

বৃহস্পতিবার ● ৮ মে ২০২৫
প্রথম পাতা » ধর্ম » শত্রুর সামনে নবিজির (সা.) দৃঢ়তা
শত্রুর সামনে নবিজির (সা.) দৃঢ়তা
বজ্রকণ্ঠ ডেস্ক::
খন্দকের যুদ্ধে আরবের অন্যতম বড় গোত্র বনু গাতফান মুসলমানদের বিরুদ্ধে কোরাইশের মুশরিকদের সহযোগী হয়েছিল। খন্দকের যুদ্ধের পর পঞ্চম হিজরিতে বা মতান্তরে সপ্তম হিজরিতে নবিজি (সা.) জানতে পারেন বনু গাতফান মুসলমানদের বিরুদ্ধে সমবেত হচ্ছে। তখন নবিজি (সা.) তাদেরকে মোকাবেলার উদ্দেশ্যে ৪০০ বা ৭০০ সৈন্যের একটি বাহিনী নিয়ে বের হন। এই অভিযানটি ইতিহাসে গাজওয়ায়ে যাতুর রিকা বা যাতুর রিকার অভিযান/যুদ্ধ নামে প্রসিদ্ধ।
‘যাতুর রিকা’ অর্থ তালিযুক্ত বা দাগযুক্ত। এই অভিযানের নাম কেন ‘যাতুর রিকার অভিযান’ তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতপার্থক্য আছে। অনেক ঐতিহাসিক বলেন, এই অভিযানে যাওয়ার সময় পাথর ও কাঁটার ঘায়ে সাহাবায়ে কেরামের পা রক্তাক্ত হয়ে গিয়েছিল। রক্তপাত বন্ধ করা ও হাঁটার সুবিধার জন্য তারা তাদের পা কাপড়ের টুকরো দিয়ে বেঁধে নিয়েছিলেন। এ কারণেই এই অভিযানের নাম হয়েছে ‘যাতুর রিকার অভিযান’।
অন্য একদল ঐতিহাসিক বলেন, এই অভিযানে নবিজি (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম গিয়েছিলেন যাতুর রিকা নামক একটি এলাকায়। ওই এলাকার পাহাড়গুলোতে কালো, লাল এবং সাদা রঙের মিশ্রণ ছিল। দেখলে মনে হতো বিভিন্ন রঙ পাহাড়ের ওপর দাগের মতো ছড়িয়ে আছে। এ কারণে ওই এলাকার নাম হয়েছে ‘যাতুর রিকা’ আর এলাকার নাম অনুযায়ী অভিযানের নামও হয়েছে ‘যাতুর রিকার অভিযান’।
যাতুর রিকার অভিযানে বড় কোনো লড়াই হয়নি। নবিজি (সা.) ও সাহাবিদের আগমণের খবর পেয়ে বনু গাতাফানের যোদ্ধারা পালিয়ে গিয়েছিল। পরে তাদের সাথে মুসলমানদের চুক্তি হয়।
যাতুর রিকার অভিযান থেকে ফেরার পথে নবিজির (সা.) ওপর আক্রমণের চেষ্টা হয়েছিল। আল্লাহ তাআলা নবিজিকে (সা.) রক্ষা করেছেন। বিভিন্ন হাদিসে এ ঘটনাটি বর্ণিত হয়েছে। এ ব্যাপারের কোরআনের আয়াতও নাজিল হয়েছে।
ঘটনাটি হলো, যাতুর রিকার অভিযান থেকে ফেরার পথে নবিজি (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম এক জায়গায় যাত্রাবিরতি করেন। সাহাবায়ে কেরাম বিভিন্ন গাছের ছায়ায় শুয়ে পড়েন। নবিজিও (সা.) নিজের তলোয়ারটি একটি গাছের ডালে ঝুলিয়ে গাছটির নিচে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। নবিজিকে (সা.) একা ও অসতর্ক দেখতে পেয়ে এক বেদুইন নবিজির (সা.) দিকে এগিয়ে আসে। গাছের ডালে ঝুলিয়ে রাখা তলোয়ারটি সে নিয়ে নেয়। নবিজি (সা.) জেগে উঠলে বেদুইন তাকে বলে, বলো মুহাম্মদ! তোমাকে এখন কে রক্ষা করবে আমার হাত থেকে? নবিজি (সা.) বেদুইনের হাতে উদ্যত তরবারি দেখেও বিচলিত হলেন না। তিনি দৃঢ় ও নির্ভীক কণ্ঠে বললেন, আল্লাহই রক্ষা করবেন।
নবিজির (সা.) এই দৃঢ়তা দেখে বেদুইনের মনে ভয় ঢুকে যায়। তার হাত কেঁপে ওঠে এবং তলোয়ারটি তার হাত থেকে পড়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে নবিজি তলোয়ারটি হাতে তুলে নেন এবং তাকে জিজ্ঞেস করেন, বলো, এবার তোমাকে কে বাঁচাবে আমার হাত থেকে? ভীত বেদুইন অনুনয় করে বলে, আমার ওপর দয়া করুন! নবিজি রাসুল (সা.) বলেন, তুমি কি এ কথার সাক্ষ্য দাও, আল্লাহ একমাত্র উপাস্য আর আমি তাঁর রাসুল? সে উত্তর দেয়, না। তবে আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আপনার বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরব না এবং যারা আপনার বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করবে, তাদেরও সঙ্গ দেব না। নবিজি (সা.) তাকে ছেড়ে দেন।
অনেক মুফাসসিরের মতে এই ঘটনাটির দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে কোরআনের এই আয়াতে,
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اذۡكُرُوۡا نِعۡمَتَ اللّٰهِ عَلَیۡكُمۡ اِذۡ هَمَّ قَوۡمٌ اَنۡ یَّبۡسُطُوۡۤا اِلَیۡكُمۡ اَیۡدِیَهُمۡ فَكَفَّ اَیۡدِیَهُمۡ عَنۡكُمۡ ۚ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ ؕ وَ عَلَی اللّٰهِ فَلۡیَتَوَكَّلِ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ
হে মুমিনগণ, তোমরা স্মরণ কর তোমাদের ওপর আল্লাহর নেয়ামত, যখন একটি কওম তোমাদের প্রতি তাদের হাত প্রসারিত করতে মনস্থ করল; কিন্তু তিনি তাদের হাতকে তোমাদের থেকে নিবৃত্ত রাখলেন। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আল্লাহর ওপরই মুমিনরা যেন তাওয়াক্কুল করে। (সুরা মায়েদা: ১১)
বিষয়: #দৃঢ়তা #নবিজির (সা.) #শত্রুর #সামনে
