

শুক্রবার ● ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
প্রথম পাতা » বিশেষ » স্থানীয় থেকে জাতীয় সর্বত্র অস্থিতিশীলতা বহুমুখী সংকটে ব্রিটিশ লেবার পার্টি
স্থানীয় থেকে জাতীয় সর্বত্র অস্থিতিশীলতা বহুমুখী সংকটে ব্রিটিশ লেবার পার্টি
মতিয়ার চৌধুরীঃ
যতই দিন যাচ্ছে, স্যার ষ্টার কিয়ারমারের নেতৃত্বাধীন ব্রিটিশ লেবার পার্টির সংকট আরো ঘনিভূত হচ্ছে। সম্প্রতি প্রকাশিত কয়েকটি জাতীয় দৈনিক এবং সিএনএন-এর প্রতিবেন অনুসারে ব্রিটেনের সবচেয়ে পূরাতন রাজনৈতিক দল লেবার পার্টি এমন এক সংকটের মুখোমুখি হয়েছে যা জাতীয় থেকে স্থানীয় পর্যায় পর্যন্ত পার্টিকে অস্থিত্ব সংকটে ফেলেছে। দলটির স্থায়িত্ব ও কার্যক্ষমতাকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে। Sky News এবং The Independent এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে , স্যার কিয়ার স্টারমারের নেতৃত্ব শীর্ষ পর্যায়ে আস্থাহীনতার সম্মুখীন। দলীয় এমপিদের প্রকাশ্য বিদ্রোহ এবং দলের অভ্যন্তরীণ ব্রিফিং থেকে উঠে এসছে পার্টির শীর্ষ নেতৃত্বের ওপর সাধারন সদস্যদের আস্থা কমে যাচ্ছে। স্থানীয় নির্বাচনগুলো বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের ওপর একটি “রেফারেন্ডাম” হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এছাড়াও, বর্তমান দলপ্রধান স্যার কিয়ার স্টারমার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহনের পর চারজন ব্রিটিশ বাংলাদেশী এমপি বিভিন্ন কারণে তাদের পদ হতে সরে যেতে হয়েছে। এই চারজনের দুজনকে মন্ত্রীত্ব ছাড়তে হয়েছে, মন্ত্রীত্ব থেকে নিজ ইচ্চায় সরে আসা প্রথমজন হলেন ব্রিটেনের ইতিহাসে প্রথম ব্রিটিশ বাঙ্গালী এমপি রোশনারা আলী, দ্বিতীয়জন টিউলিপ সিদ্দিক এমপি। অন্য দুজন আফসানা বেগম ও ড. রুপা হক এমপি সম্পুর্ন নিষ্ক্রিয়। যা লেবার পার্টির অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা এবং নেতৃত্বের সংকটক আরও প্রকাশ্যে এসেছে।
নীতি বিভাজন ও আন্তর্জাতিক মনোভাব অন্যদিকে স্থানীয় ভাবে এর প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। পূর্ব লন্ডনের Barking এন্ড Dagenham- কাউন্সিলের এর তিনজন কাউন্সিলর লেবার পার্টি থেকে পদত্যাগ করে গ্রিন পার্টিতে যোগদান করেছেন। এই তিনজনের দুজন হলেন ব্রিটিশ বাংলাদেশী বংশদ্বোত সাবেক মেয়র মঈন কাদেরী ও ফারুক চৌধুরী অন্যজন আফ্রিকান বংশদ্বোত কাউন্সিলার ভিক্টোরিয়া হর্নবি । এসবের পেছনে আরো কারণ লক্ষ্যনীয় বিশেষ করে ‘গাজা ইস্যু এবং অভিবাসন-বিরোধী’ অবস্থান পার্টির নৈতিক ও নীতিগত দ্বন্দ্বকে প্রতিফলিত করছে। লেবার সরকারের ফিলিস্তিন সম্পর্কিত নীতিগত অবস্থান সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক ন্যায় এবং মানবিক মূল্যবোধের সঙ্গে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করছে।
এসবের পেছনে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ব্যর্থতা ও অনেকাংশে কাজ করছে।
সরকারের সামাজিক কল্যাণ সুবিধা হ্রাস, বিশেষ করে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে ব্যয় সংকোচন—সরকারে এই পদক্ষেপ গুলো নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এসব কারনে দীর্ঘদিন ধরে লেবার দলকে অন্ধভাবে সমর্থন করে আসা মাইগ্রেন্ট কমিউনিটির ভোটোরদের অনেকেই প্রকশ্যে বলছেন তারা আর লেবার পার্টিকে ভোট দেবেননা। ল্যামবেথ কাউন্সিলের হাইকোর্ট মামলা এবং প্রার্থী নির্বাচনে “অবৈধভাবে” বাধা দেওয়ার অভিযোগও রযেছে, পার্টির অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনায় গণতান্ত্রিক নিয়মাবলীর অভাব এবং দুর্বলতা বিদ্যমান।
স্থানীয় নির্বাচনে লেবারের পরাজয়ঃ টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের নিয়ন্ত্রণ হারানো, সর্বশেষ তিনটি বাই-ইলেকশনে লেবারের পরাজয়, Barking এন্ড Dagenham-এ গ্রিন পার্টির উত্থান, এবং Redbridge-এ লেবারের প্রাধান্য হারানো—সবই পার্টির সংকটকে আরও গভীর করছে। সব মিলিয়ে বলা চলে নেতৃত্বহীনতা, নীতিগত বিভাজন, নৈতিক ও সাংগঠনিক দুর্বলতা, সামাজিক ও অর্থনৈতিক কল্যাণ নীতি হ্রাস, লেবারের প্রতি ব্যাপকভাবে মাইগ্রেন্ট কমিউনিটির সমর্থন প্রত্যাহার এবং বাংলাদেশি এমপিদের পদত্যাগ—এসব মিলিতভাবে লেবার পার্টি বর্তমানে তৃণমূল থেকে থেকে শীর্ষ পর্যায় পর্যন্ত বহুমুখী সংকটে নিমজ্জিত ।
বিষয়: #স্থানীয় থেকে জাতীয় সর্বত্র অস্থিতিশীলতা বহুমুখী সংকটে