সোমবার ● ২৪ নভেম্বর ২০২৫
প্রথম পাতা » সাহিত্য ডাইরি » বরেণ্য ছড়া সাহিত্যিক সাব্বির আহমেদ সেন্টুর জন্মদিনে শুভেচ্ছা ও সাহিত্যিক অবদান
বরেণ্য ছড়া সাহিত্যিক সাব্বির আহমেদ সেন্টুর জন্মদিনে শুভেচ্ছা ও সাহিত্যিক অবদান
কবি ও সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন রনি
![]()
বাংলাদেশী সাহিত্য অঙ্গনের প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব, ছড়া সাহিত্যিক, কবি, নাট্যকার এবং সাংবাদিক সাব্বির আহমেদ সেন্টু আজ তার জন্মদিন উদযাপন করছেন। এই বিশেষ দিনে দেশের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সঙ্গে জড়িত তার ভক্ত, পাঠক, সহকর্মী এবং বন্ধুরা তাকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন।
সাব্বির আহমেদ সেন্টু শুধু একটি নাম নয়, বরং বাংলাদেশের সাহিত্য, নাট্য ও মিডিয়া ক্ষেত্রে এক অনন্য পরিচয়। নব্বই দশক থেকে সক্রিয় এই প্রতিভাবান লেখক আজও তার সৃজনশীলতা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশের মানুষকে প্রেরণা জুগিয়ে যাচ্ছেন।
সাহিত্যিক পরিচয় ও কর্মজীবন
সাব্বির আহমেদ সেন্টুর সাহিত্যিক জীবন মূলত ছড়া লেখা দিয়ে শুরু। তিনি বাংলাদেশের ছড়া সাহিত্যকে নতুন মাত্রা দিয়েছেন। তার লেখা ছড়ায় শুধু শিশুসুলভ রসিকতা নয়, সমাজ, সংস্কৃতি, মানবিক মূল্যবোধ ও নৈতিকতাকে একত্রিত করে নতুন ভাবধারা তৈরি হয়েছে। তার সৃজনশীলতা, ভাষার সংবেদনশীলতা এবং ভাব প্রকাশের গভীরতা তাকে বাংলাদেশের ছড়া সাহিত্যিকদের মধ্যে আলাদা স্থান দিয়েছে।
তার প্রথম প্রকাশিত কবিতার বই ‘শতাব্দীর শ্লোগান ১৪০০’ প্রকাশিত হয় ১৯৯৩ সালে। সেই সময় থেকে তিনি সাহিত্যচর্চায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ শুরু করেন। কিন্তু বিশেষভাবে পরিচিতি পান তার ছড়া রচনার মাধ্যমে। ১৯৯৭ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম ছড়ার বই ‘স্নেহের নক্ষত্র’, যা প্রকাশনার পরই পাঠক ও সমালোচকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে। সেই বইতে শিশুদের চিন্তাশক্তি, কল্পনাশক্তি এবং সামাজিক মূল্যবোধকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এরপরে তিনি ছড়া সাহিত্যকে আরও সমৃদ্ধ করতে ‘ছড়ার বুলেট’ এবং ‘ছড়ার সেঞ্চুরী’ বইগুলো প্রকাশ করেন। এই বইগুলো শুধু শিশুদের মধ্যে নয়, বয়স্কদের মধ্যেও সাহিত্যচর্চার নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করে।
ছড়ার পাশাপাশি সাব্বির আহমেদ সেন্টু কবিতা, উপন্যাস এবং নাট্যচর্চায়ও সক্রিয়। তার প্রকাশিত উপন্যাস ‘স্বপ্নভরা দুটি চোখ’ মানুষের মন ও সমাজকে গভীরভাবে আলোচনা করে। এটি সামাজিক বাস্তবতা, মানুষের অনুভূতি ও জীবনের বিভিন্ন দিককে চিত্রিত করার জন্য বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়েছে। এছাড়া তিনি ‘শর্ট স্ক্রিপ্ট’ নামে একটি নাট্যগ্রন্থ প্রকাশ করেছেন, যা নাট্যপ্রেমীদের মধ্যে বিশেষ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
পেশাগত জীবন ও সাংবাদিকতা
সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি সাব্বির আহমেদ সেন্টু একজন পেশাদার সাংবাদিক। তার সাংবাদিকতা তার লেখালিখির মতোই মানবিক ও সমাজমনস্ক। তিনি দেশের মিডিয়ায় অনেক বছর ধরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন এবং সংবাদ পরিবেশনে তার নির্ভরযোগ্যতা ও সততা সমাদৃত। সাংবাদিকতার মাধ্যমে তিনি সমাজের বাস্তব চিত্র, মানুষের জীবনসংগ্রাম এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের বিষয়গুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।
নাট্যচর্চা ও সৃজনশীলতা
সাব্বির আহমেদ সেন্টু নাট্যকার, পরিচালক ও অভিনেতা হিসেবেও পরিচিত। তিনি দেশের বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে প্রায় শতাধিক নাটক রচনা ও পরিচালনা করেছেন। তার নাটকগুলো সমাজের নানান সমস্যার ওপর আলোকপাত করে এবং দর্শকের মননে ভাবনার সঞ্চার করে। তিনি শুধু রচয়িতা নন, বরং নিজের নাটকে অভিনয়ও করেছেন। নাট্যচর্চায় তার অনন্য অবদান তাকে দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে একটি প্রতিষ্ঠিত পরিচয় দিয়েছে।
সাংগঠনিক ও সামাজিক ভূমিকা
সাব্বির আহমেদ সেন্টু কেবল সাহিত্য ও নাট্যচর্চার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেননি, বরং সাংগঠনিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডেও তিনি সক্রিয়। তিনি মিডিয়া ভিশন কালচারাল একাডেমি’র চেয়ারম্যান এবং জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। নারায়ণগঞ্জ জেলার সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোতেও তার অবদান অনস্বীকার্য। তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা সাহিত্য ফাউন্ডেশন ও রংধনু সংসদ’এর উপদেষ্টা এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা নাট্য সংস্থা’র সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে কাজ করছেন। তার এই সক্রিয় ভূমিকা স্থানীয় সংস্কৃতি ও সাহিত্যচর্চাকে নতুন দিশা দিচ্ছে।
সাব্বির আহমেদ সেন্টু সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পরিচিতি লাভ করেছেন। তিনি শিশুদের শিক্ষাগত ও সাংস্কৃতিক বিকাশে, নাট্যশিল্পী ও সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ ও উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তার সৃজনশীল কর্মকাণ্ড স্থানীয় সমাজের নানান সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উদ্যোগকে প্রাণবন্ত করে তুলেছে।
সাহিত্যিক অবদানের স্বীকৃতি
সাব্বির আহমেদ সেন্টুর সাহিত্যকর্ম দেশের বিভিন্ন স্থানে সমাদৃত। বিশেষ করে ছড়া সাহিত্যিক হিসেবে তার অবস্থান অনন্য। শিশুদের জন্য লিখিত তার ছড়া সমাজ, নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধে প্রভাব বিস্তার করে। তার লেখা ছড়া পাঠকদের কল্পনাশক্তি ও চিন্তাশক্তি বৃদ্ধি করে, যা সামগ্রিকভাবে দেশের সাহিত্যচর্চাকে সমৃদ্ধ করেছে। তার নাটক, উপন্যাস ও কবিতার বিষয়বস্তু সমাজের বাস্তব চিত্র, মানবিক অনুভূতি ও সামাজিক দায়বদ্ধতার সঙ্গে সম্পর্কিত। এই কারণে তার সাহিত্যকর্ম পাঠক এবং দর্শকদের মধ্যে গভীর প্রভাব ফেলেছে। এছাড়াও তিনি সৃজনশীলতার মাধ্যমে নতুন লেখক, নাট্যকার ও সাংবাদিকদের অনুপ্রাণিত করেছেন।
জন্মদিনের শুভেচ্ছা ও প্রতিক্রিয়া
আজ তার জন্মদিনে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তার ভক্ত, সাহিত্যিক ও সহকর্মীরা তাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাঠকরা তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন এবং তার সৃজনশীলতা ও অবদানের প্রশংসা করছেন। নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় সাংস্কৃতিক মহলও তার জন্মদিন উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। স্থানীয় নাট্যসংস্থা, সাহিত্য ফাউন্ডেশন এবং সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলো তার জন্মদিনে তাকে বিশেষভাবে সংবর্ধনা প্রদান করেছে। অনুষ্ঠানগুলোতে তার সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অবদানকে তুলে ধরা হয়েছে। উপস্থিত সাহিত্যিক, নাট্যকার ও সাংবাদিকরা তার দীর্ঘ সাহিত্যচর্চা, নাট্যচর্চা এবং সাংবাদিকতা জীবনের ওপর আলোচনার মাধ্যমে তার অবদানের স্বীকৃতি প্রদান করেছেন।
সাব্বির আহমেদ সেন্টুর ভাবমূর্তি
বাংলাদেশে সাব্বির আহমেদ সেন্টু শুধুমাত্র একজন লেখক বা নাট্যকার নন; তিনি শিশু সাহিত্য, সামাজিক নৈতিকতা, সাংবাদিকতা এবং সাংস্কৃতিক নেতৃত্বের এক অনন্য প্রতীক। তার কর্মজীবন আমাদের শেখায় যে কল্পনা, সৃজনশীলতা এবং সমাজসেবার মাধ্যমে কিভাবে একটি ব্যক্তি দেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে চিরস্মরণীয় অবদান রাখতে পারে। তার জন্মদিন আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয়, যে প্রতিভা ও পরিশ্রমের সঙ্গে মানুষের সেবা করা যায়, সমাজে ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করা যায় এবং নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করা যায়। তিনি শিশুদের জন্য লেখা ছড়া থেকে শুরু করে সমাজ ও মানুষের জীবনধারার নাট্যচর্চা পর্যন্ত সব ক্ষেত্রেই নতুন উদ্দীপনা যোগ করেছেন।
সাব্বির আহমেদ সেন্টুর জন্মদিন কেবল তার ব্যক্তিগত জীবনের উপলক্ষ নয়, বরং বাংলাদেশের সাহিত্য, নাট্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের জন্য এক বিশেষ দিন। তার অবদান, সৃজনশীলতা এবং সামাজিক নেতৃত্ব নতুন প্রজন্মের জন্য দিশারী হিসেবে কাজ করবে। দেশের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তার নাম চিরকাল স্মরণীয় থাকবে।
আজকের এই দিনে আমরা তাকে শুভেচ্ছা জানাই, তার দীর্ঘ সাহিত্যজীবন ও সৃজনশীলতার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি এবং আশা করি তিনি আরও বহু বছর আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করবেন। সাব্বির আহমেদ সেন্টুর জন্মদিনের এই শুভক্ষণে তার সাহিত্য, নাট্যচর্চা ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের প্রশংসা ও স্বীকৃতি জানানো আমাদের সকলের জন্য গর্বের বিষয়।
বিষয়: #অবদান #আহমেদ #ছড়া #জন্মদিন #শুভেচ্ছা #সাব্বির #সাহিত্যিক #সেন্টু




ছড়াকার মিলু কাসেম: সিলেটের সাহিত্য-সংস্কৃতির উজ্জ্বল এক নক্ষত্রের বিদায়
বিশ্বনাথে সাহিত্যচর্চা ও সমাজসেবায় অনন্য মিজানুর রহমান মিজান!
ড. মুমিনুল হক একাডেমির নতুন কমিটির আত্বপ্রকাশ।
‘অঞ্জলি লহ মোর’ ম্যুরাল ভাঙচুর, ১২০ জনের প্রতিবাদ
এক্সিবিশন এবং বই প্রকাশনীর মাধ্যমে শেষ হচ্ছে “গঙ্গাবুড়ি-রিভার হেরিটেজ প্রকল্প” চলবে ২৫ এপ্রিল থেকে ২ মে পর্যন্ত
বাংলার শব্দচাষী’র আয়োজনে মহান স্বাধীনতা দিবস ও ঈদ সংখ্যা ২০২৫ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ও সাহিত্য আড্ডা
সময় আমাদের শিখিয়ে দেয়, কল্পনার চেয়ে বাস্তবতা কত কঠিন
প্রেম করেছো নিজের ইচ্ছায়
সে ফিরে আসবেই
