মো. ওয়ালী উল্লাহ সরকার, জামালগঞ্জ প্রতিনিধি ::
বুকভরা আশা নিয়ে ধান চাষ করেছিলেন হাওরের কৃষকেরা। কয়েকদিন আগেও তারা সোনালী ধান ঘরে তোলার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন এখন ফিকে হয়ে গেছে। সংসার পরিচালনায় সব পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। কালবৈশাখী ঝড়ে ধানে চিটা, অসময়ে হাওরে পানি আসার কারণে হাওরাঞ্চলের কৃষকদের মাথায় হাত দিয়ে হতাশা ও দুশ্চিন্তায় সময় ক্ষেপণ ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই। যে টাকা খরচ করে ফসল করেছিলেন ধান বিক্রি করে তার অর্ধেকও পাবেন না তারা। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে ভিন্ন কথা। তাদের মতে, ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে। তাদের এ কথার সাথে একমত হতে পারছে না হাওর পারের কৃষকরা। তারা বলছেন, চিটা হয়ে গেছে ব্রি-২৮ জাতের ধানে।
চলতি বছর জামালগঞ্জ উপজেলার ছোট-বড় ৬টি হাওরের ২৪ হাজার ৩৮০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে ৩ হেক্টর জমিতে ব্রি-২৮ ধান করেছে কৃষকেরা। হালির হাওরের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা বলছেন, বেশির ভাগ ব্রি-২৮ ধানের ভেতরে চালের বদলে চিটা হয়ে পড়েছে। উচ্চ ফলনশীল আর আগাম ফসল উঠে যাওয়ার কারণে ব্রি-২৮ জাতি ধানি বেশ জনপ্রিয়। তবে এবার এ জাতের ধান চাষ করে লোকসানে পড়েছে অনেক কৃষক। ক্ষেতের বেশির ধানে চালের বদলে চিটা হয়েছে। চিটা থাকার কারণে ধান কাটতে অনীহা প্রকাশ করছে শ্রমিকেরা। কৃষকরাও কাটার খরচের সাথে ধানের উৎপাদন কম হওয়ায় ধান জমিতেই পড়ে রয়েছে।
কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা বলেছেন, যারা আগেভাগে এই ধান লাগিয়েছে কেবল তারাই ক্ষতির মুখে পড়েছেন। হালির হাওরের কৃষকরা প্রায়ই অকাল বন্যার ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। এ কারণে সাধারণত আগাম জাতের ধানের দিকে বেশি ঝুঁকে থাকে। ব্রি-২৮ ধান আগে ঘরে ওঠে। গত কয়েক বছর ধরে এ জাতের ধান চাষ করে ভালো ফলন পেয়েছে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সোনালী ফসলে ভরপুর হাওরের ধান কাটা প্রায় শেষ পর্যায়ে। ধান মাড়াই-ঝাড়াই করে গোলায় তুলতে ব্যস্ত কৃষকেরা। তবে যারা ব্রি-২৮ ধান করেছে তাদের চোখেমুখে হতাশার ছাপ।
উপজেলার বড় হাওর পাগনা পারের কাশিপুর গ্রামের কৃষক কালা মিয়া, মুসলেম মিয়া, ইয়ার আলী জানান, বাশকার হাওর ও নয়া হাওরে আমরা ৩৭ বিঘা জমিতে ব্রি-২৮ ধান করেছিলাম। অন্য বছর ফলন ভালো হলেও এবার ফলন ভালো হয়নি। বেশির ভাগ ধানে চালের বদলে চিটা হয়ে গেছে। যার কারণে যে টাকা খরচ করা হয়েছে তার অর্ধেক টাকাও বিক্রি করে পাওয়া যাবে না। তাই হাওরের ধান হাওরেই রয়ে গেছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন জানান, ঠান্ডাজনিত কারণে সময় মতো বৃষ্টি না হওয়ায় ব্রি-২৮ ধান এবার কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যেসব কৃষক অগ্রহায়ণ মাসে ব্রি-২৮ ধান রোপণ করেছেন তারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কারণ এই ধান রোপণের উপযুক্ত সময় হচ্ছে পৌষ মাস। আমরা কৃষকদের এখন থেকে ব্রি-২৮ জাতের পরিবর্তে উন্নত জাতের ধান চাষের পরামর্শ দিচ্ছি।
পাঠকের মন্তব্য