

শনিবার ● ১০ মে ২০২৫
প্রথম পাতা » বিনোদন » চলে গেলেন মুস্তাফা জামান আব্বাসী
চলে গেলেন মুস্তাফা জামান আব্বাসী
বজ্রকণ্ঠ ডেস্ক::
শ্রোতাপ্রিয় সংগীতশিল্পী মুস্তাফা জামান আব্বাসী মারা গেছেন। আজ (১০ মে) সকালে রাজধানীর বনানীর একটি হাসপাতালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার মেয়ে শারমিনী আব্বাসী গণমাধ্যমকে মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন। মুস্তাফা জামান আব্বাসীর বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। সংগীতচর্চার পাশাপাশি তিনি গবেষক ও লেখক হিসেবেও খ্যাতি লাভ করে ছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি দুই কন্যা এবং বহু ভক্ত, অনুরাগী রেখে গেছেন।
আব্বাসীর মেয়ে শারমিনী আব্বাসী জানান, অনেকদিন ধরে বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছিলেন তার বাবা। শুক্রবার (৯ মে) শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল তাকে। আজ ভোর সাড়ে পাঁচটায় তিনি মারা যান।
মুস্তাফা জামান আব্বাসী উপমহাদেশের খ্যাতিমান সংগীত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। তার বাবা আব্বাসউদ্দীন আহমেদ ছিলেন পল্লিগীতির সম্রাট বলে খ্যাতি লাভ করেছিলেন।
বাংলার পল্লিসংগীতকে মুস্তাফা জামান আব্বাসীই প্রথম বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে দিয়েছেন। তার চাচা আবদুল করিম ছিলেন পল্লিগীতি ও ভাওয়াইয়া-ভাটিয়ালির জনপ্রিয় শিল্পী। তার বড় ভাই মোস্তফা কামাল একজন প্রখ্যাত আইনজ্ঞ ছিলেন। তার বোন ফেরদৌসী রহমান দেশের অন্যতম খ্যাতিমান সংগীতশিল্পী। আব্বাসীর মেয়ে নাশিদ কামাল নজরুল সংগীতশিল্পী হিসেবে শ্রোতাপ্রিয়তা লাভ করেছেন। তার স্ত্রী আসমা আব্বাসী একজন শিক্ষক ও লেখিকা। তিনি গত বছর পরলোক গমন করেছেন।
মুস্তাফা জামান আব্বাসী ১৯৩৬ সালের ৮ ডিসেম্বর ভারতের কোচবিহারের বলরামপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কলকাতায় তার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ, এমএ ডিগ্রি অর্জনের পর হার্ভার্ড গ্রুপ থেকে মার্কেটিং বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন। এ শিল্পী বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।
শিল্পী মুস্তাফা জামান আব্বাসী দীর্ঘ পাঁচ দশক ধরে ফোক মিউজিক রিসার্চ গ্রুপের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার সংগ্রহে কয়েক হাজার লোকগান রয়েছে। তিনি ২৫টির বেশি দেশে ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি, নজরুলগীতি পরিবেশন করে এদেশের সংগীতকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ছড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি ছিলেন ইউনেসকোর বাংলাদেশ ন্যাশনাল কমিটি অব মিউজিকের সভাপতি, নজরুল ও আব্বাসউদ্দীনের ইংরেজি জীবনী লেখার দায়িত্বপ্রাপ্ত গবেষক ছিলেন।
মুস্তাফা জামান আব্বাসীর উপস্থাপনায় বাংলাদেশ টেলিভিশনের ‘আমার ঠিকানা’, ‘ভরা নদীর বাঁকে’, ‘আপন ভুবন’সহ কয়েকটি অনুষ্ঠান জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। শুধু সংগীত চর্চা ও লেখালেখিতেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি, সমাজসেবায়ও তিনি সক্রিয় ছিলেন। রোটারি ক্লাবের গভর্নর হিসেবে অনেক উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এ বরেণ্য সংগীতশিল্পী।
মুস্তাফা জামান আব্বাসীর লেখা বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ‘রুমির অলৌকিক বাগান’, উপন্যাস ‘হরিণাক্ষি’, স্মৃতিকথা ‘স্বপ্নরা থাকে স্বপ্নের ওধারে’, ‘লোকসংগীতের ইতিহাস’, ‘ভাটির দ্যাশের ভাটিয়ালি’। দেশীয় সংগীত ও সংস্কৃতিতে অনন্য অবদান রাখার জন্য একুশে পদকসহ দেশে-বিদেশে তিনি অনেক সম্মাননা ও পুরস্কার লাভ করেন।
বিষয়: #আব্বাসী #গেলেন #চলে #জামান #মুস্তাফা