

বৃহস্পতিবার ● ২১ আগস্ট ২০২৫
প্রথম পাতা » বিশেষ » আনন্দ মূখর পরিবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই ইন-দ্যা ইউকের বাৎসরিক পিকনিক
আনন্দ মূখর পরিবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই ইন-দ্যা ইউকের বাৎসরিক পিকনিক
লন্ডন:
আনন্দ সৌহার্দের ডালি সাজিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই ইন-দ্যা ইউকের উদ্যোগে যুক্তরাজ্যের ওয়েস্ট সাসেক্স উপকূলের পর্যটক কেন্দ্র ভগনর রেজিস সমুদ্র সৈকতে অনুষ্ঠিত হয় বাৎসরিক পিকনিক। অষ্টাদশ শতাব্দীতে পর্যটক শহর হিসেবে গড়ে উঠে এই সৈকত। সদস্য, পরিবার-পরিজন, উপদেষ্টা এবং সিনিয়র সদস্যদের অংশগ্রহণে ভগনর রেজিসের পিকনিক পরিণত হয় এক আনন্দঘন ও অবিস্মরণীয় দিনে। ১৬ই আগস্ট শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের কলরবে মুখরিত হয়ে উঠেছিল লন্ডনের রেড ব্রিজ স্টেশনের কার পার্ক। সকাল ৯ টার মধ্যে লন্ডনের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই ইন দ্য ইউকের সদস্যরা সমবেত হয়েছিলেন সামারট্রিপে বা বার্ষিক পিকনিকে যোগদানের জন্য। অনুষ্ঠানকে প্রাণবন্ত ও সফল করার জন্য একটি ‘পিকনিক টিম’ তৈরি করা হয়, যে টিমের সার্বিক তত্বাবধানে পিকনিক সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন হয়/ এই টিমের নেতৃত্ব দেন সংগঠনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন। তিনি ও তার দল এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ব্যারিষ্টার এমকিউ হাসান অক্লান্ত পরিশ্রম করে আয়োজনকে সাফল্যমন্ডিত করেন। দায়িত্ব বণ্টনের জন্য ছয়টি “কার্যকরী গ্রুপ” গঠন করা হয়, যা সমন্বিতভাবে কাজ করতে সহায়তা করে এবং সকল অংশগ্রহণকারীকে সঠিকভাবে যত্ন নিতে নিশ্চিত করে।
সংগঠনের তিনজন সম্মানিত উপদেষ্টার উপস্থিতি এই পিকনিকের মর্যাদা বাড়িয়ে তোলে/ তারা হলেন এস.বি. ফারুক -কমিউনিটির সম্মানিত ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু মুসা হাসান, প্রখ্যাত আইনজীবি ব্যারিস্টার নাজির উদ্দিন চৌধুরী বাবর। সংগঠনের কয়েকজন সিনিয়র মেম্বারও এই পিকনিকে উপস্থিত ছিলেন তাঁরা হলেন প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সভাপতি মারুফ চৌধুরী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাকিব ও ইসমাইল হোসেন, সহ-সভাপতি নিলুফা ইয়াসমীন হাসান ও সিরাজুল বাসিত কামরান চৌধুরী। কোষাধ্যক্ষ সৈয়দ জাফর, অফিস সেক্রেটারি মিজানুর রহমান, ব্যারিষ্টার কামরুল হাসান, সাংস্কৃতিক সম্পাদক রিপা রাকিব, এডুকেশন সেক্রেটারি এরিনা সিদ্দিকী সুপ্রভা, মাতিন চৌধুরী, ফখরুল ইসলাম, আব্দুল কাদির, ব্যারিস্টার নাসের আলম, বন্যা আহমেদ, ফারজানা সহ আরও অনেকে। অনেকেই পরিবার পরিজন নিয়ে এসেছিলেন। রেডব্রিজ টিউব স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু প্রাক্কালে অংশগ্রহণকারীরা নাম নিবন্ধন করেন। ক্রাউড কন্ট্রোল টিম লিডার সৈয়দ জাফর যাত্রার শুরুতে উপস্থিতি নিশ্চিত করেন এবং সেফটি পরীক্ষা সম্পন্ন করেন। কোচে আরোহন করার পূর্বে একটি গ্রুপ ছবি তোলার ব্যবস্থা করা হয়। সেখানে যুক্ত হন সংগঠনের সভাপতি প্রশান্ত পুরকায়স্থ বিইএম, প্রথম জয়েন্ট সেক্রেটারি ইকবাল আহম্মেদ এবং সিনিয়র মেম্বার মাহফুজা তালুকদার - যারা ব্যাক্তিগত কারনে পিকনিকে অংশগ্রহণ করতে পারেননি । সকাল ৯টায় পিকআপ পয়েন্ট ছিল রেডব্রিজ ষ্টেশন। সেখানে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে কোচ প্রস্তুত থাকবে বলে পিকনিক কমিটির পক্ষ থেকে সকলকে আগেই জানিয়ে দেয়া হয়েছিল। পিকনিকের আয়োজনকে নিখুঁত করার তাড়ণায় আগের থেকেই কমিটির পক্ষ থেকে পিকনিকে অংশগ্রহণকারীদের সকলকে প্রয়োজনীয় আনুষাংগিক জিনিষপত্র যেমন সান লোশন, বসার জন্য চেয়ার, ছাতা, সানগ্লাস, সাঁতারের পোষাক আনার পরামর্শ দিয়েছিল। সকাল ৯টার আগেই প্রায় সকলে নির্দিষ্ট স্থানে এসে হাজির হয়েছিলেন।
লাক্সারি কোচ সকাল ১০টার দিকে যাত্রা শুরু করে। যাত্রার শুরুতে পিকনিক টীম লিডার ইসমাইল হোসেন শুভেচ্ছা জানিয়ে সূচনা বক্তব্য রাখেন। তার পরে সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ কামরুল হাসান (এমকিউ হাসান) স্বাগত বক্তব্য রাখেন । তিনি নির্বাহী কমিটির পক্ষ থেকে সবাইকে শুভেচ্ছা এবং কৃতজ্ঞতা জানান। এ ছাড়াও সংগঠনের উপদেষ্টা এস.বি. ফারুক , সাংবাদিক আবু মুসা হাসান , ব্যারিস্টার নাজির উদ্দিন চৌধুরী বাবর ও সাবেক প্রেসিডেন্ট মারুফ চৌধুরী এবং সাবেক সেক্রেটারি আব্দুল রাকিব, সহ সভাপতি নিলুফা ইয়াসমীন হাসান অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য রাখেন। ব্রেকফাস্ট অ্যান্ড স্ন্যাকস টিমের লিডার এমকিউ হাসানের নেতৃত্বে সকালের নাস্তা পরিবেশন করা হয়। তাকে সহযোগিতা করেন নিলুফা ইয়াসমীন হাসান, সৈয়দ জাফর এবং ব্যারিষ্টার মোহাম্মদ কামরুল হাসান । যাত্রাপথে গান, কৌতুক ও আবৃত্তি পরিবেশন করেন পিকনিকে অংশগ্রহণকারীরা/ আর অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন এরিনা সিদ্দিকী সুপ্রভা, রিপা রাকিব ও মিজানূর রহমান। সংগীতের আনুষাঙ্গিক ব্যবস্থা করেন মন্সুর পিয়াস, তিনি সাউন্ড বক্স এবং মাইক্রোফোনের আয়োজন করেন। যিনি সবার কাছে সংগীত মেলোডি লেজেন্ড এ.আর. রহমান নামে পরিচিত।কোচভর্তি শিক্ষার্থীদের নিয়ে চালক ছুটেছিলেন আকর্ষণীয় গন্তব্যের দিকে। প্রায় দুই ঘণ্টা একনাগাড়ে ড্রাইভ করে পৌঁছলেন বগনার রেজিস সমুদ্র সৈকতে। ভগনর রেজিস সি বিচে পৌঁছানোর পর এরিনা সিদ্দিকীর নেতৃত্বে একটিভিটি টিম আয়োজন করে নানা প্রতিযোগিতা/ যার মধ্যে মহিলাদের ব্লাইন্ডফোল্ড টিপ পরানো, সেই প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান লাভ করেন শবনম, দ্বিতীয় স্হান লাভ করেন মুন্নি এবং তৃতীয় স্হান লাভ করেন রিপা রাকিব । পুরুষের বিন ব্যাগ রেসে প্রথম স্হান লাভ করেন নিয়াজী, দ্বিতীয় স্হান লাভ করেন সৈয়দ জাফর এবং তৃতীয় স্থান লাভ করেন মতিন চৌধুরী। প্রতিযোগীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন সংগঠনের উপদেষ্টা এস বি ফারুক, উপদেষ্টা আবু মুসা হাসান, উপদেষ্টা ব্যারিষ্টার নাজির উদ্দিন চৌধুরী, আব্দুল রাকিব, ইসমাইল হোসেন এবং এমকিউ হাসান।
আকর্ষণীয় পুরুস্কারে র্যাফেল ড্র আয়োজন করা হয়, যেটি পরিচালনা করেন সংগঠনের অফিস সেক্রেটারী মিজানূর রহমান। খাবারের আয়োজন ছিল অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ। সকলে উপভোগ করেন আনলিমিটেড নাস্তা ও স্ন্যাকস, এরপর ছিল সুস্বাদু দুপুরের গরম খাবার এবং কেক কাটা অনুষ্ঠান। পরিবহন ও খাবারের সমন্বয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন সাবেক কোষাধ্যক্ষ একাউনটেন্ট সৈয়দ হামিদুল হক। অনুষ্ঠানটি সফল করতে সহযোগিতা করেছেন — ব্যারিস্টার এমকিউ হাসান, এস.বি. ফারুক, আবু মুসা হাসান, ইসমাইল হোসেন, ইকবাল আহমেদ, নিলুফা ইয়াসমীন হাসান, সৈয়দ জাফর, মিজানুর রহমান, মাহফুজা তালুকদার, রিপা রাকিব ও এরিনা সিদ্দিকী সূপ্রভা। অনেক সদস্য সমুদ্র সৈকতে সাঁতার কেটে ও ছবি তুলে স্মৃতি ধরে রাখেন। তাদের মধ্যে ছিলেন— মারুফ চৌধুরী, মতিন চৌধুরী, এমকিউ হাসান, সিরাজুল বাসিত কামরান চৌধুরী , সৈয়দ হামিদুল হক, ফয়জুল হক রিপন, সৈয়দ জাফর, মিজানূর রহমান, কাদির ও জাকির হোসেন। ফেরার যাত্রার পূর্বে শুরু হলো দু‘দলের গানের প্রতিযোগিতা ‘আনতাকসারি‘। পরিচালনায় ছিলেন আবু মুসা হাসান/ দু‘দলই নিজেদেরকে জয়ী বলে ঘোষণা দিয়েছেন। বিকেল সাড়ে পাঁচটায় কোচ ভগনর রেজিস সি -বীচ থেকে বিদায় নেয়, সমাপ্ত হয় এক আনন্দঘন দিন।
সমুদ্রের নোনাজলে গা ভিজিয়ে সৈকতে আড্ডা দিয়ে কেউ আর বাড়ী ফেরার তাগিদ অনুভব করছিলেননা। তারপরও নীল জল পেছনে ফেলে লন্ডন ফেরার যাত্রা শুরু হলো। ফেরার পথে ক্লান্ত শরীর নিয়ে অনেকে ভেবেছিলেন কোচে ঘুমাবেন, কিন্তু সেই সুযোগ হয়নি। কোচে আবার শুরু হলো সাংস্কৃতিক পর্ব। তবে, এই পর্বে প্রশংসার বাণীই উচ্চারিত হয়েছে বেশী। সকলে এক বাক্যে পিকনিকের সার্বিক আয়োজনে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। ২০২৫ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই ইনদ্যা ইউকের পিকনিক কেবল একটি সামাজিক অনুষ্ঠান নয়, বরং এটি ছিল সম্প্রীতি, বন্ধুত্ব ও স্মৃতির উৎসব। আয়োজক, স্বেচ্ছাসেবক ও সক্রিয় অংশগ্রহণকারীদের কল্যাণে অনুষ্ঠানটি হয়েছিল এক বিরাট সফলতা। কমিটির অক্লান্ত পরিশ্রমে আনন্দঘন পরিবেশে চমৎকার একটি উপভোগ্য পিকনিক অনুষ্ঠিত হলো।
বিষয়: #অ্যালামনাই #আনন্দ #ঢাকা #পিকনিক #বাৎসরিক #বিশ্ববিদ্যালয়