

বৃহস্পতিবার ● ১৯ জুন ২০২৫
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » এপ্রিলে নির্বাচিত সরকার আসবে: গার্ডিয়ানকে ড. ইউনূস
এপ্রিলে নির্বাচিত সরকার আসবে: গার্ডিয়ানকে ড. ইউনূস
বজ্রকণ্ঠ সংবাদ::
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, দেশের জনগণ এখনো সরকারকে তাদের শত্রু হিসেবে দেখে। তিনি বলেন, এপ্রিলে দেশে নির্বাচিত সরকার আসবে আর আমি বিদায় নেব।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
ড. ইউনূস বলেন, ‘ব্যাপক দুর্নীতি সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়েছে। সরকারি লোকজন অর্থ আত্মসাৎ করছে এবং পাসপোর্ট তৈরি থেকে শুরু করে ব্যবসার অনুমতি পাওয়া পর্যন্ত প্রতিটি পদক্ষেপে ঘুষ দাবি করা হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কেউ না কেউ সব সময় বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে।’ তিনি বলেন, ‘মানুষ সরকারকে তাদের স্থায়ী শত্রু হিসেবে দেখে এবং এই শত্রুর সঙ্গে লড়াই করেই তাদের জীবন কাটাতে হয়। এটি একটি খুব শক্তিশালী শত্রু, তাই মানুষ এর থেকে দূরে থাকতে চায়।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘শেখ হাসিনা ক্রমবর্ধমানভাবে কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠেছিলেন। বিরোধী দল এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর দমন-পীড়ন চালাচ্ছিলেন। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত বিক্ষোভগুলো একটি বিষাক্ত, সংঘাতপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন আনবে বলে অনেকে আশা করেছিলেন। এই ব্যবস্থাটি দুটি প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী- আওয়ামী লীগ এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয়ে আসছিল।’
তিনি জানান, সরকার গঠনের সময় তারা একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত রাষ্ট্র পেয়েছিলেন। ‘প্রশাসন ছিল ভেঙে পড়া, অর্থনীতি দেউলিয়া। ব্যাংকগুলো এমনভাবে ঋণ দিয়েছিল যেন তা উপহার, যা আর ফেরত আসেনি।’
সরকার দুর্নীতি, নির্বাচন ও জনকল্যাণ নিয়ে একাধিক সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। এসব কমিশন প্রস্তাব দিয়েছে ব্যাপক পরিবর্তনের, যার মধ্যে রয়েছে স্বচ্ছ নির্বাচন প্রক্রিয়া, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদের সীমা এবং আর্থিক খাতের সংস্কার।
ড. ইউনূস চান এসব প্রস্তাব নিয়েই ‘জুলাই সনদ’ নামে একটি ঐতিহাসিক চুক্তি চূড়ান্ত হোক, যাতে তা আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই বাস্তবায়ন শুরু করা যায়। তিনি বলেন, ‘এটি কোনো হালকা সংস্কার নয়, বরং দেশের কাঠামোগত পরিবর্তনের রূপরেখা।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি এখন দেশের সবচেয়ে বড় দল এবং তারা দ্রুত নির্বাচন চায়। তারা প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদসীমার বিরোধিতাও করছে। তবে ড. ইউনূস জানিয়েছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক মতপার্থক্য থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে যে সহযোগিতা দেখা যাচ্ছে, তা উৎসাহব্যঞ্জক।’
জনসেবায় বড় পরিবর্তন আনতে চান ড. ইউনূস। তিনি স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং ক্ষুদ্রঋণ খাতে সামাজিক উদ্যোগকে উৎসাহ দিতে চান। তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষ যেন বড় ব্যাংকের ওপর নির্ভর না করে নিজেরা ব্যবসা শুরু করতে পারে, সেই সুযোগ তৈরি করতে হবে।’
তিনি ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থাকে আরও সংগঠিত করে ক্ষুদ্রঋণ ব্যাংক গঠনের পরিকল্পনার কথাও জানান। যদিও কিছু এনজিওর উচ্চসুদের কারণে এই খাত সমালোচনার মুখে পড়েছে। তবে তিনি মনে করেন এটি দরিদ্র মানুষের জন্য একটি কার্যকর সমাধান।
ড. ইউনূস বলেন, ‘ক্ষুদ্রঋণ দরিদ্রদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে না, বরং তাদের স্বাবলম্বী করে তোলে।’ তিনি মূলধারার ব্যাংকব্যবস্থার কঠোর সমালোচনা করে বলেন, ‘এ ব্যাংকগুলো দরিদ্রদের ঋণ দিতে চায় না। অথচ বড় বড় ঋণখেলাপিদের কারণে ব্যাংকব্যবস্থাই ভেঙে পড়েছে।’
গত বছর ইউনূস ছিলেন শেখ হাসিনার কড়া সমালোচক। কিন্তু এখন সেই নেতৃত্বের কেন্দ্রে থেকেই সংস্কারের কাজ করছেন। তিনি জানিয়েছেন, আগামী নির্বাচনের পর তিনি আর সরকারে থাকবেন না।
‘এই পদে থাকলে সমালোচনা আসবেই, সেটা যেকোনো দিক থেকেই হোক। আমি জানি, এপ্রিলে একটি নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব নেবে, আর আমি বিদায় নেব,’ বলেন তিনি।
ড. ইউনূস আশা করছেন, এ পরিবর্তনগুলোই হবে একটি ‘নতুন বাংলাদেশের’ সূচনা।
বিষয়: #আসব #এপ্রিল #নির্বাচিত #সরকার