শিরোনাম:
ঢাকা, বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ পৌষ ১৪৩২
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বজ্রকণ্ঠ "সময়ের সাহসী অনলাইন পত্রিকা", সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ঢাকা,রাজশাহী,নিউ ইয়র্ক,লন্ডন থেকে প্রকাশিত। লিখতে পারেন আপনিও। বজ্রকণ্ঠ:” সময়ের সাহসী অনলাইন পত্রিকা ” আপনাকে স্বাগতম। বজ্রকণ্ঠ:: জ্ঞানের ঘর:: সংবাদপত্র কে বলা হয় জ্ঞানের ঘর। প্রিয় পাঠক, আপনিও ” বজ্রকণ্ঠ ” অনলাইনের অংশ হয়ে উঠুন। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ” বজ্রকণ্ঠ:” সময়ের সাহসী অনলাইন পত্রিকা ” কে জানাতে ই-মেইল করুন-ই-মেইল:: [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।

Bojrokontho
বুধবার ● ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » পাড়ি জমালেন পরপারে : অনন্ত যাত্রায় মানুষের ভালোবাসা
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » পাড়ি জমালেন পরপারে : অনন্ত যাত্রায় মানুষের ভালোবাসা
৩৪ বার পঠিত
বুধবার ● ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

পাড়ি জমালেন পরপারে : অনন্ত যাত্রায় মানুষের ভালোবাসা

বজ্রকণ্ঠ :;
পাড়ি জমালেন পরপারে : অনন্ত যাত্রায় মানুষের ভালোবাসা
তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অবশেষে জীবনের পরম সত্যের কাছে নিজেকে সঁপে দিলেন। পাড়ি জমালেন পরপারে। শায়িত হলেন প্রিয় স্বামী শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পাশে, চিরঘুমে।

বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর বিকেল ৩টা ৪ মিনিটে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত হয় খালেদা জিয়ার জানাজা। জানাজায় ইমামতি করেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি আবদুল মালেক। জানাজায় উপস্থিত ছিলেন তার বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ পরিবারের সদস্য, বিএনপির শীর্ষ নেতারা, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ এবং বিদেশি অতিথিরা। পুরো আয়োজন পরিচালনা করেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।

আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, প্রধান বিচারপতি, তিন বাহিনীর প্রধান, জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। দেশের ইতিহাসে এটাই সর্ববৃহৎ জানাজা বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিন বিকেল পৌনে ৫টার দিকে জিয়া উদ্যানে স্বামী সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে দাফন করা হয়। খালেদা জিয়ার মরদেহ কবরে নামানোর পর ধর্মীয় রীতি মেনে প্রথমে তারেক রহমান মাটি দেন। তারেক রহমানের পর পরিবারের নারী সদস্যসহ অন্যান্যরা কবরে মাটি দেন। এরপর একে একে অন্যান্য আত্মীয় স্বজন ও নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার কবরে মাটি দেয়া হয়।

দাফনের পর রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে তাদের সামরিক সচিব খালেদা জিয়ার কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। পরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এছাড়া তিন বাহিনীর প্রধান খালেদা জিয়ার কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। পরে খালেদা জিয়ার রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। দাফন করার আগে সকাল থেকেই জিয়া উদ্যান সংলগ্ন লেক রোডে সাধারণ মানুষের যাতায়াত বন্ধ ছিল। দুপুরে জোহরের নামাজের পর মনিক মিয়া অ্যাভিনিউতে খালেদা জিয়ার জানাজা হয়।

এসময় সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয় সম্মান জানানো হয়। এসময় তারেক রহমানের স্ত্রী জুবাইদা রহমান, মেয়ে জাইমা রহমান, ছোটভাই আরাফাত রহমানের স্ত্রী শামিলা রহমান, তার ছোট মেয়ে জাফিরা রহমানসহ পরিবারের সদস্যরা, বিএনপির নেতাকর্মী, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা দাঁড়িয়ে শোক ও শ্রদ্ধা জানান। দাফনকালে পরিবারের সদস্য, সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, বিদেশি অতিথি ও বিএনপির মনোনীত প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে, বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বিশেষ একটি বাহনে করে খালেদা জিয়ার মরদেহ সাবেক রাষ্ট্রপতি ও তার স্বামী জিয়াউর রহমানের সমাধির কাছে নেয়া হয়।সমাধির কাছাকাছি নেয়ার পর খালেদা জিয়ার মরদেহবাহী কফিন কাঁধে নিয়ে যান সেনা ও নৌবাহিনীর সদস্যরা।

সকালে গুলশানের বাসভবন ফিরোজা থেকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় খালেদা জিয়ার মরদেহ আনা হয় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে। সেখানে সকাল থেকেই নেমে আসে শোকার্ত মানুষের ঢল। ভোর থেকেই লাখো মানুষ অবস্থান নেয় জাতীয় সংসদ ভবনসংলগ্ন এলাকায়। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জনস্রোত রূপ নেয় জনসমুদ্রে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ট্রাক, বাস, ট্রেনযোগে ছুটে আসেন সাধারণ মানুষ ও নেতাকর্মীরা। কারও হাতে কালো ব্যাজ, কারও চোখে অশ্রু—সবার বুকে একটাই বেদনা, একজন আপসহীন দেশনেত্রীকে হারানোর শোক।

মানুষের চাপ সামাল দিতে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজার প্রবেশপথ খুলে দেয়া হয়। দক্ষিণ প্লাজার দুটি বড় মাঠ জানাজার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হলে লাখো মানুষ সেখানে অবস্থান নেন। জানাজা নির্বিঘ্ন করতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউসহ পুরো এলাকায় মোতায়েন করা হয় ২৭ প্লাটুন বিজিবি। পুলিশ, এপিবিএন, র‌্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনীসহ ১০ হাজারের বেশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য দায়িত্ব পালন করেন। গোয়েন্দা নজরদারিও ছিল সর্বোচ্চ পর্যায়ে।

খালেদা জিয়ার শেষ বিদায়ে অংশ নিতে ঢাকায় আসেন পাকিস্তানের স্পিকার, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ভুটান ও মালদ্বীপের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধি, শ্রীলঙ্কা ও নেপাল সরকারের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী ও বিশেষ দূতরা। ইতিহাসের এক শোকাবহ জনসমাবেশের সাক্ষী হয় রাজধানী।

প্রায় ৮০ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, লিভার সিরোসিস ও কিডনির জটিলতায় ভুগছিলেন। গত ২৩ নভেম্বর গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই ৩৭ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালে ইন্তেকাল করেন তিনি।

তাকে বাঁচিয়ে রাখতে পরিবার, দল ও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রচেষ্টার ঘাটতি ছিল না। দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে চলছিল চিকিৎসা, পরিবারের সদস্যরা দিনরাত প্রার্থনায় ছিলেন, সমর্থকেরা হাসপাতালের বাইরে অশ্রুসিক্ত চোখে অপেক্ষা করেছেন। মসজিদ-মন্দির-গির্জায় তার সুস্থতার জন্য দোয়া হয়েছে। তবু মৃত্যুকে থামানো যায়নি। হাসপাতালের শয্যায় হয়তো তিনিও লড়াই করছিলেন শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত—যে লড়াইয়ে মানুষের হারই শেষ সত্য।

খালেদা জিয়ার মৃত্যুসংবাদে স্তব্ধ হয়ে পড়ে দেশ। শোক জানায় বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। দেশ-বিদেশের রাষ্ট্রনায়ক ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা শোকবার্তা পাঠান। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে ভাষণে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেন এবং জানাজা ও দাফনের দিন সাধারণ ছুটি দেন।

মায়ের মৃত্যুতে তারেক রহমান বলেন, ‘আমার কাছে খালেদা জিয়া একজন মমতাময়ী মা, যিনি নিজের সমগ্র জীবন উৎসর্গ করেছেন দেশ ও মানুষের জন্য।’

রাজনীতির দীর্ঘ পথে খালেদা জিয়ার জীবন ছিল উত্থান-পতনের, বন্দিত্বের, অপমানের ও সংগ্রামের এক দীর্ঘ ইতিহাস। মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোতে বন্দিত্ব, স্বামী হারানোর শোক, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, কারাবাস, নির্বাসন—সবকিছুই তিনি বহন করেছেন নীরব দৃঢ়তায়। ব্যক্তিগত জীবনের অসহনীয় ক্ষতি আর রাজনৈতিক জীবনের অজস্র ঝড়ঝাপটার মাঝেও তিনি ভাঙেননি। তার নীরব প্রতিরোধ ছিল ধৈর্যের, মর্যাদার ও আত্মবিশ্বাসের প্রতীক।

১৯৪৬ সালে জলপাইগুড়িতে জন্ম নেয়া খালেদা জিয়া, যার ডাকনাম ছিল ‘পুতুল’; কৈশোরেই জীবনের কঠিন পথে পা রাখেন। মাত্র ১৫ বছর বয়সে বিয়ে হয় তরুণ সেনা কর্মকর্তা জিয়াউর রহমানের সঙ্গে। সেখান থেকেই শুরু হয় এক অনন্য জীবনযাত্রা; যার পরিণতি তিনবারের প্রধানমন্ত্রীত্ব, আবার দীর্ঘ বন্দিত্ব ও সংগ্রাম।

১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমান শহিদ হওয়ার পর লাখো মানুষের দাবিতে বিএনপির নেতৃত্বে আসেন তিনি। আটপৌরে গৃহবধূ থেকে হয়ে ওঠেন দেশের প্রধান রাজনৈতিক শক্তির নেত্রী। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। এরপর আরও দুই দফা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন। ২৩টি আসনে নির্বাচন করে কখনো পরাজিত হননি।

আজ তিনি নেই। কিন্তু তার জীবনগাথা শুধু একজন রাজনীতিকের ইতিহাস নয়; এটি অগ্নিদগ্ধ সময়ের ভেতর দিয়ে হেঁটে যাওয়া এক দৃঢ়চেতা নারীর সংগ্রামের কবিতা। তিনি আর ফিরবেন না। তবে ধানের শীষে, মানুষের স্মৃতিতে, জাতীয়তাবাদের প্রতীকে তিনি বেঁচে থাকবেন চিরকাল।



বিষয়: #  #  #  #  #  #  #


আর্কাইভ

সিলেট শহরের সকল হবিগঞ্জী --- --- --- --- --- --- --- ---

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)
2026 সালের নববর্ষ উদযাপন লাইভ!
খালেদা জিয়ার জানাজায় পদদলিত হয়ে একজনের মৃত্যু
মায়ের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানালেন তারেক রহমান
নতুন বছরে সাম্য ও ন্যায়ভিত্তিক বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তুলব: প্রধান উপদেষ্টা
পাড়ি জমালেন পরপারে : অনন্ত যাত্রায় মানুষের ভালোবাসা
খালেদা জিয়ার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চাইলেন তারেক রহমান
খালেদা জিয়ার জানাজা বুধবার দুপুর ২টায়
জাতি গঠনে খালেদা জিয়ার অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে: জয়
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া আর নেই
তারেক রহমানের সভাপতিত্বে বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটি