

সোমবার ● ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » রাণীনগরে গ্রাম্য সালিশে হাজির না হওয়ায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও তালাবদ্ধ করার অভিযোগ
রাণীনগরে গ্রাম্য সালিশে হাজির না হওয়ায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও তালাবদ্ধ করার অভিযোগ
কাজী আনিছুর রহমান,রাণীনগর (নওগাঁ) :
নওগাঁর রাণীনগরে গ্রাম্য সালিশে হাজির না হওয়ায় একটি বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও পরিবারের সদস্যদের তালাবদ্ধ করার অভিযোগ উঠেছে। এ সময় হামলাকারীরা বাড়ির বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করাসহ দু’টি বৈদ্যতিক মিটারও ভাঙচুর ও পানির লাইন বন্ধ করে দিয়েছে।
রোববার রাতে উপজেলার রঞ্জনিয়া গ্রামের রশিদুল ইসলামের বাড়িতে এই ঘটনাটি ঘটেছে। এ ঘটনায় সোমবার দুপুরে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হলে দুপুর ১টার দিকে রাণীনগর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের তালাবদ্ধ (আবদ্ধ) থেকে মুক্ত করে।
রশিদুলের ভাই নিকিদুল ইসলাম বলেন, তার বড় ভাই রেজাদুল ইসলাম ও ভাবির মধ্যে মনোমানিল্য হবার কারণে দীর্ঘ দেড় বছর ধরে বাবার বাড়িতে অবস্থান করছিলেন ভাবি। চলতি মাসের ৭ তারিখে বাবা আলেফ হোসেন মারা গেলে দাফন-কাফনের জন্য ভাবি এসে বাড়িতে উঠতে চাইলে পরিবারের সদস্যরা বাধা দেয়। এরপর দাফন শেষ হলে আবারো ভাবি বাড়িতে উঠতে চাইলে ভাবির খালাতো ভাই রঞ্জনিয়া গ্রামের সাইফুল ইসলামের সাথে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে মারপিটের ঘটনা ঘটে। এরই জেরধরে ওই দিন দুপুরে আবারো সাইফুল ইসলাম ও রশিদুলের স্বজনদের মধ্যে মারপিটের ঘটনা ঘটে। পরে বিষয়টি নিয়ে মিমাংসার কথা হয়। কিন্তু হঠাৎ করেই রোববার বিকেলে লোকমারফত খবর দেওয়া হয় রাতেই সালিশ বৈঠক হবে। এরপর সন্ধায় আবারো কয়েকজন এসে জানায় রাতেই বৈঠক হবে এবং হাজির থাকতে হবে। এ সময় বৈঠকের দিন পরিবর্তন করার কথা বললেও তারা কোন কথা শোনেনি। রাতেই বৈঠক বসে আমাদেরকে আবারো হাজির হতে বলে। নিকিদুল ইসলাম আরও বলেন, সালিশে হাজির না হওয়ায় ইউনুস আলী, ফিরোজ হোসেন, আতোয়ার হোসেনসহ গ্রামের লোকজন এসে বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় জরুরি সেবা নাম্বার ৯৯৯-এ ফোন করলে পুলিশ এসে রাত ১টার দিকে পরিস্থিতি শান্ত করে চলে যায়। পুলিশ চলে যাবার পর রাত তিনটার দিকে আবারো লোকজন হামলা চালিয়ে বাড়ির বিদ্যুতের সংযোগ খুঁটি থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয় এবং দু’টি মিটার ভাঙচুর করে। এছাড়া
পানির লাইন বন্ধ করে দিয়ে বাড়ির বাহিরে মেইন গেটে তালা দিয়ে আবদ্ধ করে রাখে। এ ঘটনায় ভাই রশিদুল বাদি হয়ে সোমবার দুপুরে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
রশিদুল ইসলাম জানান, রাতে যখন পুলিশ এসেছিল ওই সময়ই আমি বাড়ি থেকে বের হয়ে এক বন্ধুর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলাম। সোমবার দুপুর ১২টার দিকে আমি থানায় লিখিত অভিযোগ করলে থানা পুলিশ দুপুর ১টার দিকে এসে তালাবদ্ধ থেকে আমাদের পরিবারের লোকজনদের মুক্ত করে দিয়ে যান। তারা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচারের দাবি জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গ্রাম্য মাতাব্বর ইউনুস আলী ও আতোয়ার হোসেন বলেন, রশিদুলের ভাইয়ের স্ত্রীকে নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরধরে প্রায় ৩৫ থেকে ৪০জন ভারাটিয়া লোকজন এনে গ্রামের সাইফুলের উপর হামলা ও মারপিট করে গুরুত্বর আহত করে রশিদুলেরা। সাইফুলকে প্রথমে রাণীনগর এবং পরে বগুড়া হাসপাতালে ভর্তি করে দেওয়া হয়। এ ঘটনাটি সমাধানের জন্য রোববার রাতে গ্রামে সালিশ ডাকা হয়েছিল। কিন্তু রশিদুল ও তার পরিবারের লোকজন সালিশে হাজির না হওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে গ্রামের লোকজন খুঁটি থেকে বিদ্যুতের লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেয়। তবে গ্রামের কোন লোকজন তাদের বাড়িতে হামলা বা মিটার ভাঙচুর কিম্বা তালাবদ্ধ করেনি। এগুলো রশিদুলের লোকজন করে আমাদের উপর মিথ্যা দায় চাপাচ্ছে।
এ ব্যাপারে ঘটনার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই জুলফিকার আলী বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে দুপুর ১টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে আবদ্ধ অবস্থা থেকে পরিবারকে মুক্ত করা হয়েছে।
রাণীনগর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) বাবলু পাল বলেন, এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পাবার পর সেখানে পুলিশ পাঠিয়ে তালাবদ্ধ থেকে ওই পরিবারকে মুক্ত করা হয়েছে। বাদি মামলা দায়ের করলে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিষয়: #গ্রাম্য #রাণীনগর #সালিশ #হাজির