শিরোনাম:
ঢাকা, শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২ আশ্বিন ১৪৩২
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বজ্রকণ্ঠ "সময়ের সাহসী অনলাইন পত্রিকা", সিলেট ঢাকা লন্ডন নিউ ইয়র্ক থেকে প্রকাশিত। লিখতে পারেন আপনিও।

Bojrokontho
মঙ্গলবার ● ১২ আগস্ট ২০২৫
প্রথম পাতা » অপরাধ » “প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এসব হ‌চ্ছে”…
প্রথম পাতা » অপরাধ » “প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এসব হ‌চ্ছে”…
২৬৯ বার পঠিত
মঙ্গলবার ● ১২ আগস্ট ২০২৫
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

“প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এসব হ‌চ্ছে”…

প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এসব হ‌চ্ছে
ছাতকে সিমেন্ট কারখানার মাটি সংগ্রহে ফসলি জমি ধ্বংস,পরিবেশ হুমকির মুখে,দেখার কেউ নেই !

• উপজেলার নোয়ারাই ইউপির বিভিন্ন গ্রামের ফসলি জমি থেকে কেটে নেওয়া হচ্ছে টপ সয়েল।
• এসব মাটি যাচ্ছে লাফার্জ হোলসিম সি‌মেন্ট কারখানায়।
• মাটি বহন করার গাড়ির কারণে আশপাশের জমি এবং সড়ক ব‌্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
৮শত একর কৃ‌ষি জ‌মি জায়গা ৩০ ফুট থে‌কে
৩৫ পযন্ত গভীর

ছাতক সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
“প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এসব হ‌চ্ছে”…
ছাতকে লাফার্জ হোলসিম সিমেন্ট কারখানার শুষ্ক ডাষ্টের কারণে কারখানা এলাকার সবুজ পরিবেশ মারাত্মকভাবে বিনষ্ট হচ্ছে। সংঘবদ্ধ মাটিখেকো চক্রের দৌরাত্ম্যে পাল্টে যাচ্ছে চিরচেনা রূপ,বিপন্ন প্রায় পরিবেশ হুমকির মুখে জীব বৈচিত্র্য। ফসলি জমি বা উঁচু ভুমি কেটে মাটি বিক্রি যেনো নিয়মে পরিণত হচ্ছে। কৃ‌ষি জ‌মি সংরক্ষন ও ভু‌মি ব‌্যবহার আইনে ২০২৪ সা‌লে নতুন আইনে ১০ ধারা আবা‌দি জ‌মি থে‌কে টপ স‌য়েল কাটার অপরা‌ধে ভরাট বা অন‌্য কা‌জে ব‌্যবহার করা নি‌ষিদ্ধ বলা হয়। কিন্তু কার আইন কে মা‌নে ? প্রায় ৮শত একর কৃ‌ষি জ‌মি আজ জলাবদ্ধা প‌রিনত হ‌য়ে‌ছে।এসব কৃ‌ষি জ‌মিতে ক‌য়েক বছর ধ‌রেই সেখা‌নে ধান চাষাবাদ হ‌চ্ছে না।কৃষি জমি ধ্বংস করে জলাশয় ভু‌মি‌তে প‌রিনত হ‌চ্ছে।
এ কারণে লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট কারখানার বিরুদ্ধে স্থানীয়রা পরিবেশ দূষণসহ বিভিন্ন অভিযোগ করে আসছে ১৯ বছর ধরে। কিন্তু কোনো প্রতিকার পায়‌নি। সেখানে কারখানাটি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পরিবেশ দূষণ ও ফসলি জমি ধ্বংসের মতো একাধিক অভিযোগ সরকারের বিভিন্ন দফতরে দেয়া হলেও অজ্ঞাত কারণে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিকরা।
বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, ফসলি জমি নষ্ট, নদীশাসনসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে লাফার্জের বিরুদ্ধে। এছাড়া পাহাড়সম মাটি ডাম্পিংয়ের ফলে আশপাশের বসতবাড়িতে ফাটল, গ্যাস লাইনে বিস্ফোরণ ও সবুজ পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। এসব অভিযোগ সরকারের উচ্চপর্যায়ে পৌঁছার আগেই লাফার্জের উপকারভোগী একটি মহল বিষয়টি কৌশলে দমিয়ে রাখছে বলে এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন অভিযোগ করেছেন।

এশিয়ার সর্ববৃহৎ ক্লিংকার ও সিমেন্ট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট কারখানা ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় সুরমা নদীর তীরে। ২৫৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগে ফ্রান্সের অত্যাধুনিক প্রযুক্তিভিত্তিক বার্ষিক ১ দশমিক ২ মিলিয়ন টন উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন এ কারখানাটি শহরের সুরমা নদীর উত্তর পাড় টেংগারগাঁও ও নোয়ারাই গ্রামের মাঝামাঝি এলাকায় স্থাপিত। কারখানার প্রধান কাঁচামাল চুনাপাথর সংগ্রহের জন্য ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পূর্ব খাসিয়া বনভূমি এলাকার ১১৬ হেক্টর খনিজাত ভূমি আন্তর্জাতিক চুক্তির মাধ্যমে লিজ গ্রহণ করে লাফার্জ। ভারতের খনি প্রকল্প থেকে লাফার্জের অভ্যন্তরে ১৭ কিলোমিটার সংক্রিয় কনভেয়ার বেল্টের মাধ্যমে চুনাপাথর পরিবহন করা হচ্ছে প্রতিষ্ঠার পর থেকে।
ফসলি জমির উপরি ভাগের মাটি (টপ সয়েল) কাটার যেন রীতিমতো হিড়িক পড়েছে। এসব মাটি যাচ্ছে সি‌মেন্ট কারখানা এবং ঘরবাড়ি তৈরির কাজে। মাটি কাটতে ব্যবহার করা হচ্ছে খননযন্ত্র (এক্সকাভেটর)। ট্রাক বা ট্রাক্টরে এসব মাটি বহন করায় আশপাশের জমি এবং সড়কও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এদিকে খনিজ ও জৈব উপাদান বিশেষ করে হিউমাসসমৃদ্ধ (জৈব কণা) টপ সয়েল কেটে ফেলার কারণে কমে যাচ্ছে ফসলি জমির উর্বরতা শক্তি। কৃষিবিদেরা বলছেন, টপ সয়েল কাটার কারণে বেশ কয়েক বছর ওই সব জমিতে কাঙ্ক্ষিত ফসল এখন উৎপাদন হচ্ছে না।
বো‌রো ও আমন ধানের উর্বর জমি থেকে প্রকাশ্যে মাটি কেটে বিক্রি করা হলেও প্রশাসনের কার্যকর তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। এতে দিন দিন সংকুচিত হচ্ছে আবাদি জমি, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ ও গ্রামীণ অবকাঠামো। স্থানীয়দের অভিযোগ, লাফাজ সি‌মেন্ট কারখানার প‌ক্ষে অ‌মিতাভ সিং এর স্বাক্ষ‌রিক গত ১০ জুলাই সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাব‌রে ফস‌লি জ‌মি থে‌কে মা‌টি কাটার আবেদন ক‌রেছেন।
এ অ‌ভি‌যো‌গের কারখানায় অবিরাম কিংকার ও সিমেন্ট উৎপাদনের সময় এবং কারগো ও ট্রাকে সিমেন্ট সরবরাহে উড়ন্ত ডাষ্ট,রাসায়নিক দ্রব্য, মাটি ও বালু কণা কারখানা সংলগ্ন নোয়ারাই, টেংগারগাঁও, বাতিরকান্দি, বাশটিলা, জয়নগর, মাড়–য়া টিলা, মফিজ নগর, পাটিভাগ, টিলাগাঁও, শার‌ফিন নগর,ফ‌কির টিলা,রাজারগাও,মৌলা
জোড়াপানিসহ কয়েকটি গ্রামের সবুজ পরিবেশ ধ্বংস হ‌চ্ছে। প্রশাসন‌কে ম‌্যা‌নেজ ক‌রে ফস‌লি জ‌মি টপ সয়েল মা‌টি কাটা হ‌চ্ছে। এসব দেখার কেউ নেই। এসব গ্রামের ঘর-বাড়িও ডাষ্টের কারণে ধূসর রং ধারণ করেছে। ডাষ্টের কারণে দীর্ঘ কয়েক কিলোমিটার জুড়ে বাতাস ও প্রকৃতির স্বাভাবিক পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে। শিল্প কারখানায় ডাষ্ট ডিবাইডার থাকা জরুরী হলেও লাফার্জ হোলসিম চটের বস্তা ঝুলিয়ে ডাষ্ট নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলেও তা সম্ভব হচ্ছে না।

নোয়‌ারাই গ্রা‌মে নামধারী হারুনুর র‌শিদ, দুলাল মিয়া,আব্দুল জ‌লিল ও সেবুল চৌধুরীসহ শতা‌ধিক ব‌্যক্তিদের নি‌য়ে একটি সি‌ন্ডি‌কেট চক্র না‌মে তা‌লিক‌া দি‌য়ে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা প্রশাসনের নাম ভাঙিয়ে অবৈধভাবে ফসলি জমির মাটি কাটছে ও কারখানায় মা‌টি বিক্রি করছে ।সরকা‌রি খাস জায়গা ও টিলাগু‌লো রক্ষ‌া পায়‌নি।
২০২৫ সা‌লে ১০ জুলাই এবার ১০লাখ মেঃ টন মা‌টি কৃ‌ষি জ‌মি থে‌কে ত্রুয় কর‌বে ব‌লে সি‌মেন্ট কারখানা কতৃপক্ষ সু‌ত্রে থে‌কে নি‌শ্চিত করেন। ট্রলি ও ভেকু দিয়ে চলছে এই অবৈধ কর্মকাণ্ড। বিভিন্ন সড়কে সারাদিনই মাটি বোঝাই ট্রলি চলাচল করছে,যা রাস্তাঘাটের মারাত্মক ক্ষতি করছে। উপজেলার নোয়ারাই ইউপির গ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে ফসলি জমির মাটি কাটা হচ্ছে। একশ্রেণির ট্রাকমালিক ও চালক কৃষকদের প্রলোভন দেখিয়ে মাটি কিনে নিচ্ছেন। প্রতি ট্রাক মাটি তাঁরা বিক্রি করছেন।

এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, কৃষিজমিতে ৩০ থেকে ৩৫ ফুট গভীর করে খননযন্ত্র ব্যবহার করে মাটি কাটা হচ্ছে। বোরোর আবাদ শুরু না হওয়ায় ট্রাকগুলো জমির মাঝখান দিয়ে চলাচল করছে।
বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, প্রায় সব কটি জমি থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে একই কায়দায় চিত্র দেখ‌া গে‌ছে। জমির মালিক ও মাটি কাটার সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকেরা বলছেন, এসব মাটি যাচ্ছে লাফার্জ হোলসিম সি‌মেন্ট কারখানায় সি‌মেন্ট তৈ‌রি জন্য মাটি কাটা হচ্ছে। কোনো কোনো স্থানে মাটি কাটার কাজে এক্সকাভেটর (খননযন্ত্র) ব্যবহার করা হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কৃষিজমির মাটি কেনা-বেচায় যুক্ত রয়েছে প্রভাবশালী সি‌ন্ডি‌কেট চক্ররা । ফলে নির্বিকার সাধারণ কৃষকেরা।

পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কায় ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পূর্ব খাসিয়া এলাকার বাসিন্দারা কয়েকটি এনজিওর পরামর্শে আদালতে মামলা করেন। ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টির কারণে মেঘালয় রাজ্যের ননগোট্রাই খনি থেকে চুনাপাথর উত্তোলনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন ভারতের হাইকোর্ট।
ফলে ২০০৭ সালের ১২ এপ্রিল থেকে খনি প্রকল্পে চুনাপাথর উত্তোলন বন্ধ হয়ে যায়।২০০৭ সালের ডিসেম্বরে ভারতীয় আদালতের একটি রায় লাফার্জের অনুকূলে যাওয়ায় কারখানাটি খনি প্রকল্প থেকে আবারও চুনাপাথর উত্তোলন করে উৎপাদন শুরু করে। কিন্তু একই অভিযোগে ২০১০ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট খনি থেকে চুনাপাথর উত্তোলনের ওপর ফের নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। ২০১১ সালের ৬ জুলাই দেশটির পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় লাফার্জকে সংশোধিত পরিবেশ বিষয়ক অনুমোদন দেয়। কারখানায় ডাষ্ট ডিবাইডার না থাকার কারণে কারখানার আশেপাশের এলাকার বসত-বাড়ির সবুজ সতেজতা একের পর এক হারিয়ে যাচ্ছে।
তবুও কারখানা কর্তৃপক্ষ ১৯ বছর ধরে লাফার্জ হোলসিম সি‌মেন্ট কারখানায় বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না। এদিকে কারখানার অন্যতম কাঁচামাল মাটি সংগ্রহের কারণে এলাকার ফসলী জমি ধ্বংস করে দিচ্ছে লাফার্জ হোলসিম সিমেন্ট কারখানা। কারখানার মাটি সংগ্রহের ভারী যানচলাচলে রাস্তাঘাট ভেঙ্গে যাচ্ছে। ধুলো উড়ে পরিবেশ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে এলাকায়।কারখানার ডাষ্ট, ধুলো ও কনভেয়ার বেল্টের শব্দসহ বিভিন্নভাবে পরিবেশ ধ্বংসের কারণে লাফার্জ হোলসিমের বিরুদ্ধে এলাকার মানুষের রয়েছে চাপা ক্ষোভ ও উত্তেজনা। লাফার্জের এ কার্যক্রমের ফলে জমি মালিক এবং কৃষকরা উপকৃত করার না‌মে বালু মহাল ও মা‌টি ব‌্যবস্থাপনা আইনে ২০১০ সা‌লে ১৫ ধারা আইন ভঙ্গ কর‌লে কারাদন্ড জ‌রিমানা বা উভয়‌কে দন্ড হ‌তে পা‌রে। কৃ‌ষি জ‌মি সংরক্ষন ও ভু‌মি ব‌্যবহার আইনে ২০২৪ সা‌লে নতুন আইনে ১০ ধারা আবা‌দি জ‌মি থে‌কে টপ স‌য়েল কাটার অপরা‌ধে ভরাট বা অন‌্য কা‌জে ব‌্যবহার করা নি‌ষিদ্ধ বলা হয়। এসব আইন‌কে বৃদ্ধাঙ্গুল দে‌খি‌য়ে কৃ‌ষি জ‌মি ও টিলা কে‌টে মা‌টি সংগ্রহ ক‌রে‌ছে লাফার্জ হোলসিম ‌সি‌মেন্ট কারখানা।
জানা যায়,২০০৬ সালে ছাতকে সুরমা নদীর উত্তরপাড় টেংগারগাঁও ও নোয়ারাই গ্রামের মধ্যবর্তী স্থানে প্রতিষ্ঠিত লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট কারখানা নামে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করে‌ছি‌লো। পরবর্তিকালে এ কারখানাটির নামকরণ করা হয় লাফার্জ হোলসিম নামেই। প্রতিষ্ঠাকালে ভূমিঅধিগ্রহণ করার সময় ক্ষতিগ্রস্থ ভূমি মালিকদের পুনর্বাসনসহ এলাকার উন্নয়নে সামাজিক দায়বদ্ধতার নামে বহু লোভনীয় সুযোগ-সুবিধার কথা বলা হয়। উৎপাদনের প্রায় ১৯ বছর পার হলেও স্থানীয়দের দেয়া প্রতিশ্রু‌তি কারখানা কর্তৃপক্ষ ওয়াদা রক্ষা করে‌নি আজও । এসব নিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ ভূমি মালিকদের বড় বেশি ক্ষোভ না থাকলেও এলাকার পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে ধাবিত হওয়ার কারণে কারখানার বিরুদ্ধে তাদের রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। ফলে লাফার্জ হোলসিম স্থানীয়ভাবে মাটির জন্য নতুন করে ভূমি অধিগ্রহনের চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। পরবর্তীতে স্থানীয় কৃষকদের নানা প্রলোভন দেখিয়ে ফসলী জমির মাটি সংগ্রহ করে যাচ্ছে লাফার্জ হোলসিম সি‌মেন্ট কারখানা। কারখানা কর্তৃপক্ষ দ্রুত মাটি সংগ্রহ করে কারখানার অভ্যন্তরে বিশাল মাটির পাহাড় গড়ে তোলায় সংগৃহিত পাহাড় সম মাটির অতিরিক্ত চাপে ২০১১ সালে ছাতক সিমেন্ট কারখানায় সংযোগকৃত জালালাবাদ গ্যাসের হাইপ্রেসার লাইনে বিষ্ফোরণ ঘটেছিল। এ বিষ্ফোরণের বিষয় নিয়ে ছাতক সিমেন্ট কারখানা ও জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষ সরাসরিভাবে লাফার্জ হোলসিম সি‌মেন্ট কারখানাকে দায়ী করলে কর্তৃপক্ষের ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য হয়। এদিকে লাফার্জ হোলসিমের মাটি সংগ্রহের কারণে এলাকার সহস্রাধিক একর ফসলী জমি ইতিমধ্যেই জলাশয়ে পরিনত হয়। এলাকার সচেতন লোকজন পরিবেশ ও ফসলী জমি ধ্বংসে স্থানীয়ভাবে একাধিক প্রতিবাদ সমাবেশ করলেও কারখানা কর্তৃপক্ষ এদিকে কোন নজর দিচ্ছে না। পরিবেশ ধ্বংশের কারণে কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও রয়েছে উচ্চ আদালতে।
২০১৮ সা‌লে হাইকো‌টে ২ মে প‌রি‌বেশ নি‌য়ে রিট আবেদন ক‌রা হয়। এঘটনায় তদন্ত টিমের দাখিলীয় রিপোর্টের প্রেক্ষিতে একই বছ‌রে ১৩ ডিসেম্বর আদালত প্রতিবেদনের আলোকে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য সুনামগঞ্জ জেলা প্রসাশককে নির্দেশ প্রদান করেন। কিন্তু অদ্যাবদি লাফার্জ হোলসিম ফসলী জমি থেকে মাটি সংগ্রহসহ তাদের পরিবেশ দূষণের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।

দীর্ঘ ১৭ কিলোমিটার কনভেয়ার বেল্ট’র উচ্চ শব্দের কারনে ছাতক-দোয়ারার সহস্রাধিক পরিবারের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। শব্দ নিয়ন্ত্রক ব্যবহার না করেই উচ্চ শব্দের কনভেয়ার বেল্ট ব্যবহার করে যাচ্ছে লাফার্জ হোলসিম কর্তৃপক্ষ।

পরিবেশের ক্ষতিকর এমন বর্জ্য পদার্থ বাংলাদেশের বিভিন্ন কোম্পানির নিকট থেকে সংগ্রহ করে লাফার্জ সুরমা প্ল্যান্টে পরিবেশবান্ধব উপায়ে ধ্বংস করা হয়। মাটি সংগ্রহের জন্য লাফার্জ হোলসিম যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পর মা‌টি সংগ্রহ করছে সি‌মেন্ট কারখানার কতৃপক্ষ। মাটি সংগ্রহের ক্ষেত্রে পতিত জমিগুলোকে বেছে নেয়া হয় এবং জমি মালিক ও কৃষকদের মতামতকে প্রাধান্য দেয়া হয় না । প্রাকৃতিক কারণে, এসকল পতিত জমি থেকে কয়েক ফুট মাটি অপসারণ করলে তা বোরো চাষের উপযুক্ত করা হয়নি আজও ।

কোন কোন মালিক পতিত জমিকে মাছ চাষের উপযোগী করে তোলেন। লাফার্জ হোলসিম যে জমিগুলো থেকে মাটি সংগ্রহ করে পরবর্তীতে এই জমিগুলোকে চাষযোগ্য করে তোলার না‌মে নানা টালবাহানা কর‌ছে। ধূলাবালি নির্গমন, শব্দসহ সকল ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনে অনুমোদিত মাত্রা না মেনে চলছে লাফার্জ হোলসিম।

এব‌্যাপা‌রে স্থানীয় টেংগারগাঁও গ্রামের আইনুল ইসলাম ও বারকাহন গ্রামের এনামুল হক তালুকদার,আব্দুল কাহার,বা‌তির কা‌ন্দি গ্রা‌মের
লা‌য়েক মিয়া,জয়নুল মিয়াসহ একা‌ধিক ব‌্যক্তিরা এসব ঘটনার সত‌্যতা নি‌শ্চিত ক‌রে ব‌লেন, বর্তমানে কারখানা থেকে নির্গত ডাষ্ট এলাকাবাসীর জন্য মারাত্মক বিপদজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারখানার স্বার্থের কারণে এলাকার ফসলি জমির ক্ষতি, স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্টসহ মারাত্মক শব্দ দূষণের সৃষ্টি হচ্ছে। স্থানীয় শিশুদের মধ্যে অনেক রোগ বালাইয়েরও সৃষ্টি হয়েছে। এসব থেকে স্থায়ীভাবে মুক্তির জন্য পরিবেশ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আশু-হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

শব্দ দূষণ ও পরিবেশ নষ্টের বিষয়ে পরিবেশ মন্ত্রনালয়সহ সরকারের বিভিন্ন দফতরে এলাকাবাসী এবং নাগরিক পরিবেশ ও যুব সমাজকল্যাণ সংস্থা একাধিক অভিযোগ দা‌য়ের ক‌রে‌ছেন প‌রি‌বেশ অ‌ধিদপ্ত‌রে। এসবের শুধু তদন্তই চলছে, কার্যকর কোন ব্যবস্থা আজও নেয়া হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেড ডা‌ইরেকটার অ‌মিতাভ সিং একা‌ধিক বার তার ফোনে রিং হ‌চ্ছে তি‌নি রি‌সিভ না করায় বক্তব‌্য পাওয়া যায়‌নি।

এব‌্যাপা‌রে উপ‌জেলা কৃ‌ষি কর্মকতা তৌ‌হিদুল ইসলাম খান এসব ঘটনার সত‌্যতা নি‌শ্চিত ক‌রে ব‌লেন,পরিবেশবাদী সংগঠন, উপজেলা কৃষি বিভাগ পরিবেশ ও ফসলী জমি নষ্ট করার কারণে লাফার্জ হোলসিমের বিরুদ্ধে পরিবেশ নষ্টের একাধিক রিপোর্ট প্রদান করলেও কর্তৃপক্ষ তা আমলে নিচ্ছে না কতৃপক্ষ‌।

এব‌্যাপা‌রে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্টেট মোঃ তরিকুল ইসলাম এলাকার ফস‌লি কৃ‌ষি জ‌মি থে‌কে মা‌টি সংগ্রহের ঘটনার সত‌্যতা নি‌শ্চিত ক‌রে ব‌লেন প‌রি‌বেশ দুষ‌নে অ‌ভি‌যোগ পে‌য়ে‌ছি। ত‌বে তদন্ত পুবর্ক আইনানুগত ব‌্যবস্থা নেয়া হ‌বে।



বিষয়: #  #


অপরাধ এর আরও খবর

সারাদেশে বিশেষ অভিযানে গ্রেফতার আরও ১৮৪৯ সারাদেশে বিশেষ অভিযানে গ্রেফতার আরও ১৮৪৯
আল্লারদর্গা প্রেসক্লাবের মাসিক সভায় ক্ষোভ ॥ সাব-রেজিস্ট্রার অফিস দুর্নীতির আখড়া আল্লারদর্গা প্রেসক্লাবের মাসিক সভায় ক্ষোভ ॥ সাব-রেজিস্ট্রার অফিস দুর্নীতির আখড়া
ছাতকে সেনা ক্যাম্পের অভিযানে বিপুল অস্ত্রসহ যুবক গ্রেফতার ছাতকে সেনা ক্যাম্পের অভিযানে বিপুল অস্ত্রসহ যুবক গ্রেফতার
দৌলতপুরে বাঁকিতে সিগারেট না দেওয়ায় দোকানির কান কামড়ে ছিঁড়ে নিয়েছে যুবক দৌলতপুরে বাঁকিতে সিগারেট না দেওয়ায় দোকানির কান কামড়ে ছিঁড়ে নিয়েছে যুবক
কুষ্টিয়ায় বিজিবির অভিযানে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার অবৈধ মালামাল আটক কুষ্টিয়ায় বিজিবির অভিযানে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার অবৈধ মালামাল আটক
কাগাবলা বাজারে ইজারার ৩ গুণ ভূমি জবরদখল : ইজারা বাতিলের দাবী স্থানীয়দের কাগাবলা বাজারে ইজারার ৩ গুণ ভূমি জবরদখল : ইজারা বাতিলের দাবী স্থানীয়দের
রাণীনগরে বিএনপির পার্টি অফিসের জানালা ভেঙ্গে চুরি সংঘটিত রাণীনগরে বিএনপির পার্টি অফিসের জানালা ভেঙ্গে চুরি সংঘটিত
ভোলায় কোস্টগার্ডের অভিযানে সাড়ে ১৪ কোটি টাকার জাল ও পলিথিন জব্দ ভোলায় কোস্টগার্ডের অভিযানে সাড়ে ১৪ কোটি টাকার জাল ও পলিথিন জব্দ
সোহাগের রক্ত গায়ে মেখে ও মরদেহের ওপর লাফিয়ে উল্লাস করেন আসামিরা সোহাগের রক্ত গায়ে মেখে ও মরদেহের ওপর লাফিয়ে উল্লাস করেন আসামিরা

আর্কাইভ

সিলেট শহরের সকল হবিগঞ্জী --- --- ---

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)
সুনামগঞ্জে স্মশানঘাটের নামে পাকা রাস্তা দখল নিয়ে দুপক্ষ মুখোমুখি
শরণখোলায় কোস্টগার্ডের আয়োজনে তারুণ্যের উৎসবে বিনামূল্যে মেডিকেল ক্যাস্পেইন
রাণীনগরে মা হারা অসহায় দুই শিশুকে আর্থিক সহায়তা দিলেন ইউএনও
টেকনাফে অসহায় দুঃস্থদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সহায়তা দিলো কোস্টগার্ড
সুনামগঞ্জ-সিলেট মহা-সড়কের পাগলা এলাকায় পিকআপ-সিএনজি মুখোমুখী সংঘর্ষ,নিহত-৩
কোস্টগার্ডের অভিযানে আগেয়াস্ত্র ও গুলি জব্দ
মোংলায় কোস্টগার্ডের অভিযানে চোরাই মবিল ও ইলেকট্রোনিক যন্ত্রপাতি জব্দ
রাণীনগরে গ্রাম্য সালিশে হাজির না হওয়ায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও তালাবদ্ধ করার অভিযোগ
নারায়ণগঞ্জ থেকে ২ কোটি টাকার অবৈধ চিংড়ি রেণু জব্দ করেছে কোস্টগার্ড
দৈনিক শ্যামল সিলেটের বার্তা সম্পাদকের মৃত্যুতে ছাতকে কর্মরত গণমাধ্যম কর্মীদের শোক