

সোমবার ● ২৫ আগস্ট ২০২৫
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » টিলায় ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ: প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন – ইউএনও
টিলায় ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ: প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন – ইউএনও
মো:আরিফুর রহমান মানিক, ছাতক (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ
সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের হাদা টিলা রক্ষায় কঠোর অবস্থানে উপজেলা প্রশাসন। দীর্ঘদিন ধরে সরকারি এ টিলা থেকে অবাধে বালু, পাথর ও গাছ লুটপাট করে আসছে প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট। বন বিভাগের ৭৬০ একর বনভূমি দখলদারদের হাতে ধ্বংসের মুখে পড়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোঃ তারিকুল ইসলাম জানিয়েছেন—“এটি কেবল একটি টিলা বা বনায়ন প্রকল্পের ক্ষতি নয়; এ ধ্বংসযজ্ঞ গোটা অঞ্চলের পরিবেশ, কৃষি ও অর্থনীতির জন্য অশনিসংকেত। প্রশাসন এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে রয়েছে।”
সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন ভোর থেকে রাত পর্যন্ত প্রায় দেড় শতাধিক শ্রমিক লাগিয়ে ৫-৬ শতাধিক ঘনফুট পাথর উত্তোলন করা হয়। বাজারমূল্যে প্রতিটি ঘনফুট ১০০-১৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। একই সঙ্গে সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের গাছপালাও কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, বন বিভাগের কর্মকর্তারা বিষয়টি জানলেও কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। অভিযানে মাঝে মধ্যে শ্রমিকরা ধরা পড়লেও মূল হোতারা থাকেন অদৃশ্য।
প্রশাসনের অভিযান
গত ২২ আগস্ট গভীর রাতে ইসলামপুর ইউনিয়নের হাদা-পান্ডব এলাকায় উপজেলা প্রশাসনের বিশেষ অভিযানে কয়েকটি ড্রেজার নৌকা জব্দ করা হয়। তবে শ্রমিক গ্রেপ্তার হলেও সিন্ডিকেটের প্রভাবশালী নেতাদের ধরা যায়নি। অভিযান শেষে আবারও শুরু হয় টিলা কেটে পাথর উত্তোলন।
সামাজিক বনায়ন প্রকল্প ধ্বংসের পথে
২০০৬-০৭ অর্থবছরে বন বিভাগের উদ্যোগে হাদা টিলায় ১৭৫ একর জমিতে সামাজিক বনায়ন প্রকল্প চালু করা হয়। প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল বনজ ও ফলজ বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে পরিবেশ সংরক্ষণ ও মাটি ক্ষয় রোধ। কিন্তু অবৈধ পাথর উত্তোলনের কারণে গাছপালা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে, টিলা সমতল হয়ে পড়ছে। এখন প্রকল্পটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।
পরিবেশ ও কৃষি হুমকিতে
পরিবেশবিদরা সতর্ক করে বলছেন, এভাবে টিলা কাটতে থাকলে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয় ঘটবে। টিলা-নির্ভর ইকোসিস্টেম ভেঙে পড়বে, বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল হারিয়ে যাবে। কৃষিজমি বালুমাটি জমে অনাবাদী হয়ে পড়ছে। স্থানীয় কৃষক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, “আমাদের ফসলি জমি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে, অথচ মূল লুটেরারা ধরা পড়ছে না।”
প্রশাসনের অবস্থান
বন বিভাগের কর্মকর্তা আয়ূব আলী স্বীকার করেছেন, “অবৈধ পাথর উত্তোলনের বিষয়ে নিয়মিত অভিযোগ করা হলেও সিন্ডিকেট এত শক্তিশালী যে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারছে না।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ তারিকুল ইসলাম বলেন, “হাদা টিলায় যে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ চলছে, তা গোটা অঞ্চলের জন্য অশনিসংকেত। শুধু ভ্রাম্যমাণ আদালত দিয়ে সমাধান সম্ভব নয়। প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, কড়াকড়ি নজরদারি এবং প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা। প্রশাসন ইতোমধ্যেই কঠোর অবস্থান নিয়েছে।”
বিশেষজ্ঞদের মত
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, হাদা টিলা রক্ষায় সামাজিক বনায়ন প্রকল্প পুনরুদ্ধার, বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা এবং প্রভাবশালী সিন্ডিকেট দমনে উচ্চপর্যায়ের হস্তক্ষেপ এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। নাহলে অচিরেই এ অঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বিষয়: #আরিফুর #মানিক #রহমান