

সোমবার ● ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
প্রথম পাতা » সুনামগঞ্জ » ছাতকে ৫৪ বছর পর মৎস্যজীবী পুনর্বাসনের উদ্যোগ গোবিন্দগঞ্জে মাছ বাজারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেন ইউএনও
ছাতকে ৫৪ বছর পর মৎস্যজীবী পুনর্বাসনের উদ্যোগ গোবিন্দগঞ্জে মাছ বাজারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেন ইউএনও
ছাতক (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি:
সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলায় দীর্ঘ ৫৪ বছর পর আবারও শুরু হলো মৎস্যজীবী পুনর্বাসনের কার্যক্রম। সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে উপজেলার ব্যস্ততম গোবিন্দগঞ্জ ট্রাফিক পয়েন্টে মাছ বাজার স্থাপনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ তরিকুল ইসলাম। এই বাজারকে কেন্দ্র করে শতাধিক মৎস্যজীবী পরিবার পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। ফলে স্থানীয় মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। অনেকের মতে, এই উদ্যোগ শুধু একটি বাজার নির্মাণ নয়, বরং বহু বছরের অবহেলা ও বঞ্চনার ইতিহাসকে বদলে দেওয়ার এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান ছাতক উপজেলার নদী, হাওর ও বিলের মৎস্য সম্পদ একসময় স্থানীয় অর্থনীতির প্রধান অবলম্বন ছিল। কিন্তু নানা কারণে মৎস্যজীবীরা টেকসই বাজার ও পুনর্বাসন ব্যবস্থার বাইরে থেকে যায়। ফলে জীবিকা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। স্থানীয়রা জানান, ৫৪ বছর আগে শেষবারের মতো বড় পরিসরে মৎস্যজীবী পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এরপর থেকে এ সম্প্রদায় প্রায় অবহেলিত অবস্থায় জীবনযাপন করছে।
গোবিন্দগঞ্জে নতুন বাজার স্থাপনের মধ্য দিয়ে মৎস্যজীবীরা আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পাচ্ছেন। এতে তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটবে বলে আশা করছে প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠান ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তা, ব্যাংক কর্মকর্তা এবং মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, মৎস্যজীবীরা এদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। অথচ দীর্ঘদিন ধরে তারা অবহেলিত। সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এবার ছাতকের মৎস্যজীবীরা নতুন সম্ভাবনার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে।
অনুষ্ঠানে ইউএনও মোঃ তরিকুল ইসলাম বলেন,“মৎস্যজীবীরা দেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাদের পুনর্বাসন ও উন্নয়নে উপজেলা প্রশাসন সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। এই বাজার শুধু মাছ বিক্রির কেন্দ্র নয়, বরং মৎস্যজীবীদের জীবিকা ও জীবনমান উন্নয়নের এক নতুন দিগন্ত।”
বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উপস্থিতি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আল আরাফা ইসলামী ব্যাংকের ম্যানেজার মুজিবুর রহমান, মুরব্বি আমির আলী, ছাতক প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন রনি, গোবিন্দগঞ্জ ক্ষুদ্র মৎস্য সমবায় সমিতির সভাপতি নুরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান, আজর আলী, আব্দুল আজিজ, শাহাবুদ্দীনসহ স্থানীয় ছাত্রনেতা মতিউর রহমান ও জিয়াউল হক জিয়া। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করেন জামায়াতে ইসলামী’র সাবেক উপজেলা আমীর মাওলানা জালাল উদ্দিন। তিনি মৎস্যজীবীদের কল্যাণ এবং বাজারের সফল বাস্তবায়ন কামনা করেন।
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া স্থানীয় মৎস্যজীবী পরিবারগুলো জানান, দীর্ঘদিন ধরে তারা বঞ্চিত হলেও এবার যেন নতুন স্বপ্ন দেখতে পারছেন। বাজার চালু হলে তারা সহজে মাছ বিক্রি করতে পারবেন, ন্যায্যমূল্য পাবেন এবং পরিবার নিয়ে একটু ভালোভাবে বাঁচতে পারবেন। পাশাপাশি বাজার ঘিরে নতুন বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডের সুযোগ সৃষ্টি হবে। গোবিন্দগঞ্জ এলাকার ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষও আশা প্রকাশ করেছেন, নতুন মাছ বাজারটি একদিন প্রাণবন্ত বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত হবে। এতে শুধু মৎস্যজীবীরাই নয়, গোটা এলাকার অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে।
আশার আলো মৎস্যজীবী পুনর্বাসন কার্যক্রমের সূচনা ছাতকের উন্নয়নযাত্রায় এক নতুন মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন বিশ্বাস করে, এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে শুধু মৎস্যজীবীর জীবনমান উন্নত হবে না, বরং পুরো উপজেলাতেই কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটবে। পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময়ের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে ছাতকের মৎস্যজীবীরা নতুন জীবনের পথে যাত্রা শুরুকরেছে।গোবিন্দগঞ্জ মাছ বাজার সেই যাত্রারই প্রথম ভিত্তি।
বিষয়: #উদ্যোগ #গোবিন্দগঞ্জ #ছাতক #পর #পুনর্বাসন #বছর #মৎস্যজীবী