

সোমবার ● ৩০ জুন ২০২৫
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » ছাতকে ইয়াবা মনিরের খুটির জোর কোথায়?
ছাতকে ইয়াবা মনিরের খুটির জোর কোথায়?
ছাতক সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি ::
সুনামগঞ্জের ছাতকে অপকর্ম করে বহাল তবিয়তে সেই ইয়াবা মনিরসহ তার সহযোগিরা। তার চলছে রামরাজত্ব। সুরমার চর থেকে মাটি বিক্রি, সওজের ভূমি থেকে পাথর, মাটি ও গাছসহ সরকারী যন্ত্রাংশ বিক্রি করে দাপুটের সাথে সে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। নিয়মবহির্ভূত ভাবে সওজ বিভাগের সরকারী ঘরে বসবাসের মাধ্যমে ইয়াবা মনির ও তার পিতা চালাচ্ছে লুটপাট। এখনও বহাল তবিয়তে আছেন সরকারী ঘরে। রহস্যজনক কারণে তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা সওজ কর্তৃপক্ষ। যে কারণে স্থানীয় সচেতন মহল প্রশ্ন তুলছেন ইয়াবা মনিরেরখুটির জোর কোথায়?
জানা যায়, নোয়াখালী জেলার চাটখালী উপজেলার বানশা গ্রামের আবুল বাশার ছাতক সওজ বিভাগের কর্মচারি হিসেবে যোগদান করে। এর সুবাদে সে পৌরশহরের দক্ষিণ বাগবাড়ি এলাকার সওজ বিভাগের সুরমা নদীর তীরে একটি ঘরে বসবাস করে আসছিল। ওই সুরমা নদীর লাফার্জ ফেরির চালক ছিল আবুল বাশার। সুরমা সেতু নির্মিত হওয়ায় ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে তার চাকরির মেয়াদও শেষ হয়ে যায়। কিন্তু সরকারী বাসা ছাড়েনি আবুল বাশার। সওজ এর অসাধু কর্মকর্তাকে মেনেজ করেই ওই বাসায় স্ব পরিবার নিয়ে আজও বসবাস করে আসছে। দুই বছর ধরে সে পার্শ্ববর্তী দোয়ারাবাজার উপজেলার সুরমা নদীর ফেরি চালক হিসেবে কর্মরত আছে।
এদিকে, ছাতকের সওজ বিভাগের সরকারী ঘরে বসবাসের সুযোগে আবুল বাশারের ছেলে মতিউর রহমান ওরফে সাজ্জাদ মাহমুদ মনির ইয়াবা মনির সরকারী ঘরে গড়ে তুলেছে মাদকের আস্তানা। ইয়াবাসহ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ব্রান্ডের মদ, গাঁজা ও হিরোইন ওই বসত ঘরে বসে বিক্রি শুরু করে কয়েক বছর আগে। যা স্থানীয় বাসিন্দারা জানতেন না। তার এমন কর্মকাণ্ডে এলাকার যুব সমাজ আজ বিপদগামী হচ্ছে। সরকারী ভূমিতে নির্মাণ করে টিনসেডের কয়েকটি দোকান কোঠা। এগুলো থেকে প্রতি মাসে ১৫-২০ হাজার টাকা অবৈধ ভাবে ইনকাম করতো। এর একটি অংশ ডুকতো সওজ বিভাগের তৎকালিন দায়িত্বরত কর্মকর্তার পকেটে। মাদক ব্যবসা জমজমাট হলে এখান থেকে একটি চাঁদাবাজির সিন্ডিকেট তৈরি করে ওই ইয়াবা মনির। জানা গেছে, আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে সাবেক নিজেকে যুবলীগ কর্মী পরিচয়ে এখানে বসবাসের সুযোগে বিভক্তি দুই বলয় থেকে অনেক সুবিধা নিয়েছে ওই ইয়াবা মনির।
সম্প্রতি এখানের সওজ বিভাগের সওজের ভূমি থেকে পাথর, মাটি ও গাছ বিক্রি করে অর্ধকোটি টাকা লুটপাট করেছে ইয়াবা মনির ও তার পিতা আবুল বাশার। ২০২২ সাল থেকে সওজের ভুমি থেকে গাছ, মাটি ও পাথর উত্তোলন করে বিক্রি করেছে। এখানের পাথর দিয়ে গ্রামের বাড়িতে তৈরি করেছে বিল্ডিং। এর পরও রহস্যজনক কারণে সওজ কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। ২০২৪ সালের ৫ আগষ্টের পর সে নিজেকে যুবদল নেতা পরিচয় দিয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে। ২০২৪ সালের ২৭ ডিসেম্বর সুরমার চর থেকে মাটি বিক্রিকালে এক ট্রাক চালক সহ দুজনকে হাতে নাতে গ্রেফতার করে যৌথবাহিনী। আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে উঠে আসে মাটিখেকো চক্রের মুল হোতা ইয়াবা মনিরের নাম। গত ২৮ ডিসেম্বর তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের হয়। মামলার তদন্তে সত্যতা পেয়ে আদালতে চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। এর আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় তার প্রকাশ্যে ইয়াবা সেবনের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। এতে মাদক সেবন ও ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি জনসম্মুখে প্রকাশ পায়। এসব বিষয় একাধিক জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশ হলে গত ১৬ জানুয়ারী সওজ কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদ অভিযানে নেমে মনিরের অবৈধ দখল করা দোকানপাঠ গুড়িয়ে দেয়। কিন্তু পিতা-পুত্রকে সরকারী ঘর থেকে বের করে দেয়নি। বর্তমানে ওই ইয়াবা মনির তার বাহিনী দিয়ে নদীপথে চাঁদাবাজী, বালুমহালে চাঁদা আদায় সহ নানান অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
ছাতক খাদ্যগুদামে মাসিক ২৫ হাজার টাকা চাঁদা দাবীর বিষয়টি উঠে আসে খাদ্যগুদামের কর্মকর্তা সুলতানা পারভিনের কাছ থেকে। এ নিয়ে স্থানীয় ও জাতীয় একাধিক পত্রিকায় সংবাদ প্রচার হয়। বর্তমানে খাদ্যগুদামে ধান সংগ্রহে অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত চলছে। এছাড়া দোয়ারাবাজার উপজেলার গরুর হাটে মাসিক চাঁদা, নদী ও সড়ক পথে মাসিক চাঁদা দাবীর একাধিক অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সম্প্রতি নদীপথে চোরাচালান আটক করে পুলিশ পৌঁছার আগেই ১৬ বস্তা শাড়ি ও শাল গায়েব করেছে এই ইয়াবা মনির চক্র।
এছাড়া একটি সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য এক ভূক্তভোগীর কাছে ৪০ হাজার টাকা চাঁদা চেয়ে বসেছিল সে। টাকা না পেয়ে একটি ছেলে ও মেয়ের প্রেমের ঘটনাকে অনলাইনে প্রচার করে। মোবাইল ফোনে যার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ভুক্তভোগীরা। অন্যদিকে ২০২৩ সাল থেকে চোরাচালান, মাদক ও লুটপাটের বিরুদ্ধে একাধিক সংবাদ প্রচার করায় স্থানীয় সংবাদ কর্মীদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে ইয়াবা মনিরসহ তার সহযোগিরা। তারা ফেইসবুকসহ বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালে মিথ্যা ভিত্তিহীন সংবাদ চালিয়ে অপপ্রচার করছে। এতে ছাতকের সুশীল সমাজসহ সর্বস্থরের মানুষ এর তিব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে। ইয়াবা মনির ও তার সহযোগিদের দ্রুত গ্রেফতার করে ছাতক উপজেলাকে কলংক মুক্ত করার দাবি করেছেন এখানের সচেতন মহল।
অপরদিকে ইয়াবা মনির ও তার সহযোগিদের মাধ্যমে মূল ধারার গণমাধ্যম কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর তিব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিতার প্রতিনিধিরা। তারা অনতি বিলম্বে অপপ্রচারকারী চিহৃিত মাদক ব্যবসায়ী ইয়াবা মনিরসহ তার সহযোগিদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
ছাতক সড়ক ও জনপদ উপ-বিভাগীয় কার্যালয়ের প্রকৌশলী শাহাদাত হোসেন অভিযোগের বিষয়ে বলেন, সওজ কর্তৃপক্ষ লাফার্জ ফেরিঘাট সংলগ্ন অবৈধ জমি উচ্ছেদ করেছে। ফেরি চালক আবুল বাশার অবসর নেয়ার পর অস্থায়ী হিসেবে রাখা হয়েছে। সে সুবাদে সরকারি বাসায় বসবাস করছে। সরকারি বাসায় কিভাবে বসবাস করছে এমন প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে তিনি বলেন, তার ছেলে মনিরের অপকর্মের জন্য অফিসে ডেকে এনে সতর্ক করা হয়েছে। এ বিষয়ে আর কোন কিছু করার প্রয়োজন নেই।
বিষয়: #ইয়াবা #কোথায় #খুটির #ছাতক #জোর #মনির