সোমবার ● ৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রথম পাতা » বিশেষ » ছাতকে চোরাচালানি টাকার ভাগাভাগি নিয়ে দুই গ্রামের সংঘর্ষে আহত ব্যবসায়ীর মৃত্যু, এলাকায় শোকের ছায়া
ছাতকে চোরাচালানি টাকার ভাগাভাগি নিয়ে দুই গ্রামের সংঘর্ষে আহত ব্যবসায়ীর মৃত্যু, এলাকায় শোকের ছায়া
ছাতক (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি:
![]()
সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নে চোরাচালানি টাকার ভাগাভাগি নিয়ে দুই গ্রামের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় গুরুতর আহত চুনাপাথর ব্যবসায়ী মানিক মিয়া (৫০) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তিনি গত রবিবার (২ নভেম্বর) গভীর রাতে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
মানিক মিয়ার মৃত্যুতে গোটা এলাকায় নেমে এসেছে গভীর শোকের ছায়া। নিহত মানিক মিয়া
উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের বনগাঁও গ্রামের মৃত জগম্বর আলীর ছেলে।
ঘটনার পটভূমি স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে ইসলামপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকায় অবৈধ চোরাচালানি বাণিজ্য চলে আসছে। এই বাণিজ্যের টাকার ভাগাভাগি নিয়ে প্রায়ই বিরোধ সৃষ্টি হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি বনগাঁও গ্রামের ফজলুল করিম ও লুভিয়া গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে কামরুল ইসলামের মধ্যে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন নিয়ে মতবিরোধ দেখা দেয়।
কামরুল ইসলাম স্থানীয়ভাবে চোরাকারবারি চক্রের মূল হোতা হিসেবে পরিচিত। অপরদিকে ফজলুল করিমের পরিবার স্থানীয় ব্যবসায়ী মহলে বেশ প্রভাবশালী। দুই পক্ষের মধ্যে চলমান উত্তেজনা গত ৩০ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) রাতে চরম আকার ধারণ করে।
সংঘর্ষের সূচনা ও সহিংসতা সেদিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে ফজলুল করিম তার পাওনা ৫ লাখ টাকা দাবি করলে কামরুল ইসলামের সঙ্গে তর্কাতর্কি শুরু হয়। একপর্যায়ে দুজনের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং মুহূর্তের মধ্যে দুই গ্রামের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী চলা এই সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হন। দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, বাড়িঘরে হামলা ও ইছামতী বাজারে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ চলাকালে আতঙ্কে বাজারের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়, সাধারণ মানুষ ঘরবন্দি হয়ে পড়ে।
সংঘর্ষের সময় একটি পক্ষ গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ও ডিজেল ঢেলে স্থানীয় সেতুতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে এলাকায় ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি হয় এবং যাতায়াত ব্যবস্থা সাময়িকভাবে ব্যাহত হয়।
আহত ও মৃত্যুর ঘটনা আহতদের মধ্যে বনগাঁও গ্রামের চুনাপাথর ব্যবসায়ী মানিক মিয়া গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা তাকে দ্রুত সিলেট এম.এ.জি. ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে কয়েকদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর অবস্থার অবনতি হলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় রবিবার গভীর রাতে তিনি মারা যান। মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে বনগাঁও গ্রামসহ আশপাশের এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া। স্থানীয়রা বলেন, মানিক মিয়া ছিলেন অমায়িক ও পরিশ্রমী একজন মানুষ। জীবিকা নির্বাহের জন্য তিনি চুনাপাথর ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন, কোনো ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে তার সম্পৃক্ততা ছিল না।
এলাকাজুড়ে উত্তেজনা মানিক মিয়ার মৃত্যুতে বনগাঁও ও লুভিয়া গ্রামের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। তবে পুলিশ ও প্রশাসনের তৎপরতায় বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে যাতে নতুন করে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে।
পুলিশের ভূমিকা ও গ্রেপ্তার অভিযান খবর পেয়ে ছাতক থানা পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশ তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে সংঘর্ষে জড়িত সন্দেহে ঘটনাস্থল থেকে ৬ জনকে আটক করে।
এ ঘটনায় নিহত মানিক মিয়ার স্ত্রী শাহিনুর বেগম গত ৩১ অক্টোবর সকালে ছাতক থানায় ২২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরও ১৫-২০ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পরপরই পুলিশ আটক ৬ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে একই দিন বিকেলে আদালতে প্রেরণ করে।
ছাতক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম খান বলেন, “আহত মানিক মিয়া ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা হয়েছে, ইতোমধ্যে ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া বনগাঁও গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা হাবিবুর রহমান বলেন, “চোরাচালানি টাকার ভাগাভাগি নিয়ে এভাবে প্রানহানি খুবই দুঃখজনক। এই এলাকায় অবৈধ ব্যবসা অনেকদিন ধরেই চলছে। প্রশাসনের কঠোর নজরদারি না থাকায় এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে।”একই এলাকার যুবক আমিরুল ইসলাম বলেন, “মানিক ভাইকে আমরা ছোটবেলা থেকে চিনি। তিনি কখনো কোনো অপরাধমূলক কাজে ছিলেন না। অন্যের দ্বন্দ্বের বলি হয়ে জীবন হারালেন। আমরা ঘটনার বিচার চাই।”
সামাজিক প্রতিক্রিয়া ও প্রশাসনিক আহ্বান এ ঘটনার পর স্থানীয় সচেতন মহল সীমান্তবর্তী এলাকায় চোরাচালানি বন্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। ইসলামপুর ইউনিয়নের কয়েকজন জনপ্রতিনিধি জানিয়েছেন, অবৈধ পণ্য বেচাকেনা ও টাকার লেনদেন বন্ধ না করলে এ ধরনের সংঘর্ষ ভবিষ্যতেও ঘটতে পারে।
ছাতক উপজেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “এই এলাকার কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সীমান্ত চোরাচালানি থেকে বিপুল অর্থ উপার্জন করছে। তাদের মধ্যকার হিসাব-নিকাশের দ্বন্দ্বই এই ধরনের সহিংস ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। প্রশাসন বিষয়টি গভীরভাবে নজরে রেখেছে।”
চোরাচালানি টাকার ভাগাভাগি নিয়ে সংঘর্ষে প্রাণহানির এই ঘটনা আবারও সীমান্ত এলাকায় অবৈধ বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এলাকাবাসী বলছেন, শুধু গ্রেপ্তার বা মামলা নয়, এসব চক্রের মূল উৎস ধ্বংস না করলে এ ধরনের সহিংসতা বন্ধ হবে না। মানিক মিয়ার মৃত্যুতে পরিবার, আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী ও ব্যবসায়ী মহলে শোকের মাতম চলছে। তার জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হলে এলাকায় এক শোকসভা আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।
বিষয়: #আহত #এলাকায় #গ্রাম #চোরাচালানি #ছাতক #ছায়া #টাকা #দুই #নিয়ে #ব্যবসায়ী #ভাগাভাগি #মৃত্যু #শোক #সংঘর্ষ




সুনামগঞ্জে ১২৪ তম জন্মবার্ষিকীর আলোচনা সভায় বাউল কামাল পাশাকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দানের দাবী
গানে গানে সংস্কারের কথা বলেছেন বাউল কামাল : ১২৪ তম জন্মবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলী
কোকা-কোলা বাংলাদেশের নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক হলেন মঈন উল্লাহ চৌধুরী
বাংলাদেশে ৭মাত্রার ভূমিকম্পের আগাম সতর্কবার্তা ধ্বংশ হয়ে যেতে পারে দেশের ৮০% স্থাপনা
ভূমিকম্প পরবর্তী স্বাভাবিক হয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ
ঐক্যের বার্তা নিয়ে ভেসপাবস-এর ফ্যামিলি নাইট ও ডিনার অভ্যর্থনা
শেখ হাসিনার বিচারের রায় আগামী সপ্তাহে: তথ্য উপদেষ্টা
এক বিরল সাক্ষাৎকারে, প্রাক্তন স্বৈরাচারী নেত্রী শেখ হাসিনা দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টকে বলেছেন যে তার ক্ষমতাচ্যুতির সময় রক্তপাতের জন্য তিনি দায়ী নন, এবং অনুপস্থিতিতে তার বিচারকে ‘প্রতারণা’ বলে অভিহিত করেছেন।
ব্রিটিশ পার্লামেন্টের হাউস অব লর্ডসে উচ্চপর্যায়ের গোলটেবিল বৈঠক!
