

রবিবার ● ২২ জুন ২০২৫
প্রথম পাতা » আমার গ্রাম » তিস্তা নদীর কোল ঘেঁষে ডাংরারহাট গ্রাম
তিস্তা নদীর কোল ঘেঁষে ডাংরারহাট গ্রাম
বিপুল চন্দ্র রায়
তিস্তা নদীর কোল ঘেঁষে এক ছবির মতো গ্রাম, ডাংরারহাট গ্রাম। রংপুর বিভাগের কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট থানার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নে ডাংররাহাট গ্রামখানা। মাটির মেঠো পথ, গ্রামখানা সবুজে সমাহার, একদিকে তিস্তা নদী আর দিগন্ত ছোঁয়া আকাশ, এইসব মিলিয়েই ডাংরারহাট যেন এক শান্ত নীড়।
এখানকার মানুষের জীবনযাত্রা সরল, চরের বালু মাটি আর নদীর সঙ্গে বাঁধা জীবনের গতিপথ। সকাল হলেই পুরুষেরা লাঙল কাঁধে ছুটে যায় ফসলের মাঠে, আর নারীরা ব্যস্ত হয়ে পড়ে ঘরের কাজে। খোলা আকাশের নিচে বসে দুপুরে বটতলায় গল্পগুজব চলে, বিকেলে শিশুরা খেলে ধুলোমাটি মেখে ডাংরারহাট স্কুল মাঠে । তাঁরা খেলে কানামাছি, হাডুডু ,ফুটবল,ক্রিকেট ইত্যাদি। সন্ধ্যা নামলে মন্দিরের ঘণ্টার ধ্বনি আর মসজিদের আজানের সুর মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়, জানান দেয় দিনের সমাপ্তির।
কিন্তু এই শান্তির বুকেই লুকিয়ে আছে এক গভীর দুঃখ বেদনার প্রতিচ্ছবি, যা তিস্তা নদীর উপহার। তিস্তা ডাংরারহাটের জীবনরেখা, আবার মাঝে মাঝে যেন মূর্তমান বিভীষিকা। বর্ষাকালে তিস্তা যখন ফুলেফেঁপে ওঠে, তখন নদীর কূল ছাপিয়ে জল ঢুকে পড়ে লোকালয়ে, গ্রাস করে ফসলের মাঠ, ভাসিয়ে দেয় ঘরবাড়ি।
তিস্তার ভাঙনে সর্বস্বান্ত হয়েছে কত পরিবার। প্রতিবছর ভাঙ্গে তিস্তা নদী। বাড়িঘর নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যায় চোখের সামনে অথচ কিছুই করার নেই। চোখেমুখে এক বুক চাপা কষ্ট আর অনিশ্চয়তার ছাপ। এমন ঘটনা ডাংরারহাটে নতুন নয়। প্রতি বছরই তিস্তার ভাঙন নতুন করে দুঃখের গল্প লেখে এখানকার মানুষের জীবনে।
নদীর পাড়ের মানুষগুলো নিরুপায়। তারা জানে, তিস্তা তাদের জীবন, আবার তিস্তাই তাদের কষ্টের কারণ। তবুও তারা নদীকে ভালোবাসে, নদীর উপরই তাদের জীবন-জীবিকা নির্ভরশীল। ভাঙা ঘর, হারানো জমি, সবকিছু ভুলে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখে তারা। কারণ ডাংরারহাট তাদের গ্রাম, তাদের শিকড়। এই গ্রামের মাটি আর জল তাদের রক্তে মিশে আছে, আর তিস্তার অবিরাম বয়ে চলা তাদের জীবনেরই প্রতিচ্ছবি।
বিষয়: #কোল #গ্রাম #ঘেঁষে #ডাংরারহাট #তিস্তা #নদী