জুয়েল চৌধুরী ॥ শায়েস্তাগঞ্জে বহু অপকর্মের হোতা নজির আলীসহ ৩ জনকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। এদিকে তার আরও অপকর্মের কাহিনী বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। গতকাল মঙ্গলবার তার প্রতারণার শিকার হয়ে ভুক্তভোগীরা থানাসহ বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করেছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, দীর্ঘ ২০ বছর ধরে নজির আলী শায়েস্তাগঞ্জে রেলে চাকরি করার সুবাদে বড় একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে কোটি কোটি টাকার রেলের সম্পত্তি ভূয়া কাগজ তৈরি করে লিজ দিয়ে আসছে। তার বাড়ি নোয়াখালি জেলায় হলেও শায়েস্তাগঞ্জের জগন্নাথপুরে বিয়ে করার সুবাদে এলাকার লোকজনের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। আর এ সম্পর্ক কাজে লাগিয়েই তার প্রতারণা শুরু। সে শূন্য থেকে কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছে। এ যেনো হাতে আলাদিনের চেরাগ পেয়েছে। তার বিরুদ্ধে রেলের কোনো কর্মচারী কিংবা সংশ্লিষ্ঠ কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। যেই প্রতিবাদ করে কৌশলে কিংবা ভয় দেখিয়ে ম্যানেজ করে ফেলে। গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শায়েস্তাগঞ্জ দাউদনগর রেল গেইটের পশ্চিম দিকের একটি বড় রেষ্ট হাউজ দখল করে সে বসবাস করছে। এ ছাড়া আশেপাশের কিছু রেলের জায়গা দখল করে ঘর বানিয়ে ভাড়া দিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
সম্প্রতি নজির আলী বাংলাদেশ রেলওয়ে শ্রমিক শাখার কার্যকরী সভাপতি হন। আর এর পর থেকে তিনি দাপট দেখাতে শুরু করেছেন। তার অপকর্মের কারণে সম্প্রতি তাকে আখাউড়া বদলী করা হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে তিনি সেখানে চাকরি করছেন না। কাগজপত্রে তিনি সেখানকার কর্মচারী হলেও রেলের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে তিনি এখানেই বহাল তবিয়তে রয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, শুধু শায়েস্তাগঞ্জ নয়, সাটিয়াজুরি, বাল্লা, তেলিয়াপাড়া, শাহজীবাজার, মনতলা, হরষপুরসহ বেশ কিছু এলাকায় রেলের জায়গা ভূয়া কাগজের মাধ্যমে মানুষদের লিজ দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার সকালে রেলের জায়গায় অবস্থিত অবৈধ উচ্ছেদকৃত পৌর মার্কেট দখল করে দোকান নির্মাণ করে সাবেক কাউন্সিলর সাইদুর রহমান, বর্তমান কাউন্সিলর লাইজু আক্তারের স্বামী সোহেল মিয়া, পাম্প অপারেটর নজির আলী, বিরামচর গ্রামের সাদেক আলী, নিজগাঁও গ্রামের আমির আলীসহ বেশ কয়েকজন। বিষয়টি শায়েস্তাগঞ্জ থানাকে অবগত করলে ওসি অজয় দেবের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সাইদুর, সোহেল ও নজির আলীকে আটক করে থানায় নিয়ে যান। দিনভর বিষয়টি নিয়ে রফাদফার চেষ্টা চলে। খবর পৌঁছে যায় ঢাকা রেলওয়ের স্টেট অফিসে। সেখান থেকে বিকালে স্টেট অফিসার রহুল আমিনসহ একদল রেল কর্মকর্তা শায়েস্তাগঞ্জ থানায় এসে উল্লেখিতদের বিরুদ্ধে রেলের জায়গা জালিয়াতি করে অন্যত্র লিজ দেয়ার অভিযোগে মামলা করেন। অন্যদিকে গত রবিবার শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার মেয়র অলি আহমেদ উল্লেখিত বিষয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করার পর পুলিশের নির্দেশে তারা থানায় হাজির হয়। আবার রাতেই তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়।
এদিকে জানা গেছে, নজির আলী রেলের জায়গা লিজ এনে দিতে সাইদুর রহমানের নিকট থেকে ৮ লক্ষ টাকা নেয়। এ ছাড়া সে ফুল মিয়া নামের এক ব্যবসায়ীকে লিজ এনে দেয়ার কথা বলে ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। সে এভাবে অনেকের কাছ থেকেই টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানা গেছে। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে আখাউড়া বদলী করা হয়। কিন্তু সে কাগজপত্রে সেখানে বেতন উত্তোলন করলেও কাজ করে শায়েস্তাগঞ্জে।
পাঠকের মন্তব্য