

বৃহস্পতিবার ● ৮ মে ২০২৫
প্রথম পাতা » খুলনা » দৌলতপুরে পদ্মা নদীর ভাঙনে আতঙ্কে দিন দিন কাটছে পদ্মা পাড়ের মানুষের
দৌলতপুরে পদ্মা নদীর ভাঙনে আতঙ্কে দিন দিন কাটছে পদ্মা পাড়ের মানুষের
খন্দকার জালাল উদ্দীন :
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে অসময়ে পদ্মা নদীর ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ। প্রতিদিনই নদীগর্ভে বিলিন হচ্ছে শত শত বিঘা ফসলি জমি ও বসতভিটা। দুশ্চিন্তা ও আতঙ্কে দিন দিন কাটছে পদ্মা পাড়ের মানুষের।
ভূক্তভোগীদের দাবী পদ্মার ভাঙন রোধে অবৈধ ভাবে বালি উত্তোলন বন্ধ ও স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের। দৌলতপুর উপজেলার পদ্মা নদীর কোল ঘেষা মরিচা ইউনিয়ন। কৃষি নির্ভর এই ইউনিয়নের প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষের দিন কাটছে পদ্মার ভাঙন আতঙ্কে। দীর্ঘদিন ধরে পদ্মা নদীর আগ্রাসনের ফলে মানচিত্র থেকে বিলীর হওয়ার পথে এই ইউনিয়নটির চিত্র।
অসময়ে অর্থাৎ শুষ্ক মৌসুমেও ৪ কি. মি. এলাকা জুড়ে নদী ভাঙন শুরু হওয়ায় প্রতিদিনই নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে শত শত বিঘা ফসলি জমি ও বসতভিটা। ইতিমধ্যে নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে হাজার হাজার বিঘা আবাদি জমি, ঘর-বাড়ি ও বিভিন্ন স্থাপনা। তাই শেষ সম্বলটুকু হারানোর ভয় ও আতঙ্ক এখন তাদের নিত্য সঙ্গী। তবে ভাঙন রোধে হাটখোলাপাড়া থেকে ভূরকা পর্যন্ত ১ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলার কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
দুটি প্রকল্পের আওতায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২ লাখ ৩৫ হাজার জিওব্যাগ ফেলা হবে বলে জানিয়েছেন কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রোকনুজ্জামান।
এদিকে এলাকাবাসী বলছেন, কিছুদিনের মধ্যে নদীতে নতুন পানি এলে পদ্মার আগ্রাসী রূপ আরও বেড়ে যাবে। এক কিলোমিটার অংশের ভাঙন রোধের উদ্যোগে তারা খুশি হলেও উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় রয়েছেন বাঁকী ৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন নিয়ে। তাদের দাবি, পুরো এলাকাতে সাময়িকভাবে ভাঙন রোধে জিওব্যাগ ফেলার পাশাপাশি দ্রুত স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হোক। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, কয়েক বছর ধরে চলা ভাঙনে নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে তাদের কয়েক হাজার বিঘা আবাদি জমি, বসতবাড়ি, কয়েকটি সরকারি- বেসরকারি স্থাপনা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
ঝুঁকিতে রয়েছে নদীর পাড় থেকে মাত্র ৩০ মিটার দূরে থাকা বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ, ভারত থেকে আসা বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা ও অসংখ্য বসত বাড়ি। পদ্মা পাড়ের বাসিন্দা সিদ্দিকুর রহমান জানান, একসময় তাদের বাড়ি থেকে আবাদি জমিতে যেতে হাঁটতে হতো ৫ কিলোমিটার। এখন নদীর পাড়ে আসতে সময় লাগে মাত্র দুই মিনিটের কম সময়।
চোখের সামনে পদ্মার আগ্রাসী ভাঙনে হারিয়েছেন চাষের জমি। ভাঙন রোধে দ্রুত টেকসই ব্যবস্থা না নিলে বসতভিটাও হারাতে হবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। সিরাজ মন্ডল নামে স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আমাদের এলাকার ৪ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে পদ্মা নদীর ভাঙন দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে এক কিলোমিটার এলাকায় জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে। বাকি ৩ কিলোমিটারে এখনই ব্যবস্থা না নিলে এবারের বন্যায় বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
নদী পাড়ের আরেক বাসিন্দা শান্ত আহমেদ বলেন, ভাঙন সাময়িকভাবে রোধে সরকারের উদ্যোগে আমরা খুশি। তবে যত দিন পর্যন্ত ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা না হচ্ছে, তত দিন আমরা উদ্বেগের মধ্যেই থাকবো। ভাঙন রোধে ৪ কি. মি. এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য সরকার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুল হামিদ বলেন, আমরা এক কিলোমিটার এলাকার ভাঙন রোধে জিওব্যাগ ফেলার কাজ শুরু করেছি। বাকি ৩ কিলোমিটারের জন্য মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের বিষয়েও মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান জানিয়েছেন, যেসব জায়গাতে মারাত্মক ভাঙন সংঘঠিত হয়, সেসব জায়গাতে জিওব্যাগ ডাম্পিং করে প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। পরবর্তীতে নদী ভাঙনপ্রবন ১১.৩০ কি. মি. এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মানের প্রকল্প হাতে নিয়েছেন তারা। প্রকল্প পাশ হলে দ্রুত সময়ের মধ্যেই শুরু হবে বাঁধ নির্মানের কাজ। তবে ভূক্তভোগীদের দাবী, শুধু আশ্বাস নয়, কৃষি প্রধান এই অঞ্চল কে বাঁচাতে নির্মান করতে হবে স্থায়ী বাধ, তবেই ফিরবে স্বস্থি সবার মাঝে।
বিষয়: #আতঙ্ক #দিন #দৌলতপুর #নদী #পদ্মা #ভাঙন #মানুষ
