতিকতার প্রদর্শনে একই সত্য প্রযোজ্য। কেউ যদি ন্যায়, মানবতা ও কল্যাণের কথা বলে, তবে তার নীতিনির্ধারণ, প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও ব্যক্তিগত আচরণে তার প্রতিফলন থাকতে হবে। নইলে বিশ্বাস পরিণত হয় কেবল প্রতীকী পুঁজিতে, নেতার আদর্শে কাজ না করে নেতার মাঝারে পুষ্প অর্পণে দিন কাটে দলের নেতা-কর্মীদের। আর সেই প্রতীকী পুঁজি একটি গোষ্ঠীর স্বার্থে ব্যবহৃত হলেও তা কখনই রাষ্ট্রকে এগিয়ে নেয় না।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা আমাদের শিখিয়েছে যে, বিশ্বাসের লেবেল বা খোলস অনেক সময় দায়িত্ব এড়ানোর ঢাল হয়ে ওঠে। তখন প্রশ্ন উঠে না কে কতটা সৎ, কে কতটা দক্ষ, কে কতটা জবাবদিহির আওতায়। ফলে নাগরিক হিসেবে আমরা বিভক্ত হই পরিচয়ের ভিত্তিতে, অথচ ক্ষতিগ্রস্ত হই সবাই সমস্যা সমাধানে কাজের অভাবে। সে কারণেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১) অনেক আগেই আমাদেরকে সতর্ক করেছিলেন যে, নৈতিকতার নামে যখন ভণ্ডামি চলে আসে, তখন সত্যই সবচেয়ে বেশি অপমানিত হয়। এই বাস্তবতায় বর্তমান প্রেক্ষাপটে ক্ষমতার দৌঁড়ে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে গুরুত্ব দিতে আমাদের মূল্যায়নের মানদণ্ড বদলানো জরুরি। কে কী বিশ্বাস করে, তা তার ব্যক্তিগত বিষয়; কিন্তু রাষ্ট্র ও সমাজে তার অবদানের বিচার করতে হবে তার অতীত ও বর্তমানের কাজ দিয়ে। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, দুর্নীতি রোধ, মানবিক আচরণ ও জনস্বার্থে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন- এই কাজগুলোর মধ্য দিয়েই বোঝা যাবে কে সত্যিকার অর্থে সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণে নিবেদিত। বিশ্বাস নয়, কাজই হোক আমাদের নেতা নির্বাচনের মানদণ্ড। ‘জন্ম হোক যথাতথা কর্ম হোক ভালো’- এটাই সময়ের দাবি।
স্বৈরাচারমুক্ত ও বৈষম্যহীন জনকল্যাণমুখি রাষ্ট্রবির্নিমাণে সবচেয়ে বিপজ্জনক কাজ হলো, কোন বিশেষ চেতনা বা আকিদাকে ব্যবহার করে দেশের জনগণকে শত্রু-মিত্রে ভাগ করা। এতে কেবল সমাজ বিভক্ত হয় না, রাষ্ট্রীয় স্বার্থের বিপরীতে গণ-ঐক্যও ভেঙে পড়ে। ইতিহাস প্রমাণ করেছে যে, কোনো জাতি যদি অভ্যন্তরীণ বিভাজনের হাতিয়ার হিসেবে বিশ্বাস বা চেতনাকে ব্যবহার করে, তাহলে তার স্থিতিশীলতা ধ্বংসের পথে ধাবিত হয়। বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো বহুত্ববাদী সমাজে, যেখানে ভাষা, ধর্ম, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক পরিচয় বৈচিত্র্যময়, সেখানে বিভাজন আরও ভয়ঙ্কর প্রভাব ফেলে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে একমাত্র টেকসই পথ হলো রাষ্ট্রীয় আদর্শ হিসেবে ‘বৈচিত্র্যের মাঝে ঐক্য’কে ধারণ, লালন ও প্রতিষ্ঠা করা। এটি মানে ভিন্নমতকে উপেক্ষা করা নয়, বরং ভিন্নমত, ভিন্ন বিশ্বাস, ভিন্ন জাতিসত্তার পরিচয়কে স্বীকার করে রাষ্ট্রীয় স্বার্থে সম্মিলিতভাবে কাজ করা। ফরাসি সমাজবিজ্ঞানী এমিল দুরকেইম (১৮৫৮-১৯১৭) দেখিয়েছেন, যে সমাজে পার্থক্যকে শত্রু হিসেবে না দেখে সংহতির ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করা হয়, সেখানে সামাজিক স্থিতিশীলতা ও নৈতিক দায়বদ্ধতা দুটোই শক্তিশালী হয়।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, ‘বৈচিত্র্যের মাঝে ঐক্য’ কেবল নৈতিক বা আদর্শিক ধারণা নয়; এটি বাস্তব রাষ্ট্রচালনার প্রয়োজনীয় সূত্র। এখানে ভিন্নমত থাকবে, ভিন্ন বিশ্বাস থাকবে, ভিন্ন জাতিসত্তার পরিচয় থাকবে, কিন্তু আমাদের কর্মে প্রেরণা হবে রাষ্ট্র ও সমাজকে শক্তিশালী করা, নাগরিকদের নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিশ্চিত করা এবং দেশের অগ্রগতিকে সকলের স্বত:স্ফুর্ত অংশগ্রহণে এগিয়ে নেওয়া। এটাই হবে আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার আদর্শ, যা বিভাজন ও চেতনার রাজনীতিকে পাশ কাটিয়ে বাস্তবসম্মত সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন নিশ্চিত করবে। আর তার জন্য আজ আমাদের প্রয়োজন একটি স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্রের সুনাগরিক হওয়ার নতুন চেতনা যেখানে মানুষ নিজেকে কোনো ব্যক্তি, পরিবার বা দলের অংশ হিসেবে নয়, বরং জনস্বার্থে সত্যের পক্ষে দাঁড়ানো দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে ভাববে। এখানে চিন্তার মাত্রা থাকবে দেশপ্রেম ও মানবিকতার সাথে, যেখানে পরিচয়ের আগে দেশের প্রতিটি মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখা হবে। এ ধরনের চেতনাই ব্যক্তি ও সমাজকে উন্নত এবং রাষ্ট্রকে শক্তিশালী করে।
দায়িত্বশীল নাগরিকত্ব কেবল অধিকার নয়, এটি কর্তব্যের প্রতিফলনও বটে। নাগরিক তার ছোট বা বড় কোনো স্বার্থ নয়, রাষ্ট্র ও সমাজের কল্যাণকে অগ্রাধিকার দিবে। এতে আত্মবিশ্বাস ও গর্বের প্রকৃত পরিচয় গড়ে ওঠে যা কোনো চেতনাবাজি বা আকিদাবাজি দিয়ে সম্ভব নয়। ফরাসি দার্শনিক ও নাট্যকার জাঁ-পল সার্ত্রের (১৯০৫-১৯৮০) ভাষায়, স্বাধীনতা শুধুমাত্র রাজনৈতিক স্বাধীনতায় সীমাবদ্ধ নয়; এটি দায়িত্বের মধ্য দিয়ে বাস্তবায়িত হয়। আমাদের রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা, সামাজিক সংহতি ও ন্যায়পরায়ণতা নির্ভর করে এই দায়িত্বশীল নাগরিকত্বের প্রবর্তনের উপর। বাংলাদেশে এই চেতনা প্রতিষ্ঠা হলে নাগরিকেরা শুধু চেতনার উচ্চকণ্ঠ নয়, কর্মের মাধ্যমে সমাজ ও রাষ্ট্রকে এগিয়ে নেওয়ার শক্তি অর্জন করবে। এ কারণে আজকের রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনীয়তার লক্ষ্য একটাই- বক্তৃতা নয়, দায়িত্বশীল কর্মমুখী নাগরিকত্ব; যা ব্যক্তিকে আত্মবিশ্বাসী ও গর্বিত আর সমাজকে শক্তিশালী ও সহনশীল করে গড়ে তুলবে।
দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আমরা যদি সত্যিকারের পরিবর্তন চাই, তবে এখনই আমাদেরকে কাজ শুরু করতে হবে। অধ:পতনের যে অতলে আমরা নিমজ্জিত হয়েছি, সেখান থেকে উঠে আসতে শুধু সরকার বা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারিরাই নয়, দেশের রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, সাংবাদিক, পেশাজীবী, তরুণ সমাজসহ প্রতিটি নাগরিকের নিজস্ব দায়-দায়িত্ব পালন করতে হবে। রাষ্ট্রযন্ত্রের কাঠামোগত ও নীতিগত পরিবর্তনে শুধু ক্ষমতার হাত বদলই যথেষ্ট নয়; প্রয়োজন বিদ্যমান অনুপযুক্ত ব্যবস্থার সংস্কার, সম্ভাবনাময় নৈতিক নেতৃত্বকে সমর্থ এবং সর্বক্ষেত্রে কার্যকর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। নইলে আবারও আমাদেরকে ইতিহাসের নির্মম সত্যের সম্মুখীন হতে হবে, আসন্ন নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার রদ-বদল হবে, কিন্তু রাষ্ট্র ও সমাজের কাঠামো ও নিয়মনীতি অপরিবর্তিতই থেকে যাবে। সুশাসন প্রতিষ্ঠা হবে না, ন্যায়বিচার কার্যকর হবে না, দুর্নীতি রোধ হবে না। আমরা যে তিমিরে আছি, সেই তিমির মধ্যেই আটকে থাকব চরম বিপর্যয়ের আগ পর্যন্ত।
সত্যিকারের পরিবর্তন আসে ব্যক্তি থেকে সমাজে, সমাজ থেকে রাষ্ট্রে ক্রমাগত দায়িত্বশীল প্রয়াস ও বিধি-ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে। রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রশাসক শ্রেণি, পেশাজীবী এবং সাধারণ নাগরিকরা যখন নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতন ও কার্যকর উদ্যোগ নেবে, কেবল তখনই শিক্ষায় নৈতিকতা প্রতিষ্ঠা, সাংবাদিকতায় সত্যনিষ্ঠা বজায় রাখা, প্রশাসনে জবাবদিহি নিশ্চিত করা, এবং দেশের প্রতিটি কর্মক্ষম ব্যক্তির কর্মসংস্থানে সহায়তা সম্ভব হবে। আর বাস্তবে তখনই দেশের ভবিষ্যৎ নতুন পথের দিশা পাবে। সময় এসেছে চেতনা ও আকিদার উচ্চকণ্ঠের বাইরে গিয়ে কর্মের মাধ্যমে বাস্তবের দুনিয়ায় পরিবর্তন ঘটানোর। বাংলাদেশ আজ সোনালী আগামীর স্বপ্ন দেখছে নবীন স্বপ্নসারথীদের উদ্যোম ও উদ্দীপনায়। এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে আমাদের একটি স্পষ্ট পথ দরকার; আর সেই পথ হলো ‘বৈচিত্র্যের মাঝে ঐক্য’ সৃষ্টি করা। আমাদের চেতনা ও আকিদা যখন মানবিকতার আলোকে উদ্ভাসিত হবে, তখন ভিন্নমত ও বহুবর্ণিল পরিচয়ের মধ্যেও আমরা সম্মিলিতভাবে কাজ করতে পারব। আমাদের মনে রাখতে হবে, রাষ্ট্র ও সমাজের কল্যাণ কেবল স্বপ্নে নয়, নিরন্তর কর্মের নিহিত।
কর্মই আমাদের চেতনা বা আকিদার মূলভিত্তি হওয়া উচিত। আর সেই ক্ষেত্রে পরিবর্তনের মূল ভাবনা আমাদের কাছে স্পষ্ট থাকা চাই। নিজের জন্য আমরা যা চাই, অন্যের জন্যও তা চাইতে হবে, এবং তা বাস্তবে রূপ দিতে নিজেকে হাত লাগতে হবে। কেবল মঞ্চে দাঁড়িয়ে কিংবা বসে বসে তর্কবিতর্ক বা আড্ডায় ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পন্ডিতি কথাবার্তা বললে চলবে না; আশেপাশের বিদ্যমান সমস্যা সমাধানের দায়ভার নিজের কাঁদে তুলে নিয়ে কাজ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, অন্যের স্বপ্নপূরণই আমাদের স্বপ্নপূরণের রাজপথ; একটি উদার, সমন্বিত ও মানবিক সমাজের নির্মাণে এই দৃষ্টিভঙ্গিই হোক আমাদের পথপ্রদর্শক। আমাদের সম্মিলিত উদ্যোগই সমাজে আনন্দ, স্থিতিশীলতা ও ন্যায়ের বীজ বুনে দেবে। আজ সময় এসেছে শুভ বুদ্ধির উদয় ঘটানোর, যেখানে চেতনা বা আকিদা নয়, মানবিক মূল্যবোধে সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি সুনাগরিকসুলভ নৈতিক দায়দায়িত্ব আমাদেরকে কর্মে উদ্বুদ্ধ করে দেশে সমৃদ্ধি, ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও সব মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করবে। আমাদের দেশকে সেই আলোয় আলোকিত করতে হবে, যেখানে বিভাজন থাকবে না, থাকবে শুধু সক্রিয় ঐক্য, দায়িত্বশীল নাগরিকত্ব ও মানবিক উদ্দীপনা যা বাংলাদেশকে নিয়ে যাবে কল্যাণমুখি রাষ্ট্রবিনির্মাণে পথে।

* লিখেছেন: ড. মাহরুফ চৌধুরী, ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি, ইউনিভার্সিটি অব রোহ্যাম্পটন, যুক্তরাজ্য।



বিষয়: #  #  #  #  #  #  #  #  #


বিশেষ এর আরও খবর

১৯৭১ সালের ২৫ এপ্রিল বানিয়াচং উপজলার কালাইনজুড়া এবং হলদারপুর গ্রামে পাকবাহিনীর বিমান হামলা ও কিছু স্মৃতিকথা। ১৯৭১ সালের ২৫ এপ্রিল বানিয়াচং উপজলার কালাইনজুড়া এবং হলদারপুর গ্রামে পাকবাহিনীর বিমান হামলা ও কিছু স্মৃতিকথা।
একটি বিশেষ প্রতিবেদন গানে গানে সংস্কারের কথা বলে গেছেন বাউল কামাল পাশা একটি বিশেষ প্রতিবেদন গানে গানে সংস্কারের কথা বলে গেছেন বাউল কামাল পাশা
মুক্তিযুদ্ধ : ছাতকের ‘শিখা সতেরো’—৫৪ বছরের রহস্য আজও উন্মোচিত হয়নি মুক্তিযুদ্ধ : ছাতকের ‘শিখা সতেরো’—৫৪ বছরের রহস্য আজও উন্মোচিত হয়নি
সুনামগঞ্জে ১২৪ তম জন্মবার্ষিকীর আলোচনা সভায় বাউল কামাল পাশাকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দানের দাবী সুনামগঞ্জে ১২৪ তম জন্মবার্ষিকীর আলোচনা সভায় বাউল কামাল পাশাকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দানের দাবী
গানে গানে সংস্কারের কথা বলেছেন বাউল কামাল : ১২৪ তম জন্মবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলী গানে গানে সংস্কারের কথা বলেছেন বাউল কামাল : ১২৪ তম জন্মবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলী
কোকা-কোলা বাংলাদেশের নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক হলেন মঈন উল্লাহ চৌধুরী কোকা-কোলা বাংলাদেশের নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক হলেন মঈন উল্লাহ চৌধুরী
বাংলাদেশে ৭মাত্রার ভূমিকম্পের আগাম সতর্কবার্তা  ধ্বংশ হয়ে যেতে পারে দেশের ৮০% স্থাপনা বাংলাদেশে ৭মাত্রার ভূমিকম্পের আগাম সতর্কবার্তা ধ্বংশ হয়ে যেতে পারে দেশের ৮০% স্থাপনা
ভূমিকম্প পরবর্তী স্বাভাবিক হয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ ভূমিকম্প পরবর্তী স্বাভাবিক হয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ
ঐক্যের বার্তা নিয়ে ভেসপাবস-এর ফ্যামিলি নাইট ও ডিনার অভ্যর্থনা ঐক্যের বার্তা নিয়ে ভেসপাবস-এর ফ্যামিলি নাইট ও ডিনার অভ্যর্থনা

আর্কাইভ

সিলেট শহরের সকল হবিগঞ্জী --- --- --- --- --- --- ---

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)
উন্নয়ন মানে শুধু বড় বড় স্থাপনা নয়, উন্নয়ন মানে মানুষের মুখে হাসি ফোটানো
ব্রেকিং নিউজ উসমান হাদি মারা গেছেন
ছাতকে শহীদ মিনারে বিতর্কিত স্লোগান, ৪৮ ঘণ্টা পার হলেও থানা প্রশাসনের রহস্যজনক নীরবতা !
হবিগঞ্জের বানিয়াচং সড়কে বিজয় দিবসের দিনে মোটরসাইকেল ও মিশুক গাড়ি সংঘর্ষে নিহত ১জন আহত ২।।
দৌলতপুরে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস পালন
রাঙ্গুনিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষকের মৃত্যু
গ্রেফতার দেখানো হলো সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে
শেখ হাসিনা ও কামালের মৃত্যুদণ্ড চেয়ে আপিল করল প্রসিকিউশন
নির্বাচন বানচাল ও অভ্যুত্থানকে নস্যাৎ করতেই টার্গেট কিলিং হচ্ছে: নাহিদ
মানবাধীকার অপরাধ মামলা