শনিবার ● ৬ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রথম পাতা » বিশেষ » গানে গানে সংস্কারের কথা বলেছেন বাউল কামাল : ১২৪ তম জন্মবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলী
গানে গানে সংস্কারের কথা বলেছেন বাউল কামাল : ১২৪ তম জন্মবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলী
আল হেলাল,সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি :
![]()
পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ইমানের অর্ধেক। ছোটবেলা পাঠ্যপুস্তক অধ্যয়নে আমরা এই শব্দগুলোর সাথে কমবেশি পরিচিত। তবে এগুলো নিছক কোন শব্দই নয় বরং বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ (স:) এর মর্মবাণী হাদিসের কথা। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা যেমন দেহের মনের তেমনি তা হতে হবে সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য অপরিহার্য্য। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতিতে এই পরিষ্কার শব্দটির অপর নাম হচ্ছে সংস্কার ও মেরামত। বিশেষ করে ২০২৪ইং সনের ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে গত ১৭ বছরের দু:শাসনের ফলে রাষ্ট্রযন্ত্র কাঠামোতে দুর্নীতি ও দু:শাসনের ফলে সর্বত্র যে স্থবিরতা ও অচলাবস্থা বিরাজ করছিল তা থেকে উত্তরণে রাষ্ট্রযন্ত্রকে গতিশীল করতে সংস্কারের প্রয়োজন মনে করে বর্তমান অন্তবর্তীকালিন সরকার তথা সারা দেশের সকল রাজনৈতিক দলগুলো। কিন্তু রাষ্ট্রের কতগুলো সুনির্দিষ্ট বিদ্যমান বিষয়ে সংস্কার করলেই যে দেশের সকল সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে তা কিন্তু নয়। সংস্কার হতে হবে ব্যক্তি,পরিবার থেকে সমাজ,দেশ তথা রাষ্ট্রেরসহ সর্বক্ষেত্রে। বাংলাদেশে সর্বপ্রথম গানের মধ্যে দিয়ে সংস্কার শব্দটির কথা প্রচলন করে যিনি কিংবদন্তী হয়ে আছেন তিনি হচ্ছেন সুনামগঞ্জ জেলার ৫ প্রধান লোককবির মধ্যমণি গানের সম্রাট বাউলকবি কামাল পাশা (কামাল উদ্দিন)। শনিবার (৬ ডিসেম্বর ২০২৫ইং) মহান এই সংগীত শিল্পীর ১২৪তম জন্মবার্ষিকী। এ উপলক্ষ্যে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও আলোচনা ও গানের মধ্যে দিয়ে সুনামগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমির হাসনরাজা মিলনায়তনে প্রয়াত এই লোককবিকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে ভক্ত ও আশেকানরা।
রচিত গানের মধ্যে সরাসরি সংস্কার শব্দটি প্রয়োগ না করে রোমান্টিক অর্থে ভিন্নমাত্রায় পরিষ্কার শব্দটি দ্বারা মূল্যবান গান রচনার মাধ্যমে ব্যক্তিস্বত্তার মন দেহ থেকে শুরু করে ঘরবাড়ী,শহর,বন্দর তথা সবকিছু সংস্কার বা পরিস্কারের উপর গুরুত্বারোপ করেছেন বাউল কামাল পাশা। স্বরচিত গান ও কবিতায় এই চারণ কবি গেয়েছেন,
“পরিস্কারে রেখো মন তোর দেহ ভান্ড ঘর
যে বান্ধিল ওই ঘরখানা তারনি তুই রাখছ খবর।।
তন পরিস্কার মন পরিস্কার ঘর দরজা সব পরিস্কার
পরিস্কার তোর শহরও বন্ধর।
পরিস্কারে আল¬াহ রাজী যেজন তোমার দেহের কাজী
নাটমন্দিরে লইতেছে খবর।।
থাক তুই রিপুর অধীনে ক্ষতি করে রাত্রদিনে
লুঠ করতে চায় ভাঙ্গিয়া কেওর।
সময় থাকতে লাগাও তালা রেখনা দরজা খোলা
দূরে যাবে ছয় ডাকাইতের ডর।।
আমি যে মালিকের অধীন ভাবিয়া কইন কামাল উদ্দিন
তার কাছে নালিশ কর সত্বর।
হবে বিষয় সংশোধন তথায় আছে প্রশাসন
বন্ধন করে নিয়ে যাবে তাদেরে আইনের ঘর”।।
‘সংস্কার’ একটি সংস্কৃত শব্দ। এটি ‘সৎ’ (ভালভাবে) এবং ‘করণ’ (করা) থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ ‘ভালভাবে করা’ বা ‘শুদ্ধ করা’। এটি মূলত সংস্কৃত ভাষা থেকে এসেছে। এই শব্দটি শুধু একটি ভাষা থেকেই আসেনি, বরং এটি ভারতীয় দর্শন এবং অন্যান্য অনেক ভাষায় ব্যবহৃত একটি গুরুত্বপূর্ণ শব্দ। এটি ‘মানসিক ছাপ’, ‘স্মৃতি’ এবং ‘সাংস্কৃতিক আচার-অনুষ্ঠান’ বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। সংস্কার শব্দের অর্থ হলো সংশোধন, উন্নতি বা কোনো কিছুর ত্রুটি দূর করে তাকে উন্নত ও পরিমার্জিত করা। এটি কোনো কিছু মেরামত, শোধন বা পরিষ্কার করাকেও বোঝাতে পারে। মোট কথা ভুল বা অসন্তোষজনক কিছুকে ভালো করার জন্য পরিবর্তন আনা, কোনো কিছু ভেঙে গেলে বা নষ্ট হয়ে গেলে তা ঠিক করা বা মেরামত করা, কোনো কিছু পরিষ্কার বা বিশুদ্ধ করা এবং কোনো কিছুর মান বৃদ্ধি করা বা তাকে আরও উন্নত করা। ভারতীয় দর্শন অনুসারে, ‘সংস্কার’ বলতে মনস্তাত্তিক ছাপ বা প্রভাবকে বোঝায়, যা পূর্বের কাজ থেকে মনে তৈরি হয়। অন্যদিকে কমিশন বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়, যার মধ্যে রয়েছে কোনো নির্দিষ্ট কাজ সম্পাদনের জন্য একটি সরকারি বা বেসরকারি সংস্থা (যেমন নির্বাচন কমিশন, প্রতিযোগিতা কমিশন), একটি আনুষ্ঠানিক নথি যা কাউকে উচ্চ পদে নিয়োগ দেয় (যেমন সশস্ত্র বাহিনীর কমিশন) এবং বিক্রয়ের উপর ভিত্তি করে কর্মচারীদের দেওয়া অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের বার্তা ও আকাঙ্খার ভিত্তিতে এবং সার্বজনীন মতৈক্য প্রতিষ্ঠার জন্যে বাংলাদেশের অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ২০২৪ সালের ১১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ রাষ্ট্র বিনির্মাণের লক্ষ্যে কয়েকটি সংস্কার কমিশন গঠনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে সংবিধান,নির্বাচন,পুলিশ প্রশাসন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনসহ মোট ১১টি কমিশন গঠিত হয়। এর মধ্যে ৪টি কমিশন ২০২৫ সালের ১৫ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়। এছাড়াও ব্যাংকিং খাত সংস্কারের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করা হয়।
২০২৪ সালের জুলাই মাসে কোটা আন্দোলন তুমুল বিতর্ক সৃষ্টি করে। এর জেরে ব্যাপক গণ-আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ছাত্রনেতাদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে মুহাম্মদ ইউনূস একটি অন্তর্র্বতী সরকারের নেতৃত্ব নিতে সম্মত হন। সরকার পতনের আন্দোলন সফল হওয়ায় স্বৈরতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদ বিরোধী রাজনৈতিক ব্যবস্থাসহ একটি নতুন বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে সংস্কার কমিশনগুলো গঠিত হয়।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন হলো একটি সাত সদস্যবিশিষ্ট কমিশন যা বাংলাদেশের অন্তর্র্বতী সরকার কর্তৃক ১৩ ফেব্রæয়ারি ২০২৫ তারিখে ছয়টি সংস্কার কমিশনের সুপারিশ পর্যালোচনা ও গ্রহণের জন্য গঠিত হয়। কমিশনটির সভাপতিত্ব করছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এবং এটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলার দায়িত্বপ্রাপ্ত। কমিশনে সাতজন সদস্য আছেন। এরা হচ্ছেন মুহাম্মদ ইউনুস সভাপতি,সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান আলী রিয়াজ সহ-সভাপতি,জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী,পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন,নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার,বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সদস্য এমদাদুল হক আজাদ ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান প্রমুখ।
সংস্কার কমিশন মোট ১১টি গঠিত হয়েছে, যার মধ্যে সংবিধান, নির্বাচনী ব্যবস্থা, পুলিশ প্রশাসন, বিচার ব্যবস্থা, দুর্নীতি দমন কমিশন, জনপ্রশাসন, স্থানীয় সরকার, স্বাস্থ্য, মহিলা, শ্রম অধিকার এবং গণমাধ্যম সংস্কারের জন্য কমিশন রয়েছে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে অন্তর্র্বতীকালীন সরকার রাষ্ট্র বিনির্মাণের লক্ষ্যে এই কমিশনগুলো গঠনের ঘোষণা দেয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই কমিশনগুলোই কি এ জাতির জন্য যথেষ্ট। তাছাড়া গঠিত কমিশনগুলো দেশে প্রকৃত অর্থে কতটুকু সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছে। আর কোন কোন ক্ষেত্রে কার্যত সংস্কার প্রয়োজন। এই প্রশ্নের উত্তরে আমি বলবো সর্বক্ষেত্রে সংস্কারের প্রয়োজন। বিশেষ করে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সংস্কার প্রয়োজন অতীব গুরুত্বপূর্ণ।
সংস্কৃতি বলতে একটি নির্দিষ্ট সমাজের মানুষের জীবনযাত্রা, যেমন জ্ঞান, বিশ্বাস, শিল্পকলা, আইন, প্রথা, আচার-আচরণ, এবং অর্জিত দক্ষতা ও অভ্যাসের জটিল সমষ্টিকে বোঝানো হয়। এটি একটি সমাজকে অন্য সমাজ থেকে আলাদা করে এবং মানুষের সামগ্রিক অস্তিত্বের একটি পরিপূর্ণ রূপ দেয়। সংস্কৃতি সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হতে পারে এবং এর মধ্যে জাতীয়, লোক বা উপসংস্কৃতি অন্তর্ভুক্ত। সংস্কৃতির প্রধান দিকগুলো হলো প্রথমত জ্ঞান ও বিশ্বাস। একটি সমাজের মানুষের অর্জন করা জ্ঞান এবং তাদের বিশ্বাস বা ধর্মীয় ধারণা। দ্বিতীয়ত শিল্পকলা যেমন গান, নাচ, সাহিত্য, চিত্রকলা ইত্যাদি যা একটি সমাজের সৃজনশীলতার প্রকাশ। তৃতীয়ত আইন ও নীতিবোধ : সমাজে প্রচলিত নিয়মকানুন, ন্যায়বোধ এবং নীতিবাক্য। চতুর্থত আচার-আচরণ ও অভ্যাস অর্থাৎ সামাজিক প্রথা, রীতিনীতি এবং মানুষের দৈনন্দিন অভ্যাস। পঞ্চমত বস্তুগত ও অবস্তুগত সংস্কৃতি মানে যা কিছু চোখে দেখা যায় (যেমন পোশাক, স্থাপত্য) এবং যা দেখা যায় না (যেমন মূল্যবোধ, বিশ্বাস)। সংস্কৃতির বিভিন্ন প্রকারভেদ রয়েছে। যেমন জাতীয় সংস্কৃতি : কোনো নির্দিষ্ট দেশের মানুষের সামগ্রিক সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য। লোক সংস্কৃতি : গ্রামীণ বা কৃষক সমাজের সংস্কৃতি, যেখানে ধর্ম, আধ্যাত্মিকতা ও পারিবারিক সম্পর্কের ওপর জোর দেওয়া হয়। উপসংস্কৃতি (সাব-কালচার) : সমাজের কোনো বিশেষ জনগোষ্ঠীর মূল্যবোধ এবং অনুশীলন যা বৃহত্তর সংস্কৃতির অংশ হলেও নিজস্ব স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। বাংলাদেশের সংস্কৃতি : বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে সাহিত্য, সংগীত, নৃত্য, ভোজনরীতি এবং পোশাকের মতো বিভিন্ন উপাদানের মিথস্ক্রিয়া দেখা যায়। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের প্রস্তাবিত ‘সংস্কৃতি’ শব্দটি ১৯২২ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অনুমোদনে বাংলায় ‘কালচার’ শব্দের প্রতিশব্দ হিসেবে প্রথম ব্যবহৃত হয়।
স্বৈরাচার এরশাদ আমলে আমরা প্রায়ই শুনতাম,রেডিও টেলিভিশনকে সাহেব বিবি গোলামের বাক্সে পরিণত করা হয়েছিল। বিশেষ করে সুনামগঞ্জ-২ নির্বাচনী এলাকা দিরাই-শাল্লা আসন থেকে বিশ্ববরেণ্য পার্লামেন্টেরিয়ান সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত এমপির সাথে প্রতিদ্ব›দ্বীতা করে ৫০৫ ভোটের ব্যাবধানে নির্বাচিত হওয়া সংসদ সদস্য জেলা বিএনপির সাবেক আহবায়ক ও কেন্দ্রীয় নেতা নাছির উদ্দিন চৌধুরীর কন্ঠে এ বক্তব্যটুকু আজোও আমার হৃদয়ে দাগ কাটে। রাষ্ট্রীয় প্রচারযন্ত্র রেডিও টেলিভিশন এখনও স্বায়ত্বশাসন পায়নি। পাশাপাশি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও এর আওতাভূক্ত শিল্পকলা একাডেমিসহ সারাদেশব্যাপী বিস্তৃত অন্যান্য সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যাচ্ছে তাইভাবে পরিচালিত হচ্ছে। অন্যদিকে গ্রামীণ সংস্কৃতি ওরস মাহফিল ও বিভিন্ন পীর ফকিরদের মাজারে বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের নামে চলছে অপসংস্কৃতি। একশ্রেণির ভাইরাল হওয়া বাউল শিল্পীরা মদ খেয়ে মাতলামী করে অন্যের গান নিজের নামে গেয়ে প্রচার ও প্রকাশনা করছেন। কেউ কেউ ফেইসবুক ও ইউটিউবে পোষ্ট করে অন্যের গান নিজের নামে জাহির করছেন। বাংলা একাডেমি প্রতিবছর সরকারি তহবিলের দ্বারা জেলায় জেলায় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশনার নামে প্রচুর বই পুস্তক প্রকাশ করে যাচ্ছে। কিন্তু এসব প্রকাশনায় মারাত্মক ত্রুটি পরিলক্ষিত হলেও তা সংশোধনের জন্য কোন মনিটরিং কমিটি নেই। সিলেট বিভাগের সকল প্রকাশনা নিয়ে বাংলা একাডেমির কথিত সংগ্রাহকদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। সরকারের জাতীয় স্বাধীনতা পূরস্কার ও একুশে পদক সংক্রান্ত যাচাই বাছাই কমিটি কাগজেপত্রে থাকলেও পুরস্কার প্রদান করা হত শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীর একক ইচ্ছায়। ফলে তেলবাজ লোকরা নিজেদের নামে ও তাদের পূর্ব পূরুষদের নামে পদক ভাগিয়ে নিয়েছে। সুনামগঞ্জ জেলার ৫ প্রধান লোককবির মধ্যমণি গানের স¤্রাট কবি কামাল পাশা (কামাল উদ্দিন) কে মরণোত্তর একুশে পদক প্রদানের জন্য সুনামগঞ্জের ৫ জন বিজ্ঞ জেলা প্রশাসক সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে ৯বার মরণোত্তর একুশে পদক প্রদানের জন্য ও ৪ বার স্বাধীনতা পূরস্কারে ভূষিত করার জন্য প্রস্তাব প্রেরণ করেছেন। কিন্তু শেখ হাসিনার সরকার দেশের হারিয়ে যাওয়া মরমী সংস্কৃতির একজন উজ্জল নক্ষত্র বাউল কামাল পাশাকে কোন মূল্যায়ন করেননি। অথচ এই সিলেট বিভাগে ভাই ও বোনকে একুশে পদক প্রদান করা হয়েছে। অর্থাৎ সবকিছুই হয়েছে এক ব্যক্তির একক সিদ্বান্ত ও মনগড়ামতে। ফলে প্রকৃত গুণীজন ও সাধকরা উপেক্ষিত হয়েছেন। এই উপেক্ষা,বঞ্চনা বৈষম্যের ইতিহাস একদিনের নয় বরং বছরের পর বছরের। শেখ হাসিনার সরকারের শাসনামলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী ও বিএনপির চেয়ারম্যান বেগম খালেদা জিয়াকে বাড়ীছাড়া করার পাশাপাশি যখন কারাগারে নেয়া হয় তখন তিনি বলেছিলেন,মনে রাখবেন সব দিন সমান যায়না। কতটুকু দু:খ কষ্ট পেলে একজন মানুষের মুখে একথা বের হয়ে আসতে পারে তা সরজমিনে প্রত্যক্ষ করেছেন সারা দেশবাসী। কিন্তু আমি সেদিন অনুধাবন করি দেশনেত্রীর মুখ দিয়ে বের হয়েছে যে শব্দ বাক্যটি সেটি নিছক কোন আক্ষেপ অনুভূতি বা কষ্টের কথা নয় এটি একটি গান। আর বিখ্যাত সেই গানটির গীতিকারই হচ্ছেন বাউল কামাল পাশা (কামাল উদ্দিন)। যিনি তার বিখ্যাত দিলকি দয়া হয়না গানের মধ্যম অন্তরায় গেয়েছেন,“বাতিছাড়া এ রংমহল ঘর রুশনেআলা হয়না। আজকে বাদশাহ কালকে ফকির সমানে দিন যায়না। তোমার দিলকি দয়া হয়না। স্রষ্টার অপার অনুগ্রহে সংস্কৃতিসহ সর্বক্ষেত্রে সংস্কার হউক এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দীর্ঘায়ূ কামনা করি এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে।
জুলাই জাতীয় সনদের পটভূমিতে উল্লেখ করা হয়েছে,১৯৭১ সালে স্বাধীনতার ঘোষনাপত্রে বর্ণিত সাম্য,মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের নীতিকে ধারন করে সংঘটিত মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে যে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা গঠনের আকাঙ্কা বাংলাদেশের জনগনের মধ্যে তৈরী হয়েছিল দীর্ঘ ৫৩ বছরেও তা অর্জন করা যায়নি। কারণ শাসন ব্যবস্থায় গনতান্ত্রিক পদ্ধতি ও সংস্কৃতি বিকাশের ধারা বারবার হোঁছট খেয়েছে। আসলে সত্যিকার অর্থে যদি সুস্থ সংস্কৃতির দ্বারা বিকশিত হত তাহলে এমন হতনা। ১৩ জুলাই ২০২৩ইং তারিখে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জননেতা দেশনায়ক তারেক রহমান কর্তৃক জাতির সামনে উপস্থাপিত রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা কর্মসুচির ২য় দফায় সম্প্রীতিমূলক রাষ্ট্রসত্তা ও জাতীয় সমন্বয় কমিশন গঠনের কথা বলা হয়েছে। ২৫ দফায় উল্লেখ করা হয়েছে চাহিদা ও জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা বাস্তবায়নের মাধ্যমে ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্ষম শিক্ষিত জনগোষ্ঠী গড়ে তোলা। এখানে গভীরভাবে বিশ্লেষন করলে পরিস্কার বুঝা যাবে সম্প্রীতিমূলক রাষ্ট্রসত্তা মানে বাংলাদেশ রাষ্ট্রে ধর্ম,বর্ণ,জাতি গোত্র তথা সকল শ্রেণি পেশার মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহন ও প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা। যার মধ্যে সংস্কৃতির অস্তিত্ব বিদ্যমান। এছাড়া চাহিদা ও জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থায় দেশের আবহমান কালের সংস্কৃতির কথা কাহিনী গীত ইত্যাদি সবকিছুর পৃষ্ঠপোষকতা না থাকলে ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা সম্ভব নয়। বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাউল গান যেমন অবদান রাখতে পারে তেমনি সংস্কৃতির কদর বাড়ালে রাষ্ট্র ও জাতিসত্তার আরো মজবুত ভিত্তি গড়ে তোলা সম্ভব। প্রখ্যাত সাহিত্যিক সাংবাদিক খ্যাতনামা গবেষক ও ভাষাসৈনিক আবুল মনসুর আহমদ তাঁর আমার দেখা রাজনীতির ৫০ বছর গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন “সাংস্কৃতিক আগ্রাসন রাজনৈতিক আগ্রাসনের চাইতে আরো ভয়াবহ”। এর প্রমাণ আমরা পেয়েছি ৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে। আর ইদানিং সময়ে এসে দেখতে পারছি,গান বাজনা,মাজার দরগাহ ইত্যাদি বন্ধসহ ভাংচুরের অপচেষ্টা নামের এক আধুনিক উগ্রবাদের অপতৎপরতা। তবে সংস্কৃতির ধারক বাহকদের মনে রাখতে হবে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে অপসংস্কৃতি চর্চার কারণেই উগ্রবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এসব কারণে সংস্কৃতিতে সংস্কার করতে হবে সর্বাগ্রে। সার্বজনীন সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাতে হবে দেশের সর্বত্র। বাউল কামাল পাশা (কামাল উদ্দিন) তার রচিত গানে এরকম সংস্কারের কথাই বলে গেছেন, “পরিস্কার রাখো মন তোর দেহ ভান্ড ঘর/ সন্ধানে সুজন মেস্তরী বান্দিয়াছে রংমহল ঘর।। হারের আটন চামড়ার বেড়া,৩৬০ স্ক্রুপ মারা,২০৬টা খুটিরও উপর/তার বসায় এই ইলেকটারী,রেখেছে চমৎকার করি/মাঝখানে বসায় এই ইঞ্জিন ঘর।। সেই ঘরেরি চতুর অংশে,আবর্জনায় ঘিরেছে,তার ভিতর আছে পোকামাকড়/মুর্শিদ নামের গুরুজ দিয়া,রাখো ইঞ্জিন সাফ করিয়া,আরো কয়দিন চলিবে বিস্তর।। মন পরিস্কার দিল পরিস্কার,বাড়িঘর রাখো পরিস্কার,চাই পরিস্কার শহর কি বন্দর/কামালে কয় পরিস্কারে,মূল মহাজন বিরাজ করে,সুনজরে করিবে আদর”।। এই মূল্যবান দেহতত্ত্ব গানটি বিশ্লেষন করলে বুঝা যায়,বাউল কামাল পাশা তাঁর গানে গানে সমাজের নানা কুসংস্কার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংস্কারের কথা বলেছেন, যেখানে তিনি মানবতা, সাম্য, প্রেম এবং আধ্যাত্মিকতার বাণী প্রচার করতেন, যা প্রচলিত ধর্মীয় গোঁড়ামি ও সামাজিক অনাচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করে । তিনি শুধু ভাষা আন্দোলন নিয়েই গান লেখেননি, বরং তাঁর প্রায় ৬০০০ গানের মধ্যে মানুষের ভেতরের ‘দিল’-এর কথা, দয়ার কথা এবং সমাজের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে, যা মানুষকে পরিশুদ্ধ জীবনযাপনের দিকে চালিত করে।
তিনি গান গেয়েছেন ‘তোমার দিলকে দয়া হয় না’ বলে, যেখানে মানুষের মধ্যেকার ভেদাভেদ ঘুচিয়ে ভালোবাসার কথা বলা হয়েছে। তাঁর গান ছিল প্রচলিত ধর্মীয় রীতিনীতির ঊর্ধ্বে উঠে ভেতরের মানুষটাকে খোঁজার আহ্বান, যেখানে বাহ্যিক আচারের চেয়ে আত্মার শুদ্ধি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ভাষার জন্য গান লেখা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্ট তাঁর গানে উঠে এসেছে, যা সমাজকে সংস্কারের পথে চালিত করে। মূলত, বাউল কামাল পাশা তাঁর মরমী বাউল ধারার গানে সমাজের প্রচলিত ধ্যানধারণা ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে এক ধরনের সাংস্কৃতিক ও আত্মিক সংস্কারের কথা বলেছেন, যা মানুষকে আলোকিত পথের দিশা দেখায়।
বিষয়: #কামাল #জন্মবার্ষিকী #বাউল #শ্রদ্ধাঞ্জলী




কোকা-কোলা বাংলাদেশের নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক হলেন মঈন উল্লাহ চৌধুরী
বাংলাদেশে ৭মাত্রার ভূমিকম্পের আগাম সতর্কবার্তা ধ্বংশ হয়ে যেতে পারে দেশের ৮০% স্থাপনা
ভূমিকম্প পরবর্তী স্বাভাবিক হয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ
ঐক্যের বার্তা নিয়ে ভেসপাবস-এর ফ্যামিলি নাইট ও ডিনার অভ্যর্থনা
শেখ হাসিনার বিচারের রায় আগামী সপ্তাহে: তথ্য উপদেষ্টা
ছাতকে চোরাচালানি টাকার ভাগাভাগি নিয়ে দুই গ্রামের সংঘর্ষে আহত ব্যবসায়ীর মৃত্যু, এলাকায় শোকের ছায়া
এক বিরল সাক্ষাৎকারে, প্রাক্তন স্বৈরাচারী নেত্রী শেখ হাসিনা দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টকে বলেছেন যে তার ক্ষমতাচ্যুতির সময় রক্তপাতের জন্য তিনি দায়ী নন, এবং অনুপস্থিতিতে তার বিচারকে ‘প্রতারণা’ বলে অভিহিত করেছেন।
ব্রিটিশ পার্লামেন্টের হাউস অব লর্ডসে উচ্চপর্যায়ের গোলটেবিল বৈঠক!
ছুটির দিনেও ‘অস্বাস্থ্যকর’ ঢাকার বাতাস
