

বৃহস্পতিবার ● ৩ জুলাই ২০২৫
প্রথম পাতা » প্রধান সংবাদ » ছাতকে যুবলীগের নেতার বাড়ি থেকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করেছে সেনা বাহিনী
ছাতকে যুবলীগের নেতার বাড়ি থেকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করেছে সেনা বাহিনী
ছাতক সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি::
ছাতকে পুলিশ ফাড়ি ৫ শত গজ মধ্যে থেকে যুবলীগের নেতার বাড়ি থেকে সেনা বাহিনী অভিযান চালিয়ে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করলে ও পুলিশের ভুমিকা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
গত বুধবার গভীর রাতে উপজেলার জাউয়াবাজারের যুবলীগের নেতা আলমগীরের বাড়িতে সেনা বাহিনী অভিযান চালিয়ে দেশি দুটি পাইপগান ও দুটি চাবুক উদ্ধার করে।
গত বৃহম্পতিবার সকালে সেনা বাহিনী জাউয়াবাজার পুলিশ ফাড়িতে উদ্ধারকৃত অস্ত্রগুলোকে পরিক্তত অবস্থায় দেখিয়ে জমা দিয়েেছে বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছেন। এঘটনা নিয়ে আহত প্রবাসি শাহজাহান বাদী হয়ে সুনামগঞ্জ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছে।
যুবলীগের নেতার আলমগীর হোসেনের নেতৃত্বে জবরদখল করেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী এক পরিবারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও পুরো মার্কেট। মারপিট করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দেয়া হচ্ছে স্বত্বাধিকারী যুক্তরাজ্য প্রবাসী শাহজাহান হোসেনকে। গত ২৬ এপ্রিল রাতে উপজেলার জাউয়াবাজারে এ ঘটনা ঘটে। এঘটনাকে কেন্দ্র করে যে কোন সময় আবারো ও প্রবাসীর উপর হামলার আশংকা রয়েছে। প্রবাসী সহপরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। এ ঘটনায় আহত প্রবাসি শাহজাহান বাদী হয়ে সুনামগঞ্জ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রতিষ্ঠানের অন্যতম স্বত্বাধিকারী যুক্তরাজ্য প্রবাসী জাহাঙ্গীর হোসেন লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএসও) একজন কর্মকর্তা। গত ৯ জুন লন্ডন হাই কমিশনার বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে।
জানা গেছে, ছাতক উপজেলার জাউয়া গ্রামের বাসিন্দা মৃত ওয়াশিদ আলীর পরিবার দীর্ঘ প্রায় ৪৫ বছর যাবৎ পুরো পরিবার নিয়ে লন্ডনে বসবাস করেন। বাংলাদেশ ও লন্ডনে তাদের পরিবারের প্রচুর স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে। পাশাপাশি পৈতৃক এলাকা স্থানীয়জাউয়াবাজারেও রয়েছে ‘হাজী ওয়াশিদ আলী কমপ্লেক্স’ নামে একটি মার্কেট। তারা প্রবাসে থাকায় মার্কেটের ভাড়া আদায় এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দেখা শোনার জন্য স্থানীয় কয়েকজন পরিচিত লোককে কেয়ারটেকার নিয়োগ দেয়া হয় আলমগীর হোসেনকে। যোগাযোগের চেষ্টা করলেও নানা অজুহাতে ওরা এড়িয়ে যেতো। বিষয়টি নিয়ে জাহাঙ্গীর হোসেন সন্দিহান হয়ে গত ১৩ মার্চ তার ছোট ভাই শাহজাহান হোসেনকে লন্ডন থেকে দেশে পাঠান। শাহজাহান হোসেন দেশে এসে নিয়োজিত কর্মচারিদের কাছে মার্কেট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের হিসাব চাইলে ওরা দিমু-দিচ্ছি বলে নানা টালবাহানা করতে থাকে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে জাউয়া গ্রামের মৃত আরশাদ আলীর ছেলে, জাউয়াবাজার ইউনিয়নে যুবলীগের সাবেক নেতা আলমগীর হোসেন (৫৩)- ও স্থানীয় খিদ্রাকাপন গ্রামের মৃত আরজু মিয়া তালুকদারের ছেলে, জাউয়াবাজার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের একাংশের সভাপতি রেজা মিয়া তালুকদার (৫৯)-এর যৌথ নেতৃত্বে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে সরিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা করা হয়। পরিস্থিতি প্রতিকূল দেখে শাহজাহান হোসেন জাউয়াবাজার ব্যবসা সমিতির নেতৃবৃন্দের কাছে বিচারপ্রার্থী হয়েছেন। পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে ব্যবসায়ী কমিটির নেতৃবৃন্দকে অবগত করে গত ১৫ এপ্রিল দুপুরে তার নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তালাবদ্ধ করে দেন শাহজাহান হোসেন।
গত ২৬ এপ্রিল রাতে শান্তিগঞ্জ উপজেলার বেতকোনা গ্রামের সাহাব উদ্দিনের ছেলে আবু ইসফাক (৩০), একই উপজেলার খাড়ারাই গ্রামের মৃত আব্দুস শহীদের ছেলে হেলাল উদ্দিন (৪০), ছাতক উপজেলার চেচান গ্রামের জহুর আলীর ছেলে জুবেল আহমদ (২৭) সহ অজ্ঞাতনামা আরো ৭/৮ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসীকে সাথে নিয়ে মার্কেটে এসে গ্রাইন্ডার মেশিন দিয়ে দোকান কোটার সাটারিং-এর দরজা কেটে জোরপুর্বক দখল করে নেয়। এ খবর পেয়ে প্রবাসী শাহজাহান হোসেন দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে দখলবাজদের অন্যায়-অপকর্মে বাঁধা প্রদান করলে সন্ত্রাসীরা হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে তাঁকে আহত করে। পরে জাহাঙ্গীর হোসেনের আত্মীয়-স্বজন ও বাজার ব্যবসায়ী কমিটির নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহত শাহজাহান হোসেনকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করেন। হামলাকালে সন্ত্রাসীরা জাহাঙ্গীর হোসেনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ভেতরে ও বাইরে থাকা সিসি টিভি ক্যামেরা, কম্পিউটার হার্ডডিস্ক, মনিটর, ডেকোরেশন সামগ্রী ভাংচুর করে লক্ষাধিক টাকার ক্ষয় ক্ষতি করে। বর্তমান সময়ে দেশে তাদের কেউ কিছু করতে পারবে না। পুলিশও তাদের বিরুদ্ধে কোন এ্যাকশনে যাবে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনার প্রবাসী জাহাঙ্গীর হোসেনের মালিকানাধীন মার্কেট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এখনও অবৈধ দখলদারদের কাছে জিম্মি থাকায় প্রবাসী পরিবারটি চরম হতাশ ও বিক্ষুব্দ। প্রবাসীর ওপর অন্যায় হামলার ঘটনার সুষ্ঠু বিচার এবং জবরদখলে থাকা সম্পত্তি উদ্ধারে দেশের আইন-শৃংখলারক্ষাকারী বাহিনী বিশেষ করে সেনাবাহিনীকে বলিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সুপারিশ করতে হাই কমিশনারের নিকট অনুরোধ করা হয়।
রাজনৈতিক মতাদর্শে উপরোক্ত ব্যক্তিরা ভিন্ন ভিন্ন আদর্শের মতাবলম্বী হলেও দুর্নীতি ও অপকর্মে ওরা এক ও অভিন্ন। যে কারণে কোন কোন অভিযুক্ত সদ্য ক্ষমতাচ্যূত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকলেও অভিযুক্তদের কেউ কেউ বিএনপি রাজনীতির মতাদর্শে বিশ্বাসী ও বড় মাপের নেতাও বটে। এ বিষয়ে জানতে যুবলীগের নেতা আলমগীর হোসেনের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন নম্বরে কল দিলেও তার মোবাইল বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেয়া যায়নি।
এব্যপারে জাউয়াবাজার ফাড়ির ইনচাজ হজরত আলী এসব ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন,গত বুধবার রাতে আলমগীর হোসেনের বাড়ির সামনে একটি ঘর থেকে পরিক্তত অবস্থায় দুটি পাইপগান দুটি চাবুক করে সেনাবাহিনী জিডির মাধ্যমে জমা দেন।
বিষয়: #ছাতক #নেতা #যুবলীগ