বুধবার ● ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রথম পাতা » বিশেষ » ১৯৭১ সালের ২৫ এপ্রিল বানিয়াচং উপজলার কালাইনজুড়া এবং হলদারপুর গ্রামে পাকবাহিনীর বিমান হামলা ও কিছু স্মৃতিকথা।
১৯৭১ সালের ২৫ এপ্রিল বানিয়াচং উপজলার কালাইনজুড়া এবং হলদারপুর গ্রামে পাকবাহিনীর বিমান হামলা ও কিছু স্মৃতিকথা।
:::সিন্দু মনি চান্দা :::
![]()
হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার পূর্ব সীমান্ত কালাইনজুরা এবং হলদারপুর গ্রাম।গ্রামটির পর্বপার্শ্ব দিয়ে বয়ে গেছে শাখা বরাক নদী।যা কালের আবর্তে আজ খালে পরিনত হয়েছে। এ গ্রামেই আস্তানা গড়েছিলেন ৩৬০ আউলিয়ার সফর সঙ্গী হযরত সৈয়দ ইলিয়াস(রহঃ) এর বংশধর মহান পূরুষ হযরত সৈয়দ শাহ অালমাছ খন্দকার (রহঃ) ওরফে কাজী খন্দকার।এ গ্রামেই জন্ম নিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সম্মুখ সমরে শহীদ, হাবিবুর রহমান নানু।গ্রামের পশ্চিমে আমন ও বোর ধানের মাঠ।দক্ষিনে হলদারপুর গ্রাম এবং উত্তরে শ্যামল ধানের মাঠ ও অন্যান্য পল্লী গ্রাম। এক সময়ে গ্রামটি নবসনা গ্রাম হিসাবে অত্র অঞ্চলে পরিচিত ছিল।এ গ্রামে জন্ম নিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা ও অনেক গুনী জ্ঞানী। মুক্তযোদ্ধের সময় মরহুম বজলু মেম্বার সাহেবের বাড়ীতে ক্যাম্প করেছিল মুক্তিবাহিনী এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগীতা করাছিল এ গ্রামের প্রতিটি মানুষের অঙ্গীকার।বলতে গেলে স্বাধীনতা যুদ্ধের স্বপক্ষের একটি আদর্শ গ্রাম।
১৯৭১ সালের ২৫ এপ্রিল,বাংলা মাসটি ছিল বৈশাখ মাস,মাঠে মাঠে বৈশাখী বোর ধানের মৌ মৌ গন্ধ।গ্রামের কৃষকেরা মাঠ থেকে ধান নিয়ে আসার জন্য ১০/১২ জনের একটি দল কাঁদে বেউ (কাঁদে করে ধান নিয়ে আসার জন্য বাঁশের তৈরী) দেখতে রাইফেলের ন্যায়। তখন সবেমাত্র মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে।সকলের মধ্যো আতন্ক কি যে হবে। মাঠ থেকে ধান নিয়ে আসার জন্য উলুবনের মধ্যদিয়ে একপায়া মেঠু পথ।কৃষক দল মাঠে যায় আমার সোনার বাংলা গান গায়,আবার কেহ সেই সময়ের জনপ্রিয় শ্লোগান জয়বাংলা ধ্বনি দিয়ে মাঠের দিকে যায়। কাঁদে বেউ নিয়ে একপায়া মেঠো পথে লাইন বেধে যাওয়াতে একটি প্রশিক্ষিত মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের মত লাগে। বিমান/প্লেন দখলেই বিমানের দিকে বেউ তাক করে রাখে।
তখন আমি খুব ছোট,ঐদিন আমি এবং আমার কাকাতো বোন আমাদের পার্শ্ববর্তী পুকুরের হাটু পানিতে ডানকিনে মাছ ধরছিলাম।হাঠাৎ করে দুটি কাল বিমান বিকট অাওয়াজ করে দক্ষিন দিক হতে উত্তর দিকে উড়ে গেল,আবার ফিরে এসে ঘোরপাক খেল এবং দেখলাম তৈল জাতীয় পদার্থ পানির উপর ভেসে উঠল।আমরা দুজন ভয়ে পানি থেকে উঠে পাশেই আমার এক দাদীকে জড়িয়ে ধরলাম।উনি বোর ধান রাখার জন্য ছেঁড়া বস্তা পাট দিয়ে সলাই করছিলেন।
গাছগাছালিতে ভরা কালাইনজুরা গ্রাম।সবেমাত্র বসন্তকাল শেষ হয়েছে।গাছের পাতা পরে আবার শুকিয়ে ঝোঁপঝাঁড় ভরে আছে। দেখলাম ঝোঁপঝাঁড় এ আগুন জ্বলছে।চতুর্দিকে মানুষের আর্তনাদ এবং প্রাণ বাঁচানোর জন্য ছুটাছুটি। আমার বাবা দৌড়ে এসে আমরা সকলকে নিয়ে এ স্থান ত্যাগ করেন।যুদ্ধ বিমান ঘুরপাক দিচ্ছে এদিক হতে ঐদিক এবং বৃষ্টির মত গুলি ছুঁড়ছে। মানুষ যে যেমনি ভাবে পারছে প্রাণ বাঁচানোর জন্য যার গন্তব্যে ছুটাছুটি করছে।আমাদের বাড়ীর পাশেই একটি মজাপুকুর,পুকুরের চারপাশ ছিল গাছগাছালিতে ভরা।আমাদের বাড়ীর সবাই পুকুরের উপর হেলে পড়া আমগাছের মূলে ধরে পানির মধ্যে বাঁদুরের মত ঝুঁলে আছি।হঠাৎ একটি কামানের গুলি গাছের বড় শাখা ছেদকরে আমাদের পাশেই পড়ল,কেউ হতাহত হয়নি।আমার জেটিমা ভয়ে উনার কুলেথাকা শিশুকে নিয়ে কখন যে পানিতে ডুব দিয়ে আছেন কোলে যে উনার ছোট কন্যা শিশু সে দিকে খেয়াল নেই।উনার শ্বাস যখন প্রায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তখন তিনি পানির নিচে থেকে শিশুটিকে নিয়ে ভাসলেন,ততক্ষনে শিশুটি পানি খেয়ে মৃত প্রায়।এদিকে বিমান হামলায় মানুষ প্রাণ বাঁচানোর জন্য দিক বেদিক ছুঁটছে তারপর এই বিপদ,অবশ্য পববর্তীতে শিশুটির পেট থেকে পানি বের করে বাঁচানো গিয়েছিল।কিছুক্ষন পরই শুনি আমাদের পার্শবর্তী বাড়ীর নগরবাসী শুক্লবৈদ্যের স্ত্রীর কামনের গুলি লেগেছে তাঁর শিশু কন্যা কামানের গুলিতে মারা গেছে।পাশেই মা বাসন্তী রানী বৈদ্য (৩২) গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে আছেন, গ্রামের একমাত্র ডাক্তার চানমিয়া চাচা ভদ্রমহিলার ব্যান্ডেজ করছেন(পরবর্তীতে প্যারালাইজড অবস্থায় এই মহিলা কয়েক বছর অত্যন্ত কষ্টের সহিত জীবন সংগ্রাম করে তিনি মৃত্যু বরন করেন)।আমাদের একটি ছাগল কামানের গুলিতে পা হাড়িয়ে গাছের নিচে পড়ে আর্তনাদ করছে। প্রাণ হারিয়েছে আরও অনেক গবাদি পশু,অামি এবং কাকাতো বোন যেখানে আমার দাদীকে জড়িয়ে ধরেছিলাম ঐ জায়গায় প্রায় পাঁচ হাত গর্ত হয়েছিল।ভাগ্যক্রমে ঐদিন আমরা বেঁচে গিয়েছলাম।
পাক বিমান বৃষ্টির মত গুলি ছুঁড়েছে। বিমান হামলার পর কাঁদামাটি থেকে গ্রামের অনেকেই এবং আমরা বিস্ফোরিত এবং অবিস্ফোরিত অনেক গুলি কুড়িয়েছিলাম। গুলির ওজন ছিল দেড় থেকে দুই ছটাক।এ গুলি আজ আর নেই,থাকলে হয়ত মুক্তিযুদ্ধের যাদু ঘরে রাখা যেত।বিমান হামলার পর প্রতিটি বাড়ীতে মাটির নীচে গর্ত করে ভান্কার গড়ে তোলা হয়েছিল।বিমানের আওয়াজ পেলেই সবাই ভান্কারের ভিতর চলে যেত।সেইদিন ১৫/২০ মিনিটের বিমান হামলায় লন্ড ভন্ড করে দিয়েছিল কালাইনজুরা ও হলদার পুর গ্রাম।
কালাইনজুরা গ্রামের পার্শ্ববর্তী গ্রাম খাগাউড়া,এ গ্রামে জন্মগ্রহন করেন মুক্তিযুদ্ধের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড জনাব এম,এ,রব সাহেব। উনার গ্রাম ধারনা করেই হয়ত পাকবাহিনী সেদিন কালাইনজুরা এবং হলদারপুর গ্রামে নির্বিচারে কামানের গুলি এবং গ্রেনেড ছুঁড়েছিল। ঐদিন বিমান হতে ছুঁড়া কামানের গুলি এবং গ্রেনেড হামলায় যারা মৃত্যুবরন করেন,তারা হলেন,কালাইনজুরা গ্রামের গৌরী রানী শুক্লবৈদ্য (১),বাসন্তী শুক্লবৈদ্য (৩২),হলদারপুর গ্রামের মকবুলুন্নেছ (৩৫),আমিনা খাতুন (১২),সোনার মা (৩২),অাঙ্গুরা খাতুন (৮),তৈয়বচান বিবি (৭০),লাল বিবি(৬০), নবীগঞ্জ থেক অাসা আমিনা বিবি (৫২),কমলা বিবি,মাঠে থাকা ১২ জন ক্ষেত মজুর।
আহত হয়েছিলেন,হলদারপুর গ্রামের ফরিদা খাতুন,মমতাজ বেগম,শারবান বিবি প্রয়াত,রেজিয়া খাতুন,এখলাছ বিবি,খোদেজা বিবি,আমিনা খাতুন প্রয়াত,লতিফা খাতুন প্রয়াত,ফরিদা খাতুন এক পা হাড়িয়ে এখন ও বেঁচে অাছেন তখন তার বয়স ছিল ৯ বছর, কামানের গুলিতে পা হারানোর পর তার আর বিয়ে হয়নি।অভাব অনটনে দিন কাটাচ্ছেন।শুনেছি বঙ্গবন্ধুর স্বাক্ষরকৃত ১টি অভিন্দন পত্র ও স্বাধীনতা উত্তর সরকারের নিকট থেকে একহাজার টাকা।সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় হতে পাঁচ হাজার টাকার চেক গ্রহন করেছেন।(সাপ্তাহিক স্বদেশ বর্তা ২১/৩/০৬ পত্রিকার তথ্য অনুসার)।
স্বাধীনতার পর বিমান হামলা নিয়ে পত্র পত্রিকায় অনেক লিখা হয়েছে,কালাইনজুরা গ্রামে বিমান হামলার কাহিনী কখন ও উঠে অাসেনি এবং আহত বা নিহত কেউ সরকারের নিকট হতে কোন সাহায্য পেয়ছে মর্মে অামার জানা নাই।
সুপ্রিয় পাঠক,লেখালেখির অভ্যাস আমার নাই বললেই চলে।সেদিনের লালিত স্মৃতি অাপনাদের মাঝে তুলে ধরলাম।ভূলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
বিষয়: #উপজলা #এপ্রিল #কালাইনজুড়া #কিছু #গ্রাম #পাকবাহিনী #বানিয়াচং #বিমান #সাল #স্মৃতিকথা #হলদারপুর #হামলা #১৯৭১




একটি বিশেষ প্রতিবেদন গানে গানে সংস্কারের কথা বলে গেছেন বাউল কামাল পাশা
মুক্তিযুদ্ধ : ছাতকের ‘শিখা সতেরো’—৫৪ বছরের রহস্য আজও উন্মোচিত হয়নি
সুনামগঞ্জে ১২৪ তম জন্মবার্ষিকীর আলোচনা সভায় বাউল কামাল পাশাকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দানের দাবী
গানে গানে সংস্কারের কথা বলেছেন বাউল কামাল : ১২৪ তম জন্মবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলী
কোকা-কোলা বাংলাদেশের নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক হলেন মঈন উল্লাহ চৌধুরী
বাংলাদেশে ৭মাত্রার ভূমিকম্পের আগাম সতর্কবার্তা ধ্বংশ হয়ে যেতে পারে দেশের ৮০% স্থাপনা
ভূমিকম্প পরবর্তী স্বাভাবিক হয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ
ঐক্যের বার্তা নিয়ে ভেসপাবস-এর ফ্যামিলি নাইট ও ডিনার অভ্যর্থনা
শেখ হাসিনার বিচারের রায় আগামী সপ্তাহে: তথ্য উপদেষ্টা
