

সোমবার ● ১৮ আগস্ট ২০২৫
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » সুনামগঞ্জে সেনাবাহিনীর অভিযানে প্রতিবন্ধকতার দায়ে যমুনা টেলিভিশন প্রতিনিধিসহ ৬ জন আটক
সুনামগঞ্জে সেনাবাহিনীর অভিযানে প্রতিবন্ধকতার দায়ে যমুনা টেলিভিশন প্রতিনিধিসহ ৬ জন আটক
হোসাইন মাহমুদ শাহীন,সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি :
সুনামগঞ্জে সেনাবাহিনীর অভিযানে প্রতিবন্ধকতার দায়ে যমুনা টেলিভিশনের প্রতিনিধি সোহানুর রহমানসহ ৬ জনকে আটক করা হয়েছে। জানা যায়,শনিবার (১৬ আগস্ট) রাতে শহরে টহলরত শান্তিগঞ্জ সেনাক্যাম্পের সেনা সদস্যরা সদর উপজেলার রঙ্গারচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জেলা বিএনপি নেতা মোঃ আব্দুল হাই কে স্থানীয় আমবাড়ী বাজার থেকে আটক করে সুনামগঞ্জ পৌরসভার ষোলঘরস্থ বাসভবনে তল্লাসী অভিযান পরিচালনা করে। এই খবরটি শহরময় ছড়িয়ে পড়লে আব্দুল হাইয়ের পক্ষে বিপক্ষের লোকজন ফেইসবুকে তোলপাড় শুরু করে। এ সময় সুনামগঞ্জ পৌরসভার পশ্চিম তেঘরিয়া এলাকার ছিদ্দিকুর রহমানের পুত্র সোহানুর রহমানের নেতৃত্বে কয়েকজন যুবক সেনাবাহিনীর জীপগাড়ীর পিছু নিয়ে আব্দুল হাইয়ের বাসা থেকে আলীপাড়া পয়েন্টে গেলে তাৎক্ষনিকভাবে তাদেরকে আটক করে সেনাবাহিনী। পরে আটককৃত যমুনা টেলিভিশনের প্রতিনিধি সোহানুর রহমানসহ ৬ জনকে শান্তিগঞ্জ সেনাক্যাম্পে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ঘটনার ব্যাপারে জানতে চাইলে শান্তিগঞ্জ সেনাক্যাম্পের সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার মামুন বলেন,৫/৬ জন যুবক আমাদের রাতের বেলা নিয়মিত টহল অভিযানের সময় সেনাবাহিনীর পিছু নিয়ে অভিযানে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির চেষ্টা করলে সন্দেহ হওয়ায় আমরা তাদেরকে আটক করি। জিজ্ঞাসাবাদে তারা কোন সাংবাদিক পরিচয়পত্র দেখাতে পারেনি। তাই তাদেরকে ক্যাম্পে নিয়ে আরো জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সুনামগঞ্জ অনলাইন প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাইটিভির জেলা প্রতিনিধি মোঃ আবু হানিফ বলেন, যমুনা টেলিভিশনের প্রতিনিধি সোহানুর রহমানসহ ৬ সংবাদকর্মীর আটকের সংবাদে আমরা ৮জন সাংবাদিক শান্তিগঞ্জ সেনাক্যাম্পে গিয়ে ব্যাপক তদবীর করেও আটককৃতদের ছাড়াতে পারিনি। ইতিমধ্যে সেনাক্যাম্প হতে আটককৃতদের ব্যাপারে প্রেসক্লাব সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের কাছে জানতে চাওয়া হয়। একপর্যায়ে সিলেটের সাংবাদিকরা উর্ধতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তাদেরকে জামিনে জিম্মায় ছাড়িয়ে নেয়ার অনুরোধ জানালে কর্তৃপক্ষ সন্তষ্ট হয়ে তাদেরকে থানা পুলিশে সোপর্দ না করে রোববার সকাল ৬টায় ছেড়ে দেন।
উল্লেখ্য যে গত ২৬ জুলাই শনিবার সন্ধ্যায় সুনামগঞ্জ পৌরসভার মল্লিকপুরস্থ নতুন বাসস্ট্যান্ডে স্থানীয় সিএনজি চালকদের সাথে অসদাচরনের অভিযোগে আটক হয়ে গণধোলাই এর শিকার হয় সোহানুর রহমান। সাংবাদিক শহীদনূর আহমদ পরদিন বিষয়টি তার ব্যক্তিগত ফেইসবুক আইডিতে পোস্ট করে ঐ ঘটনার জানান দেয়। পরে মান ইজ্জতের ভয়ে ঐ পোস্টটি ডিলেট করায় সে। সোহানের বিরুদ্ধে গত ৭ জুলাই এ গ্রেডের গুরুতর আহত জুলাই যোদ্ধা জহুর আলীকে উপলক্ষ্য করে ৫ আগস্টের পর দেশে ল্যাংরা লোলায় ভরে গেছে বলে কটুক্তির অভিযোগে ২১ জন জুলাইযোদ্ধা,জেলা প্রশাসকের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। গত ২৭মে মিথ্যা বানোয়াট ভিত্তিহীন সংবাদের মাধ্যমে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে উক্ত সোহানের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন জাগরনী টেলিভিশন ও দৈনিক জনতা পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি সাংবাদিক আফতাব উদ্দিন । এছাড়াও সোহানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দায়েরকৃত অভিযোগ পুলিশের কাছে তদন্তাধীন রয়েছে। শহরের বিভিন্ন ব্যবসায়ীকে টার্গেট করে একে অপরের সহায়তায় চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট গঠন করত: মোটা অংকের টাকা চাঁদা আদায়ে সোহান ও তার সহযোগীরা তৎপর রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন শহরের আনোয়ার মিষ্টান্ন ভান্ডারের স্বত্তাধিকারী আনোয়ার হোসেন। ঘটনার ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযুক্ত সোহানুর রহমান সোহান সেনাবাহিনীর হাতে আটক হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, সেনাবাহিনীর অভিযানে সমস্যা সৃষ্টি হওয়ায় আমাদেরকে আটক করে ক্যাম্পে নিয়ে যাচাই বাছাই এর পর সকালে ছেড়ে দেয়। সোহান বলেন,আমাদেরকে আটকায়নি এটা একটা ভূল বুঝাবুঝি। বিএনপি নেতা মনিরুল ইসলাম মনির বলেন,আমি রোববার (১৭ আগস্ট) ভোর ৫টায় সেনাক্যাম্প হতে চেয়ারম্যান আব্দুল হাইকে নিয়ে নিরাপদে বাসায় পৌছি। তখন দেখে এসেছি ৬ জন সাংবাদিক সেখানে ক্যাম্পে রয়েছেন। পরে সকাল ৬টায় মুছলেকা নিয়ে তাদেরকে ছেড়ে দিয়েছে সুনামগঞ্জ সেনাক্যাম্প। রঙ্গারচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা আব্দুল হাই বলেন,সেনাবাহিনী আমাকে আটক বা গ্রেফতার করেনি। তারা একটা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার বা অন্য যেকোন অজ্ঞাত কারণে আমাকে আমবাড়ী বাজার থেকে সাথে নিয়ে আমার বাসায় এসে তল্লাসী চালান। আমি তাদেরকে তল্লাসীতে সহযোগীতা করি। পরে তারা প্রাপ্ত তথ্য যাচাই বাছাই করার জন্য আমাকে শান্তিগঞ্জ সেনাক্যাম্পে নিয়ে যান। এর আগে আলীপাড়া রাস্তায় কয়েকজন লোক ভিডিও করার জন্য উদ্যত হলে সেনাবাহিনী কার অনুমতিতে ভিডিও করছেন বলে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা বলেন আমরা গ্রেফতারকৃত চেয়ারম্যানের ভিডিও করতে যাচ্ছি। তখন সেনাসদস্যরা বলেন,আমরা কি আপনাদেরকে বলেছি যে,চেয়ারম্যানকে আটক বা গ্রেফতার করেছি। কে আপনাদেরকে এসব কথা বলেছে তার নাম বলেন। আপনারা কি উনাকে চেনেন বলে আমাকে দেখালে ঐ যুবকরা বলে তারা আমাকে চেনেনা। ফলে সেনাসদস্যরা তাদের কাছে পরিচয়পত্র দেখতে চাইলে তারা কোন সদুত্তর দিতে না পারায় তাদেরকে সেনাক্যাম্পে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সেনাবাহিনী তার সাথে কোন ধরনের খারাপ ব্যবহার করেনি বলেও জানান চেয়ারম্যান আব্দুল হাই। তবে আটককৃত ৬ জনের ব্যাপারে আমার কাছে জানতে চাইলে,আমি ৩ জনকে চিনি বলে জানাই। পরে শুনি তাদের সকলের কাছ থেকে বন্ড নিয়ে তাদেরকে ছেড়ে দিয়েছে সেনাক্যাম্প।
বিষয়: #অভিযান #আটক #জন #টেলিভিশন #দায় #প্রতিনিধিসহ #প্রতিবন্ধকতা #যমুনা #সুনামগঞ্জ #সেনাবাহিনী