শিরোনাম:
ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৮ আশ্বিন ১৪৩২
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বজ্রকণ্ঠ "সময়ের সাহসী অনলাইন পত্রিকা", সিলেট ঢাকা লন্ডন নিউ ইয়র্ক থেকে প্রকাশিত। লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন ই-মেইল: ঠিকানা:- [email protected] অনুগ্রহ করে সংবাদ প্রতিবেদন, ছবি এবং ছোট ভিডিও পাঠান। ভিজিট করুন: www.bojrokontho.com Founder and Chief Executive Editor:Syed Akhtaruzzaman Mizan, Mobile Number : +8801781529003 (SMS text Message first then Direct Calls) প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী সম্পাদক: সৈয়দ আখতারুজ্জামান মিজান মোবাইল নম্বর: +৮৮০১৭৮১৫২৯০০৩ (প্রথমে এসএমএস টেক্সট মেসেজ তারপর সরাসরি কল)

Bojrokontho
মঙ্গলবার ● ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
প্রথম পাতা » ইতিহাস ও ঐতিহ্য » হাছন রাজার জীবন কথা বিলাসী জমিদার থেকে দরবেশ বাউলের যাত্রা!
প্রথম পাতা » ইতিহাস ও ঐতিহ্য » হাছন রাজার জীবন কথা বিলাসী জমিদার থেকে দরবেশ বাউলের যাত্রা!
৯ বার পঠিত
মঙ্গলবার ● ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

হাছন রাজার জীবন কথা বিলাসী জমিদার থেকে দরবেশ বাউলের যাত্রা!

আনোয়ার হোসেন র‌নি::
হাছন রাজার জীবন কথা বিলাসী জমিদার থেকে দরবেশ বাউলের যাত্রা!
হাছন রাজার জীবন এক অনন্য দৃষ্টান্ত। বিলাসী জমিদার থেকে দরবেশ বাউল হয়ে ওঠার যাত্রা একদিকে যেমন নাটকীয়, অন্যদিকে তেমনি গভীর শিক্ষামূলক। তাঁর গান আজও বাজে গ্রামের মেলায়, শহরের কনসার্টে, মানুষের অন্তরে। তিনি প্রমাণ করে গেছেন—ভুল করেও মানুষ নিজেকে বদলাতে পারে, ঈশ্বর আর মানবপ্রেমে শুদ্ধ হতে পারে। হাছন রাজা তাই শুধু একজন জমিদার বা গীতিকার নন—তিনি বাংলার লোকজ সংস্কৃতির অবিনশ্বর এক আলোকবর্তিকা।

বাংলার ইতিহাসে এক রহস্যময় নাম হাছন রাজা। তিনি ছিলেন একাধারে জমিদার, ভোগবিলাসী যুবরাজ, আবার রূপান্তরিত হয়ে হয়েছেন আধ্যাত্মিক বাউল সাধক। তাঁর জীবন যেন এক নাটকীয় রূপকথা—যেখানে আছে আভিজাত্য, প্রেম, পতন, আত্মসমালোচনা আর পুনর্জন্ম। ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যায়, হাছন রাজার জীবনকথা কেবল একটি মানুষের গল্প নয়; বরং এটি এক সামাজিক পরিবর্তনের দলিল, এক সাংস্কৃতিক জাগরণের আখ্যান।
জমিদারি উত্তরাধিকার ও বিলাসিতার শুরু বড় ভাই ও বাবার মৃত্যুর পর অল্প বয়সেই প্রায় ৬ লাখ বিঘা জমির বিশাল এলাকার জমিদারির দায়িত্ব এসে পড়ে হাছন রাজার কাঁধে। এতো অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়ে তিনি খুব দ্রুত ভোগবিলাসে মত্ত হয়ে পড়েন। কচি বয়স, অপরিসীম ঐশ্বর্য আর অসীম ক্ষমতার কারণে তিনি হয়ে ওঠেন বাংলার অন্যতম বিলাসী জমিদার। নারীর প্রতি তাঁর ছিল প্রবল আকর্ষণ। তিনি নিজেই পরে স্বীকার করেছিলেন—
“সর্বলোকে বলে হাছন রাজা লম্পটিয়া।”
এই লম্পটতার আড়ালে লুকিয়ে ছিল এক সংবেদনশীল মন, যে সবসময় প্রেম খুঁজেছে, সৌন্দর্যের পূজা করেছে।
দিলারামের প্রেম ও মায়ের হস্তক্ষেপ হাছন রাজার জীবনে প্রেম এসেছিল বহুবার। তবে প্রথম বড় আলোড়ন তোলেন দিলারাম নামের এক হিন্দু যুবতী। তাঁর রূপে মোহিত হয়ে হাছন রাজা নিজের গলার সোনার চেইন উপহার দেন। সুদর্শন জমিদারের অমূল্য উপহার পেয়ে দিলারামও তাঁকে হৃদয়ের পূজার আসনে বসালেন। প্রেমে মজে হাছন রাজা লিখলেন—
“ধর দিলারাম, ধর দিলারাম, ধর দিলারাম, ধর।
হাছন রাজারে বান্ধিয়া রাখ, দিলারাম তোর ঘর!”
কিন্তু জমিদার পরিবারের আভিজাত্য মানসিকতায় এই সম্পর্ক মেনে নেননি হাছনের মা। পারিবারিক বংশগৌরবের কথা ভেবে তিনি দিলারামকে গ্রামছাড়া করেন।
এ সিদ্ধান্ত তরুণ হাছনের মনে তৈরি করে এক গভীর ক্ষোভ। প্রিয়তমাকে হারিয়ে তিনি নারী আসক্তি ও নেশায় আরও ডুবে যান।
বাইজি-প্রীতি ও বিলাসী নৌকাবিহার দিলারামকে হারানোর পর হাছন রাজার জীবন ভেসে যায় বাইজি আর মদে। প্রতি বর্ষায় বিশাল নৌকার বহর নিয়ে তিনি বের হতেন হাওরে। সেখানে থাকতো নাচ-গানের আয়োজন, বাইজিদের আসর, মদের আসর।
এই সময় তিনি পরিচিত হন লখনৌ থেকে আসা সুন্দরী বাইজি পিয়ারির সঙ্গে। তাঁর রূপে বিমোহিত হয়ে হাছন রাজা লিখে ফেলেন—
“নেশা লাগিল রে। বাঁকা দুই নয়নে নেশা লাগিল রে।নহাছন রাজা পিয়ারির প্রেমে মজিলোরে…”
প্রজাদের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব ক্রমেই বেড়ে যায়। অত্যাচারী, নিষ্ঠুর জমিদার হিসেবেই তাঁকে চিনতে শুরু করে সাধারণ মানুষ। মায়ের ছদ্মবেশ ও ছেলের চোখে আঘাত ছেলেকে বিপথে যেতে দেখে হাছন রাজার মা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। একদিন তিনি বাইজির ছদ্মবেশে গিয়ে ছেলের জলসা ঘরে উপস্থিত হন। মাকে চিনে ফেলেই হাছন রাজা মায়ের পায়ে লুটিয়ে পড়েন।
এ ঘটনা তাঁকে লজ্জিত করে তোলে। মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা আর নিজের অন্তর্দ্বন্দ্ব তাঁকে নারী-আসক্তি ও নেশার পথ থেকে কিছুটা ফিরিয়ে আনে।
আধ্যাত্মিক রূপান্তর কিন্তু আসল পরিবর্তন আসে এক রহস্যময় স্বপ্ন-দর্শনের পর। সেই অভিজ্ঞতা তাঁকে আধ্যাত্মিক জগতে টেনে নেয়। জমকালো পোশাক, দামি অলঙ্কার, বিলাসী ভোগ—সব ছেড়ে হাছন রাজা হয়ে ওঠেন সাধারণ। তিনি প্রজাদের খোঁজ নিতে শুরু করেন, দরিদ্রদের পাশে দাঁড়ান। ভোগবিলাসী জমিদার থেকে তিনি রূপান্তরিত হন এক বাউল-দরবেশে। হাছন রাজার গান: বাউল ভাবধারার উন্মেষ
ভুল-ত্রুটির স্মৃতি, অনুতাপ আর ঈশ্বরপ্রেম তাঁর গানে ফুটে ওঠে। তিনি লিখলেন—
“লোকে বলে বলেরে, ঘর বাড়ি ভালা নায় আমার।”
“কানাই তুমি খেল খেলাও কেনে।”
“মাটিরো পিঞ্জিরার মাঝে বন্ধী হইয়া রে।”
“বাউলা কে বানাইলো রে।”
“আগুন লাগাইয়া দিলো কনে।”
“সোনা বন্দে আমারে দেওয়ানা বাইনালে।”
তাঁর গানে জীবনের অস্থায়িত্ব, ভোগের শূন্যতা আর আধ্যাত্মিক প্রেমের জয়গান উঠে আসে। অতীতের পাপ ও ভুলকে স্বীকার করে তিনি লেখেন—
“একদিন তোর হইবোরে মরণ।”
বৈরাগ্য ও দরবেশ জীবন ধীরে ধীরে হাছন রাজাকে পেয়ে বসে গভীর বৈরাগ্য। তিনি সম্পত্তির প্রতি আসক্তি ছেড়ে দিয়ে জমিদারির বিশাল অংশ প্রজাদের মধ্যে বিলি-বণ্টন করেন। নিজে বেছে নেন উদাসীন বাউল জীবন। তিনি প্রতিষ্ঠা করেন হাছন এম. ই. হাই স্কুল, অসংখ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও আখড়া। এভাবে তিনি সমাজসেবায়ও হয়ে ওঠেন এক অগ্রদূত।
সুদর্শন জমিদার: নারীদের আকর্ষণ
হাছন রাজার দৈহিক সৌন্দর্যের কথাও সর্বত্র প্রচলিত ছিল। তিনি ছিলেন লম্বা দেহী, খাড়া সূচালো নাক, জ্যোতির্ময় পিঙ্গলা চোখ আর ঘন চুলের অধিকারী। এ কারণে বহু নারী তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হতেন। তবে জীবনের শেষভাগে তিনি নারীর মোহ থেকে বেরিয়ে গিয়ে একেবারে আধ্যাত্মিক প্রেমে ডুবে থাকেন।

উত্তরাধিকার ও সাংস্কৃতিক প্রভাব হাছন রাজার জীবনকথা আমাদের শেখায়—অঢেল সম্পদ, আভিজাত্য ও বিলাসিতা কোনো মানুষকে পূর্ণতা দিতে পারে না। পূর্ণতা আসে আত্ম-উপলব্ধি ও মানবিকতায়। বাংলার লোকসংগীত, বিশেষ করে বাউল ধারার সঙ্গে হাছন রাজার গান মিশে আছে আজও। তাঁর গান কেবল আধ্যাত্মিক উপলব্ধির দিশা দেয় না, বরং মানুষের ভেতরের অপূর্ণতাকে মমতায় জড়িয়ে ধরে।##!

লেখকঃ সাংবা‌দিক ক‌বি আনোয়ার হো‌সেন র‌নি,সাধারন সম্পাদক ছাতক প্রেসক্লাব,কাব‌্যকথা সা‌হিত‌্য প‌রিষ‌দের বিভাগীয় সাংগঠ‌নিক সম্পাদক।





আর্কাইভ

সিলেট শহরের সকল হবিগঞ্জী --- --- ---
কোস্টগার্ডের অভিযানে আগেয়াস্ত্র ও গুলি জব্দ
মোংলায় কোস্টগার্ডের অভিযানে চোরাই মবিল ও ইলেকট্রোনিক যন্ত্রপাতি জব্দ
রাণীনগরে গ্রাম্য সালিশে হাজির না হওয়ায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও তালাবদ্ধ করার অভিযোগ
নারায়ণগঞ্জ থেকে ২ কোটি টাকার অবৈধ চিংড়ি রেণু জব্দ করেছে কোস্টগার্ড
দৈনিক শ্যামল সিলেটের বার্তা সম্পাদকের মৃত্যুতে ছাতকে কর্মরত গণমাধ্যম কর্মীদের শোক
নোয়াখালীতে প্রশিক্ষণ প্রাইভেটকার পুকুরে পড়ে তরুণের মৃত্যু
দৌলতপুরে পৃথক পৃথক স্থানে বজ্রপাতে দুজনের মৃত্যু
দৌলতপুর পিপুলবাড়িয়া মাঠে গাছের গুঁড়ি ফেলে গতিরোধ করে অ্যাম্বুলেন্সে ডাকাতি
৪ মাত্রার ভূমিকম্পে কাঁপল সিলেট
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে আওয়ামীলীগ পূর্ণবাসনের অভিযোগ