

শুক্রবার ● ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
প্রথম পাতা » নাগরিক সংবাদ » কক্সবাজারে কৃষি উদ্যোক্তাদের সমাবেশে নতুন স্বপ্নের দিগন্ত
কক্সবাজারে কৃষি উদ্যোক্তাদের সমাবেশে নতুন স্বপ্নের দিগন্ত
সৈয়দ মিজান::
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫: কক্সবাজার সদর উপজেলার তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা সেঞ্চিমে রাখাইন অনুষ্ঠান শেষে উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বললেন, “কীভাবে একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়া যায়, সেই বিষয়ে কোনো ব্যাংক যে কৃষকদের ডেকে এনে প্রশিক্ষণ দেয়, তা আমি জীবনে প্রথম দেখলাম। এ প্রশিক্ষণ আমাদের জন্য খুবই দরকারি।” চকরিয়ার নার্সারির ব্যবসায়ী মো. আব্দুল্লাহ জানালেন, “ব্যাংক আমাকে কোনো কিছু বন্ধকী ছাড়াই ঋণ দিয়েছে। এতে আমার মূলধন সংকট দূর হবে। ব্যাংক যদি এভাবে আমাদের মতো গরিব কৃষকের পাশে দাঁড়ায় তাহলে দেশ এগিয়ে যাবে।”
সেঞ্চিমে রাখাইন ও আব্দুল্লাহর মতো প্রায় তিনশত কৃষি উদ্যোক্তাই এদিন ভরপুর আশা ও অনুপ্রেরণা নিয়ে ফিরেছেন কক্সবাজারের লং বিচ হোটেল থেকে। ১৮ সেপ্টেম্বর আয়োজিত কৃষি উদ্যোক্তা সমাবেশ ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণটি ছিলো কেবল একটি অনুষ্ঠান নয়; বরং কৃষি উদ্যোক্তাদের নতুন স্বপ্নের দিগন্ত ছোঁয়ার বাস্তব অভিজ্ঞতা।
সকাল থেকেই অনুষ্ঠানস্থল ভরে উঠেছিল প্রাণচাঞ্চল্যে। জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা উদ্যোক্তারা একে অপরের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন, নতুন পরিকল্পনার কথা জানান এবং বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে দিকনির্দেশনা গ্রহণ করেন। কৃষিকে কেন্দ্র করে জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার আলোচনায় মুখর ছিল পুরো আয়োজন।
প্রধান অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, “দেশের সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গড়তে আমাদের কৃষি খাতকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। উদ্যোক্তাদের দক্ষতা, প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষমতা এবং আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে কৃষিকে টেকসই পথে এগিয়ে নিতে হবে।”
বিশেষ অতিথি, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসির চেয়ারম্যান শরীফ জহীর জানান, “আমরা দেশের সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য কৃষির টেকসই উন্নয়ন ও কৃষি উদ্যোক্তাদের স্বাবলম্বী করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের বিশ্বাস, এই ধরনের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি কৃষি উদ্যোক্তাদের আর্থিক সক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে।”
সভাপতির বক্তব্যে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ মামদুদুর রশীদ বলেন, “আমরা শুধু ঋণ দিয়ে দায়িত্ব শেষ করছি না; আমরা চাই উদ্যোক্তারা প্রশিক্ষণ নিয়ে আত্মনির্ভরশীল হোক, সফল হোক, এবং দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখুক।”
দিনব্যাপী এ সমাবেশে কৃষি ও সংশ্লিষ্ট খাতের নানা দিক উঠে আসে। বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংক চট্টগ্রাম অফিসের নির্বাহী পরিচালক মো: মকবুল হোসেন, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন, পুলিশ সুপার মো. সাইফুদ্দীন শাহিন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ ড. বিমল কুমার প্রামানিক, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এ এম খালেকুজ্জামান এবং সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুজয় পাল।
স্বাগত বক্তব্য দেন ভরসার নতুন জানালা প্রকল্পের সমন্বয়ক ও বিটিভির মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠানের উপস্থাপক রেজাউল করিম সিদ্দিক। তিনি বলেন, “এই উদ্যোগ শুধু প্রশিক্ষণ নয়; এটি কৃষি উদ্যোক্তাদের স্বপ্ন পূরণের পথকে আরও সুদৃঢ় করছে।”
অনুষ্ঠানে ইউসিবির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাবিল মোস্তাফিজুর রহমান ও আদনান মাসুদ উদ্যোক্তাদের সঙ্গে অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন। দিনশেষে জেলার ১৩ জন কৃষককে উন্মুক্ত ঋণ প্রদান করা হয়, যা উদ্যোক্তাদের উৎসাহ ও আনন্দ আরও বাড়িয়ে দেয়।
প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী উদ্যোক্তারা জানান, সফল উদ্যোক্তা হতে হলে বাজার বিশ্লেষণ, ব্যবসা পরিকল্পনা, প্রযুক্তি ব্যবহারের কৌশল এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট জ্ঞান থাকা জরুরি। এ ছাড়া ব্যাংকের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করা এবং আর্থিক সহায়তার সুযোগগুলো কাজে লাগানোর বিষয়েও হাতে-কলমে নির্দেশনা পেয়েছেন তারা।
অংশগ্রহণকারীরা অনেকেই বললেন, এর আগে ইউসিবির সহায়তায় তারা আধুনিক বীজ, সার কিংবা কৃষি যন্ত্রপাতি পেয়েছেন। তবে সরাসরি প্রশিক্ষণ পেয়ে এবার তারা আরও আত্মবিশ্বাসী।
উল্লেখ্য, ইউসিবি এগ্রো সিএসআর প্রকল্প ‘ভরসার নতুন জানালা’-র মাধ্যমে সারা দেশের ৬৪ জেলায় প্রায় ১৪ হাজার কৃষককে ‘কৃষি উদ্যোক্তা দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ’ দিয়েছে। এ ছাড়া দেশের ৫০টি মডেল উপজেলার ৩ হাজার কৃষককে নিবিড় সহায়তা প্রদান করেছে। এর মধ্যে রয়েছে— কারিগরি প্রশিক্ষণ, গবাদি প্রাণীর জন্য ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্প, জৈবসার ও উন্নত মানের বীজ বিতরণ, কৃষি যান্ত্রিকীকরণে প্রত্যক্ষ অনুদান, ৬৫ হাজার বৃক্ষ রোপণ, তামাকের পরিবর্তে গম ও ভূট্টা চাষে প্রণোদনা, মাছ চাষে অত্যাধুনিক ডিভাইস বিতরণ, বজ্রপাত নিরোধক ডিভাইস স্থাপন, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য (সোলার ড্রায়ার, হাসকিং মিল, ক্রিম সেপারেটর, আচার তৈরির উপকরণ) সহায়তা, পোস্ট হারভেস্ট ক্ষতি কমানোর জন্য স্টোরেজ সিস্টেম, ল্যান্ডিং স্টেশন স্থাপন, জৈব বালাইনাশক, লবণাক্ত এলাকার ফসল বিন্যাস, চর এলাকায় জলবায়ু-সহিষ্ণু প্রযুক্তি নিয়ে প্রয়োগিক গবেষণা (কৃষক ছাউনি, নেট হাউজে চারা উৎপাদন, মাছ চাষ, হাঁস, মুর্গি, ভেড়া পালন, জৈব সার উৎপাদন ইত্যাদি)। এসব কাজের মাধ্যমে কৃষকদের দক্ষতা, উৎপাদনশীলতা, কারিগরি জ্ঞান এবং ব্যাঙ্কিং সিস্টেমে অংশগ্রহণ বেড়েছে।
বিষয়: #উদ্যোক্তাদের #কক্সবাজার #কৃষি #দিগন্ত #নতুন #সমাবেশ #স্বপ্ন