

শুক্রবার ● ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » সুনামগঞ্জে খাল কেটে ৫ লক্ষ ঘনফুট মাটি চুরি : তদন্তে এডিসি তাপস শীল
সুনামগঞ্জে খাল কেটে ৫ লক্ষ ঘনফুট মাটি চুরি : তদন্তে এডিসি তাপস শীল
আল হেলাল,সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি :
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের ইব্রাহিমপুর গ্রামের শিললুয়ার হাওরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পিআইসি প্রকল্পের আওতায় নির্মিত বেরীবাঁধ বাস্তবায়নের অজুহাতে খাস জায়গার খাল কেটে ৫ লাখ ঘনফুট মাটি চুরির অভিযোগের সরজমিন তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেল ২টায় হাওরে গিয়ে তদন্ত করে এসেছেন সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) তাপস শীল। এসময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার (ভুমি) কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মচারী ও সুরমা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত সদস্য সদস্যা ও সাংবাদিকসহ এলাকার গণ্যমান্য লোকেরা উপস্থিত ছিলেন।
জানা যায়,একাধারে ৩ বছর পিআইসি গঠন ও বাস্তবায়ন দেখিয়ে অপ্রয়োজনীয় পারিবারিক পিআইসি গঠনের মাধ্যমে একে অন্যের সহায়তায় দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে সরকার ও রাষ্ট্রের টাকা অন্যায়ভাবে অপচয় ও বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাতে জড়িত হওয়ার ঘটনায় ইব্রাহিমপুর নিবাসী মৃত মোশাররফ হোসেন তালুকদার ময়না মিয়ার ২ পুত্র যথাক্রমে আমির হোসেন রেজা ও মোঃ আফজাল হোসেন ছানা মিয়া এবং আফজাল হোসেন ছানা মিয়ার পুত্র তাজুয়ার আফজল (শিহাব),একই গ্রামের মৃত তৈয়বুর রহমানের পুত্র শফিকুর রহমান ও মইনপুর নিবাসী মৃত মোঃ হাবিবুর রহমানের পুত্র মোঃ সিফু মিয়ার বিরুদ্ধে ঐ অভিযোগ দায়ের করা হয়। পরিকল্পিত এই দুর্নীতির ঘটনায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মামুন হাওলাদার,সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার সালমা পারভীন,সাবেক উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আশরাফুল সিদ্দিকী,বর্তমান উপ-সহকারী প্রকৌশলী আতিকুর রহমান জড়িত রয়েছেন বলে জানিয়েছেন সুরমা ইউনিয়নের ইব্রাহিমপুর গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য মোঃ এমরান হোসেন ও সাবেক ইউপি সদস্যা স্বাধীনা আক্তার।
মইনপুর ও ইব্রাহিমপুর গ্রামবাসী বলেন,কথিত পিআইসির জায়গায় ২০২২ সালের আগে কখনও কোন বাঁধ নির্মাণ করা হয়নি। বরং বাঁধ নির্মাণের নামে সরকারি আরএস ১নং খাস খতিয়ানের ২০৯ নং দাগের খাল রকম ভূমি ও ঐ ভূমির জায়গার বাঁশ ও বেতবুরুন্ডীর মাটি কেটে গর্ত ও খাল খননক্রমে ঐসব মাটি বিক্রয় করে মাটি বিক্রির টাকায় অন্যায়ভাবে কোটি কোটি টাকা পকেটস্থ করেছে স্থানীয় ঐ সিন্ডিকেট। পাউবোর টাকা আদায় করাসহ অপ্রয়োজনীয় পিআইসি বাতিলক্রমে উক্ত সিন্ডিকেট চক্রের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানিয়ে গত ১৫/০২/২০২২ইং কাবিটা স্কীম প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন সংক্রান্ত জেলা কমিটির সভাপতি ও সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক এবং সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে সুনির্দিষ্টভাবে সাবেক ইউপি সদস্য এমরান হোসেন পৃথক ২টি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। একই অভিযোগ পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপমন্ত্রী এ.কে.এম এনামুল হক শামীমের কাছে সাংবাদিকদের মাধ্যমে সরাসরি দাখিল করেও কোন প্রতিকার পাননি অভিযোগকারীরা। সুনামগঞ্জের সাংবাদিকগন ইউএনও সালমা পারভীনকে উক্ত অপ্রয়োজনীয় পিআইসি বাতিলের জন্য প্রকাশ্য সভায় অনুরোধ জানালেও কার্যত কোন পদক্ষেপ গ্রহন না করে একে অপরের সহায়তায় রাষ্ট্রের টাকা অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করে চক্রটি। এমনকি দু বছরের ২টি পিআইসিতে সংরক্ষিত ১,২ ও ৩নং ওয়ার্ডের নির্বাচিত সদস্যা মোছা: তানজিনা বেগম সদস্য হওয়ার পরও সিন্ডিকেট চক্রটি কথিত পিআইসির কাজে তাকে সম্পৃক্ত করেনি এবং কাজের কোন হিসাব পর্যন্ত দাখিল করেনি। মঙ্গলবার তদন্তস্থল ইব্রাহিমপুর হোসেনপাড়া গ্রামের একটি মুদি দোকানে অবস্থান করে নির্বাচিত চেয়ারম্যান আমির হোসেন রেজা তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,পিআইসির কাজে ও মাটি চুরি বা বিক্রিতে তিনি আদৌ জড়িত নন। এমনকি যে জায়গা হতে মাটি কাটা হয়েছে এগুলো সরকারের খাস জায়গা নয় বরং তাদের বাপদাদার তালুকি সম্পত্তি।
অভিযোগকারী ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোঃ খুরশিদ মিয়া বলেন, বরাখাস্তকৃত চেয়ারম্যানকে প্রধান আসামী করে সরকারী খাস খতিয়ানের জায়গার মাটি রাতের আধারে চুরি করে অন্যত্রে বিক্রি করত: সরকারের সম্পত্তির অপূরনীয় ক্ষতিসাধনের ঘটনায় সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা ইউনিয়ন সহকারী ভুমি কর্মকর্তা মোঃ নুর আলী বাদী হয়ে জিআর মামলা নং ৪৭/২০২৪ইং (সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার মামলা নং ২০ তাং ১৫/০২/২০২৪ইং) দায়ের করেছেন। সদর কোর্টের উক্ত মামলায় সদর মডেল থানার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই (নিঃ) রিয়াজ উদ্দিন কর্তৃক দাখিলকৃত অভিযোগপত্র নং ৮৭ তাং ৩১/০৩/২০২৪ইং ধারা ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন ২০২৩ইং এর ১২ ও ১৩ ধারা,বিজ্ঞ আদালত গ্রহন করে ঐ মামলাটিকে বিচারের জন্য বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালতে প্রেরণ করেন। উক্ত মামলায় সরকারী খাস খতিয়ানের জায়গা হতে ৫ লক্ষ ঘনফুট মাটি কেটে নেয়ার ঘটনায় ঐ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে গত ২২/০৮/২০২৪ইং জেলা প্রশাসক বরাবরে আমার দায়েরকৃত সুনির্দিষ্ট অভিযোগের তদন্ত করে উপজেলা উপ-সহকারী প্রকৌশলী সুব্রত দাস চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। রাষ্ট্রের মূল্যবান সম্পত্তির ৫ লাখ ঘনফুট মাটির মূল্য ১ কোটি টাকার দ্বিগুন মূল্য ২ কোটি টাকা আইন অনুযায়ী ক্ষতিপূরন আদায়ের জন্য আমি সরকারের কাছে জোর দাবী জানিয়েছি।
বিষয়: #এডিসি #খাল #তদন্ত #তাপস #শীল #সুনামগঞ্জ