

বৃহস্পতিবার ● ১২ জুন ২০২৫
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » ছাতকে প্রবাসীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ মার্কেট দখলে বিএনপি-আ’লীগ একজোট
ছাতকে প্রবাসীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ মার্কেট দখলে বিএনপি-আ’লীগ একজোট
ছাতক সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি::
বিএনপি ও আওয়ামী লীগ নেতারা মিলে জবরদখল করে নিলেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী এক পরিবারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও পুরো মার্কেট। মারপিট করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দেয়া হচ্ছে অন্যতম স্বত্বাধিকারী যুক্তরাজ্য প্রবাসী শাহজাহান হোসেনকে।
গত ২৬ এপ্রিল রাতে উপজেলার জাউয়াবাজারে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রতিষ্ঠানের অন্যতম স্বত্বাধিকারী যুক্তরাজ্য প্রবাসী জাহাঙ্গীর হোসেন লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএসও)
একজন কর্মকর্তা। গত ৯ জুন লন্ডন সময় দুপুরে হাই কমিশনার বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগ থেকে জানা গেছে, ছাতক উপজেলার জাউয়া গ্রামের বাসিন্দা মৃত ওয়াশিদ আলীর পরিবার দীর্ঘ প্রায় ৪৫ বছর যাবৎ পুরো পরিবার নিয়ে লন্ডনে বসবাস করেন। লন্ডনে তাদের পরিবারের প্রচুর স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে। পাশাপাশি পৈতৃক এলাকা স্থানীয়জাউয়াবাজারেও রয়েছে ‘হাজী ওয়াশিদ আলী কমপ্লেক্স’ নামে একটি মার্কেট। শুধু মার্কেট নয় এই মার্কেটের মধ্যেই রয়েছে বড় পরিসরে তাদের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
তারা প্রবাসে থাকায় মার্কেটের ভাড়া আদায় এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দেখা শোনার জন্য স্থানীয় কয়েকজন পরিচিত লোককে কেয়ারটেকার নিয়োগ দেয়া হয়। এতোদিন নিয়োজিত কর্মচারিরা ঠিকমত দায়িত্ব পালন করলেও গত কিছুদিন থেকে তারা নিয়মমাফিক আদায়কৃত অর্থ বুঝিয়ে দিচ্ছিল না। যোগাযোগের চেষ্টা করলেও নানা অজুহাতে ওরা এড়িয়ে যেতো। বিষয়টি নিয়ে জাহাঙ্গীর হোসেন সন্দিহান হয়ে গত ১৩ মার্চ তার ছোট ভাই শাহজাহান হোসেনকে দেশে পাঠান।
শাহজাহান হোসেন দেশে এসে নিয়োজিত কর্মচারিদের কাছে মার্কেট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের হিসাব চাইলে ওরা দিমু-দিচ্ছি করে অহেতুক কালক্ষেপন করতে থাকে। তাদের আচরণে শাহজাহান হোসেন ত্যাক্ত-বিরক্ত হয়ে নিয়োজিত কর্মচারিদের অপসারণ করে আপাতত তার নিজ দায়িত্বে মার্কেট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে জাউয়া গ্রামের মৃত আরশাদ আলীর ছেলে, জাউয়াবাজার ইউনিয়ন আওয়ামী ও যুবলীগের সাবেক নেতা আলমগীর হোসেন (৫৩)- যোগসাজশে একই গ্রামের মৃত জুবেদ আলীর ছেলে, জাউয়াবাজার ইউনিয়ন বিএনপি‘র সাবেক সভাপতি, ছাতক উপজেলা বিএনপি’র বর্তমান আহবায়ক কমিটির সদস্য এনাম উদ্দিন (৫৫) ও স্থানীয় খিদ্রাকাপন গ্রামের মৃত আরজু মিয়া তালুকদারের ছেলে, জাউয়াবাজার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের একাংশের সভাপতি রেজা মিয়া তালুকদার (৫৯)-এর যৌথ নেতৃত্বে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে সরিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা করা হয়। পরিস্থিতি প্রতিকূল দেখে শাহজাহান হোসেন জাউয়াবাজার ব্যবসা সমিতির নেতৃবৃন্দের কাছে বিচারপ্রার্থী হয়েছেন।
কিন্তু রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী বিধায় এনাম উদ্দিন ও রেজা মিয়া তালুকদার সালিশ প্রক্রিয়া উপেক্ষা করতে থাকে। পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে ব্যবসায়ী কমিটির নেতৃবৃন্দকে অবগত করে শাহজাহান হোসেন গত ১৫ এপ্রিল দুপুরে তার নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তালাবদ্ধ করে দেন।
এতে ভীষণ ক্ষিপ্ত হয়ে উপরোক্ত দুই দলের নেতারা গত ২৬ এপ্রিল রাতে নিকটবর্তী শান্তিগঞ্জ উপজেলার বেতকোনা গ্রামের সাহাব উদ্দিনের ছেলে আবু ইসফাক (৩০), একই উপজেলার খাড়ারাই গ্রামের মৃত আব্দুস শহীদের ছেলে হেলাল উদ্দিন (৪০), ছাতক উপজেলার চেচান গ্রামের জহুর আলীর ছেলে জুবেল আহমদ (২৭) সহ অজ্ঞাতনামা আরো ৭/৮ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসীকে সাথে নিয়ে মার্কেটে এসে গ্রাইন্ডার মেশিন দিয়ে দোকান কোটার সাটারিং-এর দরজা কেটে জোরপুর্বক দখল করে নেয়। এ খবর পেয়ে প্রবাসী শাহজাহান হোসেন দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে দখলবাজদের অন্যায়-অপকর্মে বাঁধা প্রদান করলে সন্ত্রাসীরা হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে তাঁকে আহত করে।
হামলাকারীদের মারমূখী আচরণে ভীত হয়ে স্থানীয় লোকজন নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখেন। কিছুক্ষণ পরে জাহাঙ্গীর হোসেনের আত্মীয়-স্বজন ও বাজার ব্যবসায়ী কমিটির নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহত শাহজাহান হোসেনকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হামলাকালে সন্ত্রাসীরা জাহাঙ্গীর হোসেনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ভেতরে ও বাইরে থাকা সিসি টিভি ক্যামেরা, কম্পিউটার হার্ডডিস্ক, মনিটর, ডেকোরেশন সামগ্রী ভাংচুর করে লক্ষাধিক টাকার ক্ষতিসাধন করে। এ সময় হামলাকারিরা গালাগালি করে হুংকার দিয়ে বলে, ‘কেউ যদি তাদের কোন কর্মকান্ডের প্রতিবাদ বা বাঁধা সৃষ্টির চেষ্টা করে তবে শাহজাহান হোসেন ও তাদের আত্মীয়দের সাথে ওদেরও তারা খুন করবে। বর্তমান সময়ে দেশে তাদের কেউ কিছু করতে পারবে না। পুলিশও তাদের বিরুদ্ধে কোন এ্যাকশনে যাবে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
প্রতিকূল পরিস্থিতি এবং ছোট ভাই শাহজাহান হোসেনের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর শংকা দেখা দেয়। পরে তাঁকে লন্ডনে ফিরিয়ে নেয়া হয়। এ ঘটনার প্রবাসী জাহাঙ্গীর হোসেনের মালিকানাধীন মার্কেট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এখনও অবৈধ দখলদারদের কাছে জিম্মি থাকায় প্রবাসী পরিবারটি চরম হতাশ ও বিক্ষুব্দ। নিরীহ প্রবাসীর ওপর অন্যায় হামলার ঘটনার সুষ্ঠু বিচার এবং জবরদখলে থাকা সম্পত্তি উদ্ধারে দেশের আইন-শৃংখলারক্ষাকারী বাহিনী বিশেষ করে সেনাবাহিনীকে বলিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সুপারিশ করতে হাই কমিশনারের নিকট অনুরোধ জানানো হয়। অভিযোগে আরো বলা হয়, রাজনৈতিক মতাদর্শে উপরোক্ত ব্যক্তিরা ভিন্ন ভিন্ন আদর্শের মতাবলম্বী হলেও দুর্নীতি ও অপকর্মে ওরা এক ও অভিন্ন। যে কারণে কোন কোন অভিযুক্ত সদ্য ক্ষমতাচ্যূত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকলেও অভিযুক্তদের কেউ কেউ বিএনপি রাজনীতির মতাদর্শে বিশ্বাসী ও বড় মাপের নেতাও বটে। তবে জবরদখল বা অন্যায় স্বার্থ হাসিলের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক মতভিন্নতা তাদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করতে পারেনি। উভয়দলের স্থানীয় দূর্নীতিবাজ নেতারা মিলে মিশে চাঁদাবাজি, জবরদখল আর সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে অংশ নিয়ে ভাগ-বাটোয়ারার মতো অপকর্মে লিপ্ত রয়েছে ।এব্যাপারে অভিযোগের বিষয়ে জানতে বিএনপি নেতা এনাম উদ্দিনের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন নম্বরে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেন নি।
উল্লেখ্য, বিএনপি নেতা এনাম উদ্দিনের বিরুদ্ধে এভাবে আরো কিছু দূর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো-২)’র তত্বাবধানে কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা)’র অনুকূলে উপজেলার চাউলির হাওরের বিনন্দপুর, কোনাপাড়া, বড়বিল এলাকায় প্রায় পৌণে ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ৯৭১ মিটার ডুবন্ত বাঁধ সংস্কার ও মেরামত প্রকল্পে কাজ শুরু হয়। এ কমিটিতে সদস্য সচিবের দায়িত্বে রয়েছেন এনাম উদ্দিনের ছেলে এহসানুল হক। আর সদস্য হিসেবে বাকি ৫ জনের মধ্যে যারা রয়েছেন, এনাম উদ্দিনের তৃতীয় ছেলে রেদোয়ান। অনুরূপ এনাম উদ্দিন সরকারি একটি ডিপ টিউবওয়েল বেআইনীভাবে বড় ছেলে এহসানুল হকের নামে নিজের বাড়ির আঙ্গিনায় স্থাপন করে। এভাবেই চলছে দলীয় ভাগ-বাটোয়ারার রাজনীতি।
বিষয়: #ছাতক #প্রতিষ্ঠানসহ #প্রবাসী #ব্যবসা #মার্কেট দখলে বিএনপি-আ’লীগ একজোট